manikmonzur@gmail.com
বাঁধনহীন
আমাকে ধরা দাও
আমি এসে
দাঁড়িয়েছি কাছে,
দ্যাখো
আঁধারের আলবেয়ে
লতারার মেলা
আলোয় আলোয়
ছুঁইয়ে যাবে তোমার
ঐ অলকে।
ঝাউবীথির মতো
শন শন শীৎকারে এসো,
দ্যাখো
আমার পৌরুষ আজ
উল্লসিত উল্কা।
তুমি চুপ করে থেকো না আর,
তুমি প্রস্তরমূর্তির মতো
নিঃসাড় পড়ে রয়ো নাকো আর দেখ
আমি এসে দাঁড়িয়েছি পাশে
ধরা দাও
আমাকে ধরা দাও
শুধু একটিবার।
-------------------------------------------------------------
সাড়া
বিনাশের কাকডাকা
খরায়
একটি জল দাও।
পিনপতন মৌনতায়
আমি চাষ দেবো
বহমান জীবনের
য়ে যাওয়া
সময়ের
চাকায় চাকায়,
তারপর
এক হিরন্ময় সকালে
অঙ্কুরিত হবে
তোমার আমার
প্রথমপ্রেম
নিপূণ
ভালোবাসা... সুখের পায়রা
আদিগন্ত।
চলো, সিঁড়ি বেয়ে
উপরে উঠি
একপা দুপা করে
পেছনে ফিরে তাকিও না কখনও
বুঝিবা পড়ে গেলুম
বলে
স্নায়ু কাঁপবে সময়
বহতা নদী, তাই সময়ের মতো করে
চলো, সিঁড়ি বেয়ে...
------------------------------------------------------
ওখানে
দিন নেই
রাত নেই
ওখানে
দুঃখ নেই কষ্ট নেই
ওখানে
যুদ্ধ নেই
ওখানে
রঙের হুলিখেলা নেই
ওখানে
ুধার যন্ত্রণা নেই
ওখানে
মৃত্যু নেই
ওখানে
বার্ধক্য নেই
ওখানে
অশ্বত্থের ডালে ডালে
চিরফাগুনের
অমলিন উৎসব
ওখানে
সহস্রসক্সগমে
সোনার সংসার গড়ে
যুগলশ্যামা।
-----------------------------------------------
তোমাকে
চকোরীর গানতো শুনেছি অহরহ
ময়ুরীর নাচনতো দেখেছি মুহুর্মুহু
পায়রারা পাখনাতো মেলেছে
দখিনা সমীরণে,
কে যেনো ডাকিছে আজি
কুহু কুহু তানে
মায়া আর প্রীতির ব›ধনে
সে যেনো আসিছে আজি
নিত্য যারে
প্রণয়ের কবিতায় ভরিয়ে রাখি
কতো প্রিয়, এতো সুন্দর
যেনো অপরূপা রূপসী।
--------------------------------------------------
প্রশ্ন
নিজেকে ভাবো কী তুমি?
তুমি কি অন্ধকার
রাত্রি জোনাকির মতো করে
জ্বলে উঠো
হঠাৎ তড়িতে।
নিজেকে ভাবো কী তুমি?
তুমি কি
অচেনা অর্কিডের
আমরি ঘ্রাণ
বিন্দু বিন্দু
সুরভি ছড়াও
মৌমাতাল
হয়ে।
নিজেকে ভাবো কী তুমি?
তুমি কি
প্রথমসকালের রোদ
যে হালকা হালকা
ছোঁয়ায়
আমার মানবিক বারন্দায়
অনিন্দ্য
উত্তাপ যোগাবে।
নিজেকে ভাবো কী তুমি?
তুমি কি
চিতার আগুন?
প্রতিশ্র“তি
বোশেখির দুরন্ত ঝাপটায়
যদি তুমি
ছিন্নভিন্ন হয় শ্রাবস্তীর শ্বেতকপোতের ন্যায়
তবে তোমার
নয়নের ঐ দুফোঁটা অশ্র“ বলে দেবে
আমি এসেছি
প্রেম এসেছে
তোমার
হারানো বুকের মানিক এসেছে
মেহেদিরাঙা
রঙে আঁকা সিঁথিতে
তোমায়
সিঁদুর দেবো
ণে ণে
অনাদিকালের তরে।
বোধোদয়
হ্যা, এবার আমি
একে-৪৭ ফেলে
এলআরবি’র গিটার নেবো
বাজাবো বাজাবো বাজাবো
ভীষণ বাজাবো
এই বাংলার
ভরা নদীর বাঁকে বাঁকে
যেখানে কলসি কাঁখে
গায়ের বধু
জল আনতে যায়
যেখানে দুষ্ট ছেলের দল
হাঁটু পানিতে সাঁতার কাটে।
বাজাবো বাজাবো বাজাবো
নগরে বন্দরে
সবুজাভ অরন্যে
জানো,
দূর নীলাচলে
সূরের ঝরণা ঝরবে
যূথি বনে
রাজহংস পাখনা মেলবে।
আমি কবিতা
(বরেণ্যকবি সৈয়দ আলী আহসানের পবিত্রস্মৃতি তর্পণে)
সৈনিক তুমি, সৌম্য সারথি
তুমি শব্দ-সান্নিধ্যে, জ-
য় হোক তোমারি, সাবলিল হোক
তোমারই আজন্ম লালিত কবিতা
দণ্ড যদি দিতে চাও মোরে
বুক পেতে নেবো নিমিষে
আসুক তুফান, হোক প্রলয়
কবিতাতো থাকবে সাথী হয়ে।
লিঅনার্দো-দ্য-ভিঞ্চির তুলি দাও
আঁকবো স্কেচ নব্য মোনালিসার
আসুন আঘাত, নামুক আঁধার
জন্ম হবে একটি নতুন কবিতার
হলুদ হিরামনপাখির কলরবে
বাজাবো বাঁশি আনমনে
সায়ন্তনীস›ধ্যায় গোধূলির হুলিখেলায়
গাইবো গান গুনগুনিয়ে।
নতুন ধানের শীষে দোলপূর্ণিমা
খেলবে খেলা বিনিদ্ররজনী
মানচিত্রের চৌদিকে রাখবো
চউষট্টি সজীব শাপলা।
নিশ্চুপ থেকো না কবি
শুধু একবার বলো
“আমার পূর্ববাঙলা একগুচ্ছ
স্নিগ্ধ অন্ধকারের তমাল...”
করুণনয়নে তাকাবো তোমাতে
হবো আমি কবি,
রচিব অমর কাব্য
তখনি ডাকিবে
মমতাময়ী মা আমায়,
কবি... কবি... কবিতা বলে।
যদি পাই তোমার
আশীর্বাদ অনন্ত
মাধবীচাঁপার মনোরমা বাঙলায়।
অমর একুশে
একুশে তুমি এলেই
এক তমাকাশ আঁধার সরিয়ে
অজস্র পাখিদের কলকাকলিতে
অজুত শিউলি ফোটা
নতুন সূর্য উঠা
স্বপ্নরাঙা মনের মুকুরে আঁকা
সোনালি প্রভাত হয়
অথচ সজীব কোমল দূর্বাগুলো
ঘন কুয়াশার আবিরে
যেনো বেদনা-বিদূর চিত্তে
অশ্র“সিক্ত হয়।
এতো বেদনা, এতো রিক্ততা
এতো শূন্যতা, এতো তিক্ততা এতো হাহাকার
এতো অশ্র“ বিসর্জন কেন?
এ প্রশ্ন আমাকে করো না
যদি উত্তর পেতে চাও
তবে ফিরে যাও ফিরে যাও
সেই চিরদিনের চেনা
শিল্পীর বিমূর্ত তুলিতে আঁকা
সবুজ শস্য শ্যামলীমায় ঘেরা
শ্যাম বনানী সরসতা
শ্যামকুন্তলা
ছায়া ঢাকা
মেঘের আঁচলে আঁকা
টিপ টিপ বৃষ্টির মমতায় মাখা
পায়রা ডাকা
দিঘির ঐ নীল নীল জলে
শাপলা শালুক
আর হলুদ পদ্মের মাঝে
হংস-মিথুনের নিত্যনতুন ক্রীড়া
উত্তাল উন্মাতাল মাতামুহুরিনদীর বাঁকে বাঁকে
সুমধুর সুরেলা ও
দরাজ গলায়
মনমাঝির বৈঠা নাড়া
বটের ছায়ায়
রাখালবালকের বিনম্রবীণা
উদার গৈরিক প্রান্তরে
বৈরাগীবাউলের দোতারা
মৃত্তিকার মোলায়েম
ধূলিকাঁদায়
কৃষাণীর অপরাজেয় লাঙল জোয়াল মই।
আর কামনামদির জোছনার জোয়ারে জোয়ারে
ধানফুলের বিচিত্র মণিহার পরিহিতা
আলতারাঙা লাজুক পায়ে
রূপার নূপুর পরে
কোনো রূপসী লক্ষ্মীবধু
যখন সহস্র গ›ধরাজ
পূজা দিয়ে
প্রিয়তম স্বামীর অধরে
মধুচুম্বন এঁকে দিতো
... ফিরে যাও সেই
মধুসুদনের দেশ
দুখুমিয়ার পূণ্যভূমি
তোমার আমার মাতৃভূমি
রবিঠাকুরের
সোনার বাঙলায়।
যদি প্রশ্নের উত্তর না মেলে
তবে বৈশাখীমেলা থেকে আনা
দিনপঞ্জির দিকে
একটু নজর দাও
একটু হাত বাড়িয়ে
পৃষ্ঠা উল্টালেই দেখতে পাবে
বাহান্নের রক্তঝরা
অগ্নিঝরা
টিয়ারসেল-লাঠি-গুলি ও ১৪৪ ধারা ভক্সেগর
সেই স্মরণীয় দিনটি
৮ই ফাগুনের সেই বরণীয় দিনটি
যখন তোমার আমার
মুখের ভাষা
খোকা-খুকির চলার ভাষা
মায়ের মুখের
মধুর ভাষা
বাবার বুকে
শান্তির আশা
বোনের মুখের
বেগুনিভাষা
ভাইয়ের মুখের নীলভাষা
অবুঝশিশুর
সবুজভাষা
আ-মরি বাঙলাভাষাকে
রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে
পিচঢালা কালোরাজপথ
বুকের তরতাজারক্তে
লালে লাল করেছে
অজস্র সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার।
তখন সহস্র কৃষ্ণচূড়া আর
লালপলাশগুলো
ঝরে পড়ে
বীর শহিদের
পবিত্র দেহের উপর
আর সেই
লাল লাল ফুলগুলো
নিমিষে একাকার হয়ে
রাজপথ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে
সবুজে সবুজে ঢাকা
মাটিতে মিশে
লালসবুজের পালায় পালায়
মেতে উঠে।
তখন আমার এ মাটি
মা
তথা শত শহিদের
দুঃখিনি মা
বুকফাটা আর্তনাদে
সকালের শিশিরের ন্যায়
অশ্র“ বিসর্জন করে
যে অশ্র“তে শবদেহগুলো
ধুয়ে মুছে এই একটা কফিনে পরিণত হয়
আর সেই কফিনগুলো
ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়
তিন অরের একটি নাম
মিনার
শহিদ মিনার।
যে মিনারের পাদদেশে দাড়িয়ে
গভীর শ্রদ্ধাবনত চিত্তে
স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে
ভাই হারানোর ব্যথা নিয়ে
সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে
সহযোদ্ধা হারানোর ব্যথা নিয়ে
একটি গান করি,
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ...
... আমি ভুলিতে পারে?”
এখনো ভোর হয়
শিশির ছড়ায় ঘাসে ঘাসে
আর প্রভাত ফেরিতে
ফুলে ফুলে সাজিয়ে দিই
মিনারের পাদদেশ।
তাইতো একুশ তুমি এলেই
ঘন কুয়াশার আবিরে
যেন বেদনাবিদূর চিত্তে
আমার মা-মণি
তাঁর হারানো বুকের ধনের জন্য
অশ্র“ বিসর্জন করে।
দেশপ্রেম
দেশপ্রেম ইদানীং
গাঙচিলের পাখনাতে চলছে তো চলছে
শিস দিলে যেনো হৃদয়ে হৃদয়ে
একাকার হয় রক্তপিপাসায়।
ত্রিশল শহিদের রক্ত ঝরিয়ে
দীর্ঘ সাঁইত্রিশহেমন্ত পেরিয়ে
বনকুকুরের ধারালো নখরে
ত-বিত হয় দেশপ্রেমীর শরীর
রক্ত ঝরে ফোঁটায় ফোঁটায়
হৃদয়ের লালগালিচায়।
দেশপ্রেম ইদানীং
অ›ধকাররাতে ছুটে চলা জ্বলন্ত উল্কা।
দেশপ্রেম যেনো আজ
নিয়নবাতির বর্ণিলধাঁধা...
লাল রঙ নীলাভ হয়
কাল রঙ শাদা হয়
নীল রঙ বেগুনি হয়
হলুদ রঙ গোলাপি হয়
খয়েরি রঙ সবুজ হয়
প্রজাপতি রঙ আকাশি হয়
পতি পরকীয়াপ্রেমে নত হয়
পতিতা সতীনারীতে পরিণত হয়
প্রেতাত্মা পূতপবিত্র হয়
পাপী পরম পূজণীয় হয়
প্রতারিত দেহ সৎকার হয়
প্রজাতন্ত্র পরবাসে বিকিয়ে দেয়ার পায়তারা হয়
প্রতিভা ধুলোয় লুটে তপ্ত গ্রেনেডে
পিচঢালা কালোরাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়
প্রহসনের নির্বাচন হয়
পরিকল্পিত ইস্যু নিয়ে প্রবঞ্চনা হয়
পবিত্রসংসদে অশালীন আলাপ হয়
পাগলের প্রলাপ হয়
বিরোধীদলহীন সংলাপ হয়
গণবিরোধী বাজেট পাশ হয়
প্লাবন দুর্যোগে ত্রাণতহবিল আত্মসাৎ হয়
প্রজেক্টকমিটি দলীয়প্রীতি হয়
প্রশাসনে দুর্নীতি হয়
পাঠশালার পাদপীঠে মারণাস্ত্রের মহড়া হয়
পাঁচশালাপরিকল্পনায় শুধু
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়
পত্রিকার পাতায় দীর্ঘ বিবৃতি দেয়া হয়
পল্টনময়দানে জ্বালাময়ী ভাষণ দেয়া হয়
পরাষ্ট্রনীতি নতজানু হয়
অর্থনীতি পরনির্ভর হয়
অপসংস্কৃতির চর্চা হয়
পুঁজিপতিদের আলিশান বাড়ি হয়
বুলেটপ্রুফ গাড়ি হয়
লাস্যময়ী নারী হয়
পদ্মার চর ভরাট হয়
মেঘনার বে অবৈধ ড্রেজিং হয়
যমুনায় অবৈধ জাটকা নিধন হয়
বুড়িগঙ্গায় বর্জ ফেলা হয়...
পতপত শব্দে উড়ানো জাতির পতকা
আজ অর্ধনমিত
ল শহিদের রক্তস্নাত
বাঙলা আজ বেজন্মা জারজ সন্তানের
নষ্টনখরে ছিন্নভিন্ন
তবিত হয়
বিশকোটি দেশপ্রেমীর হৃদয়ে
রক্ত ঝরে ফোঁটায় ফোঁটায়
সবুজের লাল গালিচায়।
জোনাক ফুল
কি কারণে আলোকিত করো
অন্ধকার ঘর?
দেখতে পাচ্ছো না
সমস্ত গৃহ পুরাতন হয়ে গেছে
সমস্ত আসবাবপত্র নড়বড়ে হয়ে রয়েছে
সমস্ত পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে গেছে
সমস্ত বই পোকায় কেটে ফেলেছে
একটিমাত্র কবিতার পাণ্ডুলিপি ছাড়া
কারণ সেটি হৃদয়ের আলোকিত অঙ্গনে সাজানো ছিলো।
এখন কৃষ্ণপ
পৃথিবীপৃষ্ঠে নেমেছে পাতালপুরির আঁধার
ভালোবাসা
তাতেও প্রাণ নেই...
আলো নেই
রঙ নেই
সুর নেই
ছন্দ নেই
গ›ধ নেই
আনন্দ নেই
বর্ণ নেই
ধর্ম নেই
ভাষা নেই
নীতি নেই
আছে শুধু
দ্বন্দ্ব
সংঘাত
জরা
মৃত্যু
কষ্ট
পরাধীনতা
সন্ত্রাস
ধর্মহীনতা
অপমৃত্যু
ধর্ষণ
ছিনতাই
রাহাজানি
আর আছে বেদনা বিদূর রিক্ততা।
প্রাণপাখি যেনো এক কাগজের নৌকা
দুষ্টু খোকার কোমল হাতে বানানো পাতার ঘড়ি
বাবার মুখে শোনা রূপকথা:
রূপবতী রাজকন্যা
রূপবান রাজকুমার
ও পাতালপুরি
তুষ্ট খুকির মুখের খৈ
মানিকপুরের সুবিখ্যাত মহিষের দই
বাড়ন্ত বালিকার বালির মূর্তি
পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের জ্যোতি
উর্বশীর উষ্ণউচ্ছ্বাস
কখন ফুরিয়ে যায় কী জানি।
বড়ই একা লাগে
...শুধু একা
ধু ধু বনের মতো একা
সাহারা মরুভূমির মরীচিকার মতো একা
অগ্নিগিরির জ্বলন্ত লাভার মতো একা
হিমালয়ের চূড়ায় জমাটবদ্ধ বরফের মতো একা
আটলান্টিকের উত্তাল তরঙ্গের ন্যায় একা
ইরাকের বুকে বুলেটবিদ্ধ শিয়াশিশুর কান্নার মতো একা
প্যালেস্টাইনের বুকে
ইঙ্গ-মার্কিন পেনাস্ত্র হামলায় রক্তরেখা।
আজারবাইজানের ভাঙাদেয়ালে লেলিনের ধ্যানি চোখের মতো একা
মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শের মতো একা
নবজন্মের উষ্ণজরায়ুর বিষ্ণুব›ধনের মতো একা
কালোদুনিয়ার কঠিন কবরে কফিনের মতো একা
চিতার অনলে পোড়া ধূসর ছাইয়ের মতো একা
ক্রুশবিদ্ধ খ্রিষ্টের মতো একা
সত্যসাধনায় সিদ্ধার্থের মতো একা
হেরাগুহায় মুহম্মদ (স.) এর মতো একা
বড়ই কষ্ট লাগে,
...শুধু কষ্ট
কালো কষ্ট, শাদা কষ্ট, দারুচিনি রঙের কষ্ট
কষ্টে কেটেছি বিবর্ণ কৈশোর
রাতভর বৃষ্টিতে ভিজেছি হাড়ভাঙা শীতে কেঁপেছি
গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়েছি।
মঙ্গায় ুধার্ত থেকেছি।
বন্যায় বাস্তুভিটা হারিয়েছে।
মিছিলে স্বজন হারিয়েছি
বড়ই সুখ জাগে শুধু সুখ বাট্রান্ড রাসেলের সুখ
টাইটনিকের ডুবে যাওয়ার সুখ
জর্জবুশের দখলদারিত্বের সুখ
নেলসন মেন্ডেলার কালোমানুষের অধিকার আদায়ের সুখ
ড. ইউনুসের নোবেল বিজয়ের সুখ
এরশাদ শিকদারের স্বর্ণকমলের সুখ
রওফন বসুনিয়ার স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে আত্মদানের সুখ
র্যাপিড একশান ব্যাটেলিয়ান টিমের
ক্রস ফায়ারে মানুষ মারার সুখ
চৌষট্টি জেলায় বাঙলা ভাইয়ের বোমা হামলার সুখ
আমার ভাইয়ের রক্তে কেনা
মন্ত্রীর গাড়িতে জাতীয় পতকা উড়ানোর সুখ
রাজপ্রাসাদে রাজার সুখ
নাট্যমঞ্চে নটরাজের সুখ
মুক্তমঞ্চে ঠকবাজের সুখ
মন বলতো বড় হয়ে নাকি আমি সুখি হবো
এক দুই তিন করে
একদিন বড় হলাম
বারো চব্বিশ ছত্রিশ করে
তিন যুগে এসে ছাড়ালাম
অথচ নিয়তির নৈশব্দ নিয়ন্ত্রণে
সুখ নিলয় রচিল না কভু এ ভবে।
হয়তো বার্ধক্যের জীর্ণতায়
শীর্ণ জারুলতরু
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে
রু অমরাবতীর ঢালে
শ্যামা বাসা বুনে
পরাজয় নিশ্চিত জেনেও
মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত
লড়াই করে যায়
সংসপ্তক পুরুষ
কোলহারা প্রেমিকও
হৃদয়ের কোনো অজানা
বন্দরে তার প্রেমতরি ভিড়ায়
নীড়হারা ঝড়ের পাখিও
আবার নতুন করে
কুঞ্জ-নিকুঞ্জ গড়ে
নয়নের ঐ নীলে
লীন হয়ে যায়।
এই শীর্ণকুঠিরের হৃদয়দুয়ার
খুলে দাও।
দূর নীলমার ঐ নত্র থেকে
চেয়ে পরিয়ে দাও নীলজোছনা টিপ।
জোনাকফুলে গেঁথো মালা
জ্বেলে আলোর দ্বীপ।
আজকের শিশু
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু চুইংগামের উচ্ছিষ্ট চুষে খায়।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে
অ আ ক খ গ ঘ ঙ
শিখতে শিখতে শিকের মার খায়
যে শিশু এক দুই তিন গুনতে গিয়ে
ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি খায়।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু ইটভাটার অদূরে শক্ত হাতুিড় দিয়ে পাথর ভাঙে
যে শিশু ক্যান-ফ্যাক্টরিতে টিনের কৌটা বানায়,
যে শিশু কার্টুন ফ্যাক্টরিতে কার্টুন বানায়
যে শিশু ওয়ার্কশপে গাড়ির টায়ার খুলে
যে শিশু গেরেজে গাড়ি ওয়াশ করে।
যে শিশু তার ঊনপঞ্চাশবছর বয়েসি বাবার সাথে ঠেলা ঠেলে
যে শিশু অলংকারের মোড়ে তার দুই ব›ধুর সাথে রিকশা ঠেলে
যে শিশু কাগজ কুড়াতে গিয়ে
দাঁড়কাক ও কালোকুকুরের সাথে
ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া খাবার খায়।
যে শিশু ঝাউতলা বিহারি কলোনিতে মুরগির খামারে কাজ করে
যে শিশু অক্সিজেনের মোড়ে
জলপাই আম আমলকি আমড়ার আচার বিক্রি করে।
যে শিশু নাসিরাবাদ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে
আইসক্রিম বিক্রি করে।
যে শিশু বহদ্দারহাট বাসটার্মিনালে মিষ্টি পান বিক্রি করে
যে শিশু মিমি-সুপারমার্কেটের পাশে
হিলভিউ হাউজিং সোসাইটির
মেম সাহেবদের জুতা পালিশ করে।
যে শিশু ডিসি হিলের মোড়ে রকমারী
ফুলের মালা বিক্রি করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু লম্বা পাঞ্জাবি-পাজামা, মাথায় টুপি দিয়ে
হাতে গামছা নিয়ে ছোটহুজুর ও তার চারজন সঙ্গিসহ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে
“দারুল উলুম ছুন্নিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও হেফজখানার” ব্যানারে দান ছদকা
গ্রহণ করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী
বাবার মন্দিরে মা দূর্গার
সামনে রতি প্রসাদ
চুরি করে খায়।
কই! মায়ের দশটিহাতের একটি আঙুলওতো নড়ে উঠে না
তার আঙুলওতো নড়ে উঠে না
তার পদপাটে উপবিষ্ট অসীম সাহসী অসুরও
কোন ভ্র“পে করে না।
অথচ
বিধাতা নীরবে হাসে
খাবার দাও তার মুখে
সুগ›ধায় ঝি এর কাজ করতে গিয়ে
যে শিশু যৌনলালসার
শিকার হয়।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি বাস টার্মিনালের
কাছে মাত্র পাঁচটাকা দামের হায়দারাবাদী জাফরানী
বিরানি বিক্রি করে।
যে শিশু জিইসির মোড়ে
স›ধ্যার পর দশটাকা দামের চটপটি বিক্রি করে।
যে শিশু অলংকার চৌমুহনি বন্দরটিলা
শাহবাগ গুলিস্তান ও পান্থপথের মোড়ে
গামচা চাদর টুপি বিক্রি করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু বরিশাল ঢালচর কিংবা
চর কুকুরিমুকুুরিগামী লঞ্চে নামাজ শিা বিক্রি করে।
খাবার দাও তার মুুখে
যে শিশু সিলেটগামী সোহাগ পরিবহনে
বাদাম ও বুট বিক্রি করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু মগের হাটখোলা কিংবা
কালাচান হাটে দুটাকা দামের
পলিব্যাগ বিক্রি করে।
যে শিশু লালদিঘি থেকে ফতেয়াবাদ,
হাটহাজারী থেকে গহিরাগামী
অটোরিকশার হেলপারি করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু চট্টেশ্বরী রোডে আখের রস বিক্রি করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু রেয়াজউদ্দিনবাজার আম্মার কোল হোটেলে গ্লাস বয় এর কাজ করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু পরের বাড়িতে আব্দুলের কাজ করে
মাহিনা পায় মাসে তিনশতত্রিশটাকা মাত্র
মাস শেষে পুরো টাকা বিধবা মা এসে নিয়ে যায়
থাকা-খাওয়া ফ্রি
কাজ তেমন কিছু না
খুবই হালকা
এই যে ধরুন
সকালে সাহেবের গাড়ি মোছা
বিকেলে বাচ্চাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসা
দুপুরে ডাইনিং টেবিল সাফ করা
মাঝে মাঝে রাজিয়া বুয়ার সাথে
খাবার সাজাতে সহায়তা করা
...আর আবদুল দেখে
রকমারি খাবার
কোমল পানীয় ও মৌসুমী
ফলফলারের বাহার।
যে শিশু হাসমতআলীশালকরে কাপড় ধোয়ার কাজ করে।
যে শিশু চকবাজারে আপনজন সেলুনে কাজ করে।
যে শিশু আমতলীর মোড়ে পুরনো ও বিদেশি জুতা বিক্রি করে।
যে শিশু বায়তুল মোকারম মসজিদ কিংবা
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের মোড়ে
বসে জায়নামাজ, তস্বিহ, আতর, বিক্রি করে
যে শিশু এলিফ্যান্ট রোড়ের মোড়ে বসে
ভ্যানেটিব্যাগ, ওয়ালেট,
মাথার ক্যাপ, বেল্ট
গ্যাস লাইট
ক্যালকুলেটর, ঘড়ি বিক্রি করে।
যে শিশু জহুর হকার মার্কেটের মোড়ে
তার বাবার সাথে
পুরনোকাপড় বিক্রি করে এবং বাবার মতো বলে
চাই চাই লহ্ ।
বাছি বাছি লহ্ ।
পাঁচটিঁয়া... পাঁচটিঁয়া... পাঁচঁিটয়া...
যে শিশু বোয়ালখালির গোমদণ্ডি গ্রামে ঘূড়ি উড়াতে গিয়ে
লাটাই থেকে সুতো ছিঁড়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ফিরে
যে শিশু স্কুল পালিয়ে
মার্বেল জিতে
মনামিয়ার দোকানে বিক্রি করে।
যে শিশু রাজশাহীগামী ট্রেনে দাঁড়িয়ে
দাঁতের মাজন বিক্রি করে।
যে শিশু দোহাজারীগামী ট্রেনে
ইসমাইলের হাড়ভাঙাতেল বিক্রি করে
যে শিশু এলিফ্যান্ট রোড কিংবা সদরঘাট রোডে
পর্ণো ছবির কার্ড বিক্রি করে।
যে শিশু হরতাল ধর্মঘট স্ট্রাইকের সময়
চন্দনপুরার মোড়ে যাদুর খেলা দেখায়।
যে শিশু ওমরগণি এমইএস কলেজের গেটে
আজকের কাগজ
প্রথম আলো
ভোরের কাগজ
দৈনিক ইনকিলাব
দৈনিক পূর্বকোণ বিক্রি করে
... জলদি নিন, দেশকে জানুন,
আজকের বিশ্বকে জানুন,
ফুরিয়ে যাওয়ার আগে আপনার প্রিয় কপিটি
সংগ্রহ করুন।
... কিন্তু ঐ শিশুর খবরতো জাগ্রতবিশ্ব রাখে না!
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু কাগজের নৌকো বানিয়ে হাঁটু পানিতে ভাসায়
এবং সিন্দবাদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে
অতঃপর মায়ের মার খায়
মা বলে,
কীটে কাটা খাটে শুয়ে
কোটিটাকার খোয়াব
দ্যাখতে নাই।
কামে যাও বাজান গো
কামে যাও;
কামে না গেলে
খাওন দিমু না।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু জাকির হোসেন রোডে ছেঁড়া আকবরের সাইটে
রাজমিস্ত্রির হেলপার হিশেবে কাজ করে।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু একটি কম্বলের জন্য ব্র্যাক স্কুলে যায়।
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু শ্যামাডাকা সকালে
বরইতলির আমনেেত কাজ করে।
যে শিশু পটিয়ার বনবীজতলা কেন্দ্রে কাজ করে।
যে শিশু বদরখালীর লবণের মাঠে কাজ করে।
যে শিশু আলীকদমের তামাক েেত কাজ করে।
যে শিশু রামু রাবারবাগানে কাজ করে।
যে শিশু বাঁশখালির জলদি গ্রামে আলুেেত কাজ করে।
যে শিশু বাগিচার হাটের পেয়ারা বাগানে কাজ করে।
যে শিশু নাজিরহাট রেলস্টেশনে বড়ভাইয়ের সাথে কুলিগিরি করে
যে শিশু টেকনাফের সুপারিবাগানে কাজ করে
যে শিশু দরিয়ানগর কক্সবাজারের ঝিনুকমার্কেটে কাজ করে
যে শিশু হালুয়া রুটির জন্য শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়ে
যে শিশু তবরোক খাবার জন্য বাবা ডালচালশাহের মাজার জিয়ারত করে
যে শিশু রাত জেগে কাইয়ুম সওদাগরের চায়ের দোকানে
মুনমুন-ময়ুরীর নরমগরম সিডি দেখে
যে শিশু প্রিন্সেস জরিনার ভ্যারাইটি শো দেখে।
যে শিশু গরম গরম জিলাপির জন্য ওয়াজ মাহ্ফিলে শরিক হয়।
যে শিশু বুলেট বোমা উপো করে গরম চা ও বেলাবিস্কুটের
জন্য রাজপথে মিছিল করে
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু মাত্র পঞ্চাশ টাকার জন্যে বোমা বহন করে
সে জানে না বোমা কি
সে জানে না মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে সহস্র মানুষের জীবন
পলকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে নগরসভ্যতা
খাবার দাও তার মুখে
যে শিশু আলিশান গাড়ি আর আকাশচুম্বিদালান দেখতে দেখতে
চেরাগিপাহাড়ের মোড়ে খোলা ফুটপাতে শুয়ে পড়ে
মাথার নিচে বালিশ নেই
মায়ের হাতের আদর নেই
গোলাপি আপুর মুখে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি গান নেই;
আবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়
যান্ত্রিকনগর
মাঝরাতে জোছনা নামে
কিংবা সোডিয়াম লাইটের নির্মল আলোয়
আলোকিত হয় চারিপাশ।
পথকন্যাদের পসরা বসে
নৈশ প্রহরীর বাঁশি
তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেসের হুইশেল
কালোকুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকার
নববধুর আনন্দ চিৎকার
নবজাতকের কান্নার সুর
নগরবাউলের গিটারের সুর
তাই বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হও
নিরন্ন ুধার্ত অসহায় শিশুর মুখে আহার তুলে দাও
হাতুড়ি ফেলে তুলি দাও
বোমা ফেলে বকুলের মালা দাও
ধরায় দুলিবে স্বর্গসুখ
মানবতার হবে জয়।
আমার হৃদয়ে বাংলাদেশ
হে আমার প্রাণের বাঙলা
হে আমার মনের বাঙলা
তোমাকে আমার সবটুকু ভালোবাসা
তুমি আমার বেঁচে থাকার আশা
এখানে আমার জন্ম হয়
আবার এখানে মৃত্যু হয়
এখানে জানাজা হয়
এখানে জিকির হয়
এখানে জিয়ারত হয়
এখানে জান্নাত হয়
এখানে মাগফেরাত হয়
এখানে ইবাদত হয়
এখানে মেজবান হয়
এখানে দাওয়াত হয়
এখানে যাকাত হয়
এখানে শবে-বরাত হয়
এখানে শবে-ক্বদর হয়
এখানে রহমত, বরকত, আত্মসংযম ও সিয়াম সাধনার
মহিমা নিয়ে আসে রমজানুল মোবারক
আর রমজানেরই রোজার শেষে ধনি-দরিদ্র বৈষম্য
ঘুচাতে খুশির বরাডালা নিয়ে আসে প্রতিটি মুমিনের ঘরে ঘরে
ঈদ-উল-ফিতর।
আবার আত্মত্যাগের মহিমায় বাঙলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আসে ঈদ-উল-আজহা।
এখানে বিশ্বের বিশুদ্ধ মহামানব হযরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) এর জন্ম জয়ন্তীতে
পালিত হয় জুশানে জুলুছে ঈদে মিলাদউন্নবী।
এখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে ওয়াজ মাহ্ফিল হয়
এখানে প্রতিটি মহল্লায় সিরাত মাহ্ফিল হয়
এখানে প্রতিটি নগরে তাফসিরুল কোরান মাহ্ফিল হয়
এখানে সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.)
এর মাজারে ওরশ মাহ্ফিল হয়
এখানে নবীনবরণ হয়
এখানে বর্ষবরণ হয়
এখানে বধুবরণ হয়
এখানে মধুপূর্ণিমা হয়
এখানে দোলপূর্ণিমা হয়
এখানে প্রবারণাপূর্ণিমা হয়
এখানে গায়ে হলুদ হয়
এখানে বর আগমন হয়
এখানে শুভ বিবাহ হয়
এখানে শুভ নববর্ষ হয়
এখানে শুভ সকাল হয়
এখানে শুভ অপরাহ্ণ হয়
এখানে শুভ বিকাল হয়
এখানে শুভ স›ধ্যা হয়
এখানে শুভ রাত্রি হয়
এখানে তিননাথ মন্দিরে
হরে কৃষ্ণ হরে রাম রব উঠে।
এখানে বাঙলা মায়ের ঘরে ঘরে উলু উলু ধ্বনি উঠে।
এখানে প্রতিটি গির্জায় ঈশামসিহের রূপ দেখা যায়
এখানে প্রতিটি প্যাগোডার
অহিংসার বাণী নিয়ে গৌতমবুদ্ধ নেমে আসেন।
এখানে মসজিদে আজান হয়
বিশ্বজগৎ যখন গভীর ঘুমে তন্ময় তখন
আস্সালাতু খাইরুম মিনান্নাউম রবে ফজর হয়।
এখানে জোয়ার আসে
এখানে জোছনা নামে
এখানে ব্রহ্মপূত্রের জলে প্রতিমা বিসর্জন হয়
এখানে পূজা হয়
এখানে অর্চনা হয়
এখানে সূরের মূর্ছনা হয়
এখানে আব্বাস উদ্দীন গান করে
উত্তাল উল্লাস পদ্মানদীর
এখানে আবদুল আলীম সূর ধরে মনমাঝির
ফকির আলমগীর গায় গান সকিনার
আর আবদুল মান্নান রানা গান করে বন্দরনগরীর
এখানে সুজনবাদিয়ার ঘাটে বসে নকশিকাঁথা বুনে জসিম উদ্দীন
গুনটানা নৌকোতে জয়নুল আবেদীন
যশোরের সাগরদাঁড়িতে মিশে রয় মাইকেল মধুসূদন
এখানে বরফগলা নদীতে জহির রায়হান
গানে গানে প্রাণের যতো বেদনা লুকাতে চায় সাবিনা ইয়াসমিন
কোকিলকণ্ঠে গান গায় সুরের পাখি রুনা লায়লা
আকাশের ঠিকানায় ভালোবাসার চিঠি লিখে রুদ্্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আর মা, মাটি ও মানুষের কথা লিখে যায় বেগম সুফিয়া কামাল
ুধার রাজ্যে যখন পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদকে তখন ঝলসানো রুটি মনে করে কালজয়ী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য
এখানে ধানসিড়িটির তীরে ফিরে আসে জীবনানন্দ
জনতার মঞ্চে আবৃত্তি করে নির্মলেন্দু
আরকান রাজসভার নন্দিত হয় মহাকবি আলাওল
মুয়াজ্জিনের আজান শুনে ফুলের জলসায় নীরব থাকে বিদ্রোহী কবি নজরুল
এখানে জন্ম নেয় হুমায়ুন কবির, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ
মাঝদরিয়ার আলোক বর্তিকা হয়ে জ্বলে উঠে ফররুখ আহমদ
এখানে জন্ম নেয় শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক
এখানে জন্ম নেয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
এখানে জন্ম নেয় মজলুম জননেতা মৌলনা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
এখানে ঘুমিয়ে আছে শান্ত হয়ে লবীর সেনানী।
হে আমার মনোরমা বাঙলা
হে আমার বীর সেনানীর বাঙলা
হে আমার সোনার বাঙলাদেশ
তোমাকে আমার হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা
তোমার তরে আমার জীবন বিলিয়ে দেবো
তোমার বুকে মাথা রেখে যেনো আমার মরণ হয়
তুমি চিরজীবী হও।
আমার অস্তিত্ব
আমার অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
সেতারের সুরের ঝংকারে
বীনার তারে তারে
বাউলের বাহু-লতায়
বৈশাখীমেলায় হালকাকারা নৌকাবাইচ খেলায়
জোষ্ঠের খরায় কামরাঙা কদম কেতকীর দোলায়
আষাঢ়ে আষাঢ়ে টুপটাপ বৃষ্টিতে রাজহংসের পথ চলায়
শ্রাবণের বিরামহীন বারিধারায়
ভাদ্রের লাজহীন চন্দ্রমল্লিকার মধুচন্দ্রিমায়
আশ্বিনের আউসেেত ফুঠে উঠা নীলপদ্মে
কার্তিকের ভোরে ঘুমের ঘোরে জুঁই-চামেলীর অভিসারে
অগ্রহায়ণের গোধূলিস›ধ্যায়
স›ধ্যামালতীর লুকোচুরি লুকোচুরি খেলায়
শেষ সূর্যের কণায় কণায়
নিঝুম চরাচরে
আধাঁরের মৌনতায়।
পৌষের পূর্ণিমানিশীথে রজনীগ›ধ্যার সুরভিতে
শ্বেত কপোতকপোতীর অযৌন যুগলবন্দিতে
মাঘের মাতাল করা হিমেল হাওয়ায়
খেজুর রসের হাড়ি নিয়ে গায়ের ছেলে
ফেরে উদাসী দাওয়ায়।
ফাগুনে ফাগুনে গানের দিন শুরু হয়
লগন আসে আগণন গ›ধরাজ, রক্তকরবী, জবা, বেলির
চৈত্রে ফুঠে চপল চঞ্চল চৈতি
আরতি করে যমুনা ব্রহ্মপুত্র গায়ত্রী।
অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
কৃষাণের শাণিত ফলায়
কামারের শক্ত হাপরে
কুমারের নরোম কারুকাজে
চরণদ্বীপের অজস্র তাঁতি জেলের মাঝে।
আমার অস্তিত্ব লীল হয়ে আছে
বেদে কন্যার ডাগর ডাগর আঁখিতে
মুচি নাপিত মজুরের শক্ত বাহুতে
শিকলঘাটার তিনচাকার রিকশাতে
উত্তরল্যাচরের বাকি তরমুজ বাদাম েেত
ঘনশ্যাম বাজারের ভরা হাটে
শাহ্ওমরাহ্বাদের ঘোড়দৌড়ের মাঠে
আমার অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
চকরিয়া সুন্দরবনের চিত্রলহরিণ হয়ে
পালাকাটা মাছকাটা রামুপুর মৌজার সোনালি চিংড়ি হয়ে
কখনো দিঘির পানখালির পানকৌড়ি হয়ে
কখনো হারবাং এর রাখাইন পল্লীতে
কখনো বমুবিলছড়ির জারুল চাপালিশ অর্জুন
নাগেশ্বর আকাশমণি হয়ে
কখনো ফাইতং এর দেবদারু রাধাচূড়া
গর্জন, মেহগনি, সেগুনবাগিচা হয়ে।
কখনো চুনতি অভয়ারণ্যের শাদা চিতা হয়ে
আমার অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
রাজার কোল রামুর রামকোটে
হয়তো বজ্রনিনাদে ধ্বনিত হচ্ছে যুদ্ধ
বল্ বল্ বলোরে
রাম বড়ো বধূরা
কখনো আদিনাথের মন্দিরে
সীতাকুণ্ডের অনাথ আশ্রমে
কখনো আলিফ লাম মীম এর মিনারে
হয়তো বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গে
উত্তর দণি পূর্ব পশ্চিম
... অগ্নি নৈর্ঋত ছড়িয়ে রব আসছে
আশহাদু আল্লাহ্ ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলূল্লাহ্
হযরত শাহ আমানত শাহ্ (রহ.) এর পূণ্যভূমি
বার আউলিয়ার আবাসভূমি বীর চট্টলায়
কখনো ওয়ার সিমেট্রিতে
যেখানে সাড়ে সাতশো বীর শহিদান চির নিদ্রায় শায়িত আছে
ওরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আত্মাহুতি দিয়েছিলো
এখনো শেষরাতে সাড়েসাতশো গোলাপ ফোটে
সাতসকালে সাড়েসাতশ পাখি ডাকে
আর রঙধনুর সাতরঙে জ্বলে
বিপ্লবী লাল মশাল
কখনো পাহাড়তলির অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা হয়ে
কখনো স্বাধীনবাঙলা বেতারকেন্দ্রের বিপ্লবী গান হয়ে
কখনো শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের তান হয়ে
কখনো সাতকানিয়া কেরানিহাটের টেক্সিঅলা হয়ে
কখনো কুতুবদিয়ার বাতিঘর হয়ে
যেখানে দূরসমুদ্রের নাবিক
তার হৃদয়ের অচেনা বন্দরে নোঙর করে।
কালামারছড়ার রাজজেলে হয়ে
সা¤প্রতিক সিডরে যার বাস্তুভিটা নিঃশেষ হয়ে গেছে।
কখনো পর্বতগিরি বান্দরবানের বনময়ুরী হয়ে
লালদিঘির মাঠে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলায়
জাফর আহমদ ও বদু বলির যুগলনৃত্যে।
কখনো প্যারেড ময়দানে ঈদগাহের কাতারে
ধনি-গরিব
গুণি-শরিফ
গুরুজন-মহাজন
ডাকাত-মাস্তান
লুটেরা-লম্পট
গুণ্ডা-পান্ডা
মুটে-মজুর
মৌলনা-হুজুর
লপতি-কোটিপতি
বিচারপতি-রাষ্ট্রপতি
হেকিম-কবিরাজ
সৈনিক-যুবরাজ
দারোয়ান-চৌকিদার
দফাদার-জমিদার
উকিল-মোক্তার
মুনসেফ-মিনিস্টার
মুনশি-ব্যারিস্টার
ভিলেন-ফিল্মস্টার
ছাত্র-শিক
সারেং-মাস্টার
চাঁদাবাজ-লুটতরাজ
নকলবাজ-দখলবাজ
ধা›ধাবাজ-রঙবাজ
বোমাবাজ-অস্ত্রবাজ
গাঁজাখোর-মদখোর
সুদখোর-ঘুষখোর
জুয়াড়ি-কালোবাজারি
ডাইলখোর-হেরোয়িনখোর
জোচ্চুর-শিঙচোর
গমচোর-কাঠচোট
হাইজাকার-রাজাকার
হকার-জোকার
পল্লীব›ধু-সোনাব›ধু
বুদ্ধিজীবী-বিপ্লবীকবি
জননেতা-নগরপিতা
অভিনেতা-জাতির পিতা
এবং শাদামনের মানুষ
বিকল্পধারার মানুষ
সব শ্রেণির মানুষ শামিল হয়ে কোলাকুলি করে বলে
ঈদ মোবারক আস্সালাম।
আমার অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের নিপূণ তুলিতে
শ্রদ্ধেয় শিাগুরু অধ্যাপক রাহাগীর মাহ্মুদ স্যারের হৃদয়ের নির্জন যমুনাতীরে
তিনি বলতেনÑ তোমার ছবি আঁকা সুন্দর
তোমার কবিতা শুনতেও বেশ ভালো লাগে
এমনি করে কবিতা ও ছবির মতো
দেশ ও গণমানুষের কথা বলবে
তোমার জন্যে ঐকান্তিক শুভাশীষ সতত...
অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
শৈশবে হারানো নত্রের রাতে
নানামণির মুখে গাজীকালু চম্পাবতীর পুঁথিপাঠের আসরে
আর বাবার বুকে শুয়ে
মায়ের মুখে ঘুমপাড়ানিয়া গানে।
তার গায়ে জড়ানো তারার ফুলের শাড়ির আঁচলে।
বোনের বেণিতে আমলকি ফুলের ঘ্রাণে।
আমার অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
ব›ধুবর আব্দুসসালাম ও আজিজা হায়দারের করকমলে
হয়তো ওরা টিএসসির মোড়ে দাঁয়িয়ে
পারুল শিমুল বকুলফুলের মালা বদল করে
আবার কখনো কলাভবনের লনে বসে যখন
হাতে হাতে
বুকে বুক
মুখে মুখ
ঠোঁটে ঠোঁট
চোখে চোখ
মনে মন
অন্তরে অন্তর
হৃদয়ে হৃদয়
প্রেমে প্রেম
কপোলে কপোল
রেখে স্বপ্নের পথ বয়ে চলে যায় বাঁধাহীন
তখন গানের পাখি বুলবুলি আর দোয়েলমণি বাজায় সুরের বীণ
আর যখন আকাশভঙা শব্দে
এয়ার এরাবিয়ার কোনো বিশেষ বিমান ল্যান্ড করে
তখনি প্রিয়া ছুটে যায় এয়ারপোর্টে
হাতে থাকে একগুচ্ছ শাদাগোলাপ
চোখে নীলসমুদ্ররঙের আইশেডো
পরনে কাজ করা প্রজাপতিহলুদ শাড়ি।
আমার অস্তিত্ব লীন হয়ে আছে
অবুঝ শিশুর আধো আধো কথা বলায়
সু-স্নিগ্ধ হাসিতে ও নিঃশব্দ পদচারণায়।
লালসবুজের আল্পনা
স্বাধীনতা তুমি চির সবুজের দেশ
যেখায় লাল আর সবুজের নাইকো শেষ।
স্বাধীনতা তুমি একটি চির অশান্ত নীড়
যেথায় সাড়ে সাতকোটি প্রতিবাদীমানুষের ভিড়
স্বাধীনতা তুমি
এতো অশান্ত, এতো প্রতিবাদী কেনো?
এ তো পাক হানাদারের প্রবল অত্যচার
বায়ান্ন, বাষট্টি, ঊনসত্তর, ..... একাত্তর যেনো।
স্বাধীনতা তুমি আসবে বলে
সোনালি সবুজ শস্যেেতর ভিতরে
হামাগুড়ি দিয়ে যে ছেলেছি বর্বর পশুদের তাড়াতে
দিয়ে ছিলো প্রাণটি বিলিয়ে।
বর্বর পশু! ওরা কারা?
পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী, বেহায়া ঋষি, ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মা
ত্রিশল মানুষের নির্মম খাদক
দুল মা-বোনের
সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিলো যারা।
স্বাধীনতা তুমি
এতো অভিমানী এতো নিথর নীরব কেন?
ভেবো না, ভেবো না গো কোনো দিন
তোমার জন্যে বুকে মাইন বেঁধে উত্তপ্ত রাজপথে
ট্যাংকের নিচে জীবন দিলো
কতো অজানা বীর সেনানী
তোমারই জন্যে বুকে শাদা ব্যাজ পরে
সোনার বাঙলার জাতীয় পতকা হা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।