আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামীণের আরও একটি চতুর সামাজিক ব্যবসা, গ্রামীণ ইনটেল সোস্যাল বিজনেস লিমিটেড!- গরিব মানুষের উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ আনলেও, গরিবরা তার অংশীদার নন।

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

গ্রামীণের সুনাম পুঁজি করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও একটি সামাজিক ব্যবসা শুরু করল গ্রামীণ ইনটেল। কিন্তু এ থেকে কোন লাভবান হবেন না গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা। গরিব মানুষের উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ আনলেও তার সামান্য অংশেরও অংশীদার নন তাঁরা। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে গ্রামীণ ইনটেল সোস্যাল বিজনেস লিমিটেড কার্যালয় সূত্র থেকে।

বলা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক বা এর কোন গ্রাহক এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন গ্রামীণের সুনাম পুঁজি করে এ ধরনের ব্যবস্থা কতটা নৈতিক এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ নামের সুনাম এসেছে প্রফেসর ইউনূসের উদ্ভাবনীমূলক সৃষ্টির সাফল্য থেকে। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্মের আগে থেকেই ড. ইউনূস তার কাজে গ্রামীণ নামটি ব্যবহার করে এসেছেন। জোবরা গ্রামে তিনি কৃষি ব্যাংকের যে শাখা পরিচালনা করেছিলেন সেটির নাম দিয়েছিলেন পরীক্ষামূলক গ্রামীণ শাখা। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যে প্রকল্প পরিচালনা করেছিলেন তার নাম দিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প। গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম।

প্রফেসর ড. ইউনূস তাঁর নেয়া সব উদ্যোগের সঙ্গে গ্রামীণ নামটি জুড়ে দিয়ে এসেছেন। দেশেও করেছেন, বিদেশেও করেছেন। পৃথিবীর বহুদেশে এই বাংলা শব্দটি অনেকের কাছে খুবই পরিচিত শব্দ, এটা অত্যন্ত সম্মানিত শব্দ। সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি ইনটেলের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সফরে এসে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ইমেজকে কাজে লাগান ড. ইউনূস।

আলোচনার মাধ্যমে উভয়ই তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক একটি সামাজিক ব্যবসা শুরু করার বিষয়ে একমত হন। পরে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে এসে ইনটেল এবং গ্রামীণ ট্রাস্ট যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করে গ্রামীণ ইনটেল সোস্যাল বিজনেস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। কোম্পানিতে ইনটেলের বিনিয়োগ বেশি থাকলেও শেয়ার রয়েছে ফিফটি ফিফটি। কিন্তু টাকার অঙ্কে ইনটেল ও গ্রামীণ ট্রাস্টের বিনিয়োগ কত এ বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে গ্রামীণ ইনটেলের প্রধান কার্যালয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এর চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে আউটলেট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ঋণ সহায়তাও দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে ২০১২ সালের ১ জুন ইনস্টিটিউট অব মাইক্রো ফিন্যান্সের সঙ্গে একটি এমওইউ সই করা হয়েছে।

বর্তমান গ্রামীণ ইনটেলের সোস্যাল বিজনেস লিমিটেডের রয়েছে চারটি প্রকল্প। একটি কৃষি খাতে অন্যটি স্বাস্থ্য খাতে। কৃষিভিত্তিক দুটি প্রকল্প হচ্ছে মৃত্তিকা এবং অঙ্কুর। এগুলো মূলত সফটওয়্যার। মৃত্তিকার মাধ্যমে কৃষকদের জমির মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়।

মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে গ্রামের কৃষকদের সার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। এর ফলে ফসল উৎপাদনের ব্যয় কমে আসার পাশাপাশি ফলন বাড়ে এবং জমির উর্বরা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় বলে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে। এছাড়া অঙ্কুর সফটওয়্যারটির আওতায় মাটির প্রকৃতি অনুসারে ফসল চাষে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সরবরাহ করা হয়। মাটির প্রকৃতি অনুসারে ঋতুভিত্তিক বীজ সরবরাহ করা এবং ফসল চাষে সহায়তা দেয়া হয়। এতে অধিক ফসল উৎপাদন করা যায় বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য খাতভিত্তিক দুইটি প্রকল্প হচ্ছে দোলনা এবং সুমাত্রা। এ দুটিও সফটওয়্যার। দোলনার মাধ্যমে নবজাতক শিশুর উন্নতি পর্যালোচনা করা হয়। স্থানীয় চিকিৎসকদের এ প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দেয় গ্রামীণ ইনটেল। সুমাত্রার গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

এ সময়ের নানা সমস্যা এবং করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। এগুলোর বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে গ্রামীণ ইনটেলের বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও পরীক্ষামূলভাবে তাদের কার্যক্রম চলছে। শীঘ্রই এই চারটি সফটওয়্যার প্যাকেজ আকারে বাজারে ছাড়া হবে। এখন পর্যন্ত বাজার সিস্টেম হচ্ছে তারা গ্রামে একজন কৃষককে সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে নির্ধারণ করে তাকে সফটওয়্যার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেয়া হয়। এই সামাজিক উদ্যোক্তো কৃষকদের কাছে গিয়ে তাদের জমি পরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করে।

এর বিনিময়ে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে সামান্য সম্মানী নিয়ে থাকেন। যা তিনি নিজের জন্য ব্যয় করেন। এ জন্য গ্রামীণ ইনটেলকে কিছু দিতে হবে না। এক্ষত্রে গ্রামীণ ইনটেলের লাভ কী এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে কোন লাভ নেই। কিন্তু পরোক্ষভাবে গরিব মানুষদের উপকার হচ্ছে।

ফসল ভাল হলে দেশের উন্নতি হবে। অন্যদিকে এ সাফল্য দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গ্রামীণ ইনটেলের কাছ থেকে সফটওয়্যার কিনবে। এতে একটি বড় অঙ্কের লাভ হবে। তাছাড়া অনেক দেশের সরকার ইতোমধ্যেই সফটওয়্যার কিনতে চাচ্ছে। কিনে তারা তাদের কৃষকদের ফ্রি সেবা দেবে।

এতে ওই দেশের কৃষকরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের কোন কোম্পানি যদি এ সফটওয়্যারগুলো কিনতে চায় তাদের কাছেও বিক্রি করা হবে। এত টাকা বিনিয়োগ করে ইনটেলের লাভ কী এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, সোস্যাল বিজনেসের নিয়মানুসারে একটি নিদিষ্ট সময় পরে ইনটেলের বিনিয়োগের টাকা (শুধু আসল) ফেরত দেয়া হবে। তারপর যা লাভ হবে এর কোন অংশই নেবে না ইনটেল। লাভের টাকা বাংলাদেশে অফিস স্টাবলিস্টমেন্টের কাজে ব্যয় করা হবে।

তারপরও লাভ হলে কোম্পানি প্রসারের কাজে ব্যয় করা হবে। এটি ইনটেলের এক ধরনের সিএসআরের মতো। লাভের টাকা কোনভাবেই ব্যক্তিগতভাবে কেউ সরাসরি লাভবান হবেন না। গ্রামীণের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন প্রসঙ্গে ইউনূস সেন্টার থেকে বলা হচ্ছে, গ্রামীণ নামধারী ৫৪টি কোম্পানিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন বিনিয়োগ করা হয়নি। বিভিন্ন কোম্পানিতে বিভিন্ন সূত্র থেকে এই মূলধন এসেছে।

অনেকের মূলধন এসেছে দাতা সংস্থার অনুদান থেকে। কোনটির বিনিয়োগ এসেছে অন্য প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ থেকে। কোন প্রতিষ্ঠানই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থের সূত্র কী, সে টাকা কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিটকৃত আর্থিক প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে। সেই প্রতিবেদন প্রতিবছর সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়।

সুত্র

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.