আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেড়িয়ে আসুন প্রকৃতির লীলাভূমি সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে



যেখানে আকাশ পাহাড় ও ঝর্ণা মিলে মিশে একাকার আর হাতছানি দিয়ে ডাকে সমুদ্র সেই অপরুপ প্রকৃতির নাম সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের ফকিরহাট এলাকার ১কিঃমি পূর্ব দিকে পৌরানিক স্মৃতি বিজড়িত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গড়ে উঠেছে সীতাকুণ্ডের অন্যতম প্রাকৃতিক সোন্দর্য্য মন্ডিত পর্যটন স্পট সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সোন্দর্য্যরে কারনে প্রতি বছর এখানে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে থাকে। আর এখানে এসে প্রকৃতির অপরুপ শোভা দেখে মুগ্ধ হন তারা। এভাবে বিগত এক দশকে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যালের নাম।

আর তাই প্রতিবছর এখানে ছুটে আসেন ভ্রমন পিপাসু মানুষ। তরুন বয়সে জাতীয় কবি নজরুল চট্টগ্রাম সফরকালে এ পাহাড়ে এসে দারুন মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন “ আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ, সেই পাহাড়ের ঝর্ণায় আমি উদাও হয়ে রই”। যে সোন্দর্য্য দেখে বিদ্রোহী কবি নজরুলের মনে বিদ্রোহী আগুন নিভে যায়, বিদ্রোহী কবি হয়ে উঠেন রোমান্টিক সেই রুপ দেখে মুগ্ধ হবে না এমন মানুষ বোধকরি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তাই বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কবি নজরুলের øৃতি বিজড়িত এই স্থানে ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন স্থাপন করলে দেশবাসীর কাছে একটি অন্যতম আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটে পরিনত হয় এটি। সেই থেকে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে ইকোপার্ক।

কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু এবার। অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এখানে অনেক পর্যটকের আগমনের পরিবর্তে এখানো খাঁ খাঁ শূণ্যতা বিরাজ করছে এখনো। ফকিরহাট বাজার থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ১০ মিনিটেই পোঁছানো যায় ইকোপার্কে। পার্কের মুল ফটকে এলে পাওয়া যায় প্রবেশ টিকিট । জনপ্রতি মাত্র ১০ টাকার টিকিটে ঘোরা যায় পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের সর্বত্রই।

পার্কের মুখেই রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা। কেউ ইচ্ছে করলে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন উপরেও। তবে সেক্ষেত্রে টেক্সী, মোটর সাইকেল, মাইক্রো বা অন্য গাড়ি ভেদে ট্রাভল চার্জ দিতে হয়। পার্কে প্রবেশ করে দেখাযায়, দুয়েকজন পর্যটক এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। ১৯৯৬ একরের বিশাল পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে এ সামান্য কয়েকজন পর্যটককে দিগন্ত জোড়া মরুভূমিতে এক ছিঁটে জলের মতই মনে হচ্ছিল।

গার্ডেনের রক্ষনাবেক্ষনের নিযুক্ত কর্মী জিতেন বাবুর সাথে কথা বলে জানাযায়, ইকোপার্কের অন্যতম মূল আকর্ষন হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও হাজারো রকমের দুর্লভ প্রজাতির গাছ। তাছাড়া পার্কের চুড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখাযায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। গাইডদের মতে পার্ক থেকে মাত্র কয়েক কিঃমি পশ্চিমে এই সমুদ্র হওয়ায় বিকেলে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই এখানে এলে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখে যান। আর এক ঢিলে দুই পাখি পাহাড় ও সমুদ্র দর্শন করে আবেগে আপ্লুত হন সবাই। এখানে বেড়াতে আসা এক পর্যটক চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র ফরহাদ বলেন, শহুরে একঘেঁয়ে জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এমন পাহাড়ী নির্জনতা নিঃসন্দেহে সবার কাছে আকর্ষণীয়।

তিনি আরো বলেন, এখানকার মূল আকর্ষণ যে ঝর্ণাটি তা দেখে তিনি মুগ্ধ। এছাড়া এখানকার বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন অনেক অজানা দূর্লভ বৃক্ষের নাম পরিচয়। যা তার চলার পথে অনেক কাজে লাগবে বলে তার ধারণা। ফরহাদের মতই পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা পথের বাঁকের সবুজ অরণ্যে মন হারান অনেকেই। সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতরের যে সোন্দর্য্য তা এক কথায় অপরুপ।

এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউস, গ্রীণ হাউস, পদ্ম পুকুর, ভ্যালি ব্রীজ, প্রাকৃতিক লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। ভাগ্য ভালো হলে দেখা পেতে পারেন বাঁদর, নানারকম মায়া হরিণ সহ কয়েক প্রকার বণ্য প্রাণীরও। সা¤প্রতিক সময়ে এখানে পর্যটকের হার কমে যাওয়ার কারণ ইকোপার্ক নিয়ে মিডিয়া প্রথম দিকে যেমন ভূমিকা রেখেছিল বর্তমানে তা নেই। এখন সাংবাদিকরা শুধু কক্সবাজার, সুন্দরবন, সেন্ট মার্টিন, রাঙ্গামাটি নিয়ে আছে। ফলে পর্যটকরাও এসব জায়গাতেই বেড়াতে যাচ্ছে।

এদিকে পর্যটকরা এমন বললেও আকর্ষণীয় এই পর্যটন সেক্টরে কেন পর্যটকদের আগমন কমে গেছে এ প্রসঙ্গে পার্কের ইজারাদার জামাল হোসেনের সহযোগি সার্বিক পরিচালক মোঃ নাছির বলেন, আসলে এবার বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে নির্বাচনী আমেজ বইছে। ফলে সাধারণ মানুষ ভ্রমন মূখী না হয়ে নির্বাচন মূখী ছিলেন। তাই এতদিন পর্যটক কিছুটা কম হলেও এবার পর্যটকের হার বাড়বে বলে তিনি ধারণা করেন। নাছির আরো বলেন, ইকোপার্ক এত সুন্দর যে এখানে যারা একবার বেড়াতে আসেন তারা আবার না এসে পারেন না। পর্যটকদের আগমন আছে বলেই তারা ১৬ লাখের ও বেশি টাকা দিয়েও পার্কটি ইজারা নেওয়ার সাহস করেন।

অবশ্য ইজারাদারদের এই সাহসের কারণও আছে। ইকোপার্কের নয়নাভিরাম সোন্দর্য্যরে মত শক্তি হাতে থাকলে এমন বাজি ধরা যায় বৈকী। আর তাই অল্প দিনেই যে আবারো ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে তা বলা যায় হলপ করেই। তাই এই শীতে আপনিও পারেন একবার ঘুরে আসতে কবি নজরুলকে মুগ্ধ করা সেই ঝর্ণা, পাহাড় ও আকাশের মিলনস্থল থেকে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.