আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রমিত বাংলা বানান রীতি (২): ষত্ব বিধান!

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
মূল নিয়ম ষত্ব বিধান বা মূর্ধন্য-ষ এর নিয়ম কেবলমাত্র তৎসম শব্দের (যে সকল শব্দ সংস্কৃত থেকে অবিকৃত অবস্থায় এসেছে) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অ-তৎসম তথা অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ষত্ব-বিধি প্রযোজ্য নয়। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে মূর্ধন্য-ষ ব্যবহার করা অনুচিত। ___________________________________________ ২: তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ষ-এর নিয়ম ২.১ ঋ বা ঋ-কার এর পর ষ (ণত্ব বিধানের মতো) ঋষি, কৃষক, কৃষ্ণ, তৃষা, তৃষ্ণা, বৃষোৎসব ব্যতিক্রম কৃশ্ ধাতুর বানানে শ বর্ণটি ধাতুটি থেকে উদ্ভূত শব্দেও অপরিবর্তিত থাকবে: কৃশকায়, কৃশাঙ্গ, কৃশোদর ২.২ রেফ-এর পরে ষ (ণত্ব বিধানের মতো) অকর্ষিত, অনুচিকির্ষা, অমর্ষণ (ক্ষমাহীনতা), অয়স্কর্ষণী (চৌম্বকীয়), অভিকর্ষ, আকর্ষণ, ঈর্ষা, উপচিকির্ষা, বর্ষণ, বর্ষীয়াণ, মুমূর্ষু, সপ্তর্ষি, সহর্ষ ব্যতিক্রম অর্শ, আদর্শ, দর্শন, পরামর্শ, পার্শ্ব, স্পর্শ, পারদর্শী প্রভৃতি।

২.৩ যুক্তব্যঞ্জনে ট, ঠ এর পূর্ববর্তী শীষ ধ্বনি হিসেবে ষ (আংশিক ণত্ব বিধানের মতো) ষ্ট (ষ+ট) অনিষ্ট, অন্বিষ্ট, আড়ষ্ট, আষ্টেপৃষ্ঠে, আবিষ্ট, হৃষ্টপুষ্ট ষ্ঠ (ষ+ঠ) ওষ্ঠ, বয়োজ্যেষ্ঠ, গরিষ্ঠ, সুষ্ঠু তৎসম শব্দের বানানে এই নিয়মটির কোনো ব্যতিক্রম নেই, তাই প্রচুর শব্দ এই নিয়মের ভেতর এসে যায়। দ্রষ্টব্য বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ষ হবে না, এমনকি st যুগ্মবর্ণের ক্ষেত্রেও। st=স্ট হবে: রোলারকোস্টার, পোস্ট। ২.৪ ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কিছু ধাতুর (শব্দের মূল অংশ) দন্ত-স স্থানে ষ ই-কারান্ত উপসর্গ (অভি-, নি-, পরি-, প্রতি-, বি-); উ-কারান্ত উপসর্গ (অনু-, সু-) এদের পর কতিপয় ধাতুর (সন্‌জ, সদ্‌, সিচ্‌, সিধ্‌, সেন্‌, সেব্‌, স্থা, স্বপ্‌) দন্ত-স মূর্ধন্য-ষ তে পরিণত হবে। ইঃ/উঃ + ক/খ/প/ফ = ইষ্/উষ্ + ক/খ/প/ফ অভি-: সঙ্গ->অভিষঙ্গ; সিক্ত->অভিষিক্ত নি-: সিক্ত->নিষিক্ত; সুপ্ত->নিষুপ্ত পরি-: সদ->পরিষদ (সভাসদ'র সাথে তুলনা করুন); সেবা->পরিষেবা প্রতি-: সিদ্ধ->প্রতিসিদ্ধ, প্রতিষেধক বি-: সম->বিষম, সহ->দুর্বিষহ অনু-: সঙ্গ->অনুষঙ্গ, অনুষঙ্গী সু-: সুপ্তি->সুষুপ্তি, সম->সুষম দ্রষ্টব্য অন্যান্য ধাতুর ক্ষেত্রে (যেমন সম->অবিসংবাদিত, প্রতিসংহার, অভিসন্ধি, অভিসন্তাপ) দন্ত-স পরিবর্তিত হবে না।

২.৫ সন্ধিতে বিসর্গ-স্থানে মূর্ধন্য-ষ (এটি অনেকটা ২.৪ এর মতো) সন্ধিতে বিসর্গযুক্ত ই-কার (যেমন আবিঃ, বহিঃ, নিঃ) বা উ-কার (যেমন দুঃ, চতুঃ, প্রাদুঃ) এর পর ক/খ/প/ফ এর যেকোনটি থাকলে বিসর্গ-স্থানে ষ হয়: সন্ধির ক্ষেত্রে ইঃ/উঃ + ক/খ/প/ফ = ইষ্/উষ্ + ক/খ/প/ফ আবিষ্কার (আবিঃ+কার), বহিষ্কার (বহিঃ+কার), নিষ্কাম (নিঃ+কাম) দুষ্কর (দুঃ+কর), চতুষ্পদ (চতুঃ+পদ), ভ্রাতুষ্পুত্র (ভ্রাতুঃ+পুত্র) ২.৬ -সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত-স কখনো পরিবর্তিত হয়ে ষ হবে না; স্পৃহ, স্পন্দ্, স্ফুর্, স্ফুট্ ধাতুর স'ও অপরিবর্তনীয় ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, আত্মসাৎ নিস্পৃহ, নিস্পন্দ, বিস্ফোরণ, পরিস্ফুট ২.৭ খাঁটি বাংলা ও বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না ২.৮ নিত্য মূর্ধন্য-ষ আষাঢ়, ঈষৎ, উষ্ণ, ঊষা, ঔষধ, কোষ, তুষার কন্যা/আহাসান, পুরুষ, পুষ্প, প্রত্যূষ, পাষাণ, ভূষণ, ভীষণ, ভীষ্ম, মহিষ, বিশেষ্য, বিশেষণ, বৃষ, মুষিক, মেষ, শোষণ, ষোড়শ, ষণ্ড। একটি বেশ কার্যকর সাধারণ নিয়ম: সচরাচর বানানে স না ষ হবে, এই সমস্যাটিই বড়; শ-এর সমস্যা তত নয়। স/ষ নির্ধারণ করার জন্য বর্ণটির আগের স্বরধ্বনি লক্ষ্য করা যেতে পারে: স্বরধ্বনি অ/আ হলে স, এছাড়া ই/ঈ, উ/ঊ, প্রভৃতি হলে ষ, ২.৬ এর ব্যতিক্রমগুলি ছাড়া। যেমন পুরস্কার--পরিষ্কার কল্যাণীয়াসু--কল্যাণীয়েষু, শ্রদ্ধাষ্পদেষু জিগীষা, জিজীবিষা, মুমূর্ষু, শুশ্রূষা
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.