আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূলধারা '৭১।। ২৫ মার্চের কালো রাত্রি ও তাজউদ্দিনের ভারত আগমন

রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে

মঈদুল হাসানের মূলধারা '৭১ নিয়ে দুটো পোস্ট দিয়েছিলাম। মৌলিক কোনো লেখা নয় বরং প্রথম দুই অধ্যায় তুলে দিয়েছিলাম। তাতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাই। তিনি মূলধারা '৭১ বইটি নিয়ে চমৎকার একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট দেন। Click This Link আমাদের শামীমের মন্তব্য ছিল সময় পেলেই সে বইটি পড়ে।

আমি শামীমের সাথে একমত। এই বইটি প্রতিটি বাঙালীর পড়া উচিৎ। খানিকটা উদ্ধত হয়েও বলা যায় এটি অবশ্যই অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিৎ। কেন সেটি জানতে আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাইয়ের পোস্ট পড়ে বুঝতে পারবেন। আর ব্লগারদের যে বড় অংশ বইটি পড়েরেন তারা নিশ্চই শামীমের সাথে একমত হবেন।

আমি নতুন করে বইটি নিয়ে পোস্ট দিতে আগ্রহ বোধ করছি। ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়লে সবাইকে ডেকে ডেকে পড়াতে ইচ্ছা করে আমার। মুভির বেলাও এটা সত্যি। সেই তাড়না থেকেই। ঠিক করেছি, অধ্যায় ধরে ধরে বইটি আমি এখানে পোস্ট করবো।

তবে একটা স্বাধীনতা নিতে চাই। আমি পড়া সুবিধার জন্য অধ্যায়গুলোর নাম দিতে চাই। আগের দেওয়া একটি পোস্টও আবার নতুন করে দিতে চাই। যাতে ধারাবাহিকতাটা থাকে। ২৫ মার্চের কালো রাত্রি ও তাজউদ্দিনের ভারত আগমন ২৫/২৬শে মার্চে নিরস্ত্র জনতার উপর পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ সামরিক বর্বরতার ক্ষেত্রে সর্বকালের দৃষ্টান্তকে ম্লান করে ফেললেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই আক্রমণ ছিল দুর্বল এবং মূলত আত্মঘাতী।

পূর্ব বাংলার সর্বস্তরের অধিবাসীদের মধ্যে তুলনাহীন ভীতির সঞ্চার করে পাকিস্তানী রাষ্ট্রের প্রতি তাদের আনুগত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু ঢাকার বুকে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু করায় এবং বিশেষ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর সদর দফতরের উপর পাকিস্তানী বাহিনীর ঢালাও আক্রমণ চালাবার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঢাকার বাইরে ঘটনা মোড় নেয় অভাবনীয় বিদ্রোহের পথে। ঢাকার রাজারবাগ ও পিলখানায় এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানী বাহিনী যথাক্রমে বাঙালী পুলিশ, ইপিআর এবং ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’ (ইবিআর)-এর সৈন্যদের পাইকারীভাবে হত্যা করতে শুরু করেছে এই সব সংবাদ আগুনের মত সারা প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন স্হানে সশস্ত্রবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী অংশ আত্মরক্ষা ও দেশাত্মবোধের মিলিত তাগিদে, উচ্চতর রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারো আহ্বান ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই, বিদ্রোহ শুরু করে। এর ফলে সেনাবাহিনীর নির্মম ও সর্বাত্মক আক্রমণের মাধ্যমে মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানী কর্তৃত্ব পুনঃপ্রবর্তনের যে পরিকল্পনা টিক্কা খানের ছিল,৫ তা বহুলাংশে ব্যর্থ হয়।

সশস্ত্রবাহিনীর বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহ এবং উদ্ভূত খণ্ডযুদ্ধের মধ্যে চট্টগ্রামস্হিত ৮ইবি ও ইপিআর বাহিনীর সশস্ত্র প্রতিরোধ একটি বিশেষ কারণে উল্লেখযোগ্য। স্বল্পকালের জন্য চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র যখন বিদ্রোহীদের দখলে আসে, তখন ২৬শে মার্চ স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান এবং ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় ৮ইবির বিদ্রোহী নেতা মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় নিজেকে ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসেবে ঘোষণা করলেও, পরদিন স্হানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। এই সব ঘোষণায় বিদ্যুতের মত লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, শেখ মুজিবের নির্দেশে সশস্ত্রবাহিনীর বাঙালীরা স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই শুরু করেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বেতারের এই সব ঘোষণার পিছনে না ছিল এ ধরনের রাজনৈতিক অনুমোদন, না ছিল কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি।

অন্যদিকে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, বেপরোয়া গোলাগুলি ও অগ্নি-সংযোগের মুখে রাজনৈতিক নেতা, কর্মী এবং সশস্ত্রবাহিনীর বিদ্রোহী বাঙালীরা তো বটেই, বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষও নিরাপত্তার সন্ধানে শহর থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে শুরু করে, প্রথমে হাজারের অঙ্কে, পরে লক্ষের - বিরামহীন, বিরতিহীন। এমনিভাবে পাকিস্তানের আঞ্চলিক বিরোধ ও গৃহযুদ্ধের সাথে ভারত ক্রমশ জড়িত হয়ে পড়ে এই ভীত সন্ত্রস্ত শরণার্থীদের জোয়ারে। ৬ চৌদ্দশ’ মাইল স্হল-সীমান্ত বিশিষ্ট কোন অঞ্চলের উপর যে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীর পরীক্ষিত ‘সমাধান’ চাপিয়ে দেয়া যায় না, এই উপলব্ধি টিক্কা খানের পরিকল্পনায় ছিল মর্মান্তিকভাবেই অনুপস্হিত। পূর্ব বাংলার এই অনন্য ভূরাজনৈতিক অবস্হানের জন্য একদিকে যেমন পাকিস্তানী আক্রমণ ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তেমনি অন্যদিকে আক্রান্ত পূর্ববঙ্গবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম ক্রমশ এক সফল মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। সামরিক আক্রমণের অবর্ণনীয় ভয়াবহতার ফলে সাধারণ মানুষের চোখে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও আদর্শগত অস্তিত্বের অবশিষ্ট যুক্তি রাতারাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

এই ভয়াবহতা থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায় হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম অধিকাংশ মানুষের নৈতিক সমর্থন লাভ করে। আর যারা আক্রান্ত অথবা বিশেষ আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হয়, তারা অচিরে জড়িয়ে পড়ে প্রতিরোধের লড়াইয়ে। ২৬শে মার্চের পর থেকে প্রথম দশ দিনের মধ্যেই এই প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃত্বে তিনটি স্বতন্ত্র উদ্যোগ পরিস্ফুট হয়। প্রথম উদ্যোগ ছিল আক্রান্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর-এর সেনা ও অফিসারদের সমবায়ে গঠিত। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সকল বাঙালী সৈন্য ও অফিসারই যে এতে যোগ দিয়েছিল তা নয়।

অনেকে নিরস্ত্রকৃত হয়েছে, অনেকে বন্দী হয়ে থেকেছে, আবার অনেকে শেষ অবধি পাকিস্তানীদের পক্ষে সক্রিয় থেকেছে। বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ যুদ্ধে ইপিআরদের অংশগ্রহণ বরং ছিল অনেক বেশী ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত। যেমন ছিল বাঙালী পুলিশদের। মেজর জিয়ার ঘোষণা এবং বিদ্রোহী ইউনিটগুলির মধ্যে বেতার যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হবার ফলে এই সব স্হানীয় ও খণ্ড বিদ্রোহ দ্রুত সংহত হতে শুরু করে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িত হবার বিষয়টি এদের জন্য মুখ্যত ছিল অপরিকল্পিত, স্বতঃস্ফূর্ত এবং উপস্হিত সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

এই যুদ্ধের রাজনৈতিক উপাদান সম্পর্কে এদের অধিকাংশের জ্ঞানও ছিল সীমিত। তবু বিদ্রোহ ঘোষণার সাথে সাথে পাকিস্তানী বাহিনী সীমান্ত পর্যন্ত এমনভাবে এদের তাড়া করে নিয়ে যায় যে এদের জন্য পাকিস্তানে ফিরে আসার পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়। ৭ হয় ‘কোর্ট মার্শাল’ নতুবা স্বাধীনতা - এই দুটি ছাড়া অপর সকল পথই তাদের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে। এমনিভাবে পাকিস্তানী আক্রমণের এক সপ্তাহের মধ্যে স্বাধীনতার লড়াইয়ে শামিল হয় প্রায় এগারো হাজার ইবিআর এবং ইপিআর-এর অভিজ্ঞ সশস্ত্র যোদ্ধা - কখনও কোন রাজনৈতিক আপোস-মীমাংসা ঘটলেও দেশে ফেরার পথ যাদের জন্য ছিল বন্ধ, যতদিন না বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানীরা সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত হয়। প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় উদ্যোগের সমাবেশ ও গঠন প্রথম ধারার মত ঠিক আকস্মিক, অপরিকল্পিত বা অরাজনৈতিক ছিল না।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী যুব সংগঠনের চারজন নেতা শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমদ ও আবদুর রাজ্জাক সরাসরি কোলকাতায় এসে পড়েন। শেখ মুজিবের বিশেষ আস্হাভাজন হিসাবে পরিচিত এই চার যুব নেতারই আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মীদের উপর বিশেষ প্রভাব ছিল। বিশেষ করে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে এই তরুণ নেতাদের ক্ষমতা অসামান্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ভারতে প্রবেশের পর থেকে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপারে এক স্বতন্ত্র গোষ্ঠীগত ভূমিকা গ্রহণ করেন। এদের নেতৃত্বে এবং ভারতীয় বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্হা 'Research and Analysis Wing' (RAW)-এর পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মুজিব বাহিনী’ নামে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন এক সশস্ত্রবাহিনীর জন্ম হয়, এক সময় যার কার্যকলাপ স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনেকখানি বিভক্ত করে ফেলে।

এই সংস্হার সাথে তাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ আকস্মিক ছিল না। যতদূর জানা যায়, পাকিস্তানী শাসকবর্গ যদি কোন সময় পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসী হয়, তবে সেই আপৎকালে আওয়ামী লীগপন্হী যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং প্রদানের জন্য শেখ মুজিব ভারত সরকারকে এক অনুরোধ করেছিলেন। এই ট্রেনিং যে উপরোক্ত চার যুব নেতার অধীনে পরিচালিত হবে সে কথা সম্ভবত মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের কোন এক পর্যায়ে তিনি ভারত সরকারকে জানান। শেখ মুজিবের এই কথিত অনুরোধের সত্যাসত্য নিরূপণের কোন উপায় না থাকলেও, এই চার যুবনেতা সীমান্ত অতিক্রম করার পর প্রাকাশ্যে দাবী করতে থাকেন যে, সশস্ত্রবাহিনী ট্রেনিং এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনার জন্য শেখ মুজিব কেবল মাত্র তাঁদের চারজনের ওপরেই দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, অপর কারো ওপরে নয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ অবধি তাদের এই দাবী ও ভূমিকা অপরিবর্তিত থাকে।

প্রতিরোধ যুদ্ধের তৃতীয় উদ্যোগ যদিও অচিরেই স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান ধারায় পরিণত হয়, তবু সূচনায় তা না ছিল বাঙালী সশস্ত্রবাহিনীর বিদ্রোহের মত অভাবিত, না ছিল যুব ধারার মত ‘অধিকারপ্রাপ্ত’। পাকিস্তানী আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে কার্যত সমগ্র আওয়ামী লীগ সংগঠন দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আক্রমণের অভাবনীয় ভয়াবহতা, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী নেতার কারাবরণ, পরবর্তী কর্মপন্হা ও নেতৃত্ব সম্পর্কে সম্যক অনিশ্চয়তা ইত্যাকার বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও মূলত মধ্যবিত্ত নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগ এক দুর্লভ বৈপ্লবিক পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে প্রয়াসী হয়। আওয়ামী লীগের এই প্রয়াসে অনেক নেতা এবং অগণিত কর্মীর অবদান ছিল। এদের মধ্যে মত ও পথের বিভিন্নতাও ছিল বিস্তর।

তৎসত্ত্বেও সামগ্রিক বিচারে এই দল পরিণত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান রাজনৈতিক যন্ত্রে। এবং যন্ত্রের চালক হিসাবে একজনের ভূমিকা ছিল সন্দেহাতীতরূপে অনন্য। তিনি তাজউদ্দিন আহমদ। তাজউদ্দিন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, দুই দশকেরও অধিক কাল ধরে শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হবার পর থেকে সকল দলীয় নীতি ও কর্মসূচীর অন্যতম মুখ্য প্রণেতা, দলের সকল মূল কর্মকাণ্ডের নেপথ্য ও আত্মপ্রচার-বিমুখ সংগঠক। ’৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের সামগ্রিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজিবের পরেই ছিল সম্ভবত তাঁর স্হান।

২৫শে মার্চের সন্ধ্যায় যখন পাকিস্তানী আক্রমণ অত্যাসন্ন, তখন শেখ মুজিব তাজউদ্দিনকে ঢাকারই শহরতলিতে আত্মগোপন করার নির্দেশ দেন যাতে ‘শীঘ্রই তাঁরা পুনরায় একত্রিত হতে পারেন’। ৮ তারপর এক নাগাড়ে প্রায় তেত্রিশ ঘণ্টা গোলাগুলির বিরামহীন শব্দে তাজউদ্দিনের বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি-যে অনুমানের ভিত্তিতেই তাঁকে শহরতলিতে অপেক্ষা করতে বলা হয়ে থাকুক, তার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। তরুণ সহকর্মী আমিরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ২৭শে মার্চ ঢাকা ত্যাগের আগে দলের কোন নেতৃস্হানীয় সদস্যের সাথে আলাপ-পরামর্শের কোন সুযোগ তাজউদ্দিনের ছিল না। ৯ তা সত্ত্বেও পরবর্তী লক্ষ্য ও পন্হা সম্পর্কে দুটি সিদ্ধান্ত নিতে তাঁদের কোন বিলম্ব ঘটেনি: (১) পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক আঘাতের মাধ্যমে যে নতুন পরিস্হিতির সৃষ্টি হয় তার হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাবার একমাত্র উপায় হলো সশস্ত্র প্রতিরোধ তথা মুক্তির লড়াই; (২) এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামকে সংগঠিত করার প্রাথমিক ও অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ হিসাবে ভারত ও অন্যান্য সহানুভূতিশীল মহলের সাহায্য-সহযোগিতা লাভের জন্য অবিলম্বে সচেষ্ট হওয়া। ১০ প্রথমে আত্মরক্ষা, তারপর প্রস্তুতি এবং সব শেষে পাল্টা-আঘাতের পর্যায়ক্রমিক লক্ষ্য স্হির করে সসঙ্গী তাজউদ্দিন ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ার পথে পশ্চিম বাংলার সীমান্তে গিয়ে হাজির হন ৩০শে মার্চের সন্ধ্যায়।

সারা বাংলাদেশে তখন বিদ্রোহের আগুন। বিদ্রোহী সিপাহীদের পাশে প্রতিরোধ সংগ্রামে যোগ দিয়েছে দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা। স্বাধীনতার জন্য সারা দেশ একতাবদ্ধ। ৫. ‘Operation Searchlight’, Siddiq Salik: Witness to Surrender, p. 218-24. Back to main text ৬. পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলের সঙ্কটে ভারতের হস্তক্ষেপকে একটি ‘সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ ফল হিসাবে বারবার দাবী করে এলেও পরবর্তীকালে অপেক্ষাকৃত নিরুত্তপ্ত পরিস্হিতিতে তাদের সামরিক গবেষকরাও স্বীকার করেন “On the civil side, masses of people were so awestruck by the military action that they first fled from the cities... into the rural sanctuaries and then crossed the border. That was how the endless refugee exodus got underway. But for the refugee exodus, situation in East Pakistan would have remained localised and controlled.”_Brigadier (Rtd) A. R. Siddiqui, পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত Defence Journal, Vol III. No 12, 1977, p. 2. Back to main text ৭. “By April 10, when according to original estimate of the forces commander Gen. Tikka Khan, the entire province would have been fully normalised, a warlike situation had actually come into evidence. The province had turned into a theatre of war and its various districts into so many battle Zones. The army in hot pursuit of EBR and EPR deserters, spread all over the province.... The moment the bulk of the deserters (miscreants!) were chased out of East Pakistan the commanders appeared to have been led into dangerous belief that the battle has already been won.... The CGS General Gul Hasan after his visit to East Pakistan in second week praised the boys `for wonderful performance’ and appraised that everything ‘under full control and going according to the plan’.” (ঐ,পৃ. ৩)। Back to main text ৮. তাজউদ্দিন আহমদ, একান্ত সাক্ষাৎকার, সেপ্টেম্বর, ১৯৭২।

Back to main text ৯. ঐ এবং আমিরুল ইসলাম। Back to main text ১০. ঐ। Back to main text

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.