আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিনিক্স

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...

১ম পর্ব বাস ছেড়ে দেয়। বাইরে বৃষ্টির জোরটা আরো বেড়েছে। ভিজা কাপড় ছেলেটার গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। বাসের সিট ভিজে যাচ্ছে ভেজা মাথা থেকে পানি পড়ে। সেদিকে ছেলেটার কোন খেয়াল নেই।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে ছেলেটার মনে হয় প্রাণ নেই। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। মনে হয় বাইরে শহর ছেড়ে ছুটে চলা বাসের ভেজা জানলায় বাইরের দোকানের আলো গুলোকে সরে যেতে দেখছে বুঝি। কিন্তু না। ছেলেটার কোন দিকেই খেয়াল নেই।

তার চোখে ভেসে উঠছে গত তিন বছরের অসংখ্য স্মৃতি। কত স্মৃতি এই শহরটার প্রতিটা পথে পথে। সবগুলো স্মৃতিইতো মেয়েটাকে নিয়ে। এই পথ ধরেই কতবার না সে রিক্সায় করে মেয়েটাকে নিয়ে ফিরেছে। কতবার রাস্তার পাশের ওই চায়ের দোকানে দাড়িয়ে দুজন চা খেয়েছে।

কতবার ঝগড়া করে দুজন দু দিকে চলে গেছে। পরের দিনে আবার দেখা করেছে এই পথের পাশেরই কোন রেস্তোরায়। মাঝরাতে মোবাইলের কার্ড শেষ হয়ে যাওয়ায় কতবার ওই মোড়ের দোকানদারকে ঘুম থেকে তুলেছে। মেয়েটার ফোন অফ পেয়ে এই শহরের পথে পথে ঘুরেছে সারারাত আর বারবার ফোনে ওপাশ থেকে ‘দুঃখিত এই মূহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না..’ এই কন্ঠস্বরের বদলে অন্য খুব পরিচিত একটা কন্ঠের জন্য মিনিটে মিনিটে ফোন করে চলেছে। এই শহরের প্রতিটা ধূলিকনায় যে স্মৃতি।

কতবার মেয়েটার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছে চার রাস্তার মোড়ের ওই ফোনের দোকানটাতে। বৃষ্টির ছাট থেকে বাঁচার জন্য কতবার একটা মাত্র ছাতার তলে দুজন গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে থেকেছে একটাও রিক্সা না পেয়ে। মিথ্যা অভিমানে কতবার মেয়েটা কতটা তাকে ভালোবাসে সেটা পরীক্ষা করে দেখতে গিয়ে উল্টো ঝগড়া বাজিয়ে দিয়েছে আর মনে মনে বার বার নিজের শ্রাদ্ধ করেছে। এই শহরের প্রতিটা বালুকনায় যে তাদের কত স্মৃতি। যাকে ছাড়া কাটে নি ছেলেটির একটি দিনও, ঘন্টায় ঘন্টায় যার মিসকল না পেলে ছেলেটি পাগল হয়ে যেতো,পড়ার মাঝে বইয়ের পাতায়,বন্ধুদের সাথে টুয়েন্টি নাইনের আসরে, মামার চায়ের দোকানের আড্ডায় সব জায়গায় উপস্থিত না থেকেও মেয়েটি যে থাকতো সবসময়, সেই মেয়েটির আজ বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

এই সময়, যখন ছেলেটি দ্রুতগামী বাসে চড়ে ছুটে চলেছে স্মৃতির এই শহর ছেড়ে তখন শহরের কোন এক কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের মঞ্চে হয়তো মেয়েটি বসে আছে নতুন সঙ্গীর পাশে। এই ঝুম বৃষ্টির মাঝেও হয়তো সেখানে বিয়ের আনন্দ এতটুকু মলিন হয় নি। নিরবে ছেলেটির দু গাল বেয়ে জল নামে। বাসের বৃষ্টি ভেজা ঝাপসা কাচের ভেতর দিয়ে বাইরের আলোগুলো আরো ঝাপসা হয়ে আসে ছেলেটার চোখে। অন্ধকারে বাসের কেউ সেটা দেখতে পায় না।

আর কখনো এই পাহাড় ঘেরা সুন্দর শহরটাতে ছেলেটি ফিরবে না ঠিক করে। কখনো না। তার জীবনটাই যে শেষ হয়ে গেলো। ভালো থাকুক মেয়েটি, মনে মনে বলে ছেলেটি। আর কথনো সে এই শহরে ফিরবে না, কখনো না, জীবনেও না।

ছেলেটা সাথে প্রকৃতিও কেঁদে উঠে। আরো জোরে নামে বৃষ্টি। বাসের ভেতর তখন মৃদু ভলিউমে বাজছে 'একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে,ফিরবে না সে তো আর কারো আকাশে। ' ২য় পর্ব বিয়ের পর কোথায় বেড়াতে যাবে ভাবছিলো ওরা। ছেলেটি না চাইলেও বাসার সবাই ওদের জোর করে পাহাড় ঘেরা এই শহরটাতেই পাঠালো।

প্রায় দুই বছর পর ছেলেটি এলো শহরটাতে। শহরের সবকিছুই তার এতো চেনা। কিছুই বদলায় নি শহরটার। চার রাস্তার মোড়ের সেই ফোনের দোকানটা আছে, আছে সেই দোকানটাও যেখান থেকে মাঝরাতে দোকানীকে ডেকে মোবাইল কার্ড কিনতো। কতই না পাগলামী করেছে সেই সময়টাতে, ভেবে ছেলেটা নিজেই এখন হাসে।

সেইসব ছেলেমানুষী দিনগুলো। শহরটাতে খুব দারুন কাটে নতুন বিবাহিত জুটিটির। ছেলেটি তার জীবনসঙ্গীনি কে পুরো শহরটা ঘুরে দেখায়। অসম্ভব সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে যখন তারা শহর ছেড়ে যাবার জন্য বাসে উঠে তখনই অঝোরে বৃষ্টি নামে। দু বছর আগের সেই শহর ছেড়ে যাওয়ার দিনটির কথা মনে পরে ছেলেটির।

নিজের মনেই হেসে উঠে। কেমন আছে এখন মেয়েটি? মনে মনে শুভকামনা করে ভালো থাকুক সে। সেদিন সে সেই মেয়েটিকে হারিয়েছিলো বলেই তো আজ এতো দারুন একজনকে জীবনসঙ্গনি হিসেবে পেয়েছে। অসম্ভব সুন্দর একটা ট্যুর শেষে ফিরে যাচ্ছে ঢাকায়। তারা আবার আসবে এই শহরে।

। অবশ্যই আসবে। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। যেন তাদের দুজনের এই সময়টাকে আরো রোমান্টিক করে তুলতেই প্রকৃতির উপহার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।