আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা ( এয়োদশ পর্ব)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যায়। ঠিক গল্প না। গল্পের মতো জীবনকাহিনী। শেষ হয়ে যাওয়ার কারণ ডায়েরীর পরবর্তী কয়েকটা পৃষ্টায় বেশ কাটাকাটি। তারপর আর কোন পৃষ্টাই নেই।

অন্য কোন ডায়েরীতে হয়তো ছেলেটি তার জীবনের পরবর্তী লিখে গেছে। তবে অন্য কোন ডায়েরী খুঁজে পায় নি আমার রুমমেট। সে অবশ্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে। পরবর্তীতে আমি এবং আমার রুমমেট অবন্তীর দেওয়া পেইন্টিংটাও অনেক খুঁজেছি। পাই নি।

হয়তো পেইন্টিং ছেলেটি বাসা ছেড়ে যাওয়ার আগে নিয়ে গেছে। এই বাসাটায় আমার বেশ কিছুদিন আগে থেকে থাকে রুমমেট। সে’ই ঘরদোর পরিস্কার করার সময় পুরানো কাগজের বান্ডিলের ভিতর ডায়েরীটা আবিস্কার করে। যার ডায়েরী হয়তো সে ভুল করে রেখে গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে কখনোই ডায়েরীটার মালিক তা ফেরত নিতে আসে নি।

নতুন বাসায় উঠার কিছুদিন পরেই ডায়েরীটা আমাকে পড়তে দেয় রুমমেট। আমি আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করি। মিশে যেতে থাকি ছেলেটির জীবনকাহিনীর সাথে। একপর্যায়ে ছেলেটির জীবনকাহিনীকে মনে হতে থাকে নিজের জীবনকাহিনী। ছেলেটির রাত জাগা আর প্রতীক্ষার সমাপ্তি কেমন হয়েছে, তাই ভাবি মাঝেমধ্যে।

অবশ্য অনুভব করি, সবকিছুর সমাপ্তি হয় না, সব কিছুর সমাপ্তি থাকতে নেই। কখনো কখনো আমরা দুই রুমমেট মিলে ছেলেটির কাহিনী নিয়ে একসাথে ভাবতে বসে যাই। রুমমেট আমার জুনিয়র। তবে আমার সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ছেলেটির জীবনে পরবর্তীতে কি হয়েছিল তাই নিয়ে ধারণা করি আমরা।

অবন্তী নাকি ছাত্রী, কাকে পেয়েছিল ছেলেটি ? দুজনে মিলে ভাবি। তবে মজার ব্যাপার হলো এক্ষেত্রে দুজনের ধারণা মিলে না। জুনিয়র রুমমেট ফিনিশিং এর ক্ষেত্রে সবসময়ই বিচ্ছেদপূর্ণ কাহিনী বলে। তার যুক্তি জীবনটা পুতুপুতুময় আবেগের জায়গা না, জীবন অনেক কঠিন। তাই সে কঠিন রকমের ফিনিশিং কল্পনা করে।

তার কল্পনা বলে যায় আমার সামনে। আমিও আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকি। ছেলেটির রাত জাগা একসময় কমে যেতে থাকে। সে বুঝে যায় জীবনের পরিসীমা অনেক বিশাল। পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে।

এইসব ভাবনা ছেলেটাকে সাহস যোগায়। তারপরেও কোন কোন রাতে ছেলেটি বিষন্ন মন নিয়ে অতীত নিয়ে ভাবে। মানুষ তার অতীতকে বেশিরভাগ সময়ই স্বর্ণময় অতীত মনে করে। যত্ন করে পালন করতে চায় অতীত স্মৃতি। কিন্তু সব অতীত মানুষকে সুখ দেয় না।

পরীক্ষা শেষে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে থেকে চাকরীর খোঁজে ঘুরে বেড়ায় ছেলেটি। চাকরীর ইন্টারভিউ বোর্ডেই ডাক পায় না। তারপরেও নতুন নতুন সিভি তৈরি করে জমা দেয় বিভিন্ন অফিসে। একসময় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। মোটামুটি রকমের ভালো ফলাফল।

তবে ছেলেটির ধারণা সে আরো ফলাফল করতে পারতো। অন্তত সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল পর্যন্ত ডিপার্টমেন্টে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট ছিলো তার। পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে কিছুটা ভেঙ্গে পড়লেও চাকরী খোঁজা বাদ দিলো না। চাকরীর বাজার বেশ কঠিন একটা জায়গা। মামা চাচা না থাকলে ভালো চাকরী খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।

বেশ কয়েকটা জুতা পরিবর্তনের পর এমনটাই উপলব্ধি করে ছেলেটি। একদিন তাড়াহুড়ো করে একটা চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিল। পাশ দিয়েই একটা রিক্সা চলে গেল। ছাত্রী তার বান্ধবীদের সাথে রিক্সা করে যাচ্ছে। ভাবলো-ডাক দিয়ে রিক্সা থামাবে, ছাত্রীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করবে।

পরমুহুর্তেই সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলে। অনেক খোঁজের পর ছোট একটি এনজিওতে কাজ পায়। নামমাত্র বেতন। তার উপর আবার মাঝেমধ্যেই এ শহর ও শহর ঘুরে বেড়াতে হবে। তারপরেও রাজি হয়ে যায়।

চাকরীর খুব দরকার। বাড়ির খরচ, ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ বাবা একলা যোগাড় করতে পারছেন না। তার একটা দায়িত্ব আছে। স্বল্প বেতনের চাকরী হলেও ছেলেটি চেষ্টা করে যায় টাকা বাচিয়ে বাড়িতে পাঠাতে। অন্তত ছোট ভাইবোনদুটি টাকার কষ্ট বুঝতে না পারুক।

কোন কোন দিন খুব ভোরে বের হতে হয় শহর থেকে। কুয়াশার সকাল শেষে রোদ উঠে। বাসে করে যেতে যেতে দেখা হয় বিস্তৃর্ণ মাঠ। সবুজের সমারোহ। পথ ঘাট, নদী বন্দর, হাট বাজার।

তারপর এনজিও এর বাধাধরা কাজ। আবার বাসের জানালা। খোলা প্রান্তর, বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। আরো কতো সবুজ। তারপর শহর।

সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত, অতঃপর মধ্যরাত। জীবনের মেটামরফোসিস এখানেই। রোমান্টিক জীবনের রুপান্তর ঘটেছে বাস্তবতার জীবনে। ছেলেটি প্রথম প্রথম অনেকগুলি রাত প্রতীক্ষা করেছিল। অবন্তী হয়তো একটা ফোনকল করবে।

হয়তো বলবে- সে বিকালে বলা সবকিছুই ভুল। তারপর বদলে যায় সেই প্রতীক্ষার ধরণ, হয়ে উঠে অপেক্ষা। সে অপেক্ষা করতে থাকে। অবন্তী হয়তো বিয়ের দাওয়াত দিতে ফোনকল করবে। কিন্তু সেই ফোনকল আর আসে না।

হয়তো অবন্তী সে কথা ভুলেই গেছে। চাকরীর ছুটির অবসরে বাড়ি যায় ছেলেটি। মা কিছুটা অসুস্থ্য। গ্রামের ডাক্তার দেখে কিছু ঔষুধ দেয়। একটা বয়সের পর নাকি সাবধানে চলতে হয়।

মা এতোকিছু মানতে পারেন না। সংসারের প্রায় সব কাজই করতে হয়। মাঝেমধ্যে ছোট বোনটা সাহায্য করে। তবে মা এক্ষেত্রে বেশ সচেতন। কাজে সাহায্য করতে গিয়ে পাছে না আবার পড়ালেখার ক্ষতি হয়।

রাতে খাওয়ার পর অনেক গল্প চলে। সবাই মিলে একসাথে গল্প। বাড়িঘরউঠাননদীপথঘাটহাটবাজারমাঠ সবই গল্পের বিষয়বস্তু। একরাতে ছোট দুইভাইবোনকে অন্যঘরে পাঠিয়ে দিয়ে মা কথা তুলেন। কথার পরিভ্রমণ চলতেই থাকে।

রাত গভীর হলে পরভ্রমিত কথা নেমে আসে সত্ত্বার কাছাকাছি। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠে। বাবা মা মেয়ে দেখতে চান। চুপ করে শুনে যায় ছেলেটি। সব শুনেও চুপ করে থাকে।

ছেলেটি কোনদিন বলতে পারে না, কোন একদিন অবন্তী নামের একটা মেয়েকে সে খুব পছন্দ করতো। অবন্তীর জন্য পছন্দের সীমারেখা কি ছিল তাও বলতে পারে না ছেলেটি। পরিণত মোহ নাকি অপরিণত ভালোবাসা? (চলবে......) প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব একাদশ পর্ব দ্বাদশ পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.