আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে ‎‎গুনাহ হবে কি?



কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে ‎ ‎গুনাহ হবে কি? ‎ -প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস) ‎ ‎ মূল বিষয় মু’মিনের ১ নং আমল হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা। আর ‎শয়তানের ১ নং কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে মু’মিনকে দূরে রাখা ‎বা কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে নানা রকম বাধার সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ‎সকল মুসলিমের জন্যে সব ফরজের বড় ফরজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জন করা এবং সব থেকে বড় গুনাহ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎‎থাকা। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি ‘মু’মিনের ১ নং কাজ এবং ‎শয়তানের ১ নং কাজ’ নামক বইটিতে। ‎ ‎যে কোন সত্তা তার ১ নং কাজে সফল হওয়ার জন্যে সর্বাধিক চেষ্টা-‎সাধনা করবে, এটা স্বাভাবিক।

তাই শয়তান তার ১ নং কাজে অর্থাৎ ‎কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষ বা মুসলিমদের দূরে রাখার কাজে সফল ‎হওয়ার জন্যে সব থেকে বেশি চেষ্টা-সাধনা করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ‎ভাবতে অবাক লাগে, ১ নং কাজটিতে তার (শয়তানের) সফলতা দেখে। ‎অনিষ্ঠাবান মুসলিমদের কথা দূরে থাক, আজ পৃথিবীর অধিকাংশ নিষ্ঠাবান ‎মুসলিমেরও কুরআনের জ্ঞান নেই। আরো অবাক লাগে যে সকল কথার ‎মাধ্যমে শয়তান মুসলিমদের কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে রেখেছে বা ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জন করার পথে বাধার সৃষ্টি করেছে, সেগুলোর ধরন ‎‎দেখে। ঐ কথাগুলো যে অযৌক্তিক বা ধোঁকাবাজি, তা সাধারণ বিবেক-‎বুদ্ধির আলোকেও বুঝা সহজ।

তারপরেও একটি জাতির অধিকাংশ লোক ‎কিভাবে তা মেনে নিলো, এটা একটা অবাক কাণ্ড। ‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না’-এ কথাটা ‎বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত। আর এর ব্যাখ্যা ‎‎থেকে মুসলিমরা ব্যাপকভাবে জানে ও মানে যে- মুসলিমরা‎ ‎১. অজু ছাড়া কুরআন মুখস্থ পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করে বা ধরে পড়া ‎যাবে না। ‎ ‎২. অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা বা ধরা মহাপাপ। ‎ হাফেজ ছাড়া বাকি সব মুসলিমের কুরআনের অল্পই মুখস্থ থাকে।

‎আবার বেশির ভাগ মুসলিমের তাদের জাগ্রত জীবনের অধিকাংশ সময় ‎অজু থাকে না। তাই কথাটি অধিকাংশ মুসলিমের, জাগ্রত জীবনের ‎অধিকাংশ সময়, কুরআন ধরে পড়ার পথে এক বিরাট বাধা। অর্থাৎ ‎কথাটি অধিকাংশ মুসলিমের জন্যে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে এক ‎বিরাট বাধা। কথাটি যদি চালু না থাকত, তবে সকল বেঅজু মুসলিমের ‎পকেটে বা ব্যাগে কুরআন থাকতো এবং তা বাসায়, অফিসে বা পথে-‎ঘাটের যে কোন অবসর সময়ে পড়তে কোন অসুবিধা হত না। ফলে ‎তাদের কুরআন পড়ার অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞান অর্জনের সময় অনেক ‎‎বেড়ে যেত এবং অনেক অনেক মুসলিম সহজে কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী ‎হতে পারত।

তাই কথাটা মুসলিমদের মধ্যে, কুরআনের জ্ঞানী লোক কম ‎‎থাকার একটা প্রধান কারণ। ‎ কথাটি যদি কুরআন-হাদীস সম্মত না হয় তবে তা উচ্ছেদ করা ‎‎গেলে ইসলাম তথা মুসলিমদের অপরিসীম কল্যাণ হবে ভেবে কথাটার ‎বিপে বা পে কুরআন-হাদীস ও বিবেকের কী কী তথ্য আছে তা ‎পর্যালোচনা করে জাতির সামনে উপস্থিত করাই আমার এ প্রচেষ্টার ‎উদ্দেশ্য। ‎ ইসলামে অপবিত্রতার শ্রেণী বিভাগ ‎ ইসলামী জীবন বিধানে অপবিত্রতার শ্রেণী বিভাগ হল-‎ মানসিক অপবিত্রতা ইসলামী জীবন বিধানে ঐ সব ব্যক্তিকে মানসিক দিক দিয়ে অপবিত্র ‎বলে যারা আক্বিদা-বিশ্বাসের দিক দিয়ে শিরকে নিমজ্জিত এবং যারা ‎কুরআনের যে কোন একটি বক্তব্যকেও মনের দিক দিয়ে অবিশ্বাস বা ঘৃণা ‎করে। ইসলামী পরিভাষায় এদের মুশরিক ও কাফের বলা হয়। এই ‎ধরনের ব্যক্তিরা গোসল করলেও মানসিক দিক দিয়ে পবিত্র হবে না।

‎কারণ, গোসল হচ্ছে শারীরিক অপবিত্রতা দূর করার উপায়। ‎ অন্যদিকে, যে ব্যক্তি কুরআন ও সূন্নাহের সকল বক্তব্যকে মন দিয়ে ‎বিশ্বাস ও ভক্তি করে, সে মানসিক দিক দিয়ে পবিত্র। কিন্তু প্রকাশ্যে ‎‎ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত এটাতো আল্লাহ ছাড়া আর কারো পে বুঝার ‎উপায় নেই। তাই ইসলামী জীবন বিধানে মনের দিক দিয়ে পবিত্র ব্যক্তি, ‎যখন মুখে কালেমা তাইয়্যেবার ঘোষণা দেয়, তখনই শুধু তাকে ‎আনুষ্ঠানিকভাবে (ঋড়ৎসধষষু) মু’মিন বা ঈমানদার হিসাবে ধরা হয়। আর ‎‎সে যখন কালেমার দাবি অনুযায়ী কাজ করতে আরম্ভ করে, তখন তাকে ‎মুসলিম বলা হয়।

এরকম ব্যক্তিরা শারীরিক দিক দিয়ে অপবিত্র হলেও ‎মানসিক দিক দিয়ে পবিত্র বা ঈমানদার থাকে। ‎ আবার কোন ব্যক্তির অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে মুখে কালেমা ‎তাইয়্যেবার ঘোষণা দিয়েছে এবং ইসলামের কিছু কাজও (আমল) করছে ‎কিন্তু মনের দিক দিয়ে সে কুরআন ও সূন্নাহের সকল বক্তব্যের প্রতি ‎বিশ্বাস আনতে পারেনি, তবে সে মানসিক দিক দিয়ে অপবিত্র রয়েই ‎যাবে। এই ধরনের ব্যক্তিকে ইসলামী জীবন বিধানে মুনাফেক বলা হয়। ‎কুরআন বলছে, কিয়ামতে এদের স্থান হবে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। ‎মানসিক পবিত্রতা-অপবিত্রতা সম্বন্ধে উপরোক্ত কথাগুলো কুরআন ও ‎হাদীসে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা পরে আসছে।

‎ শারীরিক অপবিত্রতা ক. বড় ধরনের শারীরিক অপবিত্রতা ইসলামী জীবন বিধান অনুযায়ী দু’ভাবে এ ধরনের অপবিত্রতা অর্জিত ‎হয়- ‎ ‎১. যৌন মিলনের পর বা বীর্যপাতের পর এবং ‎ ‎২. মেয়েদের মাসিক বা প্রসূতি স্রাব চলা অবস্থায়। এ ধরনের ‎অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্যে গোসল করা প্রয়োজন। ‎ খ. ছোট ধরনের শারীরিক অপবিত্রতা ‎ এ ধরনের অপবিত্রতা হতে শরীর পবিত্র করার উপায় হচ্ছে অজু ‎করা। অনেক কারণেই শরীর এরকম অপবিত্র হয়। তবে তার মধ্যে ‎সব থেকে বেশি যা মানুষের হয় তা হচ্ছে প্রস্রাব, পায়খানা ও পায়ু ‎পথে বায়ু নির্গত হওয়া।

‎ পবিত্রতা-অপবিত্রতার ব্যাপারে ইসলামী জীবন বিধানের উপরে বর্ণিত ‎‎মৌলিক কথাগুলো জানার পর চলুন এখন, বিভিন্ন ধরনের অপবিত্র ‎অবস্থায় কুরআন পড়া, স্পর্শ করা ও শোনার ব্যাপারে বিবেক-বুদ্ধি, ‎কুরআন ও হাদিসের তথ্যগুলো দেখা যাক। ‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটির ব্যাপারে ‎ বিবেক-বুদ্ধির’ তথ্য‎ তথ্য-১‎ ‎ সম্মানের দৃষ্টিকোণ‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটার পে সাধারণ যে যুক্তি ‎‎দেখানো হয় তা হচ্ছে, এটা কুরআনকে সম্মান দেখানো। কোন গ্রন্থের, ‎বিশেষ করে ব্যবহারিক (অঢ়ঢ়ষরবফ) গ্রন্থের, সব চেয়ে বড় সম্মান হল, ‎তা পড়ে জ্ঞান অর্জন করা এবং সে জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা। আবার ‎সাধারণ বিবেকের সর্বসম্মত রায় হচ্ছে, কোন গ্রন্থের জ্ঞান অর্জনের পথে ‎বিরাট বাধা সৃষ্টি করে এমন বিষয় দ্বারা ঐ গ্রন্থকে সম্মান করা বুঝায় না। ‎বরং তা হল ঐ গ্রন্থের চরম অসম্মান।

‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটা কুরআনের মত ‎ব্যবহারিক গ্রন্থের জ্ঞান অর্জনের পথে একটা বিরাট বাধা। তাই, সাধারণ ‎বিবেক অনুযায়ী কথাটার দ্বারা কুরআনকে সম্মান করা নয় বরং চরম ‎অসম্মান করা হয়। সুতরাং ঐ রকম একটা তথ্য ইসলামের বিষয় হওয়ার ‎কথা নয়। ‎ তথ্য-২ ‎ ‎ গুরুত্বের দৃষ্টিকোণ‎ মুসলিম সমাজে যে কথাটি ইসলামের কথা হিসাবে চালু আছে তা ‎হচ্ছে ‘অজু ছাড়া কুরআন পড়লে গুনাহ নেই কিন্তু স্পর্শ করলে গুনাহ। ’ ‎‎কোন গ্রন্থ পড়ার কাজটি, তা স্পর্শ করা কাজটি অপো কোটি কোটি ‎‎গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কোন বিশেষ অবস্থায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা ‎যাবে কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যাবে না এটি একটি সম্পূর্ণ বিবেক-‎বিরুদ্ধ কথা। তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী সহজেই বলা যায় অজু ছাড়া ‎কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না-কথাটি সম্পূর্ণ বিবেক ‎বিরুদ্ধ। বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী কথাটি হবে-‎ ক. অজু ছাড়া কুরআন পড়া গেলে তা স্পর্শও করা যাবে। ‎ খ. অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা না গেলে তা পড়াও যাবে না। ‎ তথ্য-২‎ ‎ অন্য গ্রন্থের সহিত ব্যতিক্রমের দৃষ্টিকোণ‎ কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তা পড়ে জ্ঞান অর্জন করবে ‎এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে।

অন্যদিকে কুরআন ‎হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, তাই মানুষের লেখা যে কোন বইয়ের তুলনায় সব ‎দিক থেকে তার একটা বিশেষত্ব থাকবে। যেমন কুরআন নির্ভুল কিন্তু ‎অন্য কোন গ্রন্থ তা নয়, কুরআনের সাহিত্য মানের সঙ্গে অন্য কোন ‎বইয়ের সাহিত্য মানের তুলনা হয় না ইত্যাদি। তাই অপবিত্র অবস্থায় ‎কুরআন ছোঁয়ার ব্যাপারেও অন্য গ্রন্থের থেকে কিছু ব্যতিক্রম থাকবে ‎এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ব্যতিক্রম এমন হওয়া সাধারণ বিবেক ‎বিরুদ্ধ যে, তা কুরআন নাযিলের প্রধান উদ্দেশ্য সাধনের পথে অর্থাৎ ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে বিরাট বাধার সৃষ্টি করবে। ‘অজু ছাড়া ‎কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটা কুরআন ধরে পড়ার পথে অর্থাৎ ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে একটা বিরাট বাধা।

‎ ‘তাই গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ’-কথাটি এ ‎‎দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় দিকই রা করতে পারে। কারণ, একদিকে তা ‎‎যেমন অপবিত্রতার একটি অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করতে না দিয়ে ‎কুরআনের ব্যতিক্রমধর্মী গুণ বজায় রাখবে; অন্যদিকে তা বেশিণ ‎মানুষকে কুরআন ধরে পড়া থেকে দূরে রাখবে না। কারণ, একজন ‎মুসলিম বেশি সময় গোসল ফরজ অবস্থায় থাকে না। পরবর্তী নামাজের ‎আগে তাকে অবশ্যই গোসল করে পবিত্র হতে হয়। তাই বিবেক বলে ‎অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ হলে তা গোসল ফরজ ‎অবস্থায় হওয়াই সকল দিক দিয়ে যুক্তিযুক্ত।

‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটির ব্যাপারে ‎ আল-কুরআনের তথ্য‎ তথ্য-১‎ ‎ গুনাহের কাজে সহায়তার দৃষ্টিকোণ কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী গুনাহের কাজে সহায়তা করা গুনাহ। যেমন, ‎সুদ খাওয়া, দেয়া, লেখা, সুদের সাী হওয়া সবই গুনাহ। কুরআন ও ‎হাদীস অনুযায়ী শয়তানের ১নং কাজ হল মানুষকে কুরআনের জ্ঞান থেকে ‎‎দূরে রাখা। অর্থাৎ সব গুনাহের বড় গুনাহ হল কুরআনের জ্ঞান থেকে ‎‎দূরে থাকা। ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটি কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জনের সময়কে ভীষণভাবে কমিয়ে দেয়।

কারণ মানুষের জীবনের ‎‎বেশিরভাগ সময় অজু থাকে না। আর হাফিজ ব্যতীত অন্য সবাইকে ‎কুরআন ধরেই পড়তে হয়। অর্থাৎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ ‎কথাটি সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজটি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বিরাট ‎সহায়তা করে। তাই কুরআন অনুযায়ী এমন একটি কথা কোন মতেই ‎ইসলামের কথা হতে পারে না। ‎ তথ্য-২‎ ‎ বিপরীতধর্মী বক্তব্য হওয়ার দৃষ্টিকোণ সূরা নিসার ৮২ নং আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন ‎আল-কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন বক্তব্য বা তথ্য নেই।

কুরআন ‎অনুযায়ী কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা সব ফরজের বড় ফরজ। আর ‘অজু ‎ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটি ঐ সব ফরজের বড় ফরজ কাজটি ‎করার পথে একটি বিরাট প্রতিবন্ধকতা। অর্থাৎ তথ্য দুটি পরস্পর ‎বিরোধী। কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা সব ফরজের বড়ো ফরজ তথ্যটি ‎কুরআনের একটি স্পষ্ট তথ্য। তাই এ তথ্যের বিপরীত হওয়ার কারণে ‎‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটি কুরআন তথা ইসলামের কথা ‎হতে পারে না।

‎ তথ্য-৩‎ ‎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও বিবেক-বিরুদ্ধ হওয়ার দৃষ্টিকোণ ‎ সূরা আলে-ইমরানের ৭ নং আয়াতের মাধ্যমে পরোভাবে আল্লাহ ‎জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআন তথা ইসলামে চিরন্তনভাবে মানুষের ‎বিবেক-বিরুদ্ধ থাকবে এমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (মুহকামাত) কোন বিষয় নেই। ‎চিরন্তনভাবে বিবেকের বাইরের বিষয় হবে কুরআনের অতীন্দ্রিয় ‎‎(মুতাশাবিহাত) বিষয়সমূহ। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‎‘পবিত্র কুরআন, হাদীস অনুযায়ী ইসলামে বিবেক-বুদ্ধির গুরুত্ব কতটুকু ‎এবং কেন’ নামক বইটিতে। ‎ কুরআন পড়া, স্পর্শ করা এবং অজু-গোসল সবই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়। ‎সুতরাং সূরা আলে-ইমরানের ৭ নং আয়াতের পরো বক্তব্য অনুযায়ী ঐ ‎সকল বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিবেক-বিরুদ্ধ কোন কথা কুরআনের ‎কথা নয় বা কুরআনের কথা হবে না।

‎ অজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না- একটি ‎সম্পূর্ণ বিবেক-বিরুদ্ধ কথা। তাই এই আয়াতের আলোকে বলা যায় ‎একথাটি কুরআন তথা ইসলামের কথা হতে পারে না। এ আয়াতের ‎আলোকে এ বিষয়ে তথ্যটি নিম্নের দু’টির একটি হবে-‎ ক. অজু ছাড়া কুরআন পড়া ও স্পর্শ করা উভয়টি যাবে, ‎ খ. অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা ও পড়া কোনটি যাবে না। ‎ আল-কুরআন থেকে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার নিয়ম হল ঐ বিষয়ে ‎কুরআনের সকল আয়াতের বক্তব্য পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করে ‎চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা। আর ঐ পর্যালোচনার সময় খেয়াল রাখতে হবে ‎একটি আয়াতের অর্থ বা ব্যাখ্যা যেন অন্য কোন আয়াতের বিপরীত না ‎হয় এবং অস্পষ্ট আয়াতের অর্থ বা ব্যাখ্যা‏ ‏‎স্পষ্ট আয়াতের বক্তব্যের সাথে ‎সামঞ্জস্যশীল হয়।

‎ তাই পূর্বে উল্লিখিত তথ্য দুটি এবং পরে আসা তথ্যের সাথে মেলালে ‎সহজে বলা যায় সূরা আলে-ইমরানের ৭ নং আয়াতের তথ্য হচ্ছে-অজু ‎ছাড়া কুরআন পড়া ও স্পর্শ করা উভয়টি সিদ্ধ। ‎ তথ্য-৪‎ ‎ সূরা ওয়াকি‘আর ৭৯ নং আয়াতের দৃষ্টিকোণ ‎ ‘বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা যাবে না বা গুনাহ’-এ কথা যারা বিশ্বাস ‎করেন এবং বলেন, তাদের নিকট ঐ কথাটার ব্যাপারে দলিল জানতে ‎চাইলে, প্রায় সবাই যে আয়াতটি বলেন, তা হচ্ছে-‎ لاَ يَمَسُّهُ إلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ.‏ তাই আয়াতখানির প্রকৃত অর্থ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আয়াতটিতে কী ‎বলেছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দরকার। ‎ আয়াতখানির মূল শব্দ (কবু ড়িৎফং) হচ্ছে তিনটি। যথা-মাস্ ‎‎(‎مَسٌّ‎), হু (‎هُ‎) এবং মুতাহ্হারুন (‎مُطَهَّرُوْنَ‎)। এই তিনটি শব্দের সঠিক ‎অর্থ নিতে পারলে আয়াতখানির সঠিক বক্তব্য বোঝা যাবে।

অন্যথায় তা ‎কখনই সম্ভব হবে না। ‎ মূল শব্দ তিনটি অপরিবর্তিত রেখে আয়াতখানির সরল অর্থ দাঁড়ায়-‎‘মুতাহ্হারুন ব্যতীত ঐ কুরআন কেউ মাস্ করতে পারে না। ‎ আয়াতখানির মূল তিনটি শব্দের যে সকল অর্থ আরবী ভাষায় হয় বা ‎যা আল-কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে তা হল-‎ ‎ মুতাহ্হারুন ‎‏(مُطَهَّرُوْنَ)‏ ‎১. অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া মানুষ, ‎ ‎২. নিষ্পাপ সত্তা বা ফেরেশতা। ‎ ‎ ঐ কুরআন: ‎ ‎১. পৃথিবীর কুরআন‎ ‎২. লওহে মাহফুজে রতি কুরআনের মূল কপি। ‎ ‎ মাস্ (‎مَسٌّ‎)‎ ‎১. স্পর্শ করা,‎ ‎২. শাস্তি ভোগ করা (সূরা আল-আন’আমের ৪৯ নং আয়াত),‎ ‎৩. অত্যাচারে জর্জরিত করা (সূরা বাকারার ২১৪ নং আয়াত),‎ ‎৪. সম্মুখীন হওয়া বা ধারে-কাছে আসা (সূরা হিজরের ১৫নং আয়াত),‎ ‎৫. স্ত্রী সহবাস (সূরা মায়েদার ৬ নং এবং নিসার ৪৩ নং আয়াত),‎ ‎৬. কুপ্ররোচনা বা ধোঁকা দেয়া (সূরা বাকারা, ২৭৫নং আয়াত)।

‎ আল-কুরআনের তাফসীরের নীতিমালা (উসূল) হল একটি আয়াতের ‎‎কোন শব্দের যদি একাধিক অর্থ হয় তবে শব্দটির সে অর্থটি নিতে হবে ‎‎যেটি নিলে-‎ ‎ আয়াতটির অর্থ আগের ও পরের আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয় ‎ ‎ অন্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়,‎ ‎ শানে নুযুলের (নাযিলের পটভুমি) সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়,‎ এরপরও যদি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায় তবে পর্যালোচনা করতে ‎হবে ঐ বিষয়ে-‎ ‎ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য তথা হাদীস,‎ ‎ সাহাবায়ে কিরামগণের বক্তব্য,‎ ‎ পূর্ববর্তী মনীষীদের বক্তব্য,‎ ‎ বর্তমান মনীষীদের বক্তব্য। ‎ কুরআন শরীফের আয়াতের তাফসীরের ব্যাপারে উপরোক্ত তথ্যগুলো ‎সামনে রেখে চলুন এখন আয়াতখানির সঠিক অর্থটি বের করার চেষ্টা ‎করা যাক-‎ ‎ আয়াতখানির শানে নুযুল‎ মক্কার কাফেররা রাসূল (সা.) কে গণক, যাদুকর ইত্যাদি বলত। ‎তারা বলে বেড়াতো শয়তান কুরআন নিয়ে এসে মুহাম্মাদ (সা.) কে পড়ে ‎পড়ে শিখিয়ে দেয়। তারপর মুহাম্মাদ (সা.) সেটা অন্যদের জানায়। ‎কাফেরদের এই প্রচারণার উত্তরে মহান আল্লাহ আলোচ্য আয়াতখানিসহ ‎আরো কয়েকটি আয়াতে বক্তব্য রেখেছেন।

যেমন সূরা শুয়ারার ২১০-‎‎২১২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-‎ ‏.‏ অর্থ: এটা (কুরআন) নিয়ে শয়তান অবতীর্ণ হয় নাই। এ কাজ তাদের ‎জন্যে শোভনীয় নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তারাতো ‎‎(অবতীর্ণের সময়) এটা শোনা হতেও দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়। ‎ ‎(শুয়ারা : ২১০-২১২) ‎ ‎ শানে নুযুল এবং আগের ও পরের আয়াতের বক্তব্যের আলোকে ‎আলোচ্য আয়াতের প্রকৃত অর্থ‎ আয়াত খানির আগের ও পরের আয়াতসমূহ অর্থাৎ সূরা ওয়াকিয়ার ৭৭-‎‎৮১ নং আয়াত ‎ অর্থ: আলোচ্য ‎‏)‏‎৭৯‎‏ ‏নং) আয়াতের মূল তিনটি শব্দ হুবহু রেখে আয়াত ‎ক’খানির সরল অর্থ হবে- উহা এক অতীব উচ্চ মর্যাদার কুরআন। যা ‎আছে এক সংরতি গোপন কিতাবে লিপিবদ্ধ।

মুতাহ্হারুনরা ব্যতীত ‎‎কেউ তা (ঐ কুরআন) ‘মাস’ করতে পারে না। এটাতো মহাবিশ্বের রবের ‎নিকট থেকে নাযিল হয়েছে। এই বক্তব্য কি তোমাদের ধারণাকে মলম ‎দিয়ে ঢেকে দেয় না (মিথ্যা প্রমাণিত করে না)? ‎ ব্যাখ্যা: ৭৯ নং আয়াতে ঐ কুরআন বলতে যে কুরআনকে বোঝানো ‎হয়েছে সে কুরআন সম্বন্ধে ৭৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তা আছে এক ‎সংরতি গোপন কিতাবে। ‘সংরতি গোপন’ শব্দ দুটির মাধ্যমে ‎সহজেই বোঝা যায় এখানে লওহেমাহফুজের কুরআন তথা কুরআনের ‎মূল কপিখানি যা লওহেমাহফুজে ‘সংরতি’ আছে তার কথা বলা ‎হয়েছে। কারণ পৃথিবীর কুরআন সংরতি ও গোপন কোনটিই নয়।

যে ‎‎কেউ পৃথিবীর কুরআন যেকোন অবস্থায় ধরতে, পড়তে ছিঁড়তে ও ‎অপমানিত করতে পারে। ‎ এ তথ্যগুলো সামনে রেখে ৭৯নং আয়াতের মূল শব্দ তিনটির ‎‎দু’ধরনের অর্থ ধরে আয়াতখানির যে দু’ধরনের ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ‎তা হল-‎ ক. উহা এক অতীব উচ্চ মর্যাদার কুরআন, যা লওহেমাহফুজে সংরতি ‎আছে। নিষ্পাপ ফেরেশতা ব্যতীত ঐ লওহেমাহফুজের কুরআনের ‎ধারে কাছেও কেউ যেতে পারে না। (পৃথিবীর কুরআন) মহাবিশ্বের ‎রবের নিকট থেকে নাযিল হওয়া। এ বক্তব্য কি তোমাদের ধারণাকে ‎‎(শয়তান কুরআন নিয়ে এসে মুহাম্মাদকে শুনায়) মিথ্যা প্রমাণিত ‎করে না?‎ খ. উহা এক অতীব উচ্চ মর্যাদার কুরআন, যা লওহেমাহফুজে সংরতি ‎আছে।

অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া মানুষ ব্যতীত ঐ ‎লওহেমাহফুজের কুরআন কেউ স্পর্শ করতে পারে না। (পৃথিবীর ‎কুরআন) মহাবিশ্বের রবের নিকট থেকে নাযিল হওয়া। এ বক্তব্য কি ‎‎তোমাদের ধারণাকে (শয়তান কুরআন নিয়ে এসে মুহাম্মাদকে ‎শুনায়) মিথ্যা প্রমাণিত করে না?‎ আয়াত ক’খানির এ দু’টি ব্যাখ্যার কোনটি গ্রহণযোগ্য হবে এ প্রশ্ন করলে ‎আমার তো মনে হয় পৃথিবীর সকল বিবেকসম্মত মানুষ একবাক্যে বলবে ‎প্রথমটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে এবং দ্বিতীয়টি কখনই গ্রহণযোগ্য হতে ‎পারে না। তাই তাফসীরের মূল নীতিমালার আলোকে সহজেই বলা যায় ‎সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা হল-‘নিষ্পাপ ফেরেশতা ব্যতীত ‎লওহেমাহফুজের কুরআনের ধারে-কাছেও কেউ যেতে পারে না’। ‎ চলুন, এখন দেখা যাক আয়াতটির তরজমা ও তাফসীরের ব্যাপারে ‎বিখ্যাত তাফসীরকারকগণ কী বলেছেন-‎ ক. বিখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসীর (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এই ‎আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, ‘যারা পূতঃ পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য ‎‎কেউ তা স্পর্শ করে না।

অর্থাৎ শুধু ফেরেশতারা এটা স্পর্শ করে ‎‎থাকেন’। তাহলে ইবনে কাসীর (রহ.) ঐ আয়াতে ‎‏ مُطَهَّرُوْنَএর ‎অর্থ ‘নিষ্পাপ ফেরেশতা’ বলেছেন। (পৃষ্ঠা নং ২৮৫ ও ২৮৬, ১৭তম ‎খণ্ড, ২য় সংস্করণ, তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি, ঢাকা, বাংলাদেশ)‎ খ. মুফতি শফি (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ মা‘আরেফুল কুরআনে এই ‎আয়াতটির তাফসীরে লিখেছেন-‎ ‎ বিপুল সংখ্যক সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাফসীরবিদের মতে, সূরা ‎ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতে ‎‏ مُطَهَّرُوْنবলতে ফেরেশতাদের ‎বুঝানো হয়েছে যারা পাপ ও হীন কাজকর্ম থেকে পবিত্র। অর্থাৎ ‎বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ীর মতে, ঐ আয়াতে ‎مُطَهَّرُوْن‎ ‎শব্দের অর্থ ‘নিষ্পাপ’। ‎ ‎ কিছু সংখ্যক তাফসীরবিদ মনে করেন, কুরআনের ঐ বক্তব্য ‎মানুষের জন্যেও প্রযোজ্য হবে এবং পবিত্র বলতে তাদের ‎বুঝানো হবে যারা ‘হদসে আকবর’ ও ‘হদসে আসগর’ থেকে ‎পবিত্র।

(পৃষ্ঠা নং ৩০, ৮ম খণ্ড, ১ম সংস্করণ, ইসলামিক ‎ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) ‎ গ. হজরত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এই ‎আয়াতের তরজমা ও তাফসীর করেছেন, ‘তাকে নিষ্পাপ ‎‎ফেরেশতাগণ ব্যতীত কেউ স্পর্শ করতে পারে না’। ‎ ঘ. মাওলানা মওদূদী (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ তাফহীমুল কুরআনে এই ‎আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, এই আয়াতে ‎مُطَهَّرُوْن‎ শব্দ ‎‎ফেরেশতাদের বুঝাবার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে যারা সর্বপ্রকার ‎অপবিত্র আবেগ-ভাবধারা ও লালসা-বাসনা হতে পবিত্র। অর্থাৎ ‎মাওলানা মওদূদীও (রহ.) ‎مُطَهَّرُوْن‎ অর্থ নিষ্পাপ বলেছেন। (পৃষ্ঠা ‎নং ১২৫-১২৯, ১৭ তম খণ্ড, ১ম সংস্করণ, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা, ‎বাংলাদেশ)‎ ‎ সুতরাং ‘নিষ্পাপ ফেরেশতা ব্যাতীত কেউ লোহমাহফুজের ‎কুরআনের ধারে-কাছেও যেতে পারে না’ সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং ‎আয়াতের এ ব্যাখ্যার পে আছে-‎ ‎ শানে নুযুল,‎ ‎ আয়াতটির আগের দুটো আয়াতের বক্তব্য,‎ ‎ পরের দুটি আয়াতের বক্তব্য,‎ ‎ একই বিষয়ে অন্যান্য আয়াতের বক্তব্য, ‎ ‎ বিপুল সংখ্যক সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্য,‎ ‎ বিপুল সংখ্যক তাবেয়ীর বক্তব্য। ‎ আর ‘অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া ব্যক্তিরা ব্যতীত পৃথিবীর কুরআন ‎‎কেউ স্পর্শ করতে পারে না’ আয়াতখানির এ ব্যাখ্যার পে আছে ‎শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক তাফসীর কারক।

‎ তাই নিশ্চয়তাসহকারেই বলা যায় সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতের ‎ব্যাখ্যা, ‘অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া ব্যক্তিরা ব্যতীত কেউ পৃথিবীর ‎কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না’ এ কথা বলার অর্থ হচ্ছে শানে নুযুল, ‎কুরআনের অন্যান্য আয়াতের বক্তব্য, বিপুল সংখ্যক সাহাবীর বক্তব্য এবং ‎বিপুল সংখ্যক তাবেয়ীর বক্তব্যকে অস্বীকার করে কিছু সংখ্যক ‎তাফসীরকারকের বক্তব্যকে মেনে নেয়া। অর্থাৎ এটি ইসলামে কোন ‎মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ‎ তাই ‘কুরআন স্পর্শ করার আগে অজু করতে হবে’ কথাটার ভিত্তি ‎হচ্ছে আল-কুরআন, এ তথ্যটা একেবারেই ঠিক নয়। এই অতীব সত্য ‎কথাটি মুফতি শফী (র.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এভাবে উল্লেখ করেছেন-‎‘যেহেতু বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ী মতভেদ করেছেন, তাই অনেক ‎তাফসীরবিদ অপবিত্র অবস্থায় কুরআনপাক স্পর্শ করার নিষেধাজ্ঞার ‎ব্যাপারে কুরআনের আয়াতকে (সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াত) দলিল ‎হিসেবে পেশ করেন না। তারা এর প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি হাদীস পেশ ‎করেন মাত্র’।

(সে হাদীসগুলোয় কী তথ্য আছে তা ব্যাখ্যাসহকারে পরে ‎আসছে। )‎ তথ্য-৫‎ ‎ নামাজ আদায় ও কুরআন আরম্ভ করার আগে যা করার কথা কুরআনে ‎উল্লেখ আছে এবং যা করার কথা তথায় উল্লেখ নেই, তার দৃষ্টিকোণ‎ নামাজের আগে অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া ইসলামের একটা ‎‎গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক (ফরজ) আমল। আর মৌলিক বলেই মহান আল্লাহ ‎আল কুরআনের ২টি সূরায় এ তথ্যটি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে ‎‎রেখেছেন। চলুন, এখন দেখা যাক নামাজের আগে অজু-গোসল করার ‎কথাটা আল্লাহ কুরআনে কিভাবে উল্লেখ করেছেন-‎ অর্থ: হে মু’মিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্যে উঠবে তখন স্বীয় ‎মুখমণ্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। মাথা এবং গোড়ালি পর্যন্ত ‎পা মাসেহ করবে।

যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে গোসল করে পবিত্র ‎হবে। আর যদি রোগাক্রান্ত হও অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের ‎‎কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে এসে থাকে বা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস ‎করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে ‎নিবে। অর্থাৎ ঐ মাটির দ্বারা (মাটির পর হাত রেখে সেই হাত দ্বারা) স্বীয় ‎মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মুছে ফেলবে। (এ আদেশ দ্বারা) আল্লাহ তোমাদের ‎কষ্ট দিতে চান না। বরং এর দ্বারা তিনি তোমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ‎করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত (কল্যাণ কামনা) পরিপূর্ণ ‎করে দিতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

‎ আর সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ আদেশটা এভাবে উল্লেখ ‎করেছেন-‎ অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাজের ‎ধারে-কাছেও যাবে না, যতণ না বুঝতে পার কী পড়ছো। অনুরূপভাবে ‎‎গোসল ফরজ অবস্থায়ও নামাজের কাছে যাবে না, যতণ না গোসল ‎কর। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ কিংবা ‎সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে ‎এসে থাকে বা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে থাকে কিন্তু পানি না পাওয়া যায়, ‎তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে অর্থাৎ ঐ মাটি দ্বারা মুখ এবং ‎হাত মাসেহ করে নিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা মাশীল।

‎ সুধী পাঠক, ল্য করুন, নামাজ পড়ার আগে অজু বা গোসল করে ‎শরীর পবিত্র করা ইসলামের একটা মৌলিক কাজ বা আমল বলে মহান ‎আল্লাহ তা বিস্তারিতভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে, আল কুরআনের অনেকটা ‎জায়গা নিয়ে, স্পষ্টভাবে, জানিয়ে দিয়েছেন। কুরআন নামাজের চেয়ে ‎অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই কুরআন পড়া বা স্পর্শ করার আগে ‎পবিত্রতা অর্জন করা দরকার বা গুরুত্বপূর্ণ হলে, আল্লাহর তা আরো ‎বিস্তারিত ও স্পষ্টভাবে, কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু ‎কুরআন পড়া বা স্পর্শের আগে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এমন একটি ‎কথাও আল-কুরআনের কোথাও উল্লেখ নেই (সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং ‎আয়াতে আল্লাহ এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন বলে যে কথা বলা হয় তা ‎‎মোটেই সঠিক নয়, সেটা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ) পান্তরে কুরআন ‎পড়ার আগে যে কাজটি অবশ্যই করতে হবে, তা মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে ‎জানিয়ে দিয়েছেন সূরা নাহলের ৯৮ নং আয়াতে নিম্নোক্তভাবে-‎ অর্থ: অতএব যখনই তোমরা কুরআন পাঠ করতে শুরু করবে, তখনই ‎অভিশপ্ত শয়তান হতে (শয়তানের ধোঁকাবাজি হতে) আল্লাহর নিকট ‎আশ্রয় চাইবে।

‎ অর্থাৎ মহান আল্লাহ কুরআন পড়া শুরু করার সময় পবিত্রতা অর্জন ‎করতে না বলে যে কাজটি বাধ্যতামূলকভাবে করতে বলেছেন তা হল, ‎ইবলিস শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। ‎কারণ, কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষকে দূরে সরানো হচ্ছে শয়তানের ১ ‎নং কাজ এবং সে কাজে শয়তান সফল হওয়ার জন্যে সর্বোতভাবে চেষ্টা ‎করে। তাই আল্লাহর সাহায্য না পেলে শয়তানের ঐ সকল ‎‎ধোঁকাবাজিমূলক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা ‎কারো পে সম্ভব হবে না। ‎ তাহলে দেখা যাচ্ছে, কুরআন দেখে‏ ‏পড়া, মুখস্থ পড়া বা পড়ানোর ‎আগে যা বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে বলে আল্লাহ জানিয়েছেন, তা ‎হচ্ছে শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় চাওয়া। অন্যদিকে ‎কুরআন পড়া, স্পর্শ করা অথবা অন্য কোন কাজের আগে পবিত্রতা অর্জন ‎করতে হবে এমন কোন কথা আল্লাহ কুরআনের কোথাও উল্লেখ ‎করেননি।

‎ তাই কুরআন পড়া, পড়ানো বা স্পর্শ করার আগে অজু বা গোসল ‎করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এমন কোনো কথা যদি সহীহ হাদীসে ‎‎থেকেও থাকে (অজু করার কথা নেই) তবে তা হবে ইসলামের একটা ‎অমৌলিক বিষয়। কারণ, যে বিষয়টা কুরআনে প্রত্য, পরোভাবে ‎উল্লেখ নেই বা তা কুরআনের উল্লেখিত কোনো মূল বিষয়ের মৌলিক ‎বাস্তাবায়ন পদ্ধতিও নয়, তা সহীহ হাদীসে থাকলেও সেটা হবে ‎ইসলামের একটা অমৌলিক বিষয়। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি ‎‘পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ইসলামের মৌলিক বিষয় ‎ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস কোন্গুলো তা জানা ও বুঝার সহজতম উপায়’ নামক ‎বইটিতে। ‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে ‎কুরআনের তথ্যের সার-সংপে ‎ ক. আল-কুরআনের মাধ্যমে শুধুমাত্র নামাজ পড়ার আগে অজু বা ‎‎গোসল করে পবিত্র হওয়ার প্রত্য (উরৎবপঃ) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‎অন্য কোন কাজ করার আগে অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়ার প্রত্য ‎‎(উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) কোন নির্দেশ কুরআনে দেয়া হয় ‎নাই।

এই ‘অন্য কাজের’ মধ্যে কুরআন পড়া, পড়ানো, স্পর্শ করাসহ ‎অন্য সকল কাজই অন্তর্ভুক্ত। ‎ খ. বিভিন্ন ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কুরআন পরোভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছে ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না বা পাপ’ কথাটি কুরআন ‎বিরুদ্ধ কথা এবং ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে’ কথাটি কুরআন ‎সিদ্ধ কথা। ‎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটার ব্যাপারে ‎ হাদীসের তথ্য‎ পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি, অজু বা গোসল করে পবিত্র ‎না হয়ে কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বা পাপ-এ ধরনের কোন কথা আল-‎কুরআনে নেই। তাই ঐ রকম কোন কথা যদি ইসলামে থেকেই থাকে ‎তবে তা অবশ্যই হাদীসে থাকতে হবে। চলুন, এখন দেখা যাক এ বিষয়ে ‎হাদীসে কী কী বক্তব্য আছে।

‎ তথ্য-১‎‏.‏ অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। একদা রাসূল (সা.) শৌচাগার ‎হতে বের হয়ে আসলে তাঁর সামনে খাবার উপস্থিত করা হল। তখন ‎‎লোকেরা বলল, আমরা কি আপনার জন্যে অজুর পানি আনব না? তিনি ‎বললেন, যখন নামাজের প্রস্তুতি নিব শুধু তখন অজু করার জন্যে আমি ‎আদিষ্ট হয়েছি। ‎ ‎ (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী) ‎ তথ্য-২‎ ইবনে মাজাহ উপরোক্ত হাদীসটির ন্যায় একই রকম বর্ণনাসম্বলিত আর ‎একটি হাদীস আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন। ‎ হাদীস দু’খানির সম্মিলিত ব্যাখ্যা: হাদীস দুখানির ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে ‎তিনটি বিষয় আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে।

যথা-‎ ক. হাদীস দুটোয় রাসূল (সা.) স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তাঁকে শুধু নামাজ ‎পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ’ সমগ্র কুরআন ‎পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, তথায় নামাজ পড়ার আগে অজু বা ‎‎গোসল করে পবিত্র হওয়ার জন্যে দুটো সূরার মাধ্যমে (নিসা ও ‎মায়েদা) সরাসরি ও বিস্তারিতভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য ‎‎কোন কাজ করার আগে অজু বা গোসল করতে হবে এমন কোন ‎কথা আল-কুরআনে প্রত্য, পরো বা ইঙ্গিতেও উল্লেখ করা হয় ‎নাই। অর্থাৎ হাদীস দুটোর বক্তব্য কুরআনের বক্তব্যের অনুরূপ। তাই ‎হাদীস দুটোর বক্তব্য প্রায় কুরআনের বক্তব্যের ন্যায় শক্তিশালী এবং ‎বিষয়ে অন্য কোন হাদীস এ হাদীস দুটোর থেকে বেশি শক্তিশালী ‎হতে পারে না।

কারণ, তা হতে হলে সেই হাদীসকে কুরআনের ‎‎থেকেও বেশি শক্তিশালী হতে হবে, যা কখনই হতে পারে না। ‎ খ. হাদীস দুটোতে রাসূল (সা.) অজু কথাটা সুনির্দিষ্টভাবে ‎‎(ঝঢ়বপরভরপধষষু) উল্লেখ করেছেন। গোসলের কথাটি তিনি এখানে ‎উল্লেখ করেননি। ‎ গ. হাদীস দুটো দু’জন বিখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) ও আবু ‎হুরায়রা (রা.) সরাসরি রাসূল (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন ‎এবং তা চারটি হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আবু ‎হুরায়রা (রা.) হচ্ছেন সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী।

‎ হাদীস দুখানির ব্যাপারে উপরের তথ্যগুলো সামনে রেখে চলুন এখন তার ‎বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করা যাক। খাওয়ার আগে অজু করা লাগে ভেবে, ‎‎শৌচাগার হতে বের হয়ে রাসূল (সা.) খেতে বসতে গেলে অজুর পানি ‎আনবে কিনা এ প্রশ্নটি সাহাবায়ে কিরামগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ‎সাহাবায়ে কিরামগণের ঐ প্রশ্নের উত্তরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি সহজেই ‎বলতে পারতেন, ‘খাওয়ার আগে অজু করার দরকার নেই। ’ কিন্তু তা না ‎বলে তিনি বললেন, ‘তিনি নামাজ পড়ার আগে অজু করার জন্যে আদিষ্ট ‎হয়েছেন। ’ অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করে বলে দিলেন কুরআনের মাধ্যমে তাঁকে ‎শুধু নামাজ পড়ার আগে অজু কথা জানানো হয়েছে।

অন্য কোন কাজ ‎করার আগে অজু করার কথা জানানো হয় নাই। এই অন্য কাজের মধ্যে ‎‎যেমন পড়বে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য। ‎‎তেমনি তার মধ্যে পড়বে রোজা থাকা, জিকির করা, দোয়া করা, কুরআন ‎ও অন্যান্য গ্রন্থ দেখে বা মুখস্থ পড়া বা পড়ানো, কুরআন স্পর্শ করা ‎ইত্যাদি। ‎ তাহলে পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপারে কুরআনের বক্তব্যের ‎অনুরূপ বক্তব্য সম্বলিত অর্থাৎ প্রায় কুরআনের আয়াতের ন্যায় শক্তিশালী ‎এই হাদীস দুটোর বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়-‎ ক. কুরআন দেখে বা মুখস্থ পড়া বা পড়ানোর জন্যে অজুর প্রয়োজন নেই। ‎ খ. কুরআন স্পর্শ করার জন্যেও অজু করার দরকার নেই।

‎ গ. কুরআন পড়া বা স্পর্শ করার আগে (গোসল ফরজ অবস্থায়) ‎‎গোসল করতে হবে কিনা এখানে সে বিষয়ে কিছু বলা হয় নাই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।