আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‎শাফায়াত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে ‎মুক্তি পাওয়া যাবে কি?



কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী শাফায়াত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে ‎ মুক্তি পাওয়া যাবে কি? ‎ -প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান মূল বিষয় শাফায়াত ইসলামের একটি মূল বিষয়। কেউ, শাফায়াতে বিশ্বাস না করলে ‎তার ঈমান থাকবে না। বর্তমান মুসলিম সমাজে শাফায়াত সম্বন্ধে ‎ব্যাপকভাবে চালু থাকা তথ্যগুলো হল-‎ ‎১. নবী-রাসূলগণসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষেরা পরকালে শাফায়াত ‎করবেন। ‎ ‎২. শাফায়াতের মাধ্যমে মু’মিনের কবীরা গুনাহও মাফ হয়ে যাবে। ‎ ‎৩. দোযখের শাস্তি ভোগ করছে এমন মুমিন ব্যক্তিদেরও শাফায়াতের ‎মাধ্যমে দোযখ থেকে বের করে এনে বেহেশতে পাঠিয়ে দেয়া ‎হবে।

‎ ‎৪. কাফির ব্যক্তিরা শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ হতে মুক্তি পাবেন ‎এমন ধারণা কেউ পোষণ করেন না। ‎ শাফায়াত সম্বন্ধে ঐ সকল ধারণার বাস্তব যে কুফল মুসলিম সমাজে ‎বর্তমানে দেখা যায় তা হল-‎ ‎১. শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ পেয়ে যাবে মনে করে মুসলিমরা এমন ‎কাজ করছে বা এমন কাজ ছেড়ে দিচ্ছে যা না করলে বা করলে ‎কবীরা গুনাহ হবে বা দোযখে যেতে হবে বলে কুরআন বা সূন্নাহ ‎‎স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। ‎ ‎২. শাফায়াত করতে পারবে ধারণা করে লোকেরা জীবিত অনেক ‎মানুষকে, ইসলাম নিষেধ করেছে এমন উপায়ে খুশী করার চেষ্টা ‎করছে। ‎ ‎৩. কবরে শুয়ে থাকা ব্যক্তির শাফায়াত পাওয়ার আশায় কবর পূজা ‎করছে। ‎ ‎৪. কিছুলোক শাফায়াতের লোভ দেখিয়ে নানাভাবে মানুষকে প্রতারিত ‎করছে।

‎ ঈমান ও আমলের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সকল মানুষ জীবিত ‎অবস্থায় এবং মৃত্যুর সময় যে সকল বিভাগে বিভক্ত থাকবে মু’মিন হল সেই ব্যক্তি যে কালেমা তৈয়্যেবার ব্যাখ্যাসহ অর্থটি অন্তরে বিশ্বাস ‎করে এবং মুখে তার ঘোষণা দেয়। অন্তরের বিশ্বাসটাই আল্লাহ দেখেন। ‎মুখের ঘোষণাটি অন্য মানুষের বোঝার জন্যে যে, ব্যক্তিটি ঈমান এনেছে। ‎ কাফির বলে সেই ব্যক্তিকে যে কালেম তৈয়্যেবার ব্যাখ্যাসহ অর্থটি অন্তরে ‎বিশ্বাস করে না। ‎ ‎নেক্কার মু’মিন হল সেই ব্যক্তি যে গুনাহ করেনি বা তাওবার মাধ্যমে মাফ ‎করিয়ে নেয়ার কারণে যার আমলনামায় গুনাহ উপস্থিত নাই।

‎ মুসলিম হল সর্বনিম্ন স্তরের নেক্কার মু’মিন। ‎ মুত্তাকী হল মধ্যম স্তরের নেক্কার মু’মিন। ‎ মুহসিন হল সর্বউচ্চ স্তরের নেক্কার মু’মিন‎ ছগীরা গুনাহগার মু’মিন হল সেই মু’মিন যে প্রায় সমান গুরুত্ব বা ‎পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ এক বা একাধিক ‎করণীয় কাজ ছেড়ে দেয় বা নিষিদ্ধ কাজ করে। ‎ মধ্যম (না ছগীরা না কবীরা) গুনাহগার মু’মিন হল সেই মু’মিন যে মধ্যম ‎‎(৫০%) গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার ‎‎চেষ্টাসহ এক বা একাধিক করণীয় কাজ ছেড়ে দেয় বা নিষিদ্ধ কাজ করে। ‎ সাধারণ কবীরা গুনাহগার মু’মিন বলে সেই মু’মিনকে যে প্রায় না থাকার ‎মত গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ‎এক বা একাধিক বড় করণীয় আমল ছেড়ে দেয় বা নিষিদ্ধ কাজ করে।

‎ কুফরীর কবীরা গুনাহগার মু’মিন হল সেই মু’মিন যে ইচ্ছা করে, খুশী ‎মনে, ঘৃণাসহকারে বা কোন ধরনের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার ‎‎চেষ্টা ব্যতীত এক বা একাধিক বড় বা ছোট করণীয় কাজ ছেড়ে দেয় বা ‎নিষিদ্ধ কাজ করে। ‎ প্রকাশ্য কাফির হল সেই কাফির যে কালেমা তাইয়্যেবার ব্যাখ্যাসহ অর্থটি ‎মনে বিশ্বাস করে না এবং প্রকাশ্যে তার ঘোষণাও দেয়। ‎ ‎গোপন কাফির বলে সেই কাফিরকে যে প্রকাশ্যে ঈমান আনার ঘোষণা ‎‎দেয় কিন্তু অন্তরে ঈমান আনে না। এরাই হল সবচেয়ে খারাপ ধরনের ‎কাফির। ‎ সাধারণ কাফির হল সেই প্রকাশ্য কাফিররা যারা অন্যরা ইসলাম পালন ‎করল কি করল না সে বিষয়ে কোন মাথা ঘামায় না।

‎ তাগুত কাফির বলে সেই প্রকাশ্য কাফিরদের যারা অন্যদের ইসলাম ‎পালনে নানাভাবে বাধা দেয়। ‎ ‎(বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘পবিত্র কুরআন হাদীস ও ‎বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী গুনাহের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ’ নামক বইটিতে)‎ ইসলামে দুনিয়ায় গুনাহ মাফ হওয়ার উপায়সমূহ ইসলামে দুনিয়ায় গুনাহ মাফ হওয়ার উপায় দুটি ‎ ‎১. তাওবা‎ ‎২. নেক আমল ‎ তাওবার মাধ্যমে মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ বাদে সকল ধরণের ‎‎গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু সে তাওবা হতে হবে মৃত্যু আসার মুক্তিসংগত ‎সময় পূর্বে। অর্থ্যৎ মৃত্যু ঘটার এমন সময় পূর্বে যখন ব্যক্তির একটি গুনাহ ‎করার সুযোগ আসলে স্বজ্ঞানে ও সমতায় তা হতে দূরে থাকার মত ‎অবস্থা থাকে। ‎ আর মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ সে হক ফেরত দেয়ার আগ ‎পর্যন্ত মাফ হয় না।

তবে যার হক ফাঁকি দেয়া হয়েছে তাকে কোনভাবে ‎খুঁজে পাওয়া সম্ভব না হলে সে হক গুনাহ মাফের আশায় কোন ‎জনকল্যাণমূলক কাজে দান করে দিয়ে আল্লাহর নিকট মা চাইতে হবে। ‎ ‎নেক আমলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ছগীরা গুনাহ মাফ হয়। ‎ ‎(বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আছে ‘কুরআন হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ‎কবীরা গুনাহ সহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন দোযখ থেকে মুক্তি পাবে কি?’ ‎নামক বইটিতে) ‎ শাফায়াত শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ‎ শাফায়াত শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সুপারিশ, মাধ্যম বা দোয়া। আর ‎পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে পরকালে অপরের গুনাহ বা শাস্তি মুক্তির জন্যে ‎আল্লাহর নিকট করা সুপারিশ। ‎ মৃত্যুর পর তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ পাওয়ার আর কোন সুযোগ ‎‎থাকবে না।

কিন্তু দয়াময় আল্লাহ মৃত্যুর পরও মানুষের গুনাহ মাফ হওয়ার ‎ব্যবস্থা রেখেছেন। সে ব্যবস্থা হচ্ছে শাফায়াত। ‎ ‎যে সকল সত্তা শাফায়াত করবেন বা করতে পারবেন‎ ক. মহান আল্লাহ শাফায়াতকারী‎ মহান আল্লাহ যে শাফায়াতকারী হবেন এবং তাঁর শাফায়াতের কয়েকটি ‎দিক কুরআন হাদীসে এভাবে এসেছে-‎ আল-কুরআন তথ্য-১‎ অর্থ: (হে নবী,) বলে দিন সকল শাফায়াত সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ‎ইখতিয়ারে। (শাফায়াতসহ) আকাশ ও পৃথিবীর সকল বিষয়ের সার্বভৌম ‎কর্তৃত্ব শুধু তাঁরই। ‎‏ ‏‎(যুমার : ৪৪)‎ তথ্য-২‎ অর্থ: তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্যে না আছে কোন (স্বাধীন) সাহায্যকারী ‎এবং না আছে কোন (স্বাধীন) শাফায়াতকারী ‎ ‏ ‏‎(সাজদাহ : ৪)‎ তথ্য-৩‎‏.‏ অর্থ: তিনি (আল্লাহ) ছাড়া তাদের জন্যে কোন (স্বাধীন) অভিভাবক ও ‎সুপারিশকারী নেই।

‎ ‎(আনআম : ৫১)‎ তথ্য-৪‎ অর্থ: তবে কি তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে শাফায়াতকারী ‎হিসেবে গ্রহণ করেছে? ‎ ‏ ‏‎(যুমার : ৪৩) ‎ আল-হাদীস অর্থ: হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা, আমার সম্পদ থেকে যা খুশি চাও ‎‎(পরকালে) আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করার ব্যাপারে তোমার কোন ‎উপকার করার মতা আমার নেই। (বুখারী, মুসলিম)‎ ব্যাখ্যা: হাদীসখানি থেকে সহজে বুঝা যায় পরকালে অন্য কারো তো ‎‎দূরের কথা, রাসূল (সা.) এরও শাফায়াতের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কারো ‎‎গুনাহ মাফ করে নেয়ার মতা থাকবে না। ‎ ‎ কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যসমূহের আলোকে পরিষ্কারভাবে ‎জানা ও বুঝা যায় পরকালে মূল শাফায়াতকারী অর্থাৎ-‎ ‎ কাউকে শাফায়াতের অনুমতি দেয়া না দেয়ার স্বাধীন মতার ‎ ‎ অধিকারী,‎ ‎ কারো শাফায়াত কবুল করা না করার স্বাধীন মতার অধিকারী এবং ‎ নিজ ইচ্ছায় গুনাহ মাফ করার অধিকারী সত্তা হবেন মহান আল্লাহ। ‎ তাই দুনিয়ার কোন ব্যক্তিকে নজর-নিয়াজ দিয়ে খুশি করতে পারলে তিনি ‎‎জোর করে আল্লাহর নিকট থেকে শাফায়াত আদায় করে দিতে পারবেন, ‎এ ধারণা পোষণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার অর্থ যে কুরআন ও ‎হাদীসের উল্লিখিত স্পষ্ট বক্তব্যগুলোকে অস্বীকার করার গুনাহ, তা বুঝা ‎‎মোটেই কঠিন নয়, যদি বুঝতে চাওয়া হয়। ‎ খ. কুরআন শাফায়াতকারী তথ্য-১‎ অর্থ: আবু উমামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ‎বলতে শুনেছি, তোমরা পবিত্র কুরআন পাঠ কর (জ্ঞান অর্জন কর) নিশ্চয়ই ‎তা কিয়ামতের ময়দানে তার সাথীদের জন্যে সুপারিশ করতে উপস্থিত ‎হবে।

(মুসলিম) ‎ তথ্য-২‎ অর্থ: সাঈদ ইবনে সুলাইম (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‎কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নবী, ফেরেশতা বা অন্য কেউ কুরআন হতে ‎‎শ্রেষ্ঠ শাফায়াতকারী হতে পারবে না। ‎ তথ্য-৩‎ ‏. ‏ অর্থ: জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : কুরআন পাক এত ‎বড় সুপারিশকারী যে, তার আবেদন রা করা হবে। এত বড় একরোখা ‎‎জেদী যে, তার অভিযোগ মেনে নেয়া হবে। যে একে সম্মুখে রাখবে তাকে ‎‎সে বেহেশতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। আর যে একে পিছনে ফেলে রাখবে, ‎তাকে সে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে।

‎ ‎ এ তথ্যগুলো থেকে জানা ও বুঝা যায়, পরকালে আল-কুরআন ‎শাফায়াত করবে। আর আল-কুরআনের শাফায়াতের দু’টি বিশেষ দিক হবে-‎ ‎ আল্লাহর অনুমতিসাপেে কুরআন শাফায়াত করবে। ‎ ‎ কুরআনের পরে বা বিরোধী শাফায়াতকে নবী-রাসূল (সা.) সহ ‎‎কোন মানুষ বা ফেরেশতা খণ্ডাতে পারবে না। আর ইচ্ছাকৃতভাবে ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জন এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করলে, ‎পরকালে কুরআন বিপে সাী দিবে তথা বিপে সুপারিশ করবে ‎একথা কুরআন ও রাসূল (সা.) স্পষ্টকরে জানিয়ে দিয়েছেন। ‎ গ. রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) শাফায়াতকারী‎ আল-কুরআন অর্থ: হে নবী, সে ব্যক্তিকে (শাফায়াতের মাধ্যমে) কে বাঁচাতে পারে, যার ‎উপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছে।

তুমি কি তাকে (শাফায়াতের মাধ্যমে) ‎বাঁচাতে পারবে যাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে? (যুমার : ১৯)‎ ব্যাখ্যা: এখানে প্রথমে আল্লাহ বলেছেন যার উপর শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়ে ‎‎গেছে তাকে কেউই শাফায়াতের মাধ্যমে বাঁচাতে পারবে না। তারপর ‎রাসূল (সা.) কে নির্দিষ্ট করে বলেছেন যাকে আল্লাহ দোযখে পাঠিয়ে ‎দিয়েছেন তাকে শাফায়াতের মাধ্যমে তিনিও বাঁচাতে পারবেন না। এখান ‎‎থেকে বোঝা যায় নবী-রাসূলগণ শাফায়াত করার অধিকারী হবেন। ‎ ‎ ‎ আল-হাদীস তথ্য-১‎ অর্থ: আমিই (রাসূল সা.) প্রথম শাফায়াতকারী ও আমার শাফায়াতই ‎প্রথমে গ্রহণ করা হবে। ‎ ‎(বুখারী, মুসলিম)‎ তথ্য-২‎ পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা নং ২১) হাদীসখানি যেখানে রাসূল (সা.) তাঁর কন্যা ‎ফাতেমা (রা.) কে বলেছেন, কিয়ামতের দিন (স্বাধীনভাবে) তিনি ‎শাফায়াত বা অন্য কোনভাবে তাঁর কোন উপকারে আসতে পারবেন না।

‎ ‎ কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যগুলো থেকে বুঝা যায়, রাসূল ‎মুহাম্মাদ (সা.) শাফায়াত করবেন এবং তিনিই প্রথম শাফায়াতকারী ‎হবেন। ‎ ঘ. অন্য নবী-রাসূলগণ ও সাধারণ মানুষ শাফায়াতকারী ‎ আল-কুরআন পূর্বে উল্লিখিত সূরা যুমায়ের ১৯ নং আয়াতের আলোকে বোঝা যায় অন্য ‎নবী-রাসূলগণ ও অন্য কিছু মানুষ পরকালে শাফায়াত করতে পারবেন। ‎ আল-হাদীস অর্থ: তিন ধরনের লোক কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন (করার অনুমতি ‎পাবেন) নবীগণ, আলেমগণ ও শহীদগণ। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)‎ ব্যাখ্যা: নবী-রাসূলগণ বাদে অন্য যে সকল মানুষ শাফায়াত করার অনুমতি ‎পাবেন, তাদের নিশ্চয়ই সকল গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে অর্থাৎ নিষ্পাপ ‎‎(নেককার মু’মিন) হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কারণ, তা না হলে তাদের ‎নজেদেরই অন্য কারো শাফায়াতের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রেহাই পেতে ‎হবে।

সহজেই বুঝা যায় এ ধরনের মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। ‎ ঙ. ফেরেশতাগণ শাফায়াতকারী ‎ফেরেশতাগণ শাফায়াত করবেন তা জানা ও বুঝা যায় সূরা আম্বিয়ার ২৮ ‎নং, নজমের ২৬ নং আয়াত এবং কিছু হাদীসের (পরে আসছে) মাধ্যমে। ‎ ‎ ‎ শাফায়াত শেষ বিচারের দিন আল্লাহর রায় ঘোষণার আগে না ‎পরে অনুষ্ঠিত হবে?‎ প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সঠিক উত্তরের সঙ্গে পুস্তিকার আলোচ্য ‎বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তাই চলুন, বিবেক-বুদ্ধি, কুরআন ও ‎হাদীসের মাধ্যমে উত্তরটি ভালভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাক-‎ বিবেক-বুদ্ধি‎ বিবেক-বুদ্ধি বলে পরকালে শাফায়াত তথা সুপারিশের মাধ্যমে গুনাহ মাফ ‎‎পেতে হলে, তা হতে হবে আল্লাহ বিচার-ফয়সালা করে শাস্তি ঘোষণা করা ‎তথা দোযখে পাঠিয়ে দেয়ার আগে। কারণ-‎ ক. আল্লাহর শাস্তি ঘোষণা করা বা দোযখে পাঠিয়ে দেয়ার পর ‎শাফায়াতের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করার অর্থ হচ্ছে-‎ ‎১. আল্লাহর বিচারে ভুল থাকা,‎ ‎২. অন্য কারো দ্বারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে পাল্টাতে বাধ্য করা।

‎ ‎ এরকম অবস্থার কথা চিন্তা করাও কুফরীর গুনাহ। ‎ খ. একজন বিচারক বিচার করে ফায়সালা দিয়ে দিলে উচ্চতর ‎আদালতে আবেদন ও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমেই শুধু সে রায় ‎পরিবর্তন হতে পারে। একই আদালতে একই বিচারকের মাধ্যমে ‎তা আর হয় না। পরকালের আদালতে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ‎একজনমাত্র বিচারক থাকবেন। তিনি হবেন মহান আল্লাহ।

‎ তাই শাফায়াত হতে হবে আল্লাহর বিচার-ফয়সালা করে রায় ঘোষণার ‎আগে। ‎ আল-কুরআন তথ্য-১‎ অর্থ: (হে নবী,) সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারবে, যার উপর শাস্তির ‎ফয়সালা হয়ে গিয়েছে? তুমি কি তাকে বাঁচাতে পারবে যাকে আগুনে ‎‎(দোযখে) পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে? অবশ্য যারা তাদের রবকে ভয় করে চলে ‎তাদের জন্যে তৈরি রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ, যার তলদেশ দিয়ে ‎ঝর্নাধারা প্রবাহিত। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আর আল্লাহ কখনও নিজের ‎কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (যুমার : ১৯, ২০)‎ ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন শেষবিচার ‎দিনে বিচারের রায় ঘোষণার পর নবী-রাসূল (সা.) গণ সহ কেউই শাস্তি‎প্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার শাস্তি ভোগ করা থেকে বাঁচাতে পারবে না।

‎শাফায়াতের অনুষ্ঠান পরকালে হবে এটি কুরআন ও হাদীসের আলোকে ‎নিশ্চিত। তাই এ আয়াতের আলোকে সহজেই বলা যায় শাফায়াত হবে ‎‎শেষবিচারের দিন আল্লাহর রায় ঘোষণার আগে। ‎ তথ্য-২‎ পূর্বাল্লিখিত আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আলোকে আমরা ‎নিশ্চিতভাবে জেনেছি যে, আল্লাহ্ বিচার করে যাদের দোযখে পাঠিয়ে ‎দিবেন তাদের চিরকাল সেখানে থাকতে হবে। তাই শাফায়াতের মাধ্যমে ‎‎গুনাহ মাফ করাতে হলে সে শাফায়াত অবশ্যই আল্লাহর বিচারের রায় ‎‎ঘোষণার আগে হতে হবে। ‎ আল-হাদীস পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা নং ২১) হাদীসখানিতে রাসূল (সা.) জানিয়ে ‎দিয়েছেন, তাঁর কন্যা ফাতেমাসহ কোন মানুষকেই পরকালের বিচারের ‎সময় আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করার ব্যাপারে তিনি স্বাধীনভাবে কোন ‎উপকার করতে পারবেন না।

‎ বিচার অনুষ্ঠানের সময় রাসূল (সা.) যদি কাউকে কোন উপকার ‎করতে না পারেন তবে বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে দোযখে ‎পাঠিয়ে দেয়ার পর আল্লাহর সিদ্ধান্তকে শাফায়াতের মাধ্যমে আবার ‎পরিবর্তন করাতে পারার প্রশ্নই আসে না। ‎ ‎ কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির এ সকল তথ্যের আলোকে ‎নিশ্চয়তাসহকারে বলা যায় শাফায়াত হবে শেষবিচারের দিন মহান ‎আল্লাহর বিচারের রায় ঘোষণার আগে। ‎ শাফায়াত করার অনুমতি পাওয়ার যোগ্যতা বিবেক-বুদ্ধি‎ ‎যে ব্যক্তি অন্যের গুনাহ মাফের জন্যে আল্লাহর নিকট শাফায়াত করবেন ‎তাকে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। সাধারণ বুদ্ধিতে সহজেই বোঝা যায় যার ‎নিজের জন্যে শাফায়াত লাগবে সে অন্যের জন্যে শাফায়াত করার যোগ্য ‎হতে পারে না। তাই শাফায়াত করার যিনি যোগ্য হবেন তার আমলনামায় ‎‎কোন গুনাহ থাকা চলবে না।

অর্থাৎ তাদের নেক্কার মু’মিন হিসেবে ‎মৃত্যুবরণ করতে হবে। আবার এটিও সহজে বোঝা যায় নিম্নস্তরের ‎‎নেক্কার মু’মিনগণের (মুসলিম) চেয়ে সর্বোচ্চ স্তরের নেক্কার ‎মু’মিনগণের (মুহসিন) শাফায়াতের অনুমতি পাওয়া বেশি মুক্তিসংগত‎ আল-কুরআন তথ্য-১.১‎‏.‏ অর্থ: কে আছে এমন যে (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফায়াত ‎করতে পারবে? (বাকারা : ২৫৫)‎ তথ্য-১.২‎ অর্থ: তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করার কেউ নেই। ‎ ‎ (ইউনুস : ৩)‎ তথ্য-১.৩‎ অর্থ: এমন একদিন আসবে যে দিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা ‎বলতে পারবে না। (হুদ : ১০৫)‎ সম্মিলিত ব্যাখ্যা আল-কুরআনের এই তথ্যগুলো থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, ‎পরকালে শাফায়াতকারীকে শাফায়াত করার জন্যে আল্লাহর নিকট থেকে ‎অনুমতি নিতে হবে। আর অনুমতি নেয়ার শর্ত রাখা থেকেই বুঝা যায়, ‎আল্লাহ সকলকে শাফায়াতের অনুমতি দিবেন না।

ঈমান ও আমলের ‎ভিত্তিতে যাকে তিনি যোগ্য মনে করবেন, তাকেই শুধু তিনি শাফায়াত ‎করার অনুমতি দিবেন। কিন্তু কী হবে সেই যোগ্যতা তা এ আয়াতখানি ‎হতে বোঝা যায় না। ‎ তথ্য-২‎ অর্থ: তাঁকে (আল্লাহকে) বাদ দিয়ে এই লোকেরা যাদের ডাকে তাদের ‎শাফায়াত করার কোন মতাই নেই। ঐ লোকেরা ব্যতীত যারা জ্ঞানের ‎ভিত্তিতে সত্যের স্যা দেয়। (যুখরুফ : ৮৬)‎ ব্যাখ্যা: আয়াতে কারীমায় আল্লাহ প্রথমে বলেছেন, পরকালে তিনি ব্যতীত ‎অন্য কারো শাফায়াত করার স্বাধীন মতা নেই।

সবাইকে তাঁর অনুমতি ‎নিয়ে শাফায়াত করতে হবে। এরপর আল্লাহ্ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন যে, তিনি শাফায়াতের অনুমতি দিবেন তাদের যারা দুনিয়ায় ‎জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যের স্যা দিয়েছে। চিরসত্য জ্ঞান হচ্ছে কুরআন ও ‎সুন্নাহের জ্ঞান। তাই জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যের স্যা দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ ‎সত্যকে জেনে ও বুঝে নিয়ে (না জেনে না বুঝে নয়), বাস্তব কাজের ‎মাধ্যমে তার সত্যতার স্যা দেয়া। ‎ তাহলে মহান আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, ‎পরকালে শাফায়াতের অনুমতি পাবে বা অনুমতি পাওয়ার যোগ্য হবে শুধু ‎‎সেই ব্যক্তিরা, যারা কুরআন ও সুন্নাহের বক্তব্যকে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে ‎সঠিকভাবে জেনে ও বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করেছে।

কারণ জানা ‎ও বুঝা না থাকলে অবশ্যই আমলে ভুল হবে বা আমল বাদ যাবে। এটা ‎নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন শর্ত। এখান থেকে বুঝা যায়, শাফায়াতের ‎অনুমতি খুব কম ব্যক্তি বা সত্তারাই পাবেন। আর সাধারণ জ্ঞানে বোঝা ‎যায় নবী-রাসূলগণ বাদে সেই ব্যক্তিরা হবে তারা যারা, ঈমান ও আমলের ‎ভিত্তিতে সর্বোচ্চ স্তরের নেককার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। ‎ ‎ ‎ আল-হাদীস ‏. ‏অর্থ: উম্মুল আ’লা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম, ‎আল্লাহর কসম, (আখিরাতে) আমার সাথে কী আচরণ করা হবে, তা আমি ‎জানি না।

আর এটাও আমি জানি না (সে দিন) তোমাদের সাথে কী ‎ব্যবহার করা হবে। অথচ আমি আল্লাহর রাসূল। (বুখারী)‎ ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) দু’বার আল্লাহর কসম খেয়ে অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্ব ‎দিয়ে বলেছেন, পরকালে তাঁর সঙ্গে এবং সাহাবায়ে কিরামদের সঙ্গে কী ‎ধরনের আচরণ করা হবে তা রাসূল হওয়া সত্ত্বেও তিনি জানেন না। ‎ পরকালে আচরণ করার স্বাধীন মতা থাকবে শুধু মহান আল্লাহর। সে ‎দিন তিনি প্রধানত দু’ধরনের আচরণ বা কাজ করবেন।

যথা-‎ ক. বিচার করে চূড়ান্ত পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া এবং ‎ খ. যোগ্য ব্যক্তিকে শাফায়াত করার অনুমতি দেয়া। ‎ রাসূল (সা.) কে বিচার করে শাস্তি দেয়ার প্রশ্ন আসে না। তাই রাসূল ‎‎(সা.) যে বলেছেন, তাঁর সঙ্গে কী আচরণ করা হবে তা তিনি জানেন না এ ‎কথাটির একটিমাত্র অর্থ হবে। আর সে অর্থ হচ্ছে পরকালে শাফায়াতের ‎অনুমতি দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কী আচরণ করা হবে, তা ‎তিনি জানেন না। ‎ রাসূল (সা.) এর ন্যায় ব্যক্তি বলছেন, তিনি জানেন না তাঁকে ‎শাফায়াতের অনুমতি দেয়া হবে কিনা।

এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ‎নবী-রাসূল বাদে অন্য যারা শাফায়াতের অনুমতি পাবেন তাদের মুহসিন ‎মানের নেক্কার মু’মিন হতে হবে। ‎ ‎ কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির এ সকল তথ্যের আলোকে ‎‎স্পষ্টভাবে জানা যায় শাফায়াত করার জন্যে আল্লাহর নিকট থেকে অনুমতি ‎নিতে হবে। আর নবী-রাসূল বাদে শুধুমাত্র মুহসিন স্তরের নেক্কার ‎মু’মিনগণ শাফায়াত করার যোগ্য বলে বিবেচ্য হতে পারেন। ‎ শাফায়াতের মাধ্যমে যে ধরনের গুনাহ মাফ হবে না‎ বিবেক-বুদ্ধি‎ তথ্য-১‎ ‎দয়াময় আল্লাহ কুরআন সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ‎মৃত্যুর যুক্তিসঙ্গত সময় পূর্বে খালিস নিয়াতে তওবা করে পরিপূর্ণ ইসলামে ‎ফিরে আসলে তিনি মু’মিন ব্যক্তিদের (মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ ‎ব্যতীত) সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। যে দুষ্ট মু’মিন আল্লাহর দেয়া এই ‎অপূর্ব সুযোগ গ্রহণ না করে কবীরা গুনাহসহ তথা সমাজে বড় অশান্তি ‎সৃষ্টিকারী অন্যায় কাজসহ মৃত্যুবরণ করল তার ঐ কবীরা গুনাহ পরকালে ‎শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ হওয়ার মুক্তিসংগত (বিবেক-সম্মত) নয়।

‎ তথ্য-২‎ ইসলাম কবর পূজা, পীর পূজা ইত্যাদি বন্ধ করতে চায়। শাফায়াতের ‎মাধ্যমে পরকালে কবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে তথ্যটি ঐ ধরনের কাজ ‎করার জন্যে মানুষকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। তাই শাফায়াতের ‎মাধ্যমে কবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এ ধরনের কথা ইসলামের তথ্য ‎হওয়ার কথা নয়। ‎ আল-কুরআন তথ্য-১‎ অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা অজ্ঞতা বা ভুলের ‎কারণে গুনাহের কাজ করে বসে।

অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে ‎‎নেয়। এরাই হল সে সব লোক, যাদের আল্লাহ মা করে দেন। আল্লাহ ‎সর্ববিষয় অভিজ্ঞ ও অতীব বুদ্ধিমান। আর এমন লোকদের জন্যে কোন ‎‎মা নেই, যারা অন্যায় কাজ করে যেতেই থাকে যতণ না তাদের মৃত্যু ‎উপস্থিত হয়। তখন তারা বলে, আমি এখন তওবা করছি।

অনুরূপভাবে ‎তাদের জন্যেও কোন মা নেই যারা মৃত্যু পর্যন্ত কাফির থেকে যায়। ‎এদের জন্যে আমি কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। ‎ ‎(নিসা : ১৭, ১৮)‎ ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এ আয়াত দু’খানির মাধ্যমে প্রথমে স্পষ্ট করে ‎জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি অবশ্যই সে ঈমানদারদের মা করে দিবেন ‎যারা অজ্ঞতা, ভুল বা ধোঁকায় পড়ে পাপ কাজ করে ফেলার সাথে সাথে ‎তওবা করবে অর্থাৎ খালিস নিয়াতে তাঁর নিকট মা চাইবে এবং ‎পরবর্তীতে সেই গুনাহের কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। ‎ এরপর আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, যে সকল মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর আগ ‎পর্যন্ত অব্যাহতভাবে গুনাহের কাজ করে যাবে এবং মৃত্যু উপস্থিত হলে ‎তওবা করবে, তাদের তিনি মা করবেন না। ‎ আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর ‎যুক্তিসংগত পূর্বে তাওবা করে মাফ করিয়ে না নিয়ে গেলে তিনি আর ‎তাদের গুনাহ মাফ করবেন না।

তাই এ দু’খানি আয়াতের আলোকে ‎এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, পরকালে শাফায়াতের মাধ্যমে গুনাহ ‎মাফ হলেও তাতে কবীরা গুনাহ মাফ হবে না। ‎ তথ্য-২‎‏.‏ অর্থ: যে সকল গুনাহ হতে তোমাদের (মু’মিনদের) বিরত থাকতে বলা ‎হয়েছে তার মধ্যকার বড় (কবীরা) গুলো হতে যদি বিরত থাকতে পার ‎তবে তোমাদের অন্য গুনাহসমূহ আমি নিজ থেকে রহিত (মাফ) করে দিব ‎এবং তোমাদের সম্মানের স্থানে (বেহেশতে) প্রবেশ করাব। (নিসা : ৩১)‎ ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ঈমানদার ব্যক্তিরা ‎কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে বা মুক্ত হতে পারলে তাদের অন্য সকল ‎‎গুনাহ তিনি নিজ থেকে কোন না কোনভাবে মাফ করে দিয়ে বেহেশত ‎দিয়ে দিবেন। ‎ কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা বা মুক্ত হওয়ার উপায় হচ্ছে কবীরা ‎‎গুনাহ না করা বা কবীরা গুনাহ হয়ে গেলে মৃত্যুর যুক্তিসঙ্গত সময় পূর্বে ‎খালিস নিয়তে তওবা করে মাফ করিয়ে নেয়া। আর মৃত্যুর পর গুনাহ ‎মাফের উপায় হচ্ছে শাফায়াত বা আল্লাহর নিজ ইচ্ছা।

‎ তাহলে এ আয়াতে কারীমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ‎জানিয়ে দিয়েছেন তওবার মাধ্যমে কবীরা গুনাহ মাফ করিয়ে নিয়ে যে ‎মু’মিন মৃত্যুবরণ করবে তার অন্য ধরনের গুনাহ থাকলে তা শাফায়াত বা ‎নিজ ইচ্ছায় মাফ করে দিয়ে তিনি তাদের চিরকালের জন্যে বেহেশত দিয়ে ‎দিবেন। তাই এ আয়াত থেকে জানা যায় শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা ‎‎গুনাহ মাফ হবে না। ‎ তথ্য-৩‎ অর্থ: আর পৃথিবী ও মহাকাশের সকল কিছুর উপর মতাবান মহান ‎আল্লাহ। যেন তিনি গুনাহকারীদের তাদের আমলের প্রতিফল দেন এবং ‎‎নেক আমলকারীদের দেন ভাল ফল। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ ‎‎থেকে বেঁচে থাকে তারা (কোন কারণে) ছোট-খাট গুনাহ করে থাকলে ‎নিশ্চয়ই তোমার রবের মা সুদূর বিস্তৃত।

(নাজম : ৩১, ৩২)‎ ব্যাখ্যা: এ আয়াত দু’খানির মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে সকল ‎মু’মিন কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত হতে বা মুক্ত থাকতে পারবে তাদের অন্য ‎‎গুনাহ তিনি মাফ করে দিবেন। অর্থাৎ এ আয়াতের মাধ্যমেও আল্লাহ ‎জানিয়ে দিয়েছেন শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। ‎ তথ্য-৪‎‏.‏ অর্থ: তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে তা শুধু দুনিয়ার কয়েক দিনের ‎জন্যে। আর আল্লাহর নিকট যা রয়েছে (বেহেশতের সামগ্রী) তা অতীব ‎উত্তম ও চিরস্থায়ী। সেগুলো হচ্ছে ঐ লোকদের জন্যে যারা ঈমান এনেছে ‎এবং নিজেদের রবের উপর ভরসা রাখে।

আর যারা কবীরা (বড়) ‎‎গুনাহসমূহ ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাগ হলে মা করে ‎‎দেয়। ‎ ‏ ‏‎(শুরা : ৩৬, ৩৭) ‎ ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে এবং পরের আয়াতে (৩৮ নং) কিছু বড় ‎সওয়াব ও কিছু বড় (কবীরা) গুনাহ নাম ধরে উল্লেখ করেছেন এবং ‎বলেছেন বেহেশতের অধিকারী হবে শুধু সে মু’মিনরা যারা নাম উল্লেখ ‎করাগুলোসহ অন্য সকল কবীরা গুনাহ হতে মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ কবীরা ‎‎গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন বেহেশত পাবে না। তাই এখান থেকেও ‎‎স্পষ্টভাবে বোঝা যায় পরকালে শাফায়াত বা অন্যকোনভাবে কবীরা গুনাহ ‎মাফ হবে না। ‎ তথ্য-৫‎ অর্থ: এবং যে (মু’মিন বা কাফির) কোন মু’মিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা ‎করবে তার শাস্তি দোযখ।

সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার উপর ‎আল্লাহর গযব ও অভিশাপ এবং তার জন্যে কঠিন শাস্তি নির্দিষ্ট করে রাখা ‎হয়েছে। ‎ ‎(নিসা : ৯৩)‎ ব্যাখ্যা: কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা কবীরা গুনাহ। তাই আল্লাহ এ ‎আয়াতের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যে সকল মু’মিন একটি ‎মাত্র কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণ করবে তাদের চিরকাল দোযখে থাকতে হবে। ‎অর্থাৎ শাফায়াত বা অন্যকোনভাবে পরকালে কবীরা গুনাহ মাফ হবে না।

‎ আল-হাদীস তথ্য-১‎ অর্থ: হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা, আমার সম্পদ থেকে যা কিছু খুশী ‎চাও। (পরকালে) আল্লাহ নিকট জবাবদিহি করার ব্যাপারে তোমার কোনই ‎উপকার করার মতা আমার নেই। ‎ ‏ ‏‎(বুখারী, মুসলিম)‎ ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন অন্যকারো ‎ব্যাপারে তো দূরের কথা তার প্রাণপ্রিয় কন্যার গুনাহও পরকালে ‎শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ করিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই করতে ‎পারবেন না। তাই এ হাদীসের আলোকে সহজে বলা যায়, সকল ধরনের ‎‎গুনাহ না হলেও কারো কবীরা গুনাহ যে রাসূল (সা.) শাফায়াতের মাধ্যমে ‎মাফ করতে পারবেন না তা নিশ্চিত। আর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) ‎শাফায়াতের মাধ্যমে যে ধরনের গুনাহ মাফ করতে পারবেন না, অন্য ‎‎কোন ব্যক্তিও যে তা পারবেন না সেটিও নিশ্চিত করেই বলা যায়।

‎ তথ্য-২‎ অর্থ: আমল কর এবং নিজের সাধ্য মত সর্বাধিক সংখ্যক সঠিক কাজ ‎করার চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থেক। জেনে রেখ, কোন ব্যক্তিকে ‎শুধু তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। ‎ সাহাবায়ে কিরামগণ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‎‎হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি উত্তর ‎দিলেন-‎ অর্থ: না, আমিও না, যদি না আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে ‎আচ্ছাদিত করেন। ‎ ‎ (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)‎ ব্যাখ্যা: আমলের ব্যাপারে অত্যন্ত বাস্তব যে কথাটি রাসূল (সা.) ‎হাদীসখানির শেষে উল্লেখ করেছেন, সে কথাটি দিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করলে ‎পুরো হাদীসখানি বুঝতে সহজ হবে। ‎ হাদীসখানির শেষে রাসূল (সা.) বলেছেন, নিখুঁতভাবে সকল আমলে ‎সালেহ পালন করে পৃথিবীর কেউই এমনকি তিনিও জান্নাতে যেতে ‎পারবেন না।

কারণ, সকলের জীবনেই কোন না কোন আমল করার ‎ব্যাপারে কিছু না কিছু খুঁৎ থাকবেই। আর ঐ খুঁৎ দুনিয়া ও আখিরাতে ‎‎কোন না কোনভাবে আল্লাহ মাফ করে দিলেই শুধু জান্নাত পাওয়া সম্ভব ‎হবে। ‎ তাই হাদীসটির প্রথমে রাসূল (সা.) বলেছেন, যত বেশি সংখ্যক ‎আমল ঈমানের দাবি অনুযায়ী যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব তা করার ‎‎চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। আর কোন আমল বাধ্য হয়ে ছাড়তে হলে ‎সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে। অর্থাৎ গুনাহ না হওয়ার স্তরের কাছাকাছি ‎‎থাকতে হবে।

আমল ছাড়ার পর গুনাহ না হওয়ার স্তরের কাছাকাছি স্তর ‎হিসেবে ছগীরা গুনাহগারের স্তরকে অবশ্যই ধরা যাবে। মধ্যম গুনাহগারের ‎‎স্তরকে ধরা যেতেও পারে। কিন্তু কবীরা গুনাহগারের স্তরকে অবশ্যই ধরা ‎যাবে না। ‎ তাই এ হাদীসখানির আলোকে বলা যায় পরকালে শাফায়াতের ‎মাধ্যমে ছগীরা গুনাহ অবশ্যই মাফ হবে, মধ্যম গুনাহ মাফ হতেও পারে ‎কিন্তু কবীরা গুনাহ অবশ্যই মাফ হবে না। ‎ ‎ কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির এ সকল তথ্যের আলোকে সহজেই ‎বলা যায় পরকালে শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা গুনাহ মাফ হবে না।

‎ শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ থেকে মুক্তি পেয়ে বেহেশত পাওয়া ‎যাবে কিনা?‎ বিবেক-বুদ্ধি‎ তথ্য-১‎ ঈমান আনা আমলটির একটি সরল অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ইলাহিত্বকে তথা ‎আল্লাহর সরকারকে স্বীকার করা। আর কিছুদিন বা কিছুকাল, অনন্তকালের ‎তুলনায় অতি নগণ্য পরিমাণ সময়, চাই সে কিছুকাল যত বড়ই হোক না ‎‎কেন। তাই মানুষের দুনিয়ার জীবনে কিছুকাল ও অনন্তকালের কাছাকাছি ‎বর্ণনা হবে-এক সেকেন্ড বা তারও কম সময় এবং সারা জীবন। সুতরাং ‎বড় গুনাহ করলেও ঈমান থাকলে কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ করে ‎অনন্তকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া বিষয়টিকে দুনিয়ার যে কোন দেশের ‎অপরাধের জন্যে জেল খাটা এবং সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া বিষয়টির ‎সঙ্গে মেলালে যে তথ্যটি দাঁড়ায় তা হচ্ছে- উপস্থিত সরকারকে স্বীকার ‎করলে বড় অপরাধ করলেও এক সেকেন্ড বা তার চেয়ে কম সময় জেল ‎খাটার পর মুক্তি পেয়ে বাকি জীবন মহা শান্তিতে মুক্তভাবে কাটানোর ‎ব্যবস্থা থাকা। ‎ পৃথিবীর কোন দেশের আইন-কানুনে যদি ঐ ধরনের একটি কথা বা ‎তথ্য সত্যিই উপস্থিত থাকে আর তা সকলের জানা থাকে, তবে ‎নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ঐ দেশে বড় বড় অপরাধীর সংখ্যা অগণিত ‎হবে এবং সেখানকার সমাজ জীবনে শান্তির লেশমাত্রও থাকবে না।

তথা ‎‎সেখানকার সমাজ জীবন ব্যর্থ হবে। ‎ ‘একজন ঈমানদার ব্যক্তি বড় গুনাহগার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও ‎পরকালে কিছু দিন দোযখে থেকে শাফায়াতের মাধ্যমে চিরকালের জন্যে ‎‎বেহেশতে যেতে পারবে’ এমন একটি কথা ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় ‎উপস্থিত থাকলে বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী তার অবশ্যম্ভাবী ফল যা হবে তা ‎হচ্ছে অসংখ্য ঈমানের দাবিদার ব্যক্তি ছোট-খাট বা না থাকার ন্যায় ‎ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহকারে ইসলামের বড় বড় ‎আমল ছেড়ে দিবে-বিশেষ করে যে আমলগুলো পালন করতে ব্যক্তিগত ‎ত্যাগ স্বীকার বা য়-তির সম্মুখীন হতে হয়। আর এর চূড়ান্ত ফল ‎‎দাঁড়াবে ‎ ‎১.‎ মহান আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে ‎‎রেখে কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায় কাজের বাস্তবায়ন ও অন্যায় ‎কাজের প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন ‎করা কল্পনার বিষয় হিসেবে থেকে যাবে। কারণ, তা করতে হলে ‎অসংখ্য মু’মিনকে বিপদসংকুল, কষ্টসাধ্য ও কঠিন ত্যাগ স্বীকার ‎লাগে, এমন অনেক কাজ করতে হবে। ‎ ‎২.‎ মুসলিম সমাজ বা দেশ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অশান্তি ‎ইত্যাদিতে ভরে যাবে।

‎ তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী সহজে বলা যায় শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ ‎‎থেকে বের হয়ে চিরকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া যাবে এ ধরনের কথা ‎ইসলামের কথা হতে পারে না। ‎ তথ্য-২‎ কবীরা গুনাহ হচ্ছে বড় অপরাধ। ইসলামী জীবন বিধানে দুনিয়াতে বড় ‎অপরাধ করা মু’মিনদের স্থায়ী শাস্তি তথা মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা আছে। যেমন ‎অন্যায়ভাবে হত্যার শাস্তিস্বরূপ মু’মিনকে হত্যা করা, জেনার জন্যে ‎মু’মিনকে সংগেসার করা। তাই কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিনের ‎পরকালে স্থায়ী শাস্তি তথা স্থায়ী দোযখের শাস্তির ব্যবস্থা, ইসলাম সম্মত ‎হওয়ার কথা।

অর্থাৎ শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়ার ‎কথা নয়। ‎

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।