আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (দ্বাদশ পর্ব)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

রাত জেগে প্রতীক্ষা চলতেই লাগলো। ছাত্রীর বাসায় পড়তে যাই কম কম। ইদানিং ছাত্রীও কিছুটা এড়িয়ে চলা শুরু করেছে। আগের মতো এতো কথা বলে না। বেশিরভাগ সময় গম্ভীর হয়ে পড়া বুঝে নেয়।

চারপাশের পরিবর্তন দেখতে দেখতে হাপিয়ে উঠতে থাকি। হঠাৎ একদিন অবন্তীর ফোনকল পেলাম। জানালো বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে । সময় পেলে তাদের বাসায় যেতে বললো। এতোদিন অবন্তীর একটা ফোনকলের জন্য অনেক রাত জেগে প্রতীক্ষা করেছি।

কিন্তু ফোনকল পেয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই অভিমান ঝেকে ধরলো আমাকে। সেই অভিমানটাই মনের অবস্থান বদলে দিল। বেশ কয়েকদিন ইচ্ছা করেই অবন্তীর বাসায় গেলাম না। একদিন পড়ন্ত বিকালে গিয়ে উপস্থিত হলাম অবন্তীদের বাসায়। আগের অভ্যাস অনুযায়ী গেট পার হয়ে উঠান, তারপর বাগান।

কিন্তু বাগানে অবন্তীকে পেলাম না। সবকিছু অন্যরকম মনে হতে লাগলো। কয়েকমাসে অভ্যাসের অনেক পরিবর্তন মনে হলো। ভিতর বাড়িয়ে গিয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। বেশকিছুটা সময় অবন্তীর বাবার সাথে গল্প করলাম।

বিদেশে কোথায় কি করলেন, কেমন ঘুরলেন, বিদেশীদের স্বভাব চরিত্র কিরকম, কি ধরনের খাবার খেয়ে আসলেন এইসব বিষয়ক গল্প। জানালেন এরমধ্যে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন। এর জন্য টানা এক মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। তাই ফিরে আসতে দেরি হয়। অবন্তীর বাবার গল্পে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না।

আমি অপেক্ষা করে ছিলাম অবন্তীর জন্য। অনেকদিন পর দেখা হবে। অনেক পরিবর্তন কি হয়ে যাবে এই কয় মাসে! আমি এসেছি এমন খবর পেয়েও অবন্তী দেখা করতে আসছে না! অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম বিষয়টা। এর আগে কখনো এমনটা হয়নি। দীর্ঘক্ষণ সময় বসে থাকার পর অবন্তী আসলো।

এসেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো ‌"স্যরি! আপনাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম। ফোনে কথা বলছিলাম এতোক্ষণ। ইংল্যান্ডের ওভারসীজ কল। " "হুমমম। " "কি ব্যাপার আপনাকে কল করে জানালাম বেশ কয়েকদিন আগে।

এতোদিন আসেন নি কেন!খুব বিজি ছিলেন নাকি?" প্রাসঙ্গিক উত্তর না দিয়ে বললাম, "আপনারতো দেশে আসার আগেই ফোনকল করার কথা ছিল। " অবন্তী আমার গলার স্বরটা ধরতে পারলো। কিছুটা নড়েচড়ে বসে কথা বলা শুরু করলো- "আসলে গত কয়েকমাস খুব বিজি সময় কাটাইছি। আপনার সঙ্গে যে কল করে কথা বলবো সেই সময়টা পাই নি। এরমধ্যে আবার বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন।

ঘোরাঘুরি, শপিং, সিনেমা দেখা এইসব করে করে ব্যস্ত সময় কাটছে। আপনার কি খবর বলেন। " অবন্তীর কথা বলার ধরণে হতাশ হলাম আরেকবার। মানলাম সে খুব ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। তাই বলে গত কয়েকমাসে এক মিনিট সময়ও পায় নি আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য! তাহলে আমি কার জন্য রাতের পর রাত জেগে প্রতীক্ষা করেছি।

চাপা অভিমানটা আরো বেড়ে গেল। অবন্তীর কুশল জিজ্ঞাসার জবাবে কিছুই বললাম। নিরবতা নেমে এলো রুমটাতে। খানিক পরে নিরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো- "স্টাডি রুমে চলেন। নতুন একটা পেইন্টিং করলাম।

আপনাকে দেখাই। বিদেশে থাকার সময় প্রচুর ছবি তুলছি। সেগুলোও দেখাবো আপনাকে। " কথা না বাড়িয়ে অবন্তীর সাথে তার স্টাডি রুমে চলে গেলাম। ক্যানভাসে ঝুলে আসে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া পেইন্টিং।

পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাহারী রং। বিন্যাসটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবন্তীর দিকে তাকালাম। খুব ভালো হয়েছে বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। যেন চাপা অভিমানটা এখানেও ফিরে এসেছে। ক্যানভাসটার সামনে বসে আছি এমন সময় অবন্তী একগাদা ছবি নিয়ে আসলো।

দেখার জন্য আমার হাতে তুলে দিল। ছবিগুলো উল্টে পাল্টে দেখছি। অনেকগুলো ছবি একটা ছেলের সঙ্গে তোলা। ধারণা করলাম ছেলেটি অবন্তীর ফুফাতো ভাই। কিছুক্ষণ পর এমনই একটা যুগল ছবি হাতে নিয়ে অবন্তী নিজে থেকেই বললো "এই ভদ্রলোক আমার খালাতো ভাই।

বলেই মুচকি হাসতে লাগলো। " আমি কথা না বলে তাকিয়ে থাকলাম। "আপনাকে একটা ব্যাপার জানানো হয় নি। আপনি খুব শিগগিরই একটা দাওয়াত পেতে যাচ্ছেন। " "কিসের দাওয়াত? কিছুটা অবাক হলাম আমি।

" "আচ্ছা তাহলে আপনাকে দাওয়াতটা এখনই দিয়ে দেই। ছবির এই ভদ্রলোক কয়েকমাস পরে দেশে আসছেন। তখন আমাদের বিয়ে হবে। সেই বিয়ের দাওয়াত। " বলেই লাজুক হাসি হাসতে লাগলো অবন্তী।

কয়েক লাইনের কথা। অথচ শুনে মনে হলো মুহুর্তেই আমার অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। কি বললো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারপরেও অবন্তীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম- "গ্রেট!কনগ্র্যাচুলেশন্স!! ছবিতে আপনাদের দুইজনকে দারুন মানিয়েছে। " "থ্যাঙ্কস! আচ্ছা আপনাকে কল করে জানাবো পরে।

আপনি কিন্তু অবশ্যই আসবেন। " দরকারি কাজের বাহানা দেখিয়ে উঠতে যাবো এমন সময় অবন্তী থামালো। "বিয়ের কার্ডের বদলে এই পেইন্টিংটা নিয়ে যান। " বলেই সদ্য আঁকা পেইন্টিংটায় নিজের নাম লিখে আমার হাতে তুলে দিল। পেইন্টিং নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে।

রাস্তায় বের হয়ে এলোমেলোভাবে হাটতে লাগলাম। সেই মুহুর্তটাতে কি করা উচিত তাই ঠিক করতে পারছিলাম না। কেবল ভাবছিলাম, এতো অভিনয় আমি কিভাবে করতে পারলাম। অবন্তী এভাবে তার বিয়ের কথা বললো আর আমি অভিনয় করে বলে দিলাম- আপনাদের দুইজনকে দারুন মানিয়েছে। একবার গলা কাপলোও না।

সীমাবদ্ধতাটা নিয়েও ভাবলাম। ইউনিভার্সিটি লাইফের প্রথম বর্ষ থেকে এখন ইউনিভার্সিটির লাইফের শেষ সময়। কিছুদিন পরেই ইউনিভার্সিটির গন্ডি পেরিয়ে যাবো। সময়ের হিসাবে মোটামোটি দীর্ঘ সময়। এতোটা দীর্ঘ সময় একজনকে নিয়ে খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখেও তাকে সামনাসামনি বলতে পারলাম না।

আজ অধিকার নিয়ে তার সামনে দাড়াতে পারলাম না। অবন্তীর অনেক কথাতে ধারণা করতাম সে হয়তো আমার প্রতি কিছুটা দুর্বল। কিন্তু বিষয়টার পরিণতি যে এমন হবে ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করিনি। হাটতে হাটতে ছাত্রীর বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। পড়াতে পারবো কিনা এ নিয়ে সন্দেহ ছিল মনে।

তারপরেও গেলাম দায়িত্ব সারতে। ছাত্রী তখন সেজেগুজে বের হচ্ছে। যথারীতি আজকেও বাসায় তার আব্বু আম্মু নেই। "কি ব্যাপার কোথাও বেরুচ্ছো নাকি? পড়বে না আজকে?" "জ্বী স্যার, বন্ধুরা একসাথে হবো। নতুন সিনেমা দেখতে যাচ্ছি।

" "ওহ!" "আপনি আজকে চলে যান। অন্য একদিন বেশি পড়ে পুষিয়ে নিবো। " "তুমি না একদিন বলেছিলে আমার সঙ্গে দীর্ঘ সময় নিয়ে গল্প করবে? " "এখন ঘরে বসে বসে আপনার সাথে গল্প করতে পারবো না। তাছাড়া আপনার সঙ্গে কি বিষয়ে গল্প করতে পারি! বন্ধুরা সব অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে হবে এখন।

" বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল ছাত্রী। তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসলাম। উপলব্ধি করলাম এতোদিন আমার প্রতি ছাত্রীর তীব্র একটা মোহ ছিল। সেই মোহভঙ্গের চুড়ান্ত রুপ দেখলাম আজ । ছন্নছাড়ার মতো কিছুক্ষণ হেটে চলে এলাম বাসায়।

রোজনামচার সবকিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেল কয়েকদিনের ব্যবধানে। এখন আর কোন কাজেই তেমন করে উৎসাহ পাই না। চুপচাপ ঘরে বসে থাকি। কোন কোন বিকালে ছন্নছাড়াভাবে হেটে বেড়াই এ রাস্তা সে রাস্তা। রাত নামলে ঘরে ফিরে আসি।

সারাক্ষণই এটা সেটা নিয়ে ভাবি। অনেক কিছু করতে ভুলে যাই। তবে এসবের মাঝেই রাত জেগে প্রস্তুতি নিয়ে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে শেষ করি। কারণ এইটুকু বোধ ছিল মনে, আমার পরীক্ষার ফলাফলের দিকে আমার পরিবার চেয়ে আছে। কিছুটা ভেঙ্গে পড়লেও নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি।

কোন কোন রাতে হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন আর ঘুম নামতে চায় না দুচোখ জুড়ে। বারান্দায় বসে বসে তারা গুনি তখন। গুনেই চলি গুনেই চলি, শেষ নেই তার। কখনো কখনো সারারাত জাগি।

সারা রাত জাগার সাথে সাথে গানের অবসেশন হয়ে গেছে। কোন কোন রাতে কেবল একটা গানই বারবার শুনে যাই। সারারাত জেগে একটা গানই শুনি। একবার সারারাত জেগে শুনলাম অল্টার ব্রিজ এর গান ইন লাভিং মেমোরি। গানটার কথাগুলোর সাথে নিজের মিল খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে গেলাম রাত জুড়ে।

প্লেয়ারে সারারাতজুড়ে বেজে যেতে থাকলো ইন লাভিং মেমোরি। Thanks for all you've done I've missed you for so long I can't believe you're gone You still live in me I feel you in the wind You guide me constantly I've never knew what it was to be alone, no Cause you were always there for me You were always waiting And ill come home and I miss your face so Smiling down on me I close my eyes to see And I know, you're a part of me And it's your song that sets me free I sing it while I feel I can't hold on I sing tonight cause it comforts me I carry the things that remind me of you In loving memory of The one that was so true Your were as kind as you could be And even though you're gone You still mean the world to me I've never knew what it was to be alone, no Cause you were always there for me You were always waiting But now I come home and it's not the same, no It feels empty and alone I can't believe you're gone And I know, you're a part of me And it's your song that sets me free I sing it while I feel I can't hold on I sing tonight cause it comforts me I'm glad he set you free from sorrow I'll still love you more tomorrow And you will be here with me still And what you did you did with feeling And You always found the meaning And you always will And you always will And you always will অবন্তীর দেয়া পেইন্টিংটা দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছি। পেইন্টিংটার দিকে চোখ গেলেই অবন্তীর স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি জীবন্ত হয়ে উঠে। অবন্তীর বলা কথাগুলো তখন ভাবি। অবন্তী বলেছিল তার কাছে ভালোবাসার সম্পর্ক মানে প্রিয় কিছু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমন্বয়।

অন্যান্য সম্পর্কেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি থাকে। তবে ভালোবাসার সম্পর্কে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিগুলো খুবই স্পেশাল। হয়তো আমার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে। হয়তো আমার প্রতি অবন্তীর প্রত্যাশা কেবল বিকালের গল্প আর রিক্সায় একসাথে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে। এসবের অর্গল পেরিয়ে সেই প্রত্যাশা খোঁজে পায় না বিশেষ প্রত্যাশার দুয়ারটা।

হয়তো ছাত্রীর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। সম্পর্কের মাত্রা কি ছিল প্রায়শই তাই ভাবি। পরিণত মোহ নাকি অপরিণত ভালোবাসা! মাঝেমধ্যে ভাবি হয়তো সেই বিকালের সবকিছুই স্বপ্ন। কোন এক পড়ন্ত বিকালে অবন্তী আমার সামনে বসে প্রিয় কথাগুলো বলে দিবে। রাত জাগি আর প্রতীক্ষা করি।

(চলবে......) প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব একাদশ পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.