আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাজোটের মহান বিজয়ে একটি ছোট্ট আশাবাদ । রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আজ আবারো প্রমান করলো, গণ-জোয়ারের কাছে টাকার বস্তা, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, কেন্দ্র-দখল, ভোট-বাক্স ছিনতাই, ষড়যন্ত্র কতো তুচ্ছ। নির্বাচন কমিশন এবং ফকরুদ্দীন সরকারকে ধন্যবাদ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপ্রিয় ও ফেসটিভ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য। মহাজোট তথা আওয়ামী-লীগের প্রেসিডেন্ট জননেত্রী শেখ হাসিনা-কে অভিনন্দন। চারদল তথা বিএনপি-র চেয়ারম্যান খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের দুজনের ধৈর্য এবং প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ।

এবার আসল কথায় আসি। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বাংলাদেশের মানুষ নতুন বছরে বিপুলভাবে সমর্থন করার পিছনে যেসব যুক্তি ছিল, আমার আন্তত যা মনে হয়েছে, সেগুলো বলছিঃ ১. বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে, তাই ভোটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। ২. বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের এবার একসাথে প্রতাক্ষাণ করেছে। ৩. বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় জাতী, শান্তিপ্রিয় নির্বাচনে যে শান্তিপ্রিয় জবাব দেওয়া সম্ভব, তা আবারো প্রমান হল। ৪. বাংলাদেশের তরুণ-প্রজন্মের নবীন ভোটার-রাই [১ কোটি ৭০ লাখ] এবারের নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।

এবারের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ১৪০ জন প্রার্থী দিয়েছিলেন যাদের বয়স ৪০ বছরের কম। এটি নতুন প্রজন্মের নতুন ভোটারদের বিপুলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছে। ৫. এবারের নির্বাচনে ভেটার রিলে ভোটারের ছবি থাকায় দুশমন দমন করা সহজ হয়েছে। ৬. এবারের নির্বাচনে জালভোট, কেন্দ্র-দখল, ভোটবাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না। যারা এই পথে নির্বাচনে জিততে চেয়েছিল, জনগণ, তাদেরকে গণরায়ের মাধ্যমে প্রতাক্ষাণ করেছে।

৭. ভোটের আগের রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে টাকার বস্তাসহ চার-দলের কর্মীদের হাতেনাতে থরা পরার ঘটনা, টাঙ্গাইলে প্রিজাইডিং অফিসারের কীর্তি [উনি বিএনপি-র বিসিএস উপঢৌকন], আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সতর্ক পাহারা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, নির্বাচন কমিশনের নিরন্তর নিরপেক্ষতা রক্ষার প্রচেষ্টা, ইত্যাদি জাতী বেশ সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছে। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটেছে। ৮. বিগত পাঁচ বছরের বিএনপি-র দুঃসাশন, দুর্নীতি, দখল, ত্রাণলুট, বেপরোয়া হয়ে ওঠাকে জনগণ সম্পূর্ণ প্রতাক্ষাণ করেছে। ৯. আওয়ামীলীগ নির্বাচন পর্যন্ত মহাজোট টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, যা ভোটের হিসাবে পরিবর্তনে পক্ষে ইতিবাচক ফলাফল দিয়েছে। ১০. অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার আওয়ামীলীগ অনেক বুদ্ধিমতা দেখিয়েছে।

১১. নির্বাচন কমিশন যেসব প্রার্থীকে যোগ্যতা যাচাইয়ে পর প্রাথমিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করেছে, তাদের অনেকেই সেই রায়কে চ্যালেন্স করে দলীয় বিচারপতিদের মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে পক্ষে রায় আনলেও জনগণ তাদের প্রতাক্ষাণ করেছে। ১২. নির্বাচন কমিশনে যে সব প্রার্থী ভুল তথ্য প্রদান করেছেন, জনগণ তা অবাধ মিডিয়ার মাধ্যমে খুব দ্রুত যেমন জানতে পেরেছে, ঠিক তেমনি তাদেরকে জনগণ খুব দ্রুতই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতাক্ষাণ করেছে। ১৩. চিন্থিত খুনি, সন্ত্রাসি ও অসত প্রার্থীদের জনগণ এবার প্রতাক্ষাণ করেছে। ১৪. টাকা দিয়ে আর ভোট কেনা যাবে না, যদি না জনগণ সজাগ থাকে, নির্বাচনে এবার তার প্রতিফলন ঘটল। ১৫. প্রাশসন নিরপেক্ষ থাকলে অবাধ নির্বাচন করা যে কতো সহজ, তা আজ হাতেনাতে প্রমান করল জনতা।

সর্বশেষ ফলাফল: ২৪১টি আসনের মধ্যে মহাজোট ২১১, চারদল ২৬, বিদ্রোহী ৩, স্বতন্ত্র ১ নয়া সরকারের কাছে প্রত্যাশা: ১. এবারের নির্বাচনের মহান জয়কে মরহুম নুরুল ইসলাম [গণতন্ত্রী পার্টি প্রেসিডেন্ট, মহাজোট প্রার্থী _নোয়াখালী-১] ও তার নিহত পুত্র তমোহর ইসলাম পুচি-কে উৎসর্গ করা হোক। ২. ২০০১ সালে বিএনপি-র তথাকথিত নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দাপট ও ঘোড়ারোগটি থেকে আওয়ামীলীগের অনেক কিছূই শিক্ষা নিতে হবে। জনগণই শক্তিশালী। বোমা, ভয়, দখল, অস্র, চাঁদাবাজী, খুন, গুম, সন্ত্রাসি কার্যকলাপ মোটেও শান্তিপ্রিয় জনগণের ক্ষমতার কাছে নস্যি। এটা নতুন সরকারকে মনে রাখতে হবে।

৩. ছাত্রদলের সোনার ছেলেদের সোনা মাখা কার্যকলাপ এর মতো ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের কার্যকলাপ কিন্তু জনগণ গভীরভাবে ওয়াচ করবে। আওয়ামীলীগকে তা মাথায় রাখতে হবে। ৪. যুদ্ধাপরাধীদের এবার স্পেশাল ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের আদালতও দলীয় লোকবল দিয়েই গঠিত। প্রার্থীর যোগ্যতা প্রমানে উচ্চ-আদালতের রায় দেখলেই তার প্রমান মিলবে।

৫. আওয়ামীলীগ হারলে পুরো বাংলাদেশ হারে, আর আওয়ামীলীগ জিতলে কেবল আওয়ামীলীগ দল জেতে, পুরো বাংলাদেশ জেতে না। এটি অপবাদ না সত্য তা আওয়ামীলীগকে প্রমান করতে হবে। ৬. প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে একচোখা নীতি ফল দেবে না। কঠোর হাতে আইন যে সবার জন্য সমান, তা প্রমান করতে হবে। ৭. নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করতে হবে।

৮. রাস্তা বন্ধ করে ভিআইপিদের চলাচল বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনগণই আসল ভিআইপি, জনগণকে কোন ধরনের দুর্ভোগ দিয়ে নিজেরা ভিআইপি সাজলে, তার প্রতিফলন জনতা পরবর্তী নির্বাচনে দেবে, এটা ভুলে গেলে চলবে না। ৯. জননেতাদের সুসন্তানদের মাধ্যমে জনগণ বিগত দিনে যা পেয়ে অভ্যস্থ, তার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ১০. জনতার শাসক নয়, সেবক হতে হবে, নইলে বিএনপি-র মতো আওয়ামীলীগকেও এই জনতা শাসন আর শোষণের জবাব দিতে ভুলবে না। ১১. মাথাভারী মন্ত্রীসভা যেন মাথা ব্যথার কারণ না হয়, তা মনে রাখতে হবে।

১২. প্রশাসনের সর্বত্র জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ১৩. আইন সবার জন্য সমান, তা বিগত ৩৭ বছরে কোথাও দেখা যায় নি। যা দেখেছি, তা হল, আইন ক্ষমতাবানদের পক্ষে যায়, দুর্বলদের বিপক্ষে যায়। এই ধারাটি বদলাতে হবে, এই সরকারকেই। ১৪. বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও সবাই ধর্ম নিরপেক্ষ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ চায়।

যারা বাংলাদেশের মুসলমানদের নতুন করে মুসলমান বানাতে চায়, তারা ভন্ড, তাদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আইন করে বন্ধ করতে হবে। ১৫. কথায় নয়, কাজে প্রমান করতে হবে বাংলাদেশকে আমরা কেমন সোনার বাংলা গড়তে চাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।