আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাকটিকিটে বিজয়: বিজয় দিবসের ডাকটিকিট

গণতন্ত্র হল এমন এক অস্তিত্বহীন মদ, যাতে সবাই মাতাল, কিন্তু কেউ কখনো পান করে নি।
সারা দেশে যুদ্ধ। যখনি কোন রকম একটু জোড়ে কোন শব্দ পাওয়া যায়, ঐ মিলিটারি আইল! ছেলে বুড়ো সবাই গিয়ে লুকায় কোন মাটির ঢিবির আড়াল, কেউ ঘড়ের পেছনে পিড়ের মাটি আকড়ে পড়ে থাকে। ট্রেনিং নিয়ে আসা হায়াত আলী কয়েকদিন পর যুদ্ধে যাবে, খবর শোনর জন্য রেডিও আনতে গিয়ে পাক আর্মির হাতে ধরা পড়ে একটি বুলেটে জীবন দেয়। লুটিয়ে পড়ে উঠানে, পরবর্তী প্রজন্ম পায় একটি স্বাধীন উঠান।

এমন যুদ্ধের মাঝে যেমন জীবন থেমে থাকে না, তেমনি থেমে না থাকা কয়েকজন অদম্য মানুষের প্রচেষ্টায় ২৯ শে জুলাই, ১৯৭১ তারিখে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রকাশিত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট। এই আটটি ডাকটিকিট পশ্চিম জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সুইজারল্যান্ড সহ অনেক দেশকে বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসে, বিদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানী ১৩১জন বাঙ্গালীর ১২২ জন পাকিস্তানের আনুগত্য অস্বীকার করে বাংলাদেশ পক্ষে চলে আসে। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চার বার বিজয় দিবসের ডাকটিকিট প্রাকাশিত হয়, ১৯৭২, ১৯৮২, ১৯৯৬ ও সর্বশেষ ২০০১ সালে। আর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে অনেক বার।

আজ আপনাদের সামনে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ডাকটিকিটগুলো তুলে ধরব। ১৯৭২: ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের প্রথম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ২০, ৬০, ও ৭৫ পয়সা মূল্যের একই নকশায় তিনটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। তিন রঙয়ে প্রকাশিত এই ডাকটিকিটে আতশবাজি ও শান্তির প্রতীক তিনটি পায়রার ছবি স্থান পায়। ইস্যুর তারিখ: ১৬.১২.১৯৭২; ডাকটিকিটের আকার: ৩০x৪২ মি.মি.; ছাপার প্রক্রিয়া: লিথোগ্রাফী নাকশাকার: কে.জি. মুস্তাফা; মুদ্রাকর: ব্রাডবেরী উইলকিনসন এন্ড কোং, বৃটেন।

১৯৮২: ১৯৮২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ শিরোনামে প্রতিটি ৫০ পয়সা মূল্যের সাতটি ডাকটিকিট। সাতটি ডাকটিকিটে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার ছবি স্থান পায়। একই সাথে জানা যায় তাদের জন্মসাল। নকশাকার: আহমেদ এফ. করিম; ডাকটিকিটের আকার: ৪০x২৮.৫ মি.মি.; রং: মাল্টিকালার ছাপার প্রক্রিয়া: অফসেট; মুদ্রাকর: উবারেটর পৃন্টার্স, অস্টৃয়া। ১৯৮৯ সালে উদ্বোধন করা হয় ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটি পৃন্টিং প্রেস’, যা গাজীপুরে অবস্থিত।

এর পর হতে বাংলাদেশের সব ডাকটিকিট সেখানেই ছাপা হয়। ১৯৯৬: ১৬৯৬ সালের বিজয় দিবসে ‘বিজয় দিবসের রজত জয়ন্তী’ শিরোনামে ৪ টাকা ও ৬ টাকা মূল্যের দুটি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। চার টাকার ডাকটিকিটটির নকশায় জনগনের বিজয় উল্লাস ও ছয় টাকার ডাকটিকিটটিতে অপরাজেয় বাংলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় উল্লাসের ছবি স্থান পায়। নকশাকার: মোহম্মদ শামসুজ্জোহা; ডাকটিকিটের আকার: ৩২x৪২ মি.মি.; রং: মাল্টিকালার ছাপার প্রক্রিয়া: অফসেট; মুদ্রাকর: দি সিকিউরিটি পৃন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ), গাজীপুর। ২০০১: ২০০১ সালের বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ৩০ বছর’ শিরোনামে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের চারটি অনন্যসাধারন ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়।

অনন্যসাধারন বলছি এই কারনে যে ডাকটিকিটের নকশায় বীরউত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক ও বীরশ্রেষ্ঠ পদক-এর ছবি স্থান পায়। আমরা সাবাই এই পদকগুলোর নাম শুনেছি, কিন্তু দেখার সুযোগ হয় পাই নি। কেউ কেউ হয়তো অন্য কোথাও এগুলোর ছবি দেখে থাকতে পারেন, তবে সে সুযোগও খুব কম। এই চারটি ডাকটিকিট আমাদের পদকগুলো দেখার ও পরিচিত হবার সুযোগ করে দেয়। নকশাকার: মাহবুব আকন্দ ডাকটিকিটের আকার: ৩২x৪২ মি.মি.; রং: মাল্টিকালার ছাপার প্রক্রিয়া: অফসেট; মুদ্রাকর: দি সিকিউরিটি পৃন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ), গাজীপুর।

আজ বিভিন্ন কারনে ডাকটিকিটের প্রসার কমে যাচ্ছে। কিন্তু এর আবেদন কমে যায় নি। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকেই জানার সুযোগ পাই। আমাদের এই বিজয় দিবসের, স্বাধীনতা দিবসের ও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ডাকটিকিটগুলো ডাকটিকিট সংগ্রাহক-অসংগ্রাহক নির্বিশেষে সকলের কাছেই সমান আদৃত। ছবি সূত্র: http://www.bdstamps.com তথ্যসূত্র: ১. Postage Stamps of Bangladesh, Bangladesh Post Office ২. মুক্তিযুদ্ধের ডাক ব্যবস্থা ও ডাকটিকেটে মুক্তিযুদ্ধ, এ.টি.এম. আনোয়ারুল কাদির, যায়যায়দিন, ২৩.০৩.২০০৪
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।