আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্কাতায় ত্রিশ দিন....(১)



জীবনে প্রথমবারের মতো দেশের বাহিরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ এসছিল অফিসের কাজের সুবাধে। ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতায় একটা প্রজেক্ট, এক মাসের জন্য। প্রথমবারের মতো পাসপোর্ট করা, ভিসার জন্য কোন এম্বাসীতে যাওয়া-আসা!! অদ্ভুদ ব্যস্ততায় আর টেনশানে কেটে যাওয়া সেই দিনগুলি। (সবাইকে বলে বেড়ানো অফিস থেকে বিদেশ যাচ্ছি !!! হা হা ) তারপর একসময় এয়ারপোর্ট ফরমালিটিজ সেরে নিজেকে আবিষ্কার করা বিমানের পেটে!! (একটু একটু ভয়...এয়ারপোর্টে ঢুকার আগে। সারাজীবন চড়লাম বাস, ট্রেন কিংবা লন্চে।

কোন নিয়ম কানুন নাই..টিকেট কাটো আর সিটে বসে পড়ো আর সিট না পেলে হাতল ধরে ঝুলে পড়া। আর এখানে কত কত নিয়মের বেড়াজাল। )। প্রথম বিমানে বসা। কত মানুষর কাছে শোনা কত কত কথা, সব যেন ভীড় করছে কানের পাশে।

সুন্দরী এয়ারহোস্টেজ, ফ্রি লাল পানি !! কেন যেন ভালো লাগছে না মধ্যরাতে এত ঝামেলা। ঘুম পাচ্ছিল প্রচুর। (১২ বাজলেই আমার তেল শেষ হয়ে যায় কিনা!!)। একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করে লাইট বন্ধ হয়ে যাবার পর, বিমানটা যখন উপরে উঠতে শুরু করে। মানুষগুলো যেন হঠাৎ ই একটু চুপ।

ছোট্ট জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখা রাতের ঢাকা। মাত্র একমাসের জন্য যাচ্ছি, তাই হোমসিকনেসটা কাজ করবে না এটুকু নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু যতই উপরে উঠছি ততই যেন নিজেকে একটু একটু করে নিঃসঙ্গবোধটা চেঁপে ধরছিলো। (জানি না এটা মিডেলক্লাস সেন্টিমেন্ট কিনা!) একসময় বিমানের নাক সোজা হলো। আবার লাইট অন হলো, মানুষজনের কথাবার্তা আর আমার বিরক্ত লাগা।

কান দিয়ে যেন বুদ বুদ বের হচ্ছে। কিছুক্ষন হাতের কাছে থাকা এটা ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া। হেডফোন দিয়ে গান শোনার চেষ্টা করা। তারপর ওয়েলকাম ড্রিংস, বাদামের ছোট্ট প‌্যাকেট, মধ্যরাতের ডিনার (!!)। ঘুমিয়ে পড়া।

ঘুম ভাঙ্গল স্পীকারে পাইলটের গলা শুনে। শুনলাম আমরা এখন কুয়ালালামপুরের আকাশে। কেএল এয়ারপোর্ট এ নামছে বিমান। শেষ হয়ে গেল আমার ৩ ঘন্টা ৫০ মিনিটের প্রথম বিমান ভ্রমণ। কেএল এয়ারপোর্টে যখন নামলাম তখন আমার কানে প্রচন্ড ব্যাথা।

আর কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। কি আজব!! অসহনীয় লাগছিল। কাকে বলব, কে বুঝবে আমার সমস্যা, কি করবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না!! যাই হোক চোখে-মুখে পানি দিয়ে, ১৫ মিনিট চুপ করে বসে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর উঠে দেখতে শুরু করলাম কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট । জীবনে দেখছি শুধু্‌ আমাদের "জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট" !!! হঠাৎ কেএল দেখে তো চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

যা দেখি তাই ভালো লাগে। এত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আর ঝকঝকে সব কিছু!! এত বিশাল ! কি নাই এখানে? সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো সব কিছুই সিস্টমেটিক, তাই পথ হারিয়ে ভিন্ন দিকে যাওয়ার কোন ভয় নাই। ২ ঘন্টার ট্রানজিট। তাই ঘুরে ঘুরে দেখলাম সবই। টয়লেট থেকে জুয়েলারী দোকান!! সময়টা কিভাবে চলে গেল টেরই পাইনি।

আর তাই দে দৌড় !! আবার বিমান, এবার মালয়শিয়ান এয়ারলাইনস আর গারুদা এয়ারলাইনস (ইন্দোনেশিয়ার সরকারী এয়ারলাইনস) এর যৌথ ব্যবস্থাপনায়। আর তাই আগের বারের তুলনায় অনেক ভাল এয়ারক্রাফট। আর একদমই অল্প সংখ্যক যাত্রী। আমার সিটের কাছে যেয়ে তো আমি আরো খুশী। মিনি স্কার্ট পরিহিত এক সুন্দরী কন্যা !! কিন্তু আরেক সুন্দরীর (এয়ার হোস্টেজ) আমার সুখ সইল না !! আমাকে বলে কিনা সামনের ফাঁকা সিটে বসার জন্য!! এতে নাকি আমি জানালার পাশে বসে সমুদ্র দেখতে পাবো !!! না তো করতে পারি না !! ২ ঘন্টার জার্নি..খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গেল।

প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করলাম অসম্ভব সুন্দর সব দৃশ্য। আগেরবার তো রাতের জার্নি ছিল তাই বুঝতে পারিনি এরিয়াল ভিউ আর মেঘদের রূপ। কি যে অদ্ভুদ লাগছিল মেঘের উপর থেকে মেঘগুলোকে দেখতে। আর সাগর !! উফ !! কি যে লাগে... ইন্দোনেশিয়াতে ভূমি থেকে সমুদ্রই বেশি। হাজারা দ্বীপ।

তাই উপর থেকে মনে হচ্ছিল সাগরের বুকে অসংখ্য বিন্দু। নামার সময় আবারো সেই অসহনীয় কানে ব্যথা এবং ফলাফল এয়ারপোর্ট নেমে কিছুই না শোনা। কানে পানি গেলে যে অনুভূতি ঠিক সেরকম। মনে হচ্ছিলো কয়েক বালতি পানি কানে জমে আছে !! আর বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখে ইমিগ্রেশান অফিসারদের জেরা তো আছেই। জেরা শেষ করে যখন আমাকে ছাড়লো ততক্ষনে লাগেজ ট্রে খালি !! আমিতো কাউকেই দেখছি না লাগেজ ট্রে এর কাছে..একটু ভয় লাগছে লাগেজ হারানোর।

দিশেহারা বোধ করছি। আর ইংরেজী আমি যা বলি ওরা বুঝে না আর ওরা যা বলে আমি বুঝি না !! হাটাহাটি করতে করতে একটা রুম এর সামনে দেখি আমার সুটকেস। ইহাহু !! পাইসি পাইসি !! এমন সময় পাশ থেকে একজন নাম ধরে ডাকলো। টিকেট চেক করে লাগেজ দিল। এয়ারপোর্ট এর বাইরে এসে আমার নাম আর কোম্পানীর নাম লিখা প্লাকর্ড দেখে টেনশানমুক্ত হলাম।

অবশেষে দেশের বাহিরে মাটিতে প্রথম কদম রাখলাম। জার্কাতায় একমাস আমার স্মৃতিতে জমা হয়ে আছে। অবশ্যই মধুর স্মৃতিই বলবো। চলবে (আশা করি)......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.