আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্কাতায় ত্রিশ দিন....(২)



প্রথম পর্ব : Click Here অলস মানুষ আমি, প্রচন্ড অলস। লেখাতেও অলসতা। প্রথম অংশ লেখার অনেকদিন পর আবার একটু লেখার চেষ্টা করা। জার্কাতায় প্রথম দিন : এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার আগেই ডলারের পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ান রুপাইয়া (IDR) নিলাম একটা মানিচন্জারের কাছ থেকে। যাওয়ার আগেই শুনছিলাম ওখানে এক ডলারে ওদের অনেক টাকা পাওয়া যায়!! যাই হোক ডিসপ্লেতে লেখা দেখলাম USD 1 = 9000 IDR (!!)।

আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না ব্যপারটা কি? একে তো জীবনে প্রথম ডলার চেন্জ করা তার উপর সবসময় জানি ১ ডলার মানে ৬০/৭০ টাকা!! (পরে অবশ্য দেখলাম IDR এর খেলা। কিছু কিনতে গেলেই আগে গুনতাম কয়টা শুন্য সংখ্যার পরে। প্রাইমারী স্কুলের পরে এত বেশি একক, দশক, শতক আর হিসেব করছি বলে মনে পরে না!! ) সুকর্ন হাট্টা এয়ারপোর্ট জার্কাতা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে। গাড়ীতে যেতে যেতে জার্কাতা দেখছি। গ্রাম থেকে প্রথম ঢাকা এসে মানুষ যেভাবে দেখে সেভাবে আরকি।

এত এত প্রাডো, আভানজা, বিএমডাব্লু, ক্লুগার, এক্স-ট্রায়াল গাড়ী দেখে তো মাথাই খারাপ। (জার্কাতাবাসীদের কাছে Car মানেই হলো জিপ টাইপের গাড়ীগুলো। ঢাকার রাস্তায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়া X, G Corolla ওখানে শুধুই TAXI। ) একের পর এক ফ্লাইওভার পার হয়ে খুব দ্রুতই চলে আসলাম অফিস থেক ব্যবস্থা করা হোটেলে। বলাবাহুল্য, আমার এই জীবনে হোটেলে থাকা বলতে ভার্সিটি থেকে যাওয়া শিক্ষাসফরে যেয়ে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন আর চট্রগ্রামের সাধারন মানের কিছু হোটেল।

তাই হঠাৎ যখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম ২৭ তালার দুটো বিশাল অট্টালিকা নিয়ে গড়ে উঠা চার তারকা "Grand Tropic Suites Hotel" এ তখন অদ্ভুদ ভালো লাগায় মনটা ভরে উঠেছিল এবং নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। রূম নং ৯০২, জার্কাতায় আমার সাময়িক আবাস্থল হলো। আমার কল্পনা শক্তি দিয়ে ভেবেছিলাম একটা রূম হবে যেখানে নরম গদিওলা বিছানা, টেবিল, চেয়ার আর প্রয়োজনীয় সব থাকবে। কিন্তু ৯০২ তে যেয়ে দেখি ২ রূমের একটা এপার্টমেন্ট!!! ঢুকতেই একটা বড় ড্রইংরূম, এক পাশে ছোট্ট একটা কিচেন, ডাইনিং। আর ভিতরে বেডরূম।

বেডরূমের একপাশ পুরোটাই থাই গ্লাসের, কোন দেয়াল না !! গ্লাসের পর্দাটা টেনে দেবার পর জার্কাতা শহরটা ঠিক এভাবেই আমার চোখে পড়লো। যাই হোক দরজা বন্ধ করা মাত্রই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ফ্রেস হওয়ার কাজে। প্রথম বিমান যাত্রার সুফল হিসাবে কানে ব্যথাটা তখনও কমেনি, তেমন কিছুই শুনছি না এবং মাথাটা ফাকা ফাকা লাগা। বিশ্রাম নেয়ার কথা ভাবতে পারছিলাম না কারন নিচে ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে আমাকে অফিসে নিয়ে যাবে এবং জার্কাতায় আমার সাময়িক রিপোটিং বসের সাথে দেখা করিয়ে দিবে। কি আর করা আবারো জার্কাতা শহর দেখতে দেখতে অফিস যাওয়া।

একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম মেইন সিটিতে দুই ধরনের রাস্তা - একটা ফ্রিওয়ে আর একটা টোলওয়ে। সাধারনত টোলওয়েতে ট্রাফিকজ্যাম একটু কম থাকে। এত এত ফ্লাইওভার তারপরও পিক আওয়ার গুলোতে ভালোই জ্যাম থাকে রাস্তায়। কারন আর কিছুই না "গাড়ী"। পৃথিবীর আর সব বড় বড় সিটির মতো এখানেও গাড়ীর সংখ্যা অগনিত এবং শুনেছি প্রতিদিনই এই সংখ্যা নাকি হাজারে বাড়ে।

দেখতে দেখতে অফিস চলে আসলাম। Jl. Jend. Sudirman এলাকায় অবস্থিত BRI II Building (20th Floor)। অনেকের সাথে পরিচিত হলাম, চাইনিজ XuYinan, Yan Li, Fu, মালয়েশিয়ান তামিল Raghubalan, Siva, Saravana, ইন্দোনেশিয়ান Adhie সহ অনেকের সাথে। সবাই এত আন্তরিকভাবে ওয়েলকাম জানালো যে ভয় দ্বিধা সব কেটে গেল। XuYinan, Raghu, Saravana আমাকে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো।

"Feeling Tired & Pain in ear" এই বলে থামালাম ওদের । কিছুক্ষন থেকে, ঢাকা অফিসে মেইল করে চলে আসলাম হোটেলে। বেডরূমে ঢুকে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুম...যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন প্রায় সন্ধা। লাফ দিয়ে উঠলাম কারন বাসায় ফোন করা হয় নাই!!! হোটেল থেকে ফোন করেই বুঝলাম বাসার সবাই প্রচন্ড টেনশানে ছিলো। বাসার সবাই ছাড়া আর একজন মানুষ খুব টেনশান করছিল কিন্তু কোনভাবেই তাকে কন্ট্রাক্ট করতে পারছিলাম না!!।

খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর জন্য, কিন্তু কিছুই করতে পারছিলাম না। সন্ধায় বের হলাম একটু ঘুরাঘুরি করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কিছুই চিনি না, এমনকি জায়গার নাম গুলোও জানিনা ঠিকমত। আর ভাষার সমস্যা তো আছেই। তাই যতদূর থেকে হোটেল দেখা যায় ততদূর ঘুরে চলে এলাম হোটেলে।

কিন্তু রূমে ঢুকার পর সবকিছু এত চুপচাপ আর নিরব। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা আমার জন্য এই নিঃসঙ্গতা বড়ই কষ্টকর। অসহনীয় লাগছিল সময়টা। এভাবেই কেটে গেল সন্ধাটা...১০ টায় ডিনার করে, পরের দিনের কাজের ছোট্ট একটা রিভিও শেষ করে ঘুমাতে চলে গেলাম। কিন্তু ঘুম আর আসে না।

কত শত কথা মনে হচ্ছিল। কাজ ঠিকমত করতে পারবোতো.. কি করে সময় কাটাবো অফিস থেকে ফিরে এরকম নানা চিন্তা। বেশি চিন্তা অবশ্য হচ্ছিল আমার প্রিয় মানুষটার জন্য। কি করে ঘুমাবে ও আমার সাথে কথা না বলে, ঝগড়া না করে!! প্রতিদিন ঘুমানোর আগে একটু কথা বলা, একটু আহ্লাদ, একটু ঝগড়া না করে তো ঘুমাতেই পারে না মেয়েটা..। কষ্ট হচ্ছিলো আমারো।

আমারো যে প্রতিদিনের রূটিন এটা.... চলবে...(হয়তো)....


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.