কতো কী করার আছে বাকি..................
শেষ রাতের তন্দ্রা বিভুরতায় আমার চোখের পাতায় একটি শ্বাসনালী এসে হাজির হয়- পোড়া, গলে যাওয়া, কালচিটে দাগ পড়া ধোঁয়া আর চামড়া পোড়া গন্ধে ভর্তি। কিছুটা আতঙ্কিত হই। কারণ শ্বাসনালীর এমন অবয়ব তো কখনো ভাবিনি। কতো কথা-কতো চিৎকার-কতো দীর্ঘশ্বাস বয়ে যেত এই নালী বেয়ে। তার আজ এই অবস্থা।
তার সারা জীবনের কথাবার্তার কিছু কি এখনো লেগে আছে শ্বাসনালীর গায়ে- কোন এক আবেগ ভালোবাসার কথা কি এখনো কণাসম হয়ে লেগে আছে পোড়া দাগগুলোর ফাঁকে ফাঁকে-তাই কি সে আমায় বলতে এসেছে। না কি শেষ সময়ে সে যা বলতে চেয়েছে, তার মৃত্যুর পূর্বে জীবনের শেষ কথা, যা সে বলতে পারেনি, এক নিষ্ঠুর আগুন তাকে এই শেষ সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করেছে- সেই দুঃখ নিয়ে শ্বসনালীটি একান্তে কাঁদতে এসেছে আমার কাছে। কিছুটা হতবিহ্বল হই আমি-নিরুপায় তাকিয়ে থাকি। মনে করতে থাকি কি কথা বলত সে শেষ সময়ে-জীবনের একান্ত কোন এক ভুলের কথা বা কোন ভালোবাসার কথা যা সে সারাজীবনে বলতে পারেনি। ভাবতে ভাবতে বোধহয় ঘুময়ে পড়ি।
সেই ঘুমের ভেতরেই স্বপ্নে না কি পরদিন সকালে রাস্তায় বেরিয়ে আশপাশের অজস্র মানুষের কন্ঠে আমি পোড়া দাগ দেখতে পাই। প্রথমে কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে তাকাই- কিন্তু একটু পরেই ফুটপাতের গুয়ে-মুতে গা লেপ্টে পড়ে থাকা এক ভিক্ষুকের অস্পষ্ট কাতর চিৎকার আমাকে নিশ্চিত করে না জীবন্ত মানুষের গলায়ও পোড়ার দাগ থাকতে পারে। এরপর নির্বাচনের বাতাসে গণতন্ত্র জিন্দাবাদ স্লোগানের পেছনে হাঁটতে থাকা কোন এক নুর হোসেনের চেহারা আমাকে এই বিষয়ে আর কোন সন্দেহের মধ্যেই রাখে না যে গলায় পোড়া দাগ নিয়ে অবশ্যই অসংখ্য মানুষ বেঁচে থাকে। যে মানুষ পেটে ক্ষিধার আগুন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তার সেই আগুন কি গলায় পোড়ার দাগ তৈরি করে না। কিংবা হতাশার দীর্ঘশ্বাসে যে উত্তাপ তৈরি হয় তাতেও তো কত কন্ঠ পুড়ে যায়।
এসিডের পোড়া দাগ লেগে থাকে কতো শ্বাসনালীতে। অথবা হতাশা-আর অবদমনের এক বাতাস গলা বেয়ে বারংবার উঠানামা করলে সেখানেওতো তাপের উদ্ভব ঘটে, তাদের গলাওতো পুড়ে যাওয়ার কথা। কিংবা এখনকার কতো আলো কতো রঙ কতো চিৎকার আর ওই যে অতিবেগুনি রশ্মি এতো সমস্ত থেকে কেউ যদি বলে তার গলা কে বাঁচিয়ে রেখেছে, কে বিশ্বাস করবে সেই কথা।
ফলে পোড়া দাগ আছে, সবার গলাতেই আছে- অন্তত যারা কখনোই ক্ষমতায় যায় না তাদের গলাতেই আছে। গলায় পোড়ার দাগ নিয়েই তো দেশটার জন্ম।
সেই দেশে একজন নির্বাচনের প্রার্থী আগুনে তার গলা পুড়িয়ে মরবেন এতো গণতন্ত্রের জন্যেই ভালো হওয়ার কথা। কারণ এতে করে গণতন্ত্র পুড়ে খাঁটিই হল। সেই গণতন্ত্র যাদের তারা খুশি থাকুন। কিন্তু আমি টের পাই কোথায় যেন অস্বস্তি- কেন সবাই খুব চুপ- কেন এক প্রচন্ড না গর্জে ওঠে না-কেন এক সম্মিলিত কন্ঠের ঢেউ ওঠে না বাতাসে- কেন এক প্রকান্ড অস্বিকার গর্জন করে ওঠে না। নিশ্চয়ই সবার কন্ঠে পেড়ার দাগ আছে।
তাই সর্বত্রই গুঞ্জরন-ফিসফাস কিংবা নীরবতা। নিশ্চয়ই পোড়া গলায় আমরা বেঁচে থাকি। এ কি আমাদের বেঁচে থাকার শর্ত। আবার মনে হয় হায় মানুষ কতো বিশাল সে আবার মুহূর্তেই অসহায় প্রকৃতির কাছে তার তুলনায় সামান্য আগুনের কাছে। এই আগুন হয়তো পুড়িয়ে মেরেছে কতো পশু-বৃক্ষকে সেই আগুনেই পুড়লো ক্ষমতার নিকটে থাকা এক ব্যক্তি।
হিসাব মেলে না ঈশ্বর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।