আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিনি বাংলাদেশ

সবাই ভাল থাকুন।

সকালে বাসা থেকে বের হয়েই দেখলাম অলরেডি আটটা বেজে দশ। তারাতারি রিক্সা নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি মানুষ আর মানুষ। বাসগুলোতে প্রচন্ড ঠেলাঠেলি। খেয়াল করলাম মিরপুর রুটের একটা মোটামোটি খালি বাস আসছে।

সাধারনত মিরপুর এর বাসগুলোতে কম লোক হয়। কারন এগুলা কাছের রুটের টিকেট বেচেনা। যা হোক তারপরো কাউন্টারে বললাম বনানি। ‘বনানি যাইবোনা'। অগত্যা বললাম সবচে কম দামের টিকেট দিতে।

মেজাজ খিচে আঠার টাকা দিয়ে উঠলাম। কিন্তু একি! কোন সিটই যে খালি নাই। পুরা বাসে খালি আমিই দারিয়ে। নিজেকে কেমন জানি লুযার মনে হচ্ছিল। এদিক ওদিক তাকিয়ে খেয়াল করলাম একদম সামনের দিকে এক লোক তার পাশের সিটে ব্যাগ রেখে বসে আছে।

বললাম ভাই ব্যাগটা সরান আমি বসবো। লোকটা কোন গাই করলো না। ভাবলাম থাক আর কিছু পরেই তো আমি নামবো। তাই আর কিছু বললাম না। হঠাত দেখলাম সামনের দিকে সিঙ্গেল সিটে বসা এক মাঝবয়সি ভদ্রমহিলা আমার দিকে ফিরে বললেন ‘কি ব্যাপার আপনি বসলেন না’? ওই লোকটিকে বললেন ‘ভাই আপনার ব্যাগটা সরান, দেখছেন্না একজন দারিয়ে আছে’? এবার দেখি বাসের কন্ডাক্টরও বল্লো ব্যাগ সরাতে।

অগত্যা লোকটি অনেক কষ্টে ব্যাগ সরিয়ে আমাকে বসতে দিল। মিনমিনে গলায় ভদ্রমহিলাকে থ্যাঙ্কস দিয়ে বসে পরলাম। শুনলো কি শুনলেননা বুঝলাম না। ওনার প্রতি আমার মনে মনে অদ্ভুত শ্রদ্ধাবোদ জন্মাতে লাগল। পুরা বাসে কেউ কিছু বল্লোনা আর ওনার কিই বা চলে আসত না বললে? আর্মি স্টেডিয়ামের কাছে আসতেই দেখলাম বাসের সামনের গারিটা হার্ড্‌ ব্রেক করলো।

আমাদের বাসের ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারলোনা। হার্ড্‌ ব্রেক করেও আলতো করে সামনের গারির পেছনে লাগলো। ইসস এই অফিস যাবার সময় কেন যে এগুলা হয়? দেখলাম গারি থেকে সাহেব বের হয়ে এদিকে আসছেন। ভদ্রমহিলা ড্রাইভারকে বললেন ‘তোমার তো কোন দোষ নাই। ওই গারি এভাবে ব্রেক করলো কেন’? সাথে সাথে বাসের অন্যরাও হ্যা হ্যা করে সায় দিল।

ড্রাইভার বল্লো ‘আপ্নারা একটু বইলেন’। এর মদ্ধে গারির সাহেব বাসের দরজায় এসে ড্রাইভারকে বল্লো ‘অই বেটা নাম’। সাথে সাথে ভদ্রমহিলা বললেন ‘ও নামবে কেন? দোষ তো আপনার ড্রাইভারের’। মুহুরতের মধ্যে বাসের সবাই লোকটির দিকে হই হই করে উঠল। কয়েকজন ওতি উতসাহি তো রিতিমত তেরে আসলো।

আমি মুগ্ধ হয়ে দেখলাম এতগুলা মানুষকে একজন নারি কিভাবে প্রভাবিত করছেন। আরে! আমাদের দেশেরও তো একই অবস্থা। দুই প্রধান দলেই তো নারি নেত্রিত্য। কিছুখনের জন্য বাসটা যেন মিনি বাংলাদেশে পরিনত হল। যাই হোক, গারির সাহেব বেশি সুবিধা করতে না পেরে হালকা ধমক দিয়ে বাস ড্রাইভারকে ছেরে দিল।

বাস ছারলো। আমিও কিছুখন পর নেমে গেলাম। অফিসে আসার সময় বারবার কেন যানি ওই মহিলার কথা আর বাসের ঘটনাগুলো মনে পরছিল। ভাবতে ভালই লাগছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।