আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আটপৌরে কবিতা

কেবলই নিজেকে খুঁজছি

আগের দিনে বউ কেনা যেতো শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত থেকে শুরু করে অতি সাধারণ মানুষও সামর্থ্য অনুযায়ী বউ কিনতে পারতেন। এক কুড়ি, দু-কুড়ি, পাঁচ কুড়ি এরকম বিভিন্ন মূল্যে দরদাম করে বউ কেনা যেতো তখন। আমার ঠাকুমাকে টাকা দিয়ে কিনেছিলেন ঠাকুরদা কত দাম দিয়ে ঠাকুমাকে কিনেছিলেন তা আজ আর আমার ঠিক মনে নেই। মনে নেই তার মানে এই নয় যে, আমি তাদের বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলাম আমি শুনেছিলাম ঠাকুমার মুখে, আড়াই কুড়ি অথবা তিন কুড়ি হবে হয়তোবা। শুনেছি ঠাকুরদা ঠাকুমাকে কিনলেও সারাজীবন ঠাকুমার একচেটিয়া দাপটে ঠাকুরদা পোষা বিড়ালের মতো কুঁকড়ে থাকতেন।

কথা যে সত্য, তা ঠাকুরদাকে চোখে না দেখলেও ঠাকুমাকে দেখেই কিছুটা অনুমান করেছি। আমার বাবার বেলায় অবশ্য ঠাকুরদার উল্টো ঘটনাই ঘটলো। আমার বাবা নিজে বিক্রি হয়েছিলেন তখনকার বাজার দর অনুযায়ী বেশ ভালো দামেই বিকিয়েছিলেন তিনি। ঠাকুরদা যেমন বউ কিনেও বউয়ের কাছে কুঁকড়ে ছিলেন আর বাবা কিন্তু নিজে বিক্রি হয়েও সারাজীবন আমার কোমলমতি মায়ের ওপর দাপট দেখিয়ে চলছেন। পুরুষ বটে! আমার বন্ধুরাও বর্তমান কেনাবেচার বাজারে বেশ উৎকৃষ্ট পণ্য, অনেকটা টাটকা সব্জীর মতো।

মেয়েরা তো বটেই, ইতোমধ্যে ছেলে বন্ধুরাও বিকোতে শুরু করেছে বেশ চড়া বাজার দরেই বিক্রি করছে নিজের শিক্ষা, সত্ত্বা, মনুষ্যত্ব। আর মেয়ে বন্ধুরা কে কত ভাল বর কিনতে পারে কোমর পেঁচিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাবা-মা সহ। কেউ বগলদাবা করছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ ভ্যানিটি ব্যাগে ভরছে ব্যাংকার, এক্সিকিউটিভ অথবা প্রবাসী কোন ছেলের আত্নমর্যাদা। সাম্রজ্যবাদের এই সত্ত্বাবিলোপ বাজারে আমি একেবারেই মূল্যহীন গোবেচারা। নিজিকে বাজারে তোলার আগে খাদ্যদ্রব্যের মতোই ঝেড়ে-মুছে বাজার উপযোগী করে তুলতে হয়, আমি সেটাও করিনি কখনও।

কেননা আমি অনেক আগেই বুঝে গেছি আর যাই হোক নিজেকে নিলামে তুলতে পারবো না কখনও। জানিনা অন্য পাঁচজন বাবা-মায়ের মতো পুত্রকে নিলামে তোলার সুপ্ত বাসনা আমার বাবা-মায়ের মনেও আছে কিনা। যদি থেকে থাকে। তবে আমি দঃখিত পিতা-মাতা, আমি গোপাল নই যে, `যাহা পাইবো তাহাই খাইবো। গুরুজনদের সর্বকথা মানিয়া চলিব।

' শিক্ষা, সত্ত্বা, মনুষ্যত্ব সম্পদ বলতে আমার এগুলোই শেষ অব্দি এগুলোও যদি বাজারে তুলি তাহলে একজন মানুষ হিসেবে আমার থাকলোটা কি! ২০/০৬/০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।