আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কান্ডজ্ঞান বিবর্জিত উর্বর মস্তিষ্ক...



আমার অতীব প্রিয় মানুষ। জহর দা। পুরো নাম জহর লাল কুরী। ফটোগ্রাফি করে চলেন। ছবি তোলা তার যতোটা না পেশা, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে নেশা।

তার স্টুডিওতে যাবেন কিংবা তাকে দিয়ে আপনার কোনো প্রিয়জনের বিয়ে/জন্মদিনের ছবি তুলবেন ? কোনো চিন্তা নেই, তিনি তুলে দেবেন। ছবি ডেলিভারির সময় বেশিরভাগ লোকজনই বলে- দাদা, টাকা নেই, পরে দিবো। জহরদা দিয়ে দেন। মাস শেষে দেখা যায়, সারা মাসে তার রোজগার যা হয়েছে তার চেয়ে খরচ বেশি। এ বিষয়টা আমাদের বন্ধুদের ভয়ানক অপছন্দ।

এ নিয়ে বহুবার তাকে বলেছি। আপনার সংসার আছে, ছেলে আছে। আপনার দোকানের খরচ আছে। এ ভাবে বিনে পয়সায় ছবি দিয়ে দিলে আপনার চলবে কী করে ? দাদা হাসেন। তাকে কোনোদিন মন খারাপ করতে দেখিনি।

সবাইকে সারাদিন হাসি আর আনন্দে মাতিয়ে রাখেন মানুষটা। বৌদি মাঝে মধ্যে আমাদের বাসায় ডাকেন। তার সংসারের অভাবের কথা, ছেলের পড়াশুনার কথা, জহরদার দিল দরিয়া স্বভাবের কথা- আমাদের হাসতে হাসতে বলেন। দাদার বিরুদ্ধে বৌদি কোনো অভিযোগ করেন নাই কোনোদিন। খুব কম দম্পতির মধ্যে এমন আন্ডারস্টেন্ডিং দেখেছি।

হবেই না বা কেনো ? দাদার মতো রসিক লোক আমার জীবনে আমি আর দেখিনি। প্রতিটি কথায় তার রসিকতায় আমরা হেসে খুন। যে কোনো আড্ডার তিনি মধ্যমনী। এরশাদ চাচার শাসনামল তখন। এক নিঃশ্বাসে তিনি এরশাদের নাম বলতেন।

তার ভাষায় এরশাদের নাম ছিলো- স্বশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেফটেনেন্ট জেনারেল আলহাজ্ব কবি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি তিনি এরশাদকে বলতেন- কান্ডজ্ঞান বিবর্জিত উর্বর মস্তিষ্ক। এর অর্থ জানতে চাইলে বলতেন, জানিনা। তিনি সবার কমন জহরদা। ছেলে বুড়ো সবাই তাকে দাদা নামেই ডাকে।

এমনও দেখা গেছে, বাবা এবং ছেলে উভয়ই দাদা ডাকছেন। প্রায়ই দাদার সাথে মোবাইলে কথা হয়। সেই একই স্বরে কথা বলেন। একই ধরণের রসিকতা করেন। কেমন আছেন, জানতে চাই না।

জানি, আজকাল তিনি বড়ো বেশি অর্থনৈতিক অনটনে আছেন। এখন ঘরে ঘরে ডিজিটাল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা আছে। লোকজন ইদানীং আর স্টুডিওতে ছবি তোলেনা বললেই চলে। তবু তিনি তার পুরোনো স্টুডিও ব্যবসাটাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। এটা শুধু তার ব্যবসা নয়, সন্তানের মতো।

প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক যার সাথে...। প্রিয় জহরদা, আপনি ভালো থাকুন। সবাইকে আনন্দ দেয়া এই আপনার জীবনটা আনন্দে কাটুক....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।