আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সে শক্ত করে আমাকে জাপটে ধরে কানের কাছে মুখটি নিয়ে একটি কথাই বললো তাকে বিদায় করো না হলে তোমার সর্বনাশ হবে!!! (১)

www.nahidlink.com

কণা..কণা, আমার দুধটা এখনো দিসনি কেন? ভাইজান, দুধ তো সব বিড়াল খেয়ে ফেলেছে। কি বলসিছ এসব? প্রতিদিন তোর মুখে একই কথা শুনছি। তুই দুধটুকুও ঠিক মতো রাখতে পারিস না? আমি তো ঠিকভাবেই রাখি ভাইজান। কিন্তু মরার বিড়াল তো দুধটাকে ঠিক রাখে না। খেয়ে ফেলে।

ঠিক আছে, আজ বুঝলাম কাল থেকে যেন আর এ কথা না শুনি। হঁ্যা। ঠিক আছে ভাইজান। একেকজন মানুষের নেশা একেক রকম। কেউ সময় মতো সিগারেট খেতে না পেলে তার মেজাজ বিগড়ে যায়।

কেউ বা খায় চা কেউ পান। কেউ বোতল.. ..ইত্যাদি। আমার নেশা একটু অন্যরকম। প্রতিদিন সকাল ও রাতে যদি এক গ্লাস করে দুধ না খাই তাহলে আমার মাথাটা যেন ধরে থাকে। খুব খারাপ লাগে তখন।

প্রতিদিন এক লিটার দুধ নিই এক গোয়ালা থেকে। কিন্তু কণা মেয়েটি এখানে আসার পর থেকে একদিনও দুধ মুখে ওঠেনি আমার। তার কথা মতো একদিনে মরার বিড়াল-টা খুব উৎপাত শুরু করে দিয়েছে নাকি! প্রতিদিনই দুধ খেয়ে ফেলে শালা! আমি কলমজীবি মানুষ! এ প্রত্রিকায়, ওই প্রত্রিকায় লিখে থাকি এবং একুশে ফ্রেবুয়ারীর বই মেলাতে কয়েকটি প্রেমের উপন্যাস লিখে সেই আয় দিয়ে কষ্ট করে সারা বছর কোনো রকমে পেট পুরে খাই। বিএ পাশ বেকার এক যুবক। অনেক চাকরির জন্য ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত জুতার শুকতলা ক্ষয় করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি।

ছোট থেকেই বিভিন্ন প্রত্রিকায় লেখার একটু-অধুট অভ্যাস ছিল। ধীরে ধীরে এখন তা নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। মোট কথা, লেখালিখি ছাড়া আর কোন কাজই ঠিকভাবে করতে পারি না। জানি না এ লেখাগুলো পাঠকরা কিভাবে হজম করে! তবে তারা এসব অখাদ্য হজম করাতেই তো দুবেলা খেয়ে-পরে বেচে আছি। লেখকরা একটু অন্য ধরনের মানুষ হয়।

সাধারণের থেকে তাদের আনন্দ, শখ, রুচি একটু আলাদা টাইপের হয়। কেউ গাছে বাড়ি বানিয়ে সেখানে লিখতে ভালোবাসেন। কেউ বা সাগরের কাছকাছি গেলেই মগজে লেখার মাল-মশলা এসে কিলবিল করতে থাকে। আবার কেউ গাজা সেবন, বোতল টানা ছাড়া নাকি লিখতেই পারে না! আমার ব্যাপারটি ঠিক এ রকম: আমার মাথায় যদি কোন লেখার প্লট না আসে কি করি তখন? এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেট নিয়ে হাইওয়ে ফুটপাথ ধরে হাটাহাটি করতে থাকি। দেখতে থাকি হাজারো মানুষের জীবন যুদ্ধ।

ফুটপাথে শুয়ে থাকা পঙ্গু এবং ভিক্ষুকদের সঙ্গে কথা বলি। বস্তির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলি অথবা আমার চোখে অন্য রকম লাগা কোন পথচারীর...। এভাবেই তাদের সুখ-দুখের গল্প শুনতে মাথায় এসে ভিড় করি একাধিক গল্পের প্লট। সেদিনও গল্পের মাল-মশলা খুজতে হাতে গোল্ডলিফ প্রেয়সীকে চুমু খেতে ভেতে পথ চলছিলাম। সেদিন আর শহরের চেচামেচি, হই-হট্রগোলের মধ্যে যেতে ইচ্ছ করলো না।

তাই নদীর পাড়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে একা হেটে চলছিলাম। জায়গাটি খুব নির্জন। মাঝে মাঝে দুই একটি ঘর দেখা যাচ্ছে। তাও বস্তির মতো। হয়তো বস্তিই বলা যায় সেগুলোকে।

ওই বস্তিবাসী বোধহয় শহরের ফুটপাথে থাকার চান্স না পেয়ে এখানে চলে এসেছে। হাটাতে হাটতে অনেক দুর চলে এসেছিলাম। অন্য কোনদিনও এতো দুর আনিনি। যেখানে অবস্থান করছিলাম এর একটু সামনে গেলেই বিরাট জঙ্গল। গাছ গাছালি, পাখির কলকাকলিতে ভরা কি সুন্দর এক পরিবেশ! সবুজ ওই প্রকৃতির সমরোহ আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল।

আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ঢুকে গেলাম জঙ্গলটির ভেতর। তখনো চুমু খেয়েই যাচ্ছিলাম আর গোল্ডলিফ প্রেয়সীকে। সূর্যের আলো সবুজ পাতায় ঝিকমিক করছিল। এতো দিন জানতামই না আমাদের কাছাকাছি এ রকম প্রাকৃতিক বন আছে।

হাটতে হাটতে জঙ্গলটার মাঝ বরাবর যেন এসে গিয়েছি! প্ররিশ্রম আর টানা হটাতে ক্লান্ত আমি একটি গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাড়ালাম। হঠাৎ হিস হিস শব্দটি শুনতেই তড়াক করে লাফ দিয়ে সরে এলাম গাছটার কাছ থেকে। আমি তো আরেকটু হলেই এই মর্ত্য উদ্যান ছেড়ে স্বর্গ উদ্যানে পা রাখতাম! দেখলাম, কুচকুচে কালো একটা সাপ ঝুলে আছে গাছটার একটা ঢাল প্যাচিয়ে। ওই ডালটির নীচেই একটু আগে আমার অবস্থান ছিল। দরকার নেই বাবা এতো প্রকৃতি বিশারদ হয়ে।

যাই, পালাই এ মৃতু্যপুরী থেকে। বলা তো যায় না, কখন ঘাড়ের ওপর কোন জন্তু লাফিয়ে পড়ে ঘড়টা মটকে দেয়। হাটা দিলাম ফিরতি পথে। কিন্তু.. কিন্তু.. একি! অনমনে জঙ্গলের এতোটা ভেতরে চলে এসেছি যে, বেরোবার পথটাই তো হরিয়ে ফেলেছি! আমি এখন এই ভয়ংকর জঙ্গল থেকে বেরোবো কি করে? হায় হায়! তাহলে কি এক অধম লেখকের এখানেই জঙ্গল সমাধি হবে! চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.