আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্নসমর্পন অনুষ্ঠানে ওসমানির অনুপস্থিতি বিতর্কঃ ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর এত বড় কোন সৈন্য দল নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে অপমান জনক পরাজয় বরন করে পাকিস্তান

ব্যস্ত শহর ঠাঁস বুনটের ভিরে আজো কিছু মানুষ স্বপ্ন খুজে ফিরে........

জেনারেল এম এ জি ওসমানি আত্বসমর্পনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না,এই বিষয়টাকে নিয়ে আগেও অনেক পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ৭১ পরাজিত শক্তির আত্ত্বা এখনো যাদের মাঝে ভর করে আছে তারা জায়গা পেলেই তাদের পুরাতন সেই বিষ ভরা নিঃশাস ফেলে আমাদের গৌরবময় বিজয় কে ছোট করে প্রচার করতে উঠে পরে লাগে। তার কিছু নমুনা ব্লগে দেখা গেল। সেই সুত্র ধরেই এই পোস্ট। ঐতিহাসিক ভাবেই ভারত আর পাকিস্তান একে অপরের শত্রু।

আর ভারত সভাবতই চাইবে পাকিস্তান কে দুর্বল করার সকল সুযোগ কে কাজে লাগানোর। সেটা খুব স্বাভাবিক। আর ৭১ এ সুযোগ টি কাজে লাগিয়ে ভারত বাংলাদেশ কে সাহায্য করেছে আমাদের মুক্তি সংগ্রামে। ভারতের সেই সাহায্য অনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় নভেম্বরের শেষে ডিসেম্বরে। যা ডিসেম্বর ওয়ার নামে পরিচিত।

আর সেখানে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ ভাবে গঠন করে মিত্র বাহীনি। যাতে ইস্টার্ন ও ওয়েস্টর্ন জোন নামে ২টা ভাগ ছিল। ইস্টার্ন জোনের ভারতীয় অংশের চীফ ইন কমান্ড ছিলেন জি এফ আর জ্যাকব। তিনি প্রথম যখন জেনারেল নিয়াজির কাছে আত্ত্বসমর্পনের ড্রাফট দেখান (১৬ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টা) । এর আগেই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই যুদ্ধ কে পাক-ভারত যুদ্ধ বলে একটি আন্তর্জাতিক রুপ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাবনার চেষ্টা চলে।

নিয়াজিকে বলা হয় তাকে বাংলাদেশ ও ভারত জয়েন্ট ফোর্সের কাছে আত্ত্বসমর্পনের জন্য। দিনটি পুর্ব নির্ধারিত ছিল না। আর তখন জেনারেল ওসমানি ছিলেন সিলেটে। ওসমানিকে ঢাকা আসার জন্য বলা হয়। তার কিছু পরেই ওসমানি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য হেলিকাপ্টারে উঠেন।

কিন্তু পাকিস্তানিদের অনবরত গুলির মুখে সেটি আর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করতে পারে নি। এদিকে রেসকোর্সে আত্নসমর্পনের জন্য প্রস্তুত ঢাকা। আগেই বলা হয়েছে জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে প্রক্রিয়া চলছিল তার জন্য মিত্র বাহীনি কৌশল গত ভাবে এই আত্নসপমর্পন যত দ্রুত সম্ভব করার চেষ্টা করে। এর জন্য বাংলাদেশের অপর মিত্র রাশিয়ার তাড়াও ছিল (জাতিসংঘের সেই প্রক্রিয়া মোকাবেলার কৌশল হিসাবে) তাই ওসমানিকে ছাড়াই শুরু হয় সেই আত্নসমর্পনে অনুষ্ঠান। যাতে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ওসামনির পরে যিনি ছিলেন সেই একে খন্দকার(ছবিতে সাদা পোশাকে) আত্নসমর্পনের যে দলিলে সাক্ষর করা হয় সেটাতে জেনারেল অরোরা যিনি ইস্টার্ন জোনের জি ও সি ছিলেন তার পদবি টি খেয়াল করুন।

তাতে স্পস্ট লিখা আছে জিওসি ইন্ডিয়া -বাংলাদেশ ফোর্স (ইস্টার্ন ) দলিলের ভিতরেও কার কাছে নিয়াজি আত্ন সমর্পন করল সেটা স্পস্ট করে বলা আছে। আর যারা বলে পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্নসমর্পন করেছিল,তাদের কাছে জানতে চাই। তবে ভারত বাংলাদেশ থেকে এক নোটিশে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করলই বা কেন?আর চির শত্রু পাকিস্তান কে হারনোর কৃতিত্ব কেবল নিজেরাই নিল না কেন? এর একটাই জবাব। ভারত আমাদের মিত্র শক্তি হিসাবে আমাদের বিজয়ে সাহাজ্য করেছে,এর বাইরে কিছু নয় । হোওক তাতে তার শত্রু পাকিস্তান কে দুর্বল করার সার্থ জড়িত,সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।

কারন শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু এটা ধ্রুব সত্য। আমাদের যা দেখার ভারত আমাদের এই বন্ধুত্ব কে মর্যাদার সাথে দেখে কিনা। ****** আর এর মধ্য দিয়ে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর এত বড় কোন সৈন্য দল(৯৫ হাজার) নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে অপমান জনক পরাজয় বরন করে পাকিস্তান। ****** নিয়াজি প্রথমে রেসকোর্সে এই দলিলে সাক্ষরে রাজি হয়নি,তিনি এটি অফিসে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের প্রথম উন্মুক্ত জনতার সামনে এই আত্নসমর্পনে বাধ্য হয় পাক সেনারা।

******** জ্যাকব তার বইতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে গিয়ে বলেন,তিনি নিয়াজির সামনে এই ড্রাফট দেখানোর এক পর্যায়ে নিয়াজির চোখ বেয়ে পানি পড়ে। আর এটা দেখে জ্যাকবের যযে অনুভুতি তা তার নিজের ভাষাতেই দেখুন (Then I saw tears in his eyes. I looked at him with pity and thought this man has behaved very badly with the people of Bangladesh. You know what his Army did and I don’t want to repeat that. I wanted him to surrender in front of the people of Dhaka.) সংযুক্তিঃ ওসমানির বক্তব্যঃ ১৮ তারিখে ওসমানী সদর দপ্তরে ফিরে আসেন । তাকে নিয়ে নানা গুজব শুনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন তিনি। এবার আসুন শুনি স্বয়ং ওসমানির বক্তব্য-”দেখুন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখ হলো স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে কোনো চেতনা এখনও জন্ম হয়নি।

আমাকে নিয়ে রিউমার ছড়ানোর সুযোগটা কোথায়? কোনো সুযোগ নেই। তার অনেক কারণ রয়েছে। নাম্বার ওয়ান- পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কবে আত্মসমর্পণ করবে আমি জানতাম না। আমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব এসেছে। নাম্বার টু- ঢাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

কারণ এই সশস্ত্র যুদ্ধ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের অধীনে হলেও যুদ্ধের অপারেটিং পার্টের পুরো কমান্ডে ছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল স্যাম মানেকশ। সত্যি কথা হচ্ছে আমি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো নিয়মিত সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানও নই। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ নয়। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জেনারেল মানেকশকে রিপ্রেজেন্ট করবেন লে.জে অরোরা।

জেনারেল মানেকশ গেলে তার সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্ন উঠতো। সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আমার অবস্থান জেনারেল মানেকশর সমান। সেখানে তার অধীনস্থ আঞ্চলিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরার সফরসঙ্গী আমি হতে পারি না। এটা দেমাগের কথা নয়। এটা প্রটোকলের ব্যাপার।

আমি দুঃখিত, আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের বড় অভাব। ঢাকায় ভারতীয় বাহিনী আমার কমান্ডে নয়। জেনারেল মানেকশর পক্ষে জেনারেল অরোরার কমান্ডের অধীন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে যৌথ কমান্ডের ভারতীয় বাহিনীর কাছে।

আমি সেখানে (ঢাকায়) যাবো কি জেনারেল অরোরার পাশে দাড়িয়ে তামাশা দেখার জন্য? হাও ক্যান আই! আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করবেন জেনারেল মানেকশর পক্ষে জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আর পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজী। এখানে আমার ভূমিকা কি? খামোখা আমাকে নিয়ে টানা হ্যাচড়া করা হচ্ছে। পাশাপাশি কেনো মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করেনি এটার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ওসমানী সংক্ষেপে ব্যাপারটা এমন যে যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে যার অন্যনাম জেনেভা কনভেনশন। বাংলাদেশ এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় বলেই সেই নীতিমালা মানতে মুক্তিবাহিনী বাধ্য ছিলো না। তাই তাদের হত্যা করলে বা তাদের উপর অত্যাচার করলে বলার থাকতো না কিছু।

পাকিস্তানীরা জেনেশুনে সে ঝুকি নেয়নি। তাছাড়া ৯০ হাজার যুদ্ধবন্দীকে খাওয়ানো পড়ানো তদারক করার ক্ষমতাও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ছিলো না। তখনও নিজের খাওয়াটাই যে জোটে না!” (দ্র. একাত্তরের রণাঙ্গন অকথিত কিছু কথা, নজরুল ইসলাম, অনুপম প্রকাশনী ১৯৯৯ )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।