আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যত ভোগান্তি ব্র্যাক ব্যাংকে

নিজেরে হারায়ে খুজি..... bohurupi.mohajon@gmail.com

এই সেদিনও আমি চিন্তা করতাম আমাদের দেশী এতগুলি প্রাইভেট ব্যাংক থাকতে মানুষ কেন বিদেশী ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকিং করে!! আমি নিজে ব্র্যাক ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার গ্রাহক; তবে আমার ব্যাংকে যাওয়া পড়ে অল্প। ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক হবার প্রধান কারণ এটি দেশী ব্যাংক এবং প্রথমদিকে আমার মনে হয়েছে এটি ভালই হবে। তবে এতদিন যে সার্ভিস আমি এদের কাছ থেকে পেয়েছি তা মোটেই সন্তোষ জনক নয়; এদের প্রধান কাজই হচ্ছে নানা বাহানায় সার্ভিস চার্জ কাটা। তবে আমার প্রয়োজন শুধুই ব্যাক্তিগত এবং তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হওয়ায় কিছু মনে করতাম না। "যা হোক চলে তো যাচ্ছেই, কাটলোই না হয় একটু বেশীই কাটল"- এমন একটা ভাব ছিল আমার।

চার্জ বেশি কেমন, - মাঝে সাঝে আমাকে পে অর্ডার করতে হয় - বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৫০০ টাকার নিচে। তবে এজন্য সার্ভিস চার্জ ১১৫ টাকা!! মানে আপনি যত কম টাকারই পে অর্ডার করুন না কেন, সার্ভিস চার্জ ঐ ১১৫ টাকা। তবে আমি এতে একটু বিরক্ত হই, কিন্তু এর বেশি কিছু না। তবে গত দু'সপ্তাহ ধরে তারা আমার সাথে যা করলো তাতে আমি মোটামুটি ফেডআপ। ঘটনার শুরু মে মাসের শেষ দিকে।

হঠাৎ করেই আমার ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের দরকার পড়লো। গেলাম একদিন। যথারীতি ব্যাংকের ভিতর মাছের বাজারের মত অবস্থা। যারা ব্র্যাক ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় যাতায়াত করেন তার জানবেন এখনে ভীড় কি প্রচন্ড। সিরিয়াল নিয়ে ঘন্টা-দেড় ঘন্টা অপেক্ষার পরও অনেক সময় কাষ্টমার সার্ভিস থেকে ডাক আসে না।

তবে সেদিন ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন ছিল, আধঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পর (কেনন ব্যাংকের ভেতরে জায়গা গ্রাহক অনুপাতে একদমই কম, সাতসকালে গেলেও অপেক্ষা করার জন্য বসার জায়গা পাওয়া যায় না এবং ৯০ ভাগ গ্রাহককে এখানে সেখানে দাড়িয়ে থাকতে হয়, গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগার মত অবস্থা) এক কাষ্টমার সার্ভিস অফিসারের সামনে গিয়ে বসলাম। জানালম কি প্রয়োজন; সে তাড়াতাড়ি একটি ফর্ম ধরিয়ে বলল ফিলআপ করে নিয়ে আসতে, কিন্তু কোথায় রেখে ফর্মে লিখবো!! কোন লেখার জায়গা খালি নাই, সেখানেও লম্বা লাইনের মত। ততক্ষণে আমাকে সরিয়ে সেই অফিসার অন্য গ্রাহককে নিয়ে বসিয়েছে। যাহোক, কোনমতে দাড়িয়ে থেকেই ফিলআপ করে জমা দিলাম ঠেলেঠুলে। বলল পরের দিন মানে ২৯ মে সার্টিফিকেট পাব।

পরের দিন একটু সকালেই ব্যাংকে গিয়ে হাজির হলাম, যথারীতে অপেক্ষার পর একজন জানতে চাইল কি দরকার, বিস্তারিত জানালাম। সে বলল সার্টিফিকেট ঐ কাউন্টারে আছে। গেলাম সেখানে - হাতে একটা প্রিন্ট করা কাগজ ধরিয়ে দিল। ভাবলাম ওম শান্তি...........!! কিন্তু সার্টিফিকেটে খেয়াল করতেই দেখি আমার আর আমার বাবার নামের বানান ভুল!! যে মহিলা আমাকে সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেছিলেন তাকে গিয়ে বললাম। সে বলে আমাদের সিস্টেমে এমন বানানেই আপনার এবং আপনার বাবার নাম লেখা আছে।

আমি মাথা চুলকাই, - কিভাবে সম্ভব!! আমি নিজ হাতে একাউন্ট ওপেনিং ফরম ফিলআপ করেছি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডির ফটোকপি দিয়েছি - ভুল থাকলেতো আইডির সাথে মিলালেই ধরা পড়তো। তাছাড়া আমি নিজের নামের বানান ভুল করবো এতটা বেকুবতো এখনো হইনি। তারপর খেয়াল করে দেখি আমার যে একাউন্ট নাম্বার সেটার পাশে ওল্ড লিখে নতুন একটা একাউন্ট নাম্বার সার্টিফিকেটে লেখা। জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপার কি, তখন বলল যে, তারা তাদের সিস্টেম আপডেট করেছে এবং এর ফলে সব পুরাতন একাউন্ট বদল করে সেগুলোতে নতুন একাউন্ট নাম্বার দিয়েছে। বুঝলাম ব্যাপার খানা কি - কিন্তু সেই মহিলা মানতেই নারাজ।

বলে আমার আর বাবার নামের বানান নাকি ওই রকমই!! এদিকে জুন মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই আমার সার্টিফিকেট দরকার। জানতে চাইলাম কি করা যায়। বলল কোন ভোটার আইডি বা পাসপোর্টের কপি দিয়ে ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিতে, তিন ওয়ার্কিং ডের মধ্যে সেটা আপডেট করা হবে এবং পরের সপ্তাহের বুধ-বৃহঃস্পতিবারের দিকে সলভেন্সি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে এবং এও বলল তাদের ফোন ব্যাংকিংয়ে আগে ফোন করে জেনে নিতে নামের বানান ঠিক হয়েছে কিনা। আমি আবার বাসায় গিয়ে ভোটার আইডি নিয়ে এসে সেটার কপি সহ বানান ঠিক করার জন্য ইন্সট্রাকশন দিয়ে চলে আসলাম। পরের সপ্তাহের বুধবার ফোন ব্যাংকিংয়ে ফোন করে জানলাম সিস্টেমে নামের বানান এখনো ঠিক হয়নি।

আমার তো মাথায় হাত! জুন মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আমার সার্টিফিকেট দরকার। ৪ তারিখ হয়ে গেছে, এখনো হলো না! কিন্তু কল ফোন ব্যাংকিং থেকে আমাকে জানালো সামনের সপ্তাহে অবশ্যই হবে, তবে সোম-মঙ্গল বারের দিকে আবারও ফোন করে আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে। সোম বার মঙ্গল বার ফোন দিলাম। কতক্ষণ টুটুটুটু মিউজিক শোনায় তার পর বলে "দ্যা কল ক্যান নট বি রিসিভড নাউ, প্লিজ হোল্ড। " এদিকে মোবাইলে বিলের বারটা।

কিন্তু সোম-মঙ্গল কানেকশন পেলাম না। শেষে বুধবার মানে ১১ই জুন আবার ফোন লাগালাম, তবে কিছুটা রিলাক্স ছিলাম এই ভেবে যে কাজটি হয়তো হয়ে গেছে, যাস্ট ব্যাংকে যাবার আগে নিশ্চিত করে নেয়। কিন্তু ফোন ব্যাংকিং থেকে আমাকে জানালো আমার আর বাবার নামের বানান এখনো ঠিক হয়নি। কিন্তু ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে। পরের দিন মানে আজকে ১২ তারিখ বৃহঃস্পতি বার, এর পর ব্যাংক বন্ধ দুইদিন।

চোখে আন্ধার দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ সকালেই ব্যাংকে হাজির হবো। গেলাম ১২ তারিখ, মানে আজ সকাল সাড়ে নয়টায়। আবার সেই লাইন। ডাক পড়ার পর কাষ্টমার সার্ভিসে গিয়ে জানালাম কি সমস্যা। সব শুনে আর এক মহিলা কাষ্টমার কেয়ার অফিসার মুখ গম্ভীর করে বলে সিস্টেমে নামের বানান ভুল থাকলে কিছু করার নাই।

যখন বললাম আমি দু'সপ্তাহ আগে বানান ঠিক করার ইন্সট্রাকশন দিয়ে গেছি তখন একটু নরম হলো। মেইন অফিসে ফোন করে কাকে যেন খুজলো, তারপর বলে যে এর দায়িত্বে সে নেই- কোথায় যেন গেছে!! ততক্ষণে আমার মাথা গরম হয়ে কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। জানতে চাইলাম আমি আদৌ কাগজটি পাব কিনা? কাস্টমার সার্ভিসের সেই মেয়ে আমাকে মধুর হেসে জানালো পরের সপ্তাহ নাগাদ হয়ে যাবে! এই কথায় আমি কোনই মধু খুজে পেলাম না, এবং কথায় কিছুটা তিতা মিশিয়ে জানালাম আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না, আমার কাগজটা আজই দরকার এবং সে কোন মূল্যে দরকার। বেশ কিছুক্ষণ তর্ক করার পর মেয়েটা মানলো যে ভুলটা তাদের, এবং আমকে এও জানালো সে নাকি তার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে আমাকে হেল্প করার। আমি যখন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের সাথে একটু সাক্ষাৎ করতে চাইলাম তখন সে নরম হয়ে আমাকে দুপুর তিনটার পর আসতে বলল।

উপায় নেই দেখে তাই মেনে বের হয়ে এলাম। দুপুর তিনটায় আবার ব্রাঞ্চে যেয়ে জানতে চাইলাম কাজটা হয়েছে কিনা। তখন সেই মেয়ে হেলেদুলে চেয়ার ছেড়ে উঠল। জানতে চাইলাম আর কতক্ষণ সময় লাগবে - উত্তর: প্রিন্ট করা হয়নি, প্রিন্ট করে দিচ্ছি!! আরও প্রায় বিশ মিনিট পরে প্রিন্ট করে আমাকে সে কাগজটা ধরিয়ে দিল। আমিও হাফ ছাড়লাম।

না!! - নামের বানান ঠিক আছে, বাবার নামও ঠিক আছে। আর একটু নিচে নজর দিলাম। একি!! আমার বাসার ঠিকানাতে রোড নাম্বার মিসিং!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! এবার কি করবো!?? আবার ওটা ঠিক করতে বলবো, না থাক। এটা ঠিক করতে আরও দু' সপ্তাহ লাগবে। তাই ভুল ঠিকানার সার্টিফিকেট নিয়েই ওই গুদাম থেকে বের হয়ে আসলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।