আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ডেঙ্গুকাহিনী - (শেষপর্ব)

skype :: hasib.zaman

আমার ডেঙ্গুকাহিনী ২ দ্বিতীয় পর্বের পর থেকে মেডিকেলের যে জিনিস টা আমাকে বেশী ভোগাল সেটা হল টয়লেট। ওখানে দেখি কলে পানি নাই কিন্তু বাইরে পানি জমে আছে। খালি চোখেই দেখলাম যে সেখানে এডিস মশার চাষ হচ্ছে। ব্যাগ হাতে আরেক গ্রুপের দেখা মিলল। একজন বলে আমি পপুলার তো আরেকজন বলে সে কমফোর্ট।

একেকজন ডাক্তার আবার একেকজনকে রেফার করে। ব্লাডটেস্ট তো এখানে হচ্ছেই, আবার কী জানতে চাইলে বলে ডেঙ্গু কন্ডিশন শিউর হতে এবং সবকিছু ভালভাবে টেস্ট করতে বাইরে পাঠাতে হবে। রাতে সকালের আপুদের একজন আটপৌরে পোশাকে এসে আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু করল। বুঝলাম সেলফ স্টাডি করতে আসছে, সিরিয়াস স্টুডেন্ট । মা তার নাম জানতে চাইলে বলল সুরভী, থার্ড ইয়ারে পড়ে।

এত সুন্দর একটা আপু আমার শার্ট খুলে পড়াশোনা স্টার্ট করলে আমার ভীষন লজ্জা লাগল। আপু আমাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার কেমন লাগতেসে? আমি কি আর বলব!!! বলি, কিছুই লাগতেসে না, কোন অনুভূতি নাই । তখন সে বলল, কয়েকমাস আগে তার নিজের ডেঙ্গু হইছিল এবং তার খুব অসহায় একা একা লাগত। বাকী রাত টা সুরভী আপুকে ভেবে ভেবেই পার হল। পরদিন সকালে শরীরের র‌্যাশ অনেকটাই মিলিয়ে গেল, চোখের লালচে ভাবটা আছে।

প্রাক্টিকাল ক্লাস শুরুর আগেই বাসায় ফেরার জন্য বাবাকে তাড়া দিলাম। কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে ডাক্তার বলল, আরো একদিন অভজারভেশনে থাকতে হবে। আমি উঠে বসে আলপিন নিয়ে ব্যস্ত হতে না হতেই আমার বেডকে ঘিরে প্রফেসরের ক্লাস শুরু হল। ছাত্র-ছাত্রীদের ভিতর সুরভী আপুকে খুঁজে না পেয়ে ভগ্নমনে ক্লাসে মনযোগ দেই। এই ক্লাসের পর থেকে ডেঙ্গু বিষয়ে থিওরেটিক্যালি আমি বেশ স্ট্রং।

বাকী দিনটা ওয়ার্ডের রোগী এবং ডাক্তারদের অবজারভ করে কাটিয়ে দেই। আমার লাস্ট কাউন্ট আসছে দেড় লাখ। বেশ উন্নতি হইছে। অন্য রোগীদের তুলনায় আমার অবস্থা অনেক ভাল। অনেকের যেখানে পাঁচ সাত ব্যাগ ব্লাড লাগছে সেখানে আমাকে আল্লাহর রহমতে অন্য কারো রক্ত শেয়ার করতে হয়নি, শুধু কয়েক ব্যাগ স্যালাইন দিতে হইছে।

একজন ইন্টার্নী ডাক্তারের পরিশ্রম দেখে শ্রদ্ধায় মাথা অবনমিত হল, সিরিয়াস রোগীদের পিছনে তাকে সেই গত রাত থেকে আজ সকালেও অক্লান্ত ডিউটি দিতে দেখছি। তবে বেশীরভাগ ডাক্তারগণ ডিউটিতে মাত্র এসেই চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছে কিংবা রেস্টরুমে গিয়ে আড্ডা মারছে। রাতে আমাকে চেকাপ করার সময় একজনকে মোবাইলে প্রেমালাপও করতে শুনি। সুরভী আপু আসল সন্ধ্যার পর, মিস্টি হেসে বলল আমাকে নাকি বেশ সতেজ লাগছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফাকে ফাকে আমার পড়াশুনার কথা জানতে চাইল।

যথারীতি লজ্জা পাই। সবে ক্লাস টেনে পড়ি আর উনি কত আগায়া গেসেন। দুইদিন তিনরাত পর অবশেষে তৃতীয়দিন সকালে ছাড়া পেলাম। প্রফেসর আন্টি আমার চোখ দেখে বললেন, ভাল হয়ে গেস। আমাদের ব্যাগ গোছানো দেখে সুরভী আপু এসে একটু মুখ কালো করে মাকে জিজ্ঞেস করে, আজকে চলে যাচ্ছেন? আপুর জন্য আমারো খারাপ লাগে, তবে মনে হয় টার্ম প্রজেক্ট রিপোর্ট সে ভালোমতই সাবমিট করতে পারছে।

সাত বছর আগের ঘটনা, তাই লিখতে বেশ বেগ পেতে হল। তবু স্মরনীয় ঘটনা বলে লিখেই ফেললাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।