আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ডেঙ্গুকাহিনী ১

skype :: hasib.zaman

তখন আমার এস এস সি টেস্ট পরীক্ষার মাস খানেক বাকী। দেশে সেবার ই প্রথম এডিস মশার সুনাম ছড়িয়েছে। এদিকে আমার তখন ব্যাপক পড়াশুনা, যতক্ষন বাসায় থাকি টেবিলেই বসে থাকি। কি যে পড়ি আল্লাই ভাল জানে, তবে মাকে তো খুশী রাখতে হবে। আমাকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে বাবা একটা মশক নিধন যন্ত্র কিনে আনলেন, দেখতে অনেকটা র‌্যাকেট এর মত, ব্যাটারীতে চলে।

এর সংস্পর্শে মশা আসা মাত্রই ঠাস ঠাস পটকা ফুটতে থাকে আর মশা বাবাজী পুড়ে খালাস। আমি তো এটা কে পেয়ে যারপরনাই খুশী, পড়াশুনার পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থা। আমার টেবিলের চারপাশে হলে তো কথাই নেই, পুরো রুমের আনাচে কানাচে মশা দেখলেই যন্ত্র নিয়ে চড়াও হই। এহেন আনন্দ বেশী দিন টিকল না, মা-জননী বুঝতে পারলেন যে আমার বিনোদন বেশী হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং দ্বিতীয় সিস্টেম আসল বাসায়।

আমার জন্য একটা টেবিল মশারীর ব্যবস্থা হলো যেটা আমার টেবিল চেয়ার সমেত আমাকে বন্দী করে ফেলল। এটা যে কী জিনিস ভাই না দেখলে বোঝানো যাবে না! বাসায় যেই আসত আমাকে মশারীর ভেতর খুব আগ্রহের সাথে দেখত আর খুব ই মজা পেত। মুখে বলত যে না খুব ভাল হইসে, নিশ্চিন্তে ছেলেটা পড়াশুনা করতে পারতেসে, ডেঙ্গুর ভয় নাই। প্রিয় র‌্যাকেট হারিয়ে মর্মাহত ভাবে বন্দী দশায় আমার দিন কাটতে থাকে। একদিন সকালে কোচিং থেকে বাসায় ফেরার পর আমার কাপায়া জ্বর আসল।

সবার ধারনা হল বাইরে থেকে কামড় খায়া আসছি, বাসায় তো মশাদের চান্স ই নাই। তিন দিন নরমাল জ্বরের মতই ভুগলাম। চতুর্থ দিন জ্বর না আসায় সবাই নিশ্চিন্ত হল যে না ডেঙ্গু হয় নাই। আমিও ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন, মানে টেবিল মশারীর ভেতর ফেরত যাই। সন্ধ্যের দিকে মনে হল বুকে কেমন যেন পাথর জমে আছে, নিশ্বাস নিতে পারছি না।

আবার জ্বর উঠতে লাগল, হাত-পা কেমন যেন লালচে মনে হচ্ছে, আসলে র‌্যাশ উঠতেসে- তখন বুঝি নাই। রাতে রক্ত বমি হল, চাপ চাপ বেশ অনেক খানি রক্ত আসল। মাকে বলি, মা আমি মনে হয় আর বাচঁবো না। সেই রাত দশ টার দিকে ডি এম সি ইমার্জেন্সীতে নেয়া হল আমাকে। এটা কোন ধরনের ইমার্জেন্সী আমার জানা নাই, দশ টাকার টোকেন দিয়ে আমাকে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিল।

ইমার্জেন্সী থেকে ওয়ার্ড এত সুদীর্ঘ করিডর আমার জীবনে দেখি নাই, হাটতে হাটতে জান শেষ। প্লেটলেট কাউন্ট আসল এক লাখ বিশ হাজার। ডেঙ্গুর কোন পর্যায়ে আছি বুঝলাম না, কারন দেশে তখন ডেঙ্গুর মাত্র ফার্স্ট সিজন চলছে। (চলছে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।