আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্তানের সিজার বনাম নর্মাল ডেলিভারী; বাস্তবতার প্রেক্ষিত


গতকাল ও আজ সকালে আমাদের বাসার পাশে দুই জন মহিলা দু'টি সন্তানের জন্ম দিলেন। দু'টোই খুব সাধারণ পরিবেশে কোন ছুরি কাঁচির সাহায্য ছাড়াই, যাকে বলা হয় নর্মাল ডেলিভারী। মা ও বাচ্চা দুটোই সুস্থ্য আছে। যে প্রসঙ্গে এই ঘটনার অবতারণা তা হল এদের দুইজনাই নেহায়েৎ দরিদ্র পরিবারের। কনসিভ করা থেকে ডেলিভারী অবধি কোন স্পেশালিস্ট এর শরনাপন্ন হবার সৌভাগ্য হয়নি; কপালে দামী দামী ব্রান্ডের পুষ্টিকর খাবারও জোটেনি; সৌভাগ্য হয়নি দু দন্ড বসে জিরিয়ে নেবার।

তাহলে সংসার সামলাবে কে? এর পরেও এদের সন্তান প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই জন্ম নেয়; বড় হয়। এই দুই মা'য়ের একজনের মা (তাঁকে আমরা ভাবী ডাকি) আবার অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন। তাঁকেও দেখেছি, ফি বছর একটা করে সন্তানের জন্ম দিতে। জন্মের সময় বাচ্চাগুলো এতই দুবলা পাতলা হত যে মনে হত এই বুঝি ধরলেই মরে যাবে। কিছুদিন পরে দেখা যায় সেই বাচ্চা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর রাস্তার ধুলা ঘাঁটছে।

সবাই ভাবি, হায় হায় না জানি কোন রোগে ধরে ! কিন্তু এখন সেই ছেলে গুলো সবাই এক একটা দশাসই শরীরের যুবক। যাদের শক্তির কাছে আমরা কিছুই না। আমার এই লেখার পেছনের উদ্দেশ্য পরিস্কার। আমরা যারা মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন হতে বিত্তশীল; তাদের ঘরে সন্তান আগমনের বাতাস বইলেই প্রথম খবর কানে যায় গাইনোকলজিস্টের। তিনি সব টেস্ট করে একটা প্রেসক্রিপশান, একটা ডায়েট চার্ট আর কমপ্লিট বেড রেস্ট এর পরামর্শ দিয়ে কত সাবধানে থাকতে হবে নচেৎ সন্তানের কি কি ক্ষতি হতে পারে তা সবিস্তারে বর্ননা করে সম্ভাব্য দম্পতিকে বিদায় করেন।

এর পরের ঘটনা সবাই জানি। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেকআপ, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপরে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষন। সন্তান আসবে দুনিয়ায়। ডাক্তার এবার জানান (প্রায় সব ক্ষেত্রেই) কি ভাবে সিজার করা লাগবে, কত খরচা হবে, স্টিচ না কসমেটিক কোনটা ভাল হবে, নরমাল ডেলিভারী তে সন্তানের কি কি সমস্যা হতে পারে.. সিজারে কি কি সুবিধা আরও কত কি।

এরপর জন্ম নেয় সন্তান। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বাত্যায় ঘটিয়ে। এবং তারপর শুরু হয় শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে ধর্ণা দেয়া। তিনি জানান, শিশুর সিজার ডেলিভারী হওয়ার কারণে রেজিস্ট্যান্স পাওয়ার কম বিধায় কোন কোন সমস্যা কত দিন চলতে পারে, কি ভাবে তাকে শীত গ্রীষ্ম, রোদ ধূলো থেকে দূরে রাখতে হবে তার বিস্তারিত উপদেশ। হাঁচি হলে উমুক ঔষধ, কাশি হলে তমূক এ্যান্টিবায়োটিক, দূর্বল বোধ হলে কত সী'জ এর ভিটামিন আর কত বলব।

এই হল দুই ধরনের মায়ের সন্তান জন্মদান ও তাদের মানূষ করবার মাঝে তফাৎ। প্রথমোক্ত সন্তান এত কম পুষ্টি পাওয়া মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েও তার জন্মের স্বাভাবিকতা, বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা আর আমাদের আদরের দুলাল দের রোগে ভুগে কষ্টকর এক শৈশব অতিবাহিত করা। এর পরে কি একবারের জন্যও মনে হবেনা, আমাদের ডাক্তারেরা আমাদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক দিশায় পরিচালিত করেন না। সমস্ত সৃষ্টিকূলের সিজার দরকার পড়েনা, মানব কূলেরও ক'দিন আগেও পড়তনা; তাহলে আজ এই প্রবণতা কেন। কেন শুধু অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সন্তান ছুরি কাঁচি দিয়ে কেটে পৃথিবীতে আনতে হবে,মায়েদের নিতে হবে নয় মাসের বেড রেস্ট আর সমস্ত সংসার সামলে, শত কায়িক শ্রম করেও হত দরিদ্র মায়েদের ছুরি কাঁচির নিচে যাওয়ার দরকার হয়না।

আমার এক ডাক্তার বন্ধু একবার বলেছিল," আমাদের দেশের মায়েদের গড় উচ্চতা কম, তাদের গর্ভাশয় তুলনামূলক ছোট, তাই সন্তানের নর্মাল ডেলিভারী কঠিন। " আমি হেসে তাকে বলেছিলাম, আমার মা ছিলেন ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি, তিনি তিনটে সন্তান নর্মাল ভাবে জন্ম দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন একজন ব্যস্ততম ব্যাংকার। বেড রেস্টের সুযোগ হয়নি। আমার নানী আরও খাটো, তিনি আট সন্তানের মা, সব নর্মাল জন্ম। যে দুই মায়ের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, আমার বন্ধুর কথার প্রেক্ষিতেই বলি, "তাঁরাও ৫ ফুটের অনেক খাটো।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।