আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতন: বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুনপৌনিক ঘটনার নিষিদ্ধ আলোচনা

munirshamim@gmail.com

প্রথম কিস্তি-ভূমিকা ক. পারিবারিক নির্যাতন বিষয়ে একটি নিরবতার সংস্কৃতি ঐতিহাসিকভাবে বিদ্যমান রয়েছে আমাদের সমাজে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরিবার আমাদের সবচেয়ে কাছের এবং অবশ্যম্ভাবী শক্তিশালী সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের সামাজিকায়ন, আমাদের বেড়ে ওঠা, আমাদের আগামী প্রজন্মের স্বপ্নীল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা- এ সব কিছুর বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো আলোর মুখ দেখে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যামে। আর এ জন্যই হয়তো নিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সমাজে পরিবার এখনও আপন মহিমায় টিকে আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আমাদের মতো সমাজ কাঠামোয় পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখ না করলেও চলে।

আর পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখা ও বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকাটি যারা নিরন্তরভাবে পালন করে আসছেন তারা হচ্ছে নারী সমাজ। একটি বিকশিত স্বপ্নীল পরিবারের জন্য নারীর ক্রমাগত সৃজনশীল ভূমিকার পরও দুঃখজনক সত্য হচ্ছে এ পরিবার নারীর জন্য একটি নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে নি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সূত্রে আমদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ও সা¤প্রতিককালের পরিসংখ্যান থেকে এটি প্রমাণিত যে, নারীর বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিংহভাগই ঘটে থাকে নিজস্ব পারিবারিক গন্ডিতে। যদিও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার কারণে বেশির ভাগ ঘটনাগুলো পর্দার অন্তরালে থেকে যায়। সামাজিকায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী যে অবদমন ও নিরবতার সংস্কৃতি আত্বস্থ করে তা এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সহায়কের ভূমিকা পালন করে।

অথচ ঐতিহাসিকভাবে চলমান এ চিত্রটি কোনভাবেই একটি সামগ্রিক উন্নয়ন আকাঙ্খা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুক্তি ও প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। কেনন এ চিত্রটি শুধু নারী কে নয়, একটি সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তৈরি করে নানা নেতিবাচক ফলাফল। মূলধারার উন্নয়ন ভাবনা থেকে বাইরে এসে যদি আমরা উন্নয়ন কে একটি সামগ্রিক স্বত্ত্বাধিকার ও সক্ষমতা অর্জন এবং আর্থনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি তবে আমাদের সমাজ কাঠামোর আলোকে এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, পারিবারিক স¤প্রীতির কোন বিকল্প নেই।

যার জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে পারিবারিক নির্যাতনের সম্ভাব্য পথগুলো বন্ধ করা। একটি সৃজনশীল সমাজ ব্যবস্থা ও ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য ব্যাস্টিক পর্যায়ে এটি খুবই জরুরি বিষয়। আর এ রকম একটি বিশ্বাসের জায়গা থেকেই পারিবারিক নির্যাতনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পারিবারিক নির্যাতন অন্যন্য সকল নির্যাতন এর মতোই একটি সামাজিক অপরাধ। যাকে উৎপাটনের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ, বিকল্প সামাজিকায়ন।

পাশাপাশি একটি আইনী কাঠামোর প্রয়োজনীয়তাকেও অস্বীকার করা যায় না। আর এ সব কার্যক্রমগুলোকে সমৃদ্ধ ও বেগবান করতে হলেও এ বিষয়ে গবেষণা ও অধ্যয়ন খুবই জরুরি। এ রকম একটি প্রেক্ষিতে গ্রামীণ বাংলাদেশে পারিবারিক নির্যাতনের চলমান দৃশ্যপট তুলে আনার উদ্দেশ্যে এ গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয়েছে। খ. বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা বা নারী নির্যাতন নিয়ে প্রকাশ্যে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা এবং বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাল মাত্র কয়েক দশক। তবে এ সব আলোচনা বা কর্মসূচিতে পারিবারিক নির্যাতনের ইস্যুটি বরাবরই উপেক্ষিত থেকে গেছে।

মূলধারার উন্নয়ন কর্মসূচিতে পারিবারিক নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি এখন পর্যন্ত অর্থপূর্ণভাবে স্থান পায় নি। অতি স¤প্রতি অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন কৌশলের ব্যানারে কিছু দাতা এবং উন্নয়ন সংস্থা এবং এক্টিভিস্টদের উদ্যোগে পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু হলেও এর পরিসর এখন পর্যন্ত যে সীমিতা তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এর একটা প্রধার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর অন্তর্নিহিত ও অবশ্যম্ভাবী উপাদানসমূহ। যেখানে ভেতর ও বাহির নামে নারীর জন্য দুটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মেরু ঐতিহাসিকভাবে দৃশ্যমান। আর এ দৃশ্যপটে পরিবার নারীর জন্য স্বর্গের ইমেজে মহিমান্বিত একটি অবশ্যম্ভাবী ব্যক্তিগত বিষয়।

সুতরাং পরিবার নামক সমাজ আরোপিত নারীর ব্যক্তিগত ভুবনে যা কিছ ু ঘটবে, বিশেষ করে নির্যাতন সহিংসতা তা পরিবারের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রবল ও প্রধান সামাজিক প্রথা দ্বারা এখন পর্যন্ত সমর্থিত নয়। সে দিক থেকে পারিবারিক নির্যাতনের ওপর পরিচালিত এ গবেষণা কার্যক্রমটির পরিসর খুব ছোট হলেও নারীর ব্যাপারে মূলধারার সামাজিক মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করবার ক্ষেত্রে একে অন্তত একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। (চলবে) চলবে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।