আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের বই; শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের “এই হেমন্তে।”

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। যার শব্দপ্রয়োগ ও বাক্যবিন্যাসে রয়েছে এমন এক নরম মেদুর স্বাদ, এমন এক ধরনের মায়ামমতা, এমন কী নিষ্ঠুর দৃশ্যের বর্ননাতেও ... ফি-বছর অক্টোবর মাসের শুরুতে আমি প্যান্টের পকেটে শ পাঁচেক টাকা নিয়ে আমাদের বহুতল থেকে বেরিয়ে সকালের ঝরঝরে রোদের ভিতর রিক্সা -বাস-গাড়ির ভিড় এড়িয়ে সতর্ক হয়ে ২০০ ফুট একটা রাস্তা পেরুই। রাস্তার ওপারে এই এলাকার একটি চমৎকার বইয়ের দোকান।

সময় নষ্ট না করে সব কটা পূজো সংখ্যা কিনে ফেলি। বুকের প্রচন্ড ধুকধুকানি নিয়ে তারপর আবার রাস্তা পেরিয়ে আমাদের বহুতলের ফ্ল্যাটে ফিরে আসি। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বইয়ের প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলি। তারপর ‘আনন্দমেলাটা’ হাতে তুলে নিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে যার লেখা প্রথমেই পড়তে শুরু করি- তিনি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ২ বাংলার বিক্রমপুর জেলা যে ক’জন বিশিষ্টজনের জন্ম দিয়ে ধন্য হয়ে আছে তাদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন।

কথাটা এই জন্য বলা যে- যারা কেবল হ্যারি পটার পড়েন, যাদের পূজাসংখ্যা আনন্দমেলায় শীর্ষেন্দুর লেখা কিশোর উপন্যাস পড়ার সৌভাগ্য আজও হয়নি, তারা যদি মনে করেন যে সমকালীন বিশ্বে দুনিয়াজোড়া কিশোরকিশোরীদের মন জয় করার ক্ষমতা একমাত্র রাওলিংসই রাখেন- তাদের এখনও অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে। আজ যদি সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়, তাহমিমা আনাম আর মাসকাওয়াত আহসান মিলে শীর্ষেন্দুর লেখা সব কিশোর উপন্যাস ইংরেজিতে অনুবাদ করে লন্ডন-নিউইয়ক থেকে প্রকাশ করেন -তারপরও শীর্ষেন্দুর নাম কোনও দিনই হ্যারি পটারের লেখিকার সমান হবে না। কেননা তাঁর অধিকাংশ লেখার প্রেক্ষাপটই পশ্চিম বাংলার গ্রাম কিংবা মফস্বল শহর; সৈয়দ শামসুল হক যাকে যথার্থই বলেন-বিশাল বাংলা। বিশাল বাংলার আমোদ-কুকহ-বিস্ময় কদাপি অন্য ভাষায় অনুবাদ করে বোঝানো সম্ভব নয়। আমরা যখন বলি ‘আম বাগান’; তখন আম বাগানটি কেবল ‘ম্যাঙ্গে গ্র“ভ’ বাদেও অনেক কিছুই বোঝায়।

একমাত্র বাঙালি ছাড়া ওই অনেক কিছু অন্যরা বুঝবে না। এ জন্যই বাংলাকে অন্য কারও বোঝার কথা না। ওদের কাছে রবীন্দ্রনাথ হচ্ছে টেগর। আমরা জানি রবীন্দ্রনাথ মানে- মন মোর মেঘের সঙ্গী/উড়ে চলে দিক দিগন্তের পানে/নিঃসীম শূন্যে ... ... ... কাজেই, ইংরেজি অনুবাদ সত্ত্বেও শীর্ষেন্দুর কিশোর ক্লাসিকের কারিশমা দুনিয়াজোড়া কিশোরকিশোরীদের বোঝার কথা নয়। অথচ, হ্যারি পটারের প্রেক্ষপট পরিচিত হওয়ায় চিনের কিশোরীরাও তা বোঝে।

এ কারণেই, ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ ওদের টানার কথা নয়। কাজেই, শীর্ষেন্দু আজও দু বংলাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছেন। ৩ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ট এই লেখকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর; বিক্রমপুরে। অন্য একটি সূত্রমতে শীর্ষেন্দুর জন্ম অবশ্য ময়মনসিংহ। আমাদের দেশে তো লেখকের জীবদ্দশায় লেখকের প্রামাণ্য জীবনী লেখার চল নেই।

সে কারণে এমন সব ভুলভ্রান্তি হতেই থাকবে। যা হোক। শীর্ষেন্দুর বাবার ছিল রেলের চাকরি। রেলের চাকরি বদলীর চাকরি। যে কারণে শীর্ষেন্দুর ছেলেবেলা কেটেছিল পূর্ববাংলায় নানা জায়গায়; আর সেই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীকালে প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর লেখা কিশোর উপন্যাসে।

‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’র পেক্ষপট পশ্চিমবাংলার এক মফঃস্বল শহর হলেও কোথাও যেন ছেলেবেলার পূববাংলা উঁিক দেয় । এভাবেই দুই বাংলা একাকার হয়ে আছে শীর্ষেন্দুর লেখায়। ৪ শীর্ষেন্দু আই এ পাশ করেছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে । ( কুমিল্লার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া কলেজ কি না বলতে পারছি না। কারণ ওই একই, আমাদের দেশে লেখকের জীবদ্দশায় লেখকের প্রামাণ্য জীবনী লেখার চল নেই।

) সেই শৈশব থেকেই বাংলা ভাষাকে বরাবরই ভালোবাসতেন শীর্ষেন্দু। কাজেই, পরিনত বয়েসে আইন কি রসায়ন কি প্রকৌশল বিদ্যায় না-পড়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওখান থেকেই এম এ করে বেরুলেন যথাসময়ে। অবশ্য তারও বহু আগে থেকেই লেখালেখির সঙ্গে এই আড়ি এই ভাব সম্পর্কটা তৈরি হয়ে গিসল শীর্ষেন্দুর। ৫ ‘ঘুনপোকা’ শীর্ষেন্দুর প্রথম উপন্যাস।

প্রথম লেখাই রাতারাতি হিট। এ রকম সৌভাগ্য ক’জন লেখকের ভাগ্যে জোটে? ঘুনপোকা হিট হওয়ার কারণ আছে। গল্প লেখার সব কায়দায় শীর্ষেন্দুর জানা আছে। তিনি বিলক্ষণ জানেন কী ভাবে গল্প বলতে হয়। এই পৃথিবীতে নানা জাতি, নানা তাদের আচার নীতি প্রথা।

একটা ব্যাপারে সবাই অভিন্নহৃদয়। গল্প সবাই শুনতে ভালোবাসে। কাজেই, ভালো গল্প লিখিয়েরা সমাজে জনপ্রিয় হন। শীর্ষেন্দু তাদেরই একজন। ৬. শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নবীন লেখকদের দুটি বিষয় শেখার আছে বলে মনে করি।

১/ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন যে-আমি আমার মনের ভাবটা কী ভাবে লিখে প্রকাশ করব সেটাই আমার মূল সমস্যা। লেখার পর পাঠকপ্রতিক্রিয়ার আমার তেমন উৎসাহ নেই। ২/ মনের ভাবটিকে প্রকাশ করার জন্য নিজস্ব এক ভাষার সৃষ্টি। ৭. শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ভাষাটি কী রকম শক্তিশালী ও একই সঙ্গে স্বাদু হতে পারে - এই ‘এই হেমন্তে’ নামে ছোট লেখাটি তারই এক অনন্য উদাহরণ। এই বইটি নির্বাচনের কারণ-নিজের কথা লিখেছেন শীর্ষেন্দু।

আর, ছেলেবেলার নানা কথা রয়েছে এতে। ৮. বর্তমানে, তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় কর্মরত আছেন। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।