আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের বই: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল-এর "আমার বন্ধু রাশেদ।" (ইংরেজি অনুবাদ)

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সঙ্গে ১৯৫২। ভাষা আন্দোলনের বছর। ডিসেম্বর মাস।

রফিক বরকত সালামের জন্য বাঙালির চোখের জল তখনও শুকোয়নি। ২৩ ডিসেম্বর। সিলেট। জন্ম হল জাফর ইকবালের। বাবা ফয়জুর রহমান ছিলেন পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা।

কাজেই বাবার বদলীর চাকরির সুবাদে ছেলেবেলাতেই বাংলাদেশের নানা জায়গায় ঘোরার সুযোগ হয়েছিল। আর এভাবেই ভিত রচিত হয়েছিল জাফরের লেখকমননের। জাফরের বাবা ছিলেন অসম্ভব একজন ভালো মানুষ। উদার, দিলখোলা। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মতন মিশতেন।

ছেলেমেয়েদের লেখালেখির প্রেরণা দিতেন। না-ছাপালেও নিজেও টুকটাক লিখতেন ফয়জুর রহমান। ছেলেদেরও লিখতে বলতেন। বলতেন," বুঝলি হুমায়ূন, মনের দুঃখ ভোলার একমাত্র উপায় হইল লিখা। জাফরের বড় ভাইয়ের নাম হূমায়ূন।

সে মাথা নাড়ে। বাবার কথা শুনে সেও লিখত। জাফরও লিখত। জাফরের আর এক ভাই হাবীব-সে ভারি চমৎকার ছবি আঁকত। ফয়জুর রহমানের বুকটা সব সময় আনন্দে ভরে থাকত।

ভাবতেন-আমি তো চিরকাল এই ভবের মাঝারে থাকব না, একদিন চলে যাব। তখন আমার ছেলেরা ছবি এঁকে বই লিখে দেশের মানুষের মনে কত যে আনন্দ দেবে। আজ প্রতিটি বাঙালিই জানে-ফয়জুর রহমানের সেই স্বপ্নটি সার্থক হয়েছে সাত বছর বয়েসেই নাকি জাফর প্রথম সাইন্সফিকশানটি লিখে ফেলেছিল। আর, সেটি দেখে বাবার কী খুশি। হূমায়ূনও অবাক।

ছোটভাইয়ের জন্য কি গর্বের এক অনুভূতি হচ্ছিল হুমায়ূনের বুকে। হাবীব আদুরে গলায় বলল, ভাইয়া, তোমার বইয়ের ছবিগুলো কিন্তু আমি আঁকব। আচ্ছা, আঁকিস। জাফর খুশি হয়ে বলল। আমার বইয়ের ছবি আকঁবি না? হুমায়ূন ছোট ভাইকে মৃদু খোঁচা মারল।

আঁকব না আবার? তখন রাঙামাটির পুলিশ কোয়ার্টারের উঠানে ফুটফুটে জ্যোস্না। অক্টোবরের শেষ। কী শীত আর ঝিঁঝি পোকার ডাক। গোয়াল ঘর থেকে গোবরের গন্ধ ভেসে আসছে। রাতে খাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের পার্বত্য এলাকার শীত সম্বন্ধে ধারনা দিতে উঠানে এসে বসেছেন ফয়জুর রহমান।

সদ্য রাঙামাটিতে বদলী হয়ে এসেছেন। বদলীর চাকরি। আবার কখন চলে যেতে হবে। যেখানেই যান তিনি- সেই অঞ্চলের মায়ায় পড়ে যান। মায়া এমনি জিনিস।

হায়রে, কে বানায় লো এমন মায়ার জগৎ? ফয়জুর রহমান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। ১৯৬৮। ফয়জুর রহমান তখন বগুরায়। ম্যাট্রিক পাশ করল জাফর বগুরা জেলা স্কুল থেকে। তারপর ঢাকা কলেজে পড়াশোনা আরম্ভ হল।

১৯৭০ সাল। ঢাকা কলেজ থেকেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করল জাফর। পূর্ব পাকিস্থান তখন উত্তাল। পাকিস্থানী শাসনশোষনের বিরুদ্ধে বাঙালি জেগে উঠেছে। স্বাধীকারের কথা ভাবছে।

বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্নের রুপ দিচ্ছেন। যে স্বপ্নের ভূমিতে পৌঁছতে অনেক আত্মত্যাগ, অনেক রক্তস্রোত তখনও বাকি। ১৯৭১ সালের ৫ মে। পাকিস্থানী সৈন্যরা একটি নদীর সামনে ফয়জুর রহমানকে হত্যা করল। মাকে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বাবার কবর খুঁড়তে হয়েছিল জাফরকেই।

যুদ্ধ শেষ। ’৭২এ জাফর যোগ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে। ভীষন গম্ভীর। কী যেন ভাবে সারাক্ষণ। জীবনজগতের মানে বদলে গিয়েছে।

বাবার মুখটা মনে পড়ে। বাবা লিখতে বলতেন। জাফর লিখত। তারপরও বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা। কেন সভ্যতায় এত মৃত্যু-এত রক্তপাত! ইয়াসমিন নামে একটি মিস্টি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হল পদার্থবিদ্যা বিভাগে।

জাফরকে প্রথম দেখে ইয়াসমিন মুগ্ধ। এমন শান্তশিষ্ট পড়ুয়া ছেলেই ইয়াসমিনের পছন্দ। তার ওপর জাফর আবার লেখে। লেখকদের সঙ্গে ঘর করতে না চাইলেও লেখকদের প্রতি নারীদের এক ধরনের কৌতূহল থাকে-যা ব্যাখ্যা করা যায় না। তখনই প্রথম লেখা বেরয় বিচিত্রায়।

(আমি গল্পের মতন করে লিখছি। কাজেই তথ্যের বিভ্রাট ঘটতে পারে। ) জাফরের প্রথম লেখার নাম “কপোট্রনিক ভালোবাসা। ” কুম্ভীলকবৃত্তির অভিযোগ উঠল। জাফরের দিনগুলি অস্থির নির্ঘুম হয়ে উঠল।

ইয়াসমিন তখন বলল, আচ্ছা, এক কাজ কর তুমি। তুমি কপোট্রনিক নিয়ে অনেকটা সিরিজ লেখ। তাহলে পাঠকের মন থেকে সন্দেহ দূর হবে। জাফর তাই করল। সে কপোট্রনিক নিয়ে অনেক কটা সিরিজ লিখল।

পাঠক বুঝল: প্রতিভাবান জাফর এক প্রচন্ড সম্ভাবনা। বাংলা সাহিত্যের প্রায় নতুন এক অধ্যায়ের অপ্রতিরোধ্য কর্মকার হবেন তিনি। ১৯৭৬। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট বদলে গেছে। জাফরের মন খারাপ।

বঙ্গবন্ধু কি এমন দোষ করলেন যে বিচার পেলেন না-ঘাতকের গুলিতে নিহত হতে হল!!! পি এইচ ডি করতে গেলেন মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার শোক, বঙ্গবন্ধুর শোক খানিকটা স্তিমিত হয়ে এল। ওখানে আবার ইয়াসমিনের সঙ্গে আবার দেখা। প্রনয় এবার রুপ নিল পরিনয়ে। ’৭৭ এ বিয়ে।

একাত্তরে বাবার কবর খুঁড়লেও নানা দিক থেকে জাফর ইকবাল ছিলেন সৌভাগ্যের বরপুত্র। কেননা, তিনি পোস্ট-ডকটরাল ট্রেনিং করলেন বিশ্বখ্যাত ক্যালট্যাক -এ ( ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি); ওখানেই রবার্ট পেনরোজসহ অনেক বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদের সান্নিধ্যে এসেছেন। আমরা জানি, স্টিফেন হকিং, ক্যালট্যাক আর সমকালীন মহাকাশবিদ্যা (অ্যাস্ট্রো-ফিজিকস্)-সবই একাকার হয়ে আছে। তাই বলছিলাম, ক্যালট্যাকে পা রাখা যে কোনও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের জন্য মহাতীর্থে পা রাখারই সমান। জাফর ইচ্ছে করলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে সেটল করতে পারতেন।

বাবা ডাকছিল; দেশটা টানছিল। তখন ভীষন ছটফট করতেন জাফর। একাত্তরে শহীদ বাবা কিছু স্বপ্নে বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। ইয়াসমিনেরও ইচ্ছে ছেলেমেয়েরা দেশের মাটিতে বেড়ে উঠুক। শ্বশুরের কথা স্বামীর মুখে, ভাসুরের মুখে, দেওরের মুখে এত শুনেছে যে - কাজেই ওরা দেশে ফিরে এলেন ’৯২ তে।

১৯৯৪ সালে শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স যোগ দিলেন জাফর। সদ্য গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম স্বপ্নের বিজ্ঞানমন্দিরের প্রধান পুরোহিত হলেন জাফর। জাফরের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে নাবিল। মেয়ে য়েষহিম।

"আমার বন্ধু জাফর" অনুবাদ করেছে য়েষহিম। য়েষহিম-এর জন্য শুভ কামনা রইল। আজ, তাহমিমা আনাম বিদেশি ভাষায় সাহিত্যরচনা করে যে পথ খুলে দিলেন- সেই পথ ধরেই য়েষহিমও একদিন বুকার-নোবেলসহ সব পুরস্কার নিয়ে আসবে ওর শহীদ দাদুর স্বপ্নের মায়াময় বাংলাদেশে: আজ এই কামনাই করি। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।