আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (তৃতীয় পর্ব)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

অবন্তীর হাসি দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। যাই হোক অন্তত উটকো ঝামেলা মনে করেনি। অবশ্য আজকালকার যুগে দ্বৈত অবস্থানটা বেশ দেখা যায় । মুখে হাসি অথচ আদতে রাগান্বিত এমনটা খুব হয়। এতো কিছু না ভেবে বলে বসলাম- এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, তাই ভাবলাম একবার আপনাদের বাসা হয়ে যাই।

এদিক দিয়ে যাওয়ার কি আছে? আপনিতো এই এলাকাতেই থাকেন। আসতে চাইলে প্রায়ই আসতে পারেন। কিছুটা তীক্ষ্ণ কথায় ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, আসলে আমি ব্যস্ত থাকিতো তাই সময় সময় হয়ে উঠে না। কথাটা বলার সময় মুখের এক্সপ্রেশনটাকে এমন করে তোললাম যেন আমি দেশের নামকরা এবং সার্টিফিকেটধারী ব্যস্ত লোক।

জবাবে অবন্তী ছোট্ট করে শুধু বললো- ওহ! আমার ব্যস্ততাকে তাচ্ছ্বিল্য করলো নাকি বুঝতে পারলাম না। ভাবটা এমন যে, যে না তুমি একখান মানুষ! তোমার আবার ব্যস্ততা। আমি কথা ঘুরানোর জন্য বললাম- আঙ্কেল বাসায় নেই? পরিবারটার প্রতি আমার টান আছে এমনটা বুঝাতেই আঙ্কেল বললাম। নাহলে সাদামাটাভাবে বলতে পারতাম, আপনার আব্বু বাসায় নেই? আপনার ড্যাডী বাসায় নেই? এমনটাও অবশ্য বলা যেতো। নাহ! বাবা প্রতিদিন বিকালে হাটতে বের হন।

আজকেও হাটতে গেছেন। বাবা ডাকা নতুন কোন ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে কিনা বুঝতে পারছিনা। আগে এই স্ট্যাটাসের মেয়েরাইতো বলতো ড্যাডী! তার মানে আবার ব্যাক টু বাবা। ওহ! তাহলে আজকে আমি যাই। আরেকদিন আসবো।

আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম বোধহয়। শুনেন! আমার সঙ্গে এতো ফরমালিটি না করলেও চলবে। আমি মেয়েটাকে দেখলে কি খুব বেশি ফরমাল মেয়ে মনে হয়? না মানে ইয়ে..... ছবি আঁকতে ছিলাম। দেখতেই পাচ্ছেন হাতে রং লেগে আছে। মনোযোগ চলে গেছে একবার।

এখন আর মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আপনি বসেন, গল্প করা যাক আপনার সাথে। কথা না বাড়িয়ে ড্রয়িং রুমটাতে গিয়ে বসলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম মেয়েটার মাথায় কি কোন গন্ডগোল আছে। এতো সহজে স্বল্প পরিচিত একটা ছেলের সাথে গল্প করতে চাইলো! নাকি এইসব বড়লোকের মেয়েদের নতুন ফ্যাশন! ভাবতে ভাবতে চারটা দেয়াল দেখে নিলাম।

বেশ কিছু পেইন্টিং। বুঝতে পারলাম এগুলো অবন্তীর আঁকা। বসে বসে ভাবছিলাম অবন্তীদের পরিবারের কথা। এমন সময় অবন্তী হাজির। হাতে চা, বিকালের নাস্তা একটা প্লেটে।

টেবিলে রাখলো সযতনে। আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে বলে বসলাম- বাসায় আপনি একা কেন? আপনার আম্মু কোথায়? প্রশ্নটা শুনেই চুপসে গেল অবন্তী। খানিকক্ষণ চুপ মেরে গেল। তখনই বুঝতে পারলাম কিছু একটা সমস্যা আছে। খানিক বাদে সে যা জানালো তা শুনে আমি নিজেই চুপ মেরে গেলাম।

খুব ছোটবেলায় অবন্তীর মা মারা যায়। অবন্তীর বয়স তখন মাত্র পাঁচ। তারপরে অবন্তীর কথা চিন্তা করেই তার বাবা আর বিয়ে করেনি। সেই থেকে একসাথে বাবা ও মায়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে অবন্তীর বাবা। সন্তানের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে না করা অবশ্য এখন বেশ দেখা যায়।

গল্প সিনেমাতেই বেশি দেখা যায়। কথা অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য বললাম- ঘরের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিংগুলো কি আপনার করা? আমার সুন্দর পেইন্টিং কথাটা শুনে অবন্তী বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম । পেইন্টিং এর ‘প’ ও বুঝিনা। এখন যদি পেইন্টিং নিয়ে আলোচনা শুরু করে তাহলে নিজের ফাকা বুলি প্রমাণ হয়ে যাবে।

মনে পড়ে, শহরটাতে প্রথম দিকে এসে একবার আগ্রহ করে চিত্রপ্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলাম। বেশ গম্ভীর হয়ে গ্যালারী ঘুরে দেখছিলাম। অবশ্য কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কেবল ছড়ানো ছিটানো কিছু আঁকাআঁকি মনে হলো আমার কাছে। অবশ্য মুখের এক্সপ্রেশনে তা কাউকে বুঝতে দিলাম না।

আমার এই জ্ঞানী ভাবভঙ্গি দেখে এক বয়স্ক লোক আমাকে একটা পেইন্টিং এর তাৎপর্য বিষয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো। কি জবাব দিবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না, এমন সময় বয়স্ক লোকটাকে ডেকে নিয়ে গেলো সঙ্গে আসা বয়স্ক মহিলাটা। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাবলাম এ যাত্রা যেহেতু বেঁচে গেছি গ্যালারীতে আর থাকা নিরাপদ না। দুইটা মানুষের আলোচনার কমন সাইকোলজি হলো তাদের সেই আলোচনার একটা কেন্দ্র থাকতে হবে।

কেন্দ্রটাকে ঘিরে আলোচনা হয়। কেন্দ্রের বিষয়টাকে সহজে আলোচনার কমন দিক বলা যেতে পারে। ভেবেই নিলাম অবন্তীর সাথে কথাবার্তা এক অর্থে পরিচয় দীর্ঘায়িত করার কমন দিক হচ্ছে পেইন্টিং বিষয়ক আলোচনা। সুন্দর পেইন্টিং বলতেই সে যে আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছে, তা দেখে এমনটা ভাবা অবশ্য ভুল না। অবন্তীর সাথে বেশ কিছু সময় কথাবার্তা বলার পর তার কাছ থেকে পেইন্টিং বিষয়ক কিছু বই নিয়ে আসলাম।

পেইন্টিং বিষয়ে আমাকে বিস্তারিত জানতে হবে এমন একটা ধারণা মনে জমে গেল। বাসায় ফিরেই দেখি বুয়া অপেক্ষা করছে। সঙ্গে সঙ্গেই আবার বাজার করার জন্য ছুটতে হলো। বাজারে জিনিষপত্রের দাম শুনে কয়েকদফা অবাক হলাম। তারপরেও কিনতেই হলো।

বাজার শেষে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই পেইন্টিং বিষয়ক বই নিয়ে বসলাম। মনের ভিতর তখন কথা বলার কমন কেন্দ্র খোঁজার সাইকোলজি কাজ করছে। বেশ খটমটে বিষয়, তবুও আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। এমন সময় বাড়িওয়ালার কাছ থেকে খবর আসলো। যেতে হবে তখনই।

শার্টটা গায়ে চাপিয়ে নিচতলায় গিয়ে হাজির হলাম। বাড়িওয়ালার গম্ভীর গলার বক্তব্য থেকে যা সারমর্ম বের করলাম তা হলো, বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। মনে মনে আরো হতাশ হলাম। টিউশনীতে টাকা বাড়ায় নি। তাহলে এই বাড়তি বাসা ভাড়া আবার কিভাবে যোগাড় করবো।

বাড়িওয়ালাকে যে কিছু বলবো তারও উপায় নেই। বেশি কিছু বললেই বাসা ছাড়তে বলবে। হতাশ হয়ে ফিরে আসলাম রুমে। সব ভুলে আবার পেইন্টিং এর বই নিয়ে বসলাম। আমার আগ্রহ তখন পেইন্টিং নিয়ে।

ভাবলাম পরেরবার যখন অবন্তীদের বাসায় যাবো, তখন আরো কিছু বই নিয়ে আসতে হবে। (চলবে......) প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.