আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী বদলায়, কতোটুকু বদলায়?

'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'

আমরা এখন বদলে যাবার কথা শুনছি আমাদের চারপাশে। দুনিয়ার সবচে আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান প্রতিনিধি বা প্রতীক প্রেসিডেন্ট পদে পুরাতন নাম মুছে নতুন নামের আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি বদলের পথে হাঁটতে চাইছেন। আগেভাগেই ঘোষণাও দিয়েছেন সেভাবে। ইউরোপের সুদীর্ঘ উপনিবেশ কাটিয়ে নয়া সাম্রাজ্যবাদের যে ধারক ও বাহক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক রাষ্ট্রব্যবস্থাটির অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় হয়েছিলো, তার প্রাথমিক সূচনাই এসেছিলো তার সবচে নিকটতম প্রতিবেশী ল্যাতিন অ্যামেরিকার রাষ্ট্রগুলিকে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে।

এই সর্বভূক কৌশল এতোটাই ব্যাপ্ত ছিলো যে, যুক্তরাষ্ট্র নামক রাষ্ট্রটি নিজ মহাদেশের অন্য সব রাষ্ট্রকে ছাপিয়ে অ্যামেরিকা নামখানাও নিজের গতরে ধারন করতে ন্যূনতম অসুবিধে বোধ করে নি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচে দুর্বিনীত আধিপত্যবাদী এই রাষ্ট্র তার থাবা এরপর শুধু ক্রমান্বয়ে বিস্তারই করে চলেছে। সামরিক শক্তি, কূটনৈতিক চাল আর অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তির চূড়ান্ত সীমায় নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক নীতির হেলদুল অতীতে আমরা দেখেছি। কিন্তু তা কেবলমাত্র আগ্রাসনের স্বার্থেই করা হয়ে থাকে। আমাদের পুরানো অভিজ্ঞতা তো তাই বলে।

তারপরেও বারাক ওবামার বিজয়কে বদলের সূচনা বলে ঢাকঢোল কম পেটানো হচ্ছে না। এই ঢাকের আওয়াজ সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে আমাদের কানেও যে আসছে। সেই অপার মহিমা যে আমরাও আস্বাদন করছি। কিন্তু আসলে কী বদলায়, কতোটুকু বদলায়- তা তো পরিষ্কার। সারা বিশ্বে নানা পদের অসংখ্য ঘটনা-দুর্ঘটনার পেছনে থাকা সিআইএ নামক সংস্থাটি কি ওবামার দায়িত্ব নেবার পর বদলে যাবে? নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করতে বিশ্বব্যাপী এই সংস্থাটি কি তাদের কূটচাল অব্যাহত রাখবে না? পররাষ্ট্র নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন চাল গ্রহণ করবে বলে শোনা যাচ্ছে, তা কি অবশিষ্ট বিশ্বে লহমায় শান্তির বাতাস বইয়ে দেবে? অন্য রাষ্ট্রের খনিজ সম্পদের ওপর লালসার জিভ কি ফিরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র? যদি এসব হয়, তাহলে কি ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা আর অবশিষ্ট থাকবে? তা যদি না থাকে তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র নামক রাষ্ট্রব্যবস্থাটি তা মেনে নেবে? এই রাষ্ট্রের পরতে পরতে যে নীতি নির্ধারক আমলা, আধা আমলা আর পুঁজির মালিক গোষ্ঠী রয়েছে তাদের পসার আর আয় উপার্জন তো তাহলে হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

ওবামা তো রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি পদের ধারক মাত্র। কিন্তু রাষ্ট্রের কলকব্জা যে আরো অনেক গভীরে। তাহলে সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা না বদলালে ওবামার কাছ থেকে আমরা কী বদল আশা করতে পারি? আর সেই আশা কেন করবো? না, সেই আশা করতে হবে। কারণ, গত প্রায় দু'বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রজ্যবাদী প্রক্রিয়ার নতুন চেহারা আমাদের সামনে হাজির করার খেলা একটু একটু করে ছাড়তে শুরু করেছে। কাজেই তাদের ছক মতোই আমরা সেই বদলের আশা করবো।

এই আশা আমাদের করানো হবে। তাই হচ্ছে। পুঁজিবাদ যেহেতু নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে, সেহেতু তার কর্মপ্রক্রিয়ায় মাঝে মধ্যেই হালকা ধরনের বদল প্রয়োজন হয়। পুরানো চুনকাম তুলে আধুনিক প্লাস্টিক পেইন্ট আর কী। সেই প্লাস্টিক পেইন্টের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করানোর জন্য সমাজের মধ্যেই নানা নামে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর সব রকম ব্যবস্থা পুঁজিবাদই করে রাখে।

কাজেই কখনো কখনো একেকটি শব্দ সেই সৃজনশীলতার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এখন যেমন সেই শব্দ 'বদল'। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ওপর পুরানো চুনকাম তুলে সেই প্লাস্টিক পেইন্ট লাগাতে দুনিয়াজুড়ে তার সেই 'বদল' সব সমাজের হৃদয়ে নিতে সমাজের প্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বদলের কথা বলতে থাকবে। এভাবে আমরা 'বদল' হুজুগে ভেসে যাবো। কিন্তু খাওয়া-না খাওয়া, অধিকার পাওয়া- না পাওয়ার প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে যাবে।

ঝকঝকে ছবি আর তকতকে লেখায় সবকিছু বদলে যাবে। কিন্তু আসলে ভেতরে সব পুরনোই থেকে যাবে। চুনকাম থাকলে তবু আস্তরণ পাতলা হয়। প্লাস্টিক পেইন্ট যে অনেক পুরো! সেই আস্তরণ ভেদ করা তো আরো দুর্ভেদ্যই হয়ে উঠবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।