আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুকুরের জাত ভারতের সাথে এইটাকে কি বন্ধুত্ব বলে নাকি দানপত্র নাকি নতজানু হয়ে থাকা!!! আর কত আমাদের সরকারগুল দিতেই থাকবে বিনিময়ে পাবেনা তিস্তার পানি , তিন বিঘা করিডোর সহ বহু প্রতিস্রুতি, পাবে ফেলানির লাশ আর প্রহসনের দেখানো বিচার

দুশ্চিন্তা আর টেনশন

কুকুরের জাত ভারতের সাথে এইটাকে কি বন্ধুত্ব বলে নাকি দানপত্র নাকি নতজানু হয়ে থাকা!!! আর কত আমাদের সরকারগুল দিতেই থাকবে বিনিময়ে পাবেনা তিস্তার পানি , তিন বিঘা করিডোর সহ বহু প্রতিস্রুতি, পাবে ফেলানির লাশ আর প্রহসনের দেখানো বিচার এখন মূল লেখা- (আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ) [ দয়া করে কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না , কোন ধর্ম থেকে না , একজন বাংলাদেশি হিসেবে খুব মনোযোগ দ্বয়ীয়ে পড়বেন এবং একটু চিন্তা করবেন যে আর কতদিন এভাবে চলতে দেবেন????] অবশেষে ভারতের সমালোচনা করলেন বর্তমান সরকারের কোনো মন্ত্রী। ২৮ আগস্ট ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারের উপস্থিতিতে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সমালোচনা করেন। তিস্তা চুক্তি, স্থলসীমান্ত চুক্তিসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভারতকে মনে রাখতে হবে, আমাদেরও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। বন্ধুত্ব একপক্ষীয় হয় না।

দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হয়। ’প্রকৃত অর্থে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে দুই পক্ষের এগিয়ে আসা কখনো হয়নি। বাংলাদেশ উদার হস্তে ভারতের সব দাবি ও প্রত্যাশা পূরণ করেছে। বিনিময়ে ভারত দিয়েছে শুধু প্রতিশ্রুতি। বহুল উচ্চারিত এসব প্রতিশ্রুতি কখনো পালন করেনি ভারত।

একের পর এক এমন অভিজ্ঞতার পরও বর্তমান সরকারের বোধোদয় হয়নি। বরং একতরফাভাবে ভারতের স্বার্থ নিশ্চিত করার যে নীতি সরকার গ্রহণ করেছে, তা থেকে এক পা-ও পিছিয়ে আসেনি। পরিবেশের জন্য ভয়ংকর বিপজ্জনক রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কাছে স্থাপন করার ছাড়পত্র প্রদান করা এর সর্বশেষ নজির। দুই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভদ্রতা করে বলা হয় অসম বা একপক্ষীয় সম্পর্ক। আদতে এটি বন্ধুত্ব, নাকি নতজানুমূলক সম্পর্ক; তা নিয়েও প্রবল বিতর্ক আছে দেশে।

আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, এই একতরফা বা নতজানুমূলক সম্পর্ক নিয়েই বড়াই করে একে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জন হিসেবে অভিহিত করতেও পিছপা হন না সরকারের লোকজন। ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুসারে মুজিব সরকার বেরুবাড়ী ছিটমহল ভারতের কাছে প্রত্যর্পণ করে। বিনিময়ে যে তিনবিঘা করিডর বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা ছিল, আজও তা দেওয়া হয়নি। মাত্র দুই বছর আগে বাংলাদেশকে কেবল তা ব্যবহার করতে দিতে রাজি হয় ভারত, সে-ও মালিকানা নিজের কাছে রেখে। এই অসম বিনিময়কেই ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারের সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

২০০৯ সালে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দুই দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের একটি প্রটোকল সম্পাদন করেছিল দুই দেশ। এ চুক্তি এক যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে বহুবার বর্ণনা করে তা দুই দেশের বন্ধুত্বের অমর স্মারক বানিয়ে ফেলে সরকার। কিন্তু নানা অজুহাতে এ চুক্তি ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য আজ পর্যন্ত উপস্থাপনই করা হয়নি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তিস্তা চুক্তি নিয়ে। প্রায় তিন দশক ধরে এই নদীর পানি বণ্টনের আলোচনা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক ও যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়। এসব স্মারক আর বিবৃতির নানা ব্যাখ্যা করে বলা হলো, তিস্তার পানি চুক্তি নাকি এবার হচ্ছেই হচ্ছে। তিস্তার পানি আর বেদখলীয় ছিটমহল পাওয়া যাবে—এই প্রচারণা চালিয়ে সরকার ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্পে সানন্দে রাজি হয়ে যায় এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ড প্রায় বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটিতে নির্মূল করার মতো কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যাশা মেটাতে সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করে। ভারতের টিভি চ্যানেল, পণ্য আর চাকরিজীবীদের জন্য প্রায় একতরফাভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের দুয়ার।

হাতে থাকে কেবল ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার শেষ দর-কষাকষির অস্ত্র। সীমিতভাবে সেই ট্রানজিটও ভারতকে দিয়ে দেওয়া হয় বিনা মাশুলে। এমনকি বাংলাদেশের মাটির ওপর দিয়ে ভারতের ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য তিতাস নদীর প্রবাহ বন্ধ করে আড়াআড়ি রাস্তা নির্মাণের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নজিরবিহীন এক আত্মত্যাগ করে বসে বাংলাদেশ সরকার! কখনো বিদ্যুৎ, কখনো পানি কিংবা অপদখলীয় জমি ফেরত পাওয়ার কথা বলে এভাবেই অকাতরে ভারতকে সর্বস্ব দিয়ে বসে সরকার। অথচ বিদ্যুৎ ভারতকে দেওয়ার কথা আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি মূল্যে, পানি দেওয়াটা ভারতের আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব, অপদখলীয় জমি ফেরত দেওয়ার কথা দুই দেশের মধ্যে চুক্তির শর্ত। কোনোটাই দয়াদাক্ষিণ্য নয়, অন্য রাষ্ট্রের প্রতি পালনীয় কর্তব্য বা লাভজনক বিনিময়।

তার পরও কোনোটি এখন পর্যন্ত পায়নি বাংলাদেশ, এ সরকারের মেয়াদে তা পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। অথচ আমাদের সুন্দরবনকে প্রবল ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়ে মেয়াদ শেষের আগে তড়িঘড়ি করে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে সরকার! তিন রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের আগ্রহ নানা কারণে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ প্রকল্প স্থাপনের জন্য সরকার চুক্তি করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ারের (এনটিপিসি) সঙ্গে। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে এনটিপিসির এ ধরনের বিভিন্ন প্রকল্প পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে ভারত সরকার সেগুলো বাতিল করে দিয়েছে। অথচ এ ধরনের একটি ক্ষতিকর প্রকল্প নিজ দেশের ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ সুন্দরবনের আট কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপনের পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়ে ফেলেছে বর্তমান সরকার।

সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন অনুসারে একটি বৈশ্বিক হেরিটেজ। এ ছাড়া আরও কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি (যেমন: বায়োডাইভার্সিটি কনভেনশন ও ক্লাইমেট কনভেনশন) অনুসারে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষা করার দায়দায়িত্ব বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশের একাধিক নিজস্ব আইন অনুসারেও (পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন, বন আইন, জলাধার আইন ইত্যাদি) সুন্দরবনকে যেকোনো ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করা সরকারের কর্তব্য। এসব আইন লঙ্ঘন করে নিজ দেশের সম্পদ সুন্দরবনকে প্রবল ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে স্রেফ ভারতের স্বার্থে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের পরিবেশ আইন অনুসারে একটি রেড ক্যাটাগরি বা অতি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প।

সুন্দরবনের কাছে এটি কোনো বিবেচনাতেই স্থাপন করার অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই। দেশের অন্য অঞ্চলে এটি স্থাপন করতে হলেও পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা সম্পাদনসহ অত্যন্ত কঠোর বিধিবিধান মেনে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে। অথচ এ ধরনের ছাড়পত্র ছাড়া বা স্থানীয় পর্যায়ে কোনো জনমত জরিপ ছাড়াই প্রকল্পের কাজ অগ্রসর হয়েছে, এ নিয়ে চুক্তি করা হয়েছে। বিগত ২০১০ সালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই সরকার পিডিবির মাধ্যমে এলাকার নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রধান সম্বল চাষের জমিসহ এক হাজার ৮০০ একরের বিশাল এলাকা অধিগ্রহণ করেছে। খুলনা ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিশেষজ্ঞ দল এবং বাংলাদেশের বহু পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনের অবিরাম আপত্তি এতে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

সমালোচনার মুখে রামপালের পরিবেশ সমীক্ষা নিয়ে একপর্যায়ে সরকার বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সংলাপের আয়োজন করলে সেখানে বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে সেই সমীক্ষা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরও আলোচনার কথা থাকলেও সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর রহস্যজনকভাবে হঠাৎ করে আর কোনো আলোচনা না করে এ প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। নিজ পায়ে কুড়াল মেরে এ ধরনের সর্বনাশা প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে আবারও বিদ্যুৎ পাওয়ার দোহাই দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এ সম্পর্কে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কতটা অগ্রহণযোগ্য এটি। আনু মুহাম্মদ তাঁর একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধে লিখেছেন: ‘এই চুক্তি অনুসারে ভারতীয় কোম্পানির মুনাফা হবে অনেক উঁচু হারে, সেই মুনাফার ওপর বাংলাদেশ করও নেবে না বলে জানিয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম, (প্রকল্পের) ব্যয় নির্বাহের কারণে বাংলাদেশের অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে। কিন্তু তার চেয়েও বড় সর্বনাশ হবে বাংলাদেশের, যার কোনো ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। আমাদের সুন্দরবন বাংলাদেশের এমন একটি বন, যে বনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে সফল প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম, জীববৈচিত্র্যের অসাধারণ আধার এবং বিশ্ব ঐতিহ্য। এ প্রকল্পের কারণে সেই সুন্দরবন ধ্বংস হবে। তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, নিজেদের এই অতুলনীয় ও অনবায়নযোগ্য সম্পদ ধ্বংস করে, মানুষের জীবন বিপন্ন করে, দেশি কিছু লুটেরার স্বার্থ রক্ষা আর ভারতীয় কোম্পানির মুনাফার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকার উদগ্রীব।

’ চার বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ আর পরিবেশবাদীরা রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির পর ৭ সেপ্টেম্বর তাঁরা গণজমায়েত ডেকেছেন এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বন্ধ করার কথা তাঁরা বলছেন না, দেশের স্বার্থে শুধু দাবি তুলছেন সুন্দরবন থেকে এটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে। সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরালে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে, ভারতীয় কোম্পানির মুনাফা তাতে কিছুটা কমে যাবে। আমরা দেখার অপেক্ষায় রইলাম দেশের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কামোচন আর ভারতের মুনাফা—কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সরকারের কাছে।

ভারতকে একতরফা এবং অসমভাবে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার পর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও যদি সরকার একই কাণ্ড করে, তাহলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বেসুরো এবং নিছক লোক দেখানো দেশপ্রেম হিসেবে পরিগণিত হবে। ক্ষমতায় যেকোনো মূল্যে টিকে থাকার জন্য ভারতের সমর্থন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হতে পারে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে। কিন্তু দেশের সম্পদ আর সম্ভাবনাকে বিঘ্নিত করে একতরফাভাবে ভারতের প্রভাব আর পুঁজির কাছে নতজানু হয়ে থাকলে দেশের জনগণের সমর্থন পাবে না সরকার। আর জনগণের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তা আওয়ামী লীগের মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের ভেতরে যদি থাকে, তাহলে শেষ পর্যন্ত তা তাদের জন্যই আত্মঘাতী হবে। এইবার আপনারাই ভেবে দেখবেন আর কত


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।