আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেহেতুক অহেতুক-৩

বৃথা হয়রানি

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে দীর্ঘ তিন বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট নিয়ে ‘যেহেতুক অহেতুক’ শিরোনামে এ নিবন্ধগুলো লেখি। একেবারে সাধারণ মানুষ, এসব সমস্যা ও সংকটকে কিভাবে দেখছেন, কি ভাবছেন- তা এ লেখাগুলোর উপজীব্য। কিছুটা গল্পের ছলে, কিছুটা বিদ্রুপে, কিছুটা আবেগে পরিম্লান হয়েছে সেসব প্রান্তজনের কথা। লেখাগুলোকে যতটা সম্ভব তথ্য ও যুক্তি নির্ভর করে তোলার চেষ্টা করেছি। আশা করি লেখাগুলো পড়ে পাঠক আবার ফিরে যাবেন অতীতের দিনগুলোতে।

এবং মূল্যায়ন করবেন আমাদের সাফল্য ও বিফলতা। হয়ত এর মাধ্যমে একটা আত্মোপলব্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। +++ সে এক দু:সহ দিন। আমরা জানি কাল কি হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নামের একজন বিদূষক শুরু করেছেন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার নির্মম কৌতূক।

নিচের লেখাটা সেই প্রেক্ষাপটে লেখা। রাতে তিনি, দিনে তিনি ১. রবার্ট লুই স্টিভেনসনের ‘ড. জেকিল এন্ড মি. হাইড’ বইটি পড়েছেন? হাতের কাছে পেলে পড়ে দেখতে পারেন। বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ভাষায় এ বইটি অনূদিত হয়েছে। বাংলা ভাষায়ও এ বাংলা-ও বাংলা মিলে বহুবার অনুবাদ হয়েছে।

বই আকারে বেরিয়েছে। উপন্যাসটি পড়লে মনে হবে খুব চমৎকার একটা রহস্যোপন্যাস কিংবা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ছেন। বাস্তবে তার চেয়েও শ্রেয়তর কিছু। মানুষের ভেতরে দুটো সত্ত্বা আছে, সে তো আমরা জানি: একটা মনুষ্যত্ব, আরেকটা পশুত্ব। মানুষ তার দ্বিতীয় সত্ত্বাটিকে বরাবরই অবদমন করে চলে, বা চলতে চায়।

সেই সত্ত্বাটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তার সঙ্গে পশুর তেমন কোন প্রভেদ থাকে না। ড. জেকিলের ভাষায়, ‘মানুষ অনেকগুলো স্বাধীন ব্যক্তিত্বের সমষ্টি’। এরমধ্যে কোনটিকে বিকাশ আর কোনটিকে দমন করা উচিত তা ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে। এবার আসা যাক মূল গল্পে। ‘ড. জেকিল ও মি. হাইডে’র কাহিনীটি এমন : শহরের নামকরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. জেকিলের বাসায় গভীর রাতে এক অদ্ভূতদর্শন ব্যক্তির আগমন ঘটে।

সে দেখতে যেমন কদাকার, তেমনি নির্মম। একদিন জেকিলের বাড়ির পাশের রাস্তায় একটি মেয়েকে পদদলিত করে মারতে গিয়ে ধরা পড়ে লোকটি। এভাবে অদ্ভূত লোকটির কথা ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। মি. আটারসন একজন আইনজীবি এবং জেকিলের ঘনিষ্ট বন্ধু। সে এ খবর পেয়ে জেকিলের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে।

হঠাৎ একদিন আটারসন খবর পায় জেকিল দীর্ঘক্ষণ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে আছে। সে অন্য করো সঙ্গে দেখা করছে না। বেশ কিছুক্ষণ তার কোন সাড়া শব্দ নেই। সম্ভবত তাকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। তার জায়গায় অন্য একটি লোক অবস্থান করছে।

তা শুনে আটারসন আর স্থির থাকতে পারলেন না। বন্ধুর সাহায্যে ছুটে গেলেন। দরজা ভেঙে দেখা যায় সেই অদ্ভূতদর্শন লোকটি মৃত অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। কিন্তু সেখানে জেকিল নেই। তাহলে জেকিল কই? রহস্যের মীমাংসা ঘটে ড. হেনরি জেকিলের লেখা শেষ বিবৃতি থেকে।

তিনি নিজের ওপর দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখতে পান তার মধ্যে দুটি বিপরীতধর্মী সত্ত্বা কাজ করে। তিনি একটিকে দমন করে অপরটিকে বিকাশ লাভের সুযোগ দেন। ফলে তার অন্য সত্ত্বাটি একপ্রকার গুপ্ত ও অনুদঘাটিত রয়ে যায়। তিনি সেই সূত্র ধরে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ আবিষ্কার করে ফেলেন যা কিনা একটি সত্ত্বাকে অবদমিত করে অপর সত্ত্বাটিকে সম্পূর্ণ প্রভুত্ব করতে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তিনি সে উপাদানগুলো নিজের ওপর প্রয়োগ করেন।

রাতারাতি তিনি পাল্টে গিয়ে অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতির ও বিকটদর্শনের এক মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যান। চেহারার সঙ্গে সঙ্গে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন আসে। তিনি সেই লোকটির নাম দেন এ্যাডওয়ার্ড হাইড। সেই উপাদানগুলো আবার সেবন করলে পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায়। তিনি রাতে বিশেষ রসায়ণ খেয়ে মি. হাইড হয়ে যেতেন, দিনে আবার ড. জেকিল।

এভাবেই রাতে একরূপ দিনে অন্য রূপ ধারণ করতে লাগলেন তিনি। কিন্তু একসময় হাইড থেকে জেকিল কিংবা জেকিল থেকে হাইডে রূপান্তর তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আপনা-আপনি সে পরিবর্তন হতে থাকে। তিনি ঘন ঘন ওষুধ সেবন করে ড. জেকিল হতে থকেন। একসময় ফুরিয়ে আসে একটি বিশেষ লবণ।

সেই লবণটি ঠিকঠাক জোগাড় করতে না পারায় তিনি আর জেকিলে ফিরে আসতে পারছিলেন না। ফলে আটকে পড়ে যান ল্যাবরেটরিতে। একসময় লোকচক্ষুর ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ২. মহামাণ্য রাষ্ট্রপতি কাম মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হাবভাব আমরা কাছে বড়োই রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তিনি দিনে এক রূপ, রাতে অন্য।

সারাদিন ধরে আমরা টিভিতে শুনি, তিনি গভীর মনোযোগে টানেলের মুখ দেখছেন, অচিরেই রাঙ্গা আলোতে ভেসে যাবে দেশবাসীর চান্দি, সবাই এরকমই আশা করছেন। ওমা, রাতে দেখি রাস্তায় আর্মি। সাঁজোয়া যানের আলোয় ধাঁধিয়ে ওঠে আমাদের চোখ। একি আলো দেখালেন প্রেসিডেন্ট সাহেব। সারাদিন তাকে দেখি অবাধ্য ছাত্রদের (বাকপটু উপদেষ্টাদের) ফুসলে-ফাসলে বাগে আনতে ব্যস্ত, রাতে দেখি তিনি খড়গহস্ত দুর্বৃত্ত।

কাউকে না বলে নির্বচানী তফসিল দিয়ে দেন। সারাদিন তিনি পদত্যাগী ছাত্রদের গোস্বা ভাঙাতে তৎপর, ঠিক যেন দয়ালু পিতা, রাতে হুংকার দিয়ে বলেন, ‘দূর হও’। সারাদিন তিনি চুপচাপ, আপোষকামী। রাতে মুচলেকা দিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ দেন, ‘কেউ আমার মুখের উপর রা’ করবে না’। দিনে তিনি মড়কে-ধরা-মুরগীর মতো দাঁড়িয়ে-বসে ঝিঁমান, রাতে টিভিতে হিরোর মতো উল্টো-পেতে চুল আঁচড়ে ‘বক্তিমা’ দেন।

দিনে তিনি শিক্ষক, রাতে তিনি জেনারেল। দিনে তিনি ১৪ দলের, রাতে তিনি ৪ দলের। দিনে তিনি অসহায়, রাতে স্বয়ম্ভূ। দিনে তিনি সমঝোতায়, রাতে তিনি স্বৈরাচার। দিনে ড. ইরাজ, রাতে মি. হাইড।

ঘটনা কি? ৩. এই রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইরাজউদ্দিন নন। সিঙ্গাপুরে তাঁকে রেখে বিএনপি অন্য কাউকে প্লাস্টিক সার্জারি করে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়ে দিয়েছে। গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এলডিপি’র যুগ্ম সচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ঢাকায় এক যোগদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ৪. যাকে জন্তু বলে চেনা যায় না, সেই জন্তুই ভয়ানক। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৬ ডিসেম্বর ২০০৬, দৈনিক আজাদী


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।