আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (প্রথম পর্ব)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

আমার অবস্থা হয়েছে অনেকটা অতি আলোতে চোখ জ্বলিয়ে ফেলার মতো। বড় একটা সময় গ্রাম আর মফস্বল শহরে কাটিয়েছি। শহরে চোখধাঁধানো অনেক কিছু চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ক্লাস চলছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটি বলেই হয়তো স্যারেরা আমাদের খাস পাবলিকই ভেবেছেন।

ইচ্ছা হলে ক্লাস নেন আবার ইচ্ছা হলেই ওই সময়টাতে কোন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিতে চলে যান। ক্লাস না হলে ক্যাম্পাসে দেরি করিনা বেশি। কার সঙ্গে বসে দেরি করবো। নিজে গিয়ে কারো সঙ্গে পরিচিত হতে সাহস পাই না। পাছে আবার খ্যাত উপাধিটা পেয়ে যাই।

তাই দুর থেকে দেখি, সহপাঠী ছেলেমেয়েগুলো কি সুন্দর গল্প করছে মাঠে বসে। আমি চলে আসি মেসে। ঠিক মেস বলা যায় না একে। ব্যাচেলর বিড়ম্বনা পার করে কোনমতন একটা চিলেকোঠা ভাড়া নিয়েছি। আমি এবং আরেকজন চাকুরীজীবী থাকি ছোট্ট সেই চিলেকোঠায়।

আমি যে বাসাটিতে থাকি সেটি শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত। জায়গাটা বেশ ভালো। গাছপালা প্রচুর,খুব সকালে পাখির ডাকাডাকিও শোনা যায়। কাছাকাছি পুরানো আমলের একটা পুকুরও আছে। কাব্যিক মনের মানুষদের জন্য উত্তম জায়গা।

তবে আমার জন্য এইসব প্রযোজ্য না। কাব্যিক মন বহু দুরের বিষয় আমার জন্য। আমি শহরের বাইরের এই জায়গাটিতে থাকি কারন বাসা ভাড়া বেশ কম। টিউশনি করেই চলতে হয় নিজেকে। বাসা ভাড়া যতো কম ততোই সুবিধা।

তাছাড়া এখানে বাড়িওয়ালার কোন উঠতি বয়সী মেয়ে নেই। তাই ব্যাচেলর এর বাড়ি ভাড়া বিষয়ক বিড়ম্বনাও নেই। এই বাসাটি ভাড়া নেওয়ার আগে শহরের ভিতরেই একটা বাসা ভাড়ার জন্য গিয়েছিলাম। তিনতলায় উঠে বাড়িওয়ালার সাথে বেশ কথা হলো। শেষে ব্যাচেলর জেনে আটকে দিলেন তিনি।

ঘরে উঠতি বয়সী মেয়ে আছে। আমি খুব করে ধরলাম বাসার ভাড়ার জন্য। কিছুক্ষণ পরেই সেই্ উঠতি বয়সী মেয়েটি উকি দিলো। তাকিয়ে উঠতি বয়সী মেয়েটিকে দেখে আর কিছু বললাম না বাড়িওয়ালাকে। ইচ্ছা ছিল কিছু কটু কথা শুনিয়ে বের হয়ে আসবো।

ইচ্ছাটাকে দমন করে বের হয়ে আসলাম রাস্তায়। কিছুক্ষণ হটতে গিয়ে খেয়াল হলো জুতাটার অবস্থা বেশ খারাপ। এতো হাটাহাটি করলে কি আর জুতার অবস্থা ঠিক থাকে। টিউশনি খোঁজার জন্য হাটাহাটি, টিউশনিতে যাওয়ার সময় হাটাহাটি, বাড়ি খোঁজায় হাটাহাটি এমনকি ইউনিভার্সিটি ক্লাস করতে যাওয়ার সময়ও হাটাহাটি। বেশ খুঁজে একটা টিউশনি পেয়ে গেলাম।

শহরের নামকরা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে পড়াতে হবে। মেয়ের বাপ যে বেশ বড়লোক বাড়ির ভিতরের আসবাবপত্র দেখেই বুঝতে পারি। অবশ্য আমার এতোসব বুঝে কাজ নেই। অনেক বিধিনিষেধ ঠিক করে দিয়েছে মেয়ের মা। সেইসব মেনে চলি ভয়ে ভয়ে।

পাছে কোন কারনে বাদ দিয়ে দেন। উপার্জনের একমাত্র পথটাকে সহজেই বন্ধ হয়ে যাক তা চাই না। বিকালের দিকে প্লেটে করে খাবার আসে। কখনো বিস্কুট, কখনো কেক কখনো আবার বাড়ির তৈরি সুস্বাদু খাবার। পড়ানোর সময় খেয়াল রাখি কখন খাবারটা আসবে।

খাবারের বেলায় ন্যুনতম ভদ্রতাটুকুও দেখাই না। সব খেয়ে ফেলি। ছাত্রী পাশেই বসে হোমওয়ার্ক করে আর আমাকে দেখে হাসে। আমি পাত্তা দেই না। সবকিছু পাত্তা দিলে কি চলে! এক বিকালে টিউশনি করে ফিরছিলাম।

সামনেই দেখি একজন মধ্যবয়স্ক লোক যাচ্ছেন, হাতে বাজারের ভারী ব্যাগ। লোকটা খুব বেশি বয়স্ক না, তবে ভারী বাজারের ব্যাগটা বয়ে চলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে এটা বুঝতে পারলাম। কাছে গিয়ে বললাম- আপনি কি আপনাকে হেল্প করতে পারি? ইদানিং কথার মাঝে মাঝে দুয়েকটা ইংরেজি লাগাই। এটা নিতান্তই ইচ্ছা করে। অনেকটা জলে গা ভাসানোর মতো।

অনেকটা অবাক হয়ে তাকালো লোকটা। যতোটা না অবাক, তারচেয়ে মনে হলো সন্দেহ দৃষ্টিটাই বেশি। ভাবটা এমন যে- তুমি কে হে বাপু? মতলব কি তোমার। এই চাহনীর পর কাচুমাচু হয়ে হাসি দিলাম। হয়তো হাসির কারনের লোকটা বিশ্বাস আনতো পারলো।

ব্যাগটা আমার হাতে দিলো। বয়ে বাসা পর্যন্ত গেলাম। আমি যে বাসাটিতে থাকি তা থেকে মিনিট দশকের পথ। বাসায় ব্যাগটা পৌছে দিয়েই চলে আসতে চাইলাম। কিন্তু মধ্যবয়স্ক লোকটা জোর করেই বসিয়ে দিলো।

কিছু একটা খেয়ে যেতে হবে। নাম, কি করি, কোথায় থাকি এইসব জেনে নিয়েছে এরইমধ্যে। এই বয়সীদের নিয়ে আমার একটা পর্যবেক্ষণ হলো, এরা কথা বলার মানুষ পেলে একসাথে অনেক কথা বলে। বেশ সাজানো গোছানো ড্রয়িংরুমে বসে আছি। দেয়ালে বেশ কিছু পেইন্টিং।

রুচিশীল পরিবারের পরিচয় পাওয়া গেল। বসে বসে দেখছি। এমন সময় মেয়েসহ মধ্যবয়স্ক লোকটা আসলো। চা ও হালকা খাবার সাথে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মেয়েটা বেশ স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে।

যেন আমি তাদের ফ্যামিলির কতোদিনের পরিচিত। কিছুটা বিব্রত হচ্ছিলাম ভিতরে ভিতরে। কিছু মেয়ে আছে যাদের দেখলেই আপন মনে হয়। হয়তো চেহারা, আচরণ এইক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে। এই মেয়েটা সেধরনের।

আমি আবার এইসব নিয়ে অনেক ভাবি। কাজ না থাকলে যা হয় আরকি! সেদিন বেশ কিছুটা সময় সেই পরিবারটার সাথে কাটিয়ে ফিরে আসলাম। অবশ্য আসার আগে মধ্যবয়স্ক লোকটা আবার মাঝেমধ্যেই সময় পেলে যেতে বলছে। মুখে সহজভাবে বললাম, চেষ্টা করবো। তবে আমি ভিতরে ভিতরে খুব খুশি হলাম।

কারন নিজেও চাচ্ছিলাম মেয়েটার সাথে আরো অনেকবার দেখা হোক। (চলবে........)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.