আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিডার

বৃথা হয়রানি

গত তিন বছরে কখনো এক বসায় এক ঘন্টা টিভি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ইদানীং খাবার টেবিলে বসলে ইচ্ছায় হউক আর অনিচ্ছায় টিভির পর্দায় চোখ চলে যায়। তারপর আর হাত চলে না। লোকে যেমন দম বন্ধ করে সার্কাস দেখে, তেমনি কিছুক্ষণ টিভি দেখি। কেঁচোর উল্মফন দেখি।

সাপের হিসহিস। তারপর ঘুমাবার আগে আলো নিবিয়ে কিছুক্ষণ ভাবি। আহা সোনার দেশ আমার। তুমি কোথায় যাচ্ছো। কোন চুলোয়।

মাত্র বছর দেড়েক আগেও যে লোকগুলোকে চোর-ছাট্টার অপবাদ দিয়ে জেলে পুরা হলো, পত্র-পত্রিকায় যাদের কু-শাসন আর দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ ছাপা হলো, প্রিজনভ্যানে ওঠার আগে যারা লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারেনি, কী থেকে কী হয়ে গেলো তারা আজ বুক ফুলিয়ে বলে, এই করো সেই করো। ন্যায়পরায়ণ সরকার বাহাদুর তাদের মন পেতে ব্যাকুল। সবগুলো চোর-ছ্যাচর একে একে খালাস পেয়ে যাচ্ছে। যার ছেলে পাড়ার এক নম্বর সন্ত্রাসী, যার বাড়িতে সরকারী চাল ছাড়া উনুনে ভাত চড়ে না, যে সারা দেশের মানুষ ঠকিয়ে নিজ শহরে প্রমোদ-কানন বানিয়েছে, সেই এখন দেশের হর্তা-কর্তা। এদের হাত থেকে এখনো অক্টোবরের রক্তের দাগ মুছেনি।

শুধু এদের স্মৃতি থেকে মুছে গেছে অপরাধবোধ। এদেরকে নিয়ে সরকারের খাতিরযত্নের অন্ত নেই। এদের একেকজনের সঙ্গে একটু মুলাকাতের আশায় সরকারের মাথারা দেশে-বিদেশে হন্যে হয়ে ছুটছে। টিভির ক্যামেরায় দেখি। সিইসি কতগুলো প্রাগৈতিহাসিক মানুষকে কত আদব দিয়ে কমিশনে ঢোকাচ্ছেন।

কী এদের ইতিহাস? কী প্রাপ্তি? কী যোগ্যতা? ভেবে কাজ নেই। চলেন দুটা চুটকি শুনি। আমি থাকি কাঁটাবনের পশুর বাজারের কাছেই। এক লোক এসেছেন কুকুর কিনতে। দোকানী জানালো তার কাছে তিনটি উন্নতজাতের কুকুর আছে।

প্রথমটির দাম সে হাঁকলো দশ হাজার টাকা। ভদ্রলোকের প্রশ্ন, এতো কেন? স্যার, এ কুকুরটি জার্মান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসা। খাসা মাল। আপনার বাড়িতে কোন সন্ত্রাসী-টন্ত্রাসী এলে তার গায়ের গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারে তার কাছে কোনো অস্ত্র-টস্ত্র আছে কিনা। বেশ।

তা ওটার দাম? পঁচিশ হাজার টাকা। এতো কেন? স্যার এটা তো আমেরিকা থেকে ট্রোনিং নিয়ে আসা। ও পাহারা দেয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার চালাতে পারে। কম্পিউটারে কখন কে এলো সব টুকে রাখবে। ফ্যান্টাস্টিক।

তা শেষটার দাম কত? পুরো এক লাখ। এক লাখ! এতো! জ্বি স্যার। এর বিশেষত্বটা কি শুনি। সত্যি বলতে কি স্যার, আমার দেখা মতে এর কোনো বিশেষ গুণ-টুন চোখে পড়েনি। সারাদিন শুয়ে বসে কাটায় আর চাপাবাজি করে।

তবে অন্য দুটো কেন জানি একে ‘লিডার’ বলে। পশুর বাজারে নেতার দাম যাই হউক এদেশের মানুষ কিন্তু নেতা তথা রাজনীতিবিদদের ভালো চোখে দেখে না। ওয়ান ইলিভেনের পরের কথা। দেশ জুড়ে ধর ধর চলছে। সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে এক লোককে ধরেছে সীমান্ত রক্ষীরা।

যথারীতি জেরা। কিন্তু লোকটা কিছুতেই মুখ খুলছে না। কিছুতেই তার পরিচয় জানা যাচ্ছে না। তাই সব রক্ষী মিলে তাকে জেঁকে ধরল। আপনি কি করেন? ভদ্রলোক চুপ।

আপনি কি চোরাচালানী করেন? চুপ। আপনি কি ডাকাতি করেন? চুপ। চাঁদাবাজি? চুপ। হুন্ডির ব্যবসা। চুপ।

তাহলে কি আপনি পলিটিক্স করেন.. এবার ভদ্রলোক নড়েচড়ে উঠেলন। কী ভাই, আমাকে কি এতো খারাপ মনে হয়? শাপলু

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.