আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এন্টি গল্প > প্রাতঃকালে ঈশ্বরদর্শন >

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
খুব ভোরে স্প্যানিয়েলের ঘুম ভেঙেছিল। সাধারণত ওর ঘুম ভাঙে দেরিতে। আজ কি হলো দুম করে ঘুমটা ভেঙে গেলো। অবশ্য ইদানিং ওর ঘুম কমে আসছিল। রাজ্যের সব বিদঘুঁটে চিন্তা মাথা ভার করে তুলছিল।

যেমন একটা হাতঘড়ি খুলে ও অবাক হয়ে গিয়েছিল ভেতরকার কারুকার্য দেখে! কী সব ক্ষুদে ক্ষুদে জিনিসপত্তর! আচ্ছা এতো সব ছোট ছোট মেশিন-টেশিন কোন মেশিনে বানায়? মানুষ কী ভয়ঙ্কর এগিয়ে গেছে বিজ্ঞানে! ওই থেকে অবাক হওয়া শুরু। এসে থামতে হয় কম্পিউটারে! এ তো আরো ভয়ানক ব্যাপার! তারপর চিপস। সিলিকন চিপস! বালুর কণার মতো আকার বলে ওর নাম সিলিকন চিপস! ওরই মধ্যে নাকি শক্তি! কম্পিউটার, রকেট, ইন্টারনেট, সাবমেরিন ক্যাবল কতো কী? মাথাটা গুলিয়ে ওঠে। স্পেস বিষয়ে ভাবতে গেলেই ওর সবার আগে লাইলাকের কথা মনে পড়ে। বেচারা কুকুরটা নাকি এখনো সমানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে চলেছে।

সম্ভবত কুকুরের আকার আর নেই। হয়তো বা পাথরের আকার পেয়েছে............ এই গোছের ভাবনা আজকাল ওর ঘুম ফ্যাকাসে করে তুলেছে। অগত্যা আড়মোড় ভেঙে চোখ কঁচলে উঠে পড়লো। কিছুই করার নেই। খানিকক্ষণ হাই তুলে ওঁয়াও ওঁয়াও, চপাৎ চপাৎ শব্দ করে বেরিয়ে পড়লো।

মাথায় তখন খেলা করছে.... চল বাপু আজ সকালের ঢাকা দেখে আসি। দুলকি চালে বেরিয়ে তেজগাঁও বড়ো রাস্তা ধরে হাঁটছে। গন্তব্য রমনা পার্ক। ওখানে নাকি রাজ্যের সায়েব সুবোরা প্রাতঃপ্রমণ করে। পেল্লাই কারবার নাকি।

বেশ, তাহলে আমিও চললাম বলে শুরু হলো স্প্যানিয়েলের হাঁটা। ওর এই স্প্যানিয়াল নামটা নিয়ে বেজায় খটকা। বেশ কয়েকবার মাকে জিজ্ঞাসা করেছে। মা এড়িয়ে গেছেন। খুব চাপাচাপি করলে বলতেন, ‘কেন মানুষের নাম রকেট, বুলেট হয় না? জাপান, জাপানি, চিনি হয় না?’ স্প্যানিয়েল মনে মনে বুঝেছে,- খুব হয়।

ও যেহেতু কথা বলতে পারে না তাই মায়ের সঙ্গে তর্কে যায়নি। ও আজন্ম বোবা। গোঙ্গা নয়, বোবাই। কথা বলতে না- পারা বোবা। বলার ক্ষমতা হরণ করে সৃষ্টিকর্তা অবশ্য একেবারে ইমব্যালান্স করেননি।

প্রখর করে দিয়েছেন ওর শ্রবণ, ঘ্রাণ আর দৃষ্টি শক্তি। ও ঘাসের ডগা দুমড়ানো দেখে বলে দিতে পারে কতো ওজনের মানুষের পা পড়েছিল। যেমন আজ বেরিয়ে এক জায়গায় ঘাসের ওপরকার ছাপ দেখেই বুঝে নিলো একটু আগে যে লোকটি হেঁটে বা দৌঁড়ে গেছে তার ওজন কমপক্ষে আশি কেজি। আরো এগুতে দেখলো দুটো গুবরে পোকা গবর মনে করে মনুষ্য বর্জ্য ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। গোটা পাঁচেক মাছি ভন ভন করে পিছু নিয়েছে।

পোকা দুটো একটু অসতর্ক হলেই ওরা এসে বসবে। গুবরে দুটোও নাছোড়বান্ধা দলাটাকে এক সেকেন্ডের জন্য হাতছাড়া করছে না। ওর চোখ আটকে গেলো একটা মাদি কুকুরের ওপর দেখেই বুঝলো দিন কয়েক আগে হালিখানেক বাচ্চা বিইয়েছে। ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। পুরো ডাস্টবিনটা ময়লায় ভরে উপচে পড়ছে।

কী নেই ওতে? চিরুনি থেকে ভাঙা সিডি। এমন কী কয়েকটা চুপসানো কনডমও আছে। নেই কেবল ভাত। ভাত কেন, কোনো রকম খাবারই নেই। আশ্চর্য ব্যাপার! ঢাকা শহরের শত শত কমিউনিটি সেন্টারে রোজ রাতে কমপক্ষে এক লাখ মানুষের খাবার উচ্ছিষ্ট হয়।

মানুষগুলো বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার সময় নিজেদের কয়েক লাখ বছর আগের প্রজাতি বনে যায়। কুকুরের মতো হাড় থেকে মাংস খসিয়ে খায়। হায়নার মতো বরাদ্দের বাইরে একথাল নিয়ে গিলতে না পেরে রেখে আসে। চিতার মতো ক্ষিপ্র গতিতে রোস্টগুলো প্লেটে তুলে নেয়। হাতির মতো শুঁড় দিয়ে একটানে চার গ্লাস বুরহানি সাবড়ে দেয়, সিংহের মতো মটমট করে মুরগির হাড় ভাঙে আর পাঁচশ বছর আগেকার কালো দাসদের মতো খাওযার পরিশ্রমে ঘামতে থাকে! যাকগে ওসব কথা, কিন্তু ডাস্টবিনে সেই ফেলে দেওয়া খাবার থাকবে না কেন? কুকুরটা হঠাৎ বুঝতে পারে সে যা আশা করছে তা মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়।

কুকুর-শেয়ালরা হলে হতো। ওরা স্টোর করতে জানে না। সিংহের শিকার করা হরিণের অবশিষ্ট মাংসটুকু খেয়ে হাঁড়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা মাংসগুলো পাখির জন্য রাখে। পাখিরাও আবার পিঁপড়ে বা অন্যান্য ক্ষুদেদের জন্য রেখে দেয়। সব শেষে পোকাদের জন্যও কিছু না কিছু থাকে।

কিন্তু মানুষ রাখে না। একেবারেই যখন পারে না তখন ফেলে দেয়। কিন্তু মানুষদের ভেতরকার আরো কিছু মানুষ ভোর হওয়ার আগেই সেসব চেটেপুটে সাবাড় করেছে। এই ধরনের মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে ওই নেড়িটার আর বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। ও মনে মনে ঠিক করলো এখন থেকে প্লাসটিকের ক্যান আর পলিব্যাগ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

নেড়িটার মনের কথাটা যেন বুঝতে পারলো স্প্যানিয়েল। মুচকি হেসে মনে মনে সায় দিলো। হ্যাঁ বাছা এখন থেকে তোমাকে বিকল্প ব্যবস্থা করতেই হবে, দেখছো না এমনিতেই মনুষ্য পদভারে তোমাদের বংশবৃদ্ধির আশু কর্মকাণ্ড করার জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা মিলছে না! আবার হাঁটতে শুরু করলো স্প্যানিয়েল। মগবাজার মোড় পেরুতেই হাতের ডানে যেতে হবে জানে ও। সেভাবেই এগুচ্ছে।

সামনে কয়েকটা শ্মশান পড়লো। তারপর চার চারটা গোরস্থান। গোটা তিনেক লাশ শেয়ালে তুলে এনেছে। তখনো কাফনের কাপড় জড়ানো! খুব অবাক হলো ও, দিন কয়েক আগে এক সেমিনারে শুনছিল, কারা যেন বলছে......" বন্যপ্রাণীদের বাঁচার অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আমাদের জীবন দিতে হবে"! ইদানিং এই শহরে ব্যালান্স করার জন্য কোনো কোনো প্রজাতির প্রাণী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না...!’ ব্যাটাচ্ছেলেরা হয় কানা, না হয় ভদকা ভেবে পানি মেশানো দিশি খেয়ে বেহেড! শেয়ালে লাশ তুলে আনছে; আর বলে কী না বণ্যপ্রাণী কমে যাচ্ছে? মাথা হেট করে একটু ভয়ে ভয়েই ও সামনে এগুতে থাকলো। এ মোড় ও মোড় ঘুরে অবশেষে এসে দাঁড়ালো রমনা পার্কের পাশে।

মনটা ভরে উঠলো। কিচির মিচির করে পাখিরা স্বাগত জানালো। তবে হরেক কিসিমের পাখির মধ্যে ওর সবচেয়ে পছন্দ কাক। দাঁড়কাক নয়, পাতি কাকই ওর বেশি পছন্দ। কাকের রং ওকে মোহিত করে।

ধূসর রঙটা এমনভাবে ম্যাচিং করা যা কাক ছাড়া অন্য কোনো পাখিতে নেই। ওরকমই একটা সুন্দর কাক হঠাৎ একটা কালো কুচকুচে গাড়ির ছাদে মলত্যাগ করে বসলো। সম্ভবত মানুষের মতো কাকদেরও সকালেই যাবতীয় ত্যাগ-ট্যাগের ব্যাপারটা হয়। দামড়া মতো দেখতে একটা বুনো শুয়োর গোছের মানুষ তেড়ে গেলো কাকটা মারতে। পারলো না।

ব্যাপারটায় খুব মজা পেলো ও। মানুষ নাকি পাখিকে উড়তে দেখেই এরোপ্লেন বানাবার বুদ্ধি বার করেছিল। তো বাপ প্লেন তো বানিয়েছোই, রকেটও, কিন্তু নিজে তো এখনো উড়তে শিখলে না!? সে কারণেই এ যাত্রায় কাকটার রক্ষে ! দামড়াটা এবার পরম মমতায় নিজের রুমাল দিয়ে চুনের মতো বস্তুটা মুছে দিলো। গাড়িটা ছাড়িয়ে ও দেখলো ওরকম শতশত গাড়ি। গাড়ির যেন হাট বসেছে।

আর সব গাড়ির পাশে বা ভেতর একজন করে ওই প্রথম দামড়াটার মতো একেকজন। ও এবার সাহস করে পার্কের ভেতরে ঢুকে একটা সিমেন্টের বেঞ্চে বসে পড়লো। ওর নিজের শরীরে কোনো বাড়তি মেদ নেই। তাই ঝরাবারও কোনো দায় নেই। এমনিতেও কখনো ও পার্কে আসে না।

আসতে হয় না। বলতে না-পারা সাদাসিদে জীবনে কোনো কিচুই বাড়তি নেই ওর। বসে বসে একসময় একটু ঝিমুনির মতো এসেছিল। আধো ঘুম আধো জাগরণের মতো। ওভাবেই ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো।

ফুরফুরে বাতাসে ভালোই লাগছে। হঠাৎ ওই ঘোরের মধ্যেই দেখলো ওর পাশ দিয়ে দুটো শুয়োর হেঁটে যাচ্ছে! ভুল দেখেনি তো? গায়ে চিমটি কেটে বুঝলো না ঠিকই দেখছে, স্বপ্ন টপ্ন নয়। ও দুটোকে দেখেই বুঝলো অন্তত বছর পনের ধরে প্যারেড- ট্যারেড, ব্যায়াম- ট্যায়াম করা জিনিস। তাগড়া। ওদের পেছনে তিনটে মোটাসোটা হোদল কুঁতকুঁত জলহস্তি।

দেখলেই বোঝা যায় পাঁচটা জলাশয়, ন’টা সরোবর, তিনটে নদী আর গোটা দশেক পুকুরের মালিক। তাদের পেছনে ছড়ি হাতে এক সৌমকান্ত বক। সাদা ফকফকে পোশাকে সাধুসন্তের মতো চেহারা। মাথা নোয়ানো দেখে বোঝা যায় রাজার কৃপা লাভে ব্রতী হয়ে গতকালই একজন নিরাপরাধকে ফাঁসিয়েছেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই কলকল করতে করতে দেব শিশুমার্কা চেহারা নিয়ে চারপাঁচজন।

শেয়াল। খুব ভালো করে দেখে বুঝলো। প্রথমে মানুষই মনে হচ্ছিল। বিদ্যা বেঁচে কোথায় কী কী রেখে- টেখে যাচ্ছে তার ফিরিস্তি শুনে বুঝলো শেয়াল। হঠাৎ একদল তরুণ-তরুণী একটা নরমণ্ডু নিয়ে দৌঁড়ে গেলো।

প্রথমে ভেবেছিল.. ধ্যাত, মুণ্ডু কেন? ডাবটাব হবে, অথবা ফুটবল। কিন্তু না, ছেলেমেয়েগুলো ওর যে বাপের কাছে গাড়িতে চড়তে গেলো সেটা শ'পাঁচেক মানুষের খুলি বেঁচে কেনা হয়েছে। এক ফাঁকে দুজন পুলিশ এসে চার-পাঁচজন মানুষের কাছ থেকে তোলা নিয়ে গেলো। এক পুলিশের খায়েশ হলো মাঠা খাবে। খাবি তো খা ? না,এমনিতে খাবে না, নুন দিয়ে মাখন দিয়ে দিতে হবে।

মানুষটা দিতে চাইলো না বলে মাঠার হাঁড়ি গড়িয়ে পড়লো। পুলিশ দুটো ওকে হয়তো মারতো, কিন্তু হঠাৎ দুজন গণ্ডার এসে যাওয়ায় তাদের স্যালুট দেওয়ার জন্য মাঠাওয়ালা বাঁচলো। এক ফাঁকে একজন বেশ্যা এসে পাশে বসলো। ওর একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিল। মেয়েটি ওর দিকে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো।

ও বুঝলো, মেয়েটা ওভারটাইম করেছে। গলা আর ঘাড়ের কাছে লাল হয়ে আছে। গায়ের গন্ধে টের পেলো খুব বড়ো কোথাও যায়নি। মেয়েটি মুহূর্তেই যেন ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলো। এই সময় দুজন মোটা মতন মহিলা এলেন।

প্রথমে ওদের কে দেখে ওর মনে হলো হয়তো মানুষ। পরে দেখলো না, বেগম সাহেবা। খুব সুন্দর শরীর হয় এদের। আরো সুন্দর হওয়ার জন্য বেশুমার গিলতে থাকে আর ঘষতে থাকে। একসময় এরা শীল মাছ হয়ে পড়ে।

ওরা দুজন মেয়েটিকে দেখে থুথু ফেলার ভান করে থপ থপ করে হেঁটে চলে গেলো। হঠাৎ দুজন কালো মতন ষণ্ডা এসে মেয়েটিকে টেনে তুলে একটা ঝোপের আড়ালে নিয়ে গেলো। যদিও স্প্যানিয়েল দেখছে এখানে সবাই উলঙ্গ, ঝোপঝাড় দরকার নেই, কাজটা এখানেই করতে পারে। কিন্তু ওই কালো দুজনের সে কী লজ্জা! ওরা এখন মেয়েটিকে খাবে। খাওয়ার কথা মনে পড়তেই ওর ইদানিংকার সেই রোগটা চাগাড় দিয়ে উঠলো... আবোল তাবোল ভাবনা।

সিমেন্টের বেঞ্চে এক টুকরো ইটের দাগে হিসাব কষতে শুরু করলো... এই মহানগরীতে কে কী খায়? কতো খায়, কীভাবে খায়, কেন খায়? স্প্যানিয়েলের চার্টটা এ রকম :........ এই নগরীর এক কোটি কুড়ি লাখ মানুষের মাত্র বিরাশি লাখ মানুষ খায় না। বাকি 'বিশাল সংখ্যক' মানুষ (আটত্রিশ লাখ) কেবলই খায়। পানিঘেরা ঘুমটি ঘরের তিনশ মানুষ চৌদ্দ কোটির চৌদ্দকোটি বাটি রক্ত খায়। কোটি দেড়েক মশা আর ছারপোকা মাত্র আঠার লিটার রক্ত খায়। দেড় লাখ কোটিপতি প্রতি দিন দেড় কোটি ক্যালরি খায়।

ছাপ্পান্ন কোটি মুরগিতে মাত্র ছাপ্পান্ন মাইগ্রেন ক্যালরি হয়। শ’খানেক বিচারপতি আইন গিলে খায়। হাজার কয়েক আইনজীবী দেড় কোটি আশা-ভরসা খায়। কয়েক লাখ শিক্ষাজীবী কয়েক লাখ বিদ্যাবুদ্ধির জার্নাল খায়। কুকুরেরা মাংস পায় না, কেবলই হাড় চোষে।

একটা বাঁশ বহনকারী ঠেলাগাড়ি পুরো রাস্তা খায়। একটা জেনারেল পাঁচটা দপ্তর খায়। পাঁচ পুকুর তেলাপিয়া পাঁচ টন শেওলা খায়। পাঁচ দপ্তরের আমলারা পাঁচ কোটি মানুষের মগজ শেওলা দিয়ে ঢেকে ঘিলু খায়। আস্ত একটা দামড়া গরুর মগজ মাত্র শাত'শ গ্রাম।

পুরো অর্ধশত মন্ত্রীর মগজ সাত মাইগ্রেন। একটি লিফটে এগারো জন মানুষ খায়। এগারো জন মানুষ একটা গরু খায়। একটা গরুতে দেড় কেজি ঘাস খায়। তেপ্পান্ন বিঘা জমির ঘাস কেটে একজন অধ্যাপক হন এবং দেড় কেজি মগজ দেড় লাখে বিক্রি করেন।

একটা মসুর ডালের অর্ধেক ঠিক ফোঁড়ার ওপর লাগিয়ে দিলে ফোঁড়া পাকে। চৌদ্দ কোটি মানুষের দঙ্গলকে চীন থেকে ঘুরিয়ে আনলেও বুদ্ধি পাকে না। এক শহর পাতিকাক আঠাশ টন নাড়িভুঁড়ি খায়, এক শহর কিশোর-কিশোরী সিডি খায়, নেট খায়, মোবাইল খায়, চ্যানেল খায়। কাকে কাকের মাংস খায় না। পুলিশে পুলিশের মাংস খায়।

প্রতিদিন তিনশ বায়ান্ন বান ঢেউটিন পিটিয়ে সোজা করা হয়। প্রতিদিন পঞ্চাশ লাখ মানুষকে ঠেঙ্গিয়ে সোজা করা হয। কুকুরের লেজ তেল দিয়ে সোজা করলেও বেঁকে যায়। মোটা গর্দান, চিকন পা, ঘাড়ে ভাঁজ, টাকমাথা, পুরু ঠোঁটের সোজা ঘাড় কিছুতেই বাঁকানো যায় না। রমনা পার্কে শত শত মানুষ নির্মল হয়।

হাজার হাজার স্প্যানিয়েল নির্মল জীবনকে হাতের মুঠোয় পুরে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথাটা ভন ভন করে ঘুরে ওঠে ওর। ভাবতে ভাবতে আবার সেই পাতিকাক এসে আবারো মল ত্যাগ করুক ভাবতে চায়, কিন্তু কাকটা আসে না। কাকরা বেহায়া নয় মোটেই.......... হঠাৎই তন্দ্রা ভেঙে যায় স্প্যানিয়েলের। চোখ কঁচলে ঘোর ভাঙতে চায়।

পারে না। যা কিছু একটু আগে ভাবছিল সবই বায়োস্কোপ হয়ে কিলবিল করতে থাকে। আশপাশে কোথাও সেই মেয়েটিকে দেখে না। দেখে অন্য একটি মেয়ে শিক্ষানবিশ। এতো ছোট যে দেখলে পুতুল মনে হয়।

এও একটু পরে খাবার হয়ে যাবে। হয়তো একজন সাধুসন্ত বা পীর দরবেশ কর্তৃক ফিতা কেটে শুভ উদ্বোধন করা হবে............ আবারো মাথাটা গুলিয়ে ওঠে। টলমলে পায়ে উঠে দাঁড়ায়। বাড়ি ফিরতে হবে। হাঁটা শুরু করে।

তখনো সূর্য ওঠেনি কেবল পুব আকাশ রাঙা হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই গোরস্থান, সেই শ্মশান। এবার দেখে কয়েকটা বিলবোর্ডে কয়েকটা সুন্দরী মেয়ে মানুষের কাটা মুণ্ড, কাটা হাত-পা নিয়ে পোজ দিচ্ছে। একটা শিশুদেহ দু'খণ্ড করে তার নিচে ক্যাপশন... 'ফিফটি ফিফটি চাঞ্চ'। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় ওর।

দৌড়ে পালাতে চায়। চোখ বন্ধ করে ছুটতে থাকে। পায়ের তলে নড়েচড়ে উঠছে শত শত লাশ। চিৎ পটাং হয়ে মরা, আধমরা হয়ে শুয়ে আছে অনেকটা মানুষের মতো দেখতে প্রাণীগুলো। কী নেই ওই দলে? সাহেব, মেম সাহেব, পুলিশ, মিলিটারি, আধা বা সিকি মিলিটারি, চোর, ডাকাত, শিক্ষক, সাংবাদিক, মন্ত্রী, সাংসদ, ব্যবসায়ী, ব্যারিস্টার, উকিল, নাপিত, ধর্মযাজক, বিবেক যাজক, আত্মা, শরীর, স্বাধীনতা, সৌম, ছাত্র, রিকশাচালক, কুলি, সম্পাদক, সিনেমার সঙ, নাটকের নট-নটী সব।

এতো সব লাশ মাড়িয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সুর্য উঠি উঠি করছে। ও ভাবলো আবারো শুয়ে পড়ি। কিন্তু শুতে গিয়ে এক বিপত্তি, কিছুতেই চিৎ হয়ে শুতে পারছে না। মন বলছে, শরীর বলছে চিৎ হয়ে টান টান সটান শুয়ে পড়তে, কিন্তু শোয়া হচ্ছে না। যতোবারই চেষ্টা করছে ততোবারই শরীর কুঁকড়ে বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, কারণ কুকুরেরা কখনো চিৎ হয়ে শুতে পারে না।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।