আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরিয়ান নাপিত আর আমার প্রেসিডেন্ট হওয়া

গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না

কোরিয়ায় যখন আসছিলাম, গাছে কোন পাতা ছিলোনা। এমন মরা একটা দেশে কি করতে যে আসছি এয়ারপোর্ট থেকে ক্যাম্পাস আসার পথে বাসে বসে খালি এই কথাই ভাবছি। ন্যাড়া দেশ কোনখানকার। বিকট খাবারের গন্ধ কিছুদিন পরে একটু একটু করে সহ্য হয়ে যখন একটু খুশি খুশি ভাব ততদিনে মাথার চুল কানের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়া শুরু করেছে। ওদিকে গাছেও নতুন সবুজ পাতা গজিয়েছে।

যাইহোক করিডোর দিয়ে হাটার সময় দেখি নতুন একটা ছেলে, বাংলাদেশির মতো দেখতে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি আরে না, এটাতো আমাদের এক বড়ভাই। গতকালও কি সুন্দর মাথায় ঝাকড়া চুল ছিলো, এক দিনেই চেহারা পাল্টে দিয়েছে নাপিত। কয়েকদিনের মাঝে বুঝলাম এরকম খাওয়া আমড়া মার্কা চুল ও চেহারার রহস্য। এখানে ধারেকাছে প্রায় সব নাপিত নেয় ১০ ডলার করে।

একটা মাত্র নাপিত আছে তিনি নেন ৭ ডলার। প্রায় সবাই উনার কাছেই যায়। এক বর্ণও বাংলা থুক্কু ইংরেজী বোঝেনা সে। ক্যাটালগ আছে ঠিকই, তবে আপনি তাকে যাই বোঝান না কেন সে ঐ আমড়া মার্কা কাট ই দিয়ে দিবে। যাইহোক আমি চিন্তা করে দেখলাম, ঠান্ডার দেশ, মাথায় বেশি ঘাম হয়না, চুল টা লম্বা করার অনেক দিনের শখ, কেউ বাগড়াও দিবেনা।

মাঝখান থেকে অনেকগুলো টাকাও বাঁচবে। সো শুরু করে দেই চুল লম্বা করা। এর ভিতরে খোঁজ পেলাম যে একটু দূরে একজন ইংলিশ জানা নাপিত আছে। তার খোঁজ কিভাবে পাওয়া গেলো সেটা আবার আরেক কাহিনী। এখানে প্রায় সব নাপিতই মহিলা।

এক বাংলাদেশি ছিলো সে আবার মহিলার কাছে চুল কাটাবেনা। তাই সে খুঁজে খুঁজে কেমনে যেন বাইর করছে সেই লোকের খোঁজ। দেশে নাপিতের কাছে গেলেই সব খবরের সারাংশ জানা যায়। এই নাপিত ইংরেজী জানে শুনে অনেক খুশি হলাম, এটলিস্ট কথা বলা যাবে, আমড়া মার্কা কাটিং থেকেও রেহাই মিলতে পারে। আট মাস টানা চুল রাখলাম, এ পর্যায়ে নিজের চুলের যন্ত্রণায় নিজেই অতিস্ঠ, ওদিকে ঐ নাপিতকে দেখার শখ।

গেলাম তার দোকানে। নাম গ্রীণ জোন। দোকানের প্রায় সবকিছুই সবুজ, লোকটার বয়স আনুমানিক ৪৫ হবে। সুন্দর পরিস্কার ইংরেজী বলে। আলাপে জানলাম বড় মেয়ে ইউনিতে পড়ে ছোট টা স্কুলে।

১০ বছর হলিউডে নাপিতের কাজ করেছে একটা কোরিয়ান কোম্পানীর সাথে। আমি কেমন চুল কাটাতে চাই জানতে চাইলো, দুনিয়ার সরন্জাম নিয়ে ঝাপায় পড়লো সে। ঠিক যেরকম চাইছিলাম সেরকম ভাবেই কাটলো চুল। আমাকেও প্রশ্ন করে জানলো কোথায় পড়ছি, কতদিন এসেছি, কোরিয়ান বলতে পারি কিনা। কিন্তু অন্য কোরিয়ান দের মতো আমার সাথে একটাও কোরিয়ান বললো না সে।

পুরোটাই ইংরেজিতে। একসময় সে আমাকে বলে তোমাকে তো সিনেমার হিরোর মতো লাগছে। মনে মনে বললাম শালার বুড়া কাস্টমার পটাইতে তো ভালোই শিখছো। তারপর চুল কাটা শেষে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, " ডু ইউ ওয়ান্ট টু বি প্রেসিডেন্ট অব ইওর কান্ট্রি আফটার ইউ ফিনিস ইউর স্টাডি?" এইরকম হাস্যকর প্রশ্ন শুনে কি বলবো বুঝে পেলাম না। হাসি চেপে বল্লাম অতো বড়ো দায়িত্বের কাজ তো আমি পারবোনা, তাই সাধারণ জব করবো।

মনে মনে বল্লাম, তোমাদের প্রেসিডেন্ট আর নেতাদের উপর তোমাদের যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আছে সেটা যদি আমরা রাখতে পারতাম আর তারা যদি সেরকম হতো হয়তো তোমার সংগে আমার দেখা হওয়ার ই প্রয়োজন হতোনা। চুল কাটা শেষ করে জুস খেতে দিলেন তিনি, দোকানের ভিতরেই ফ্রিজে রাখা কয়েক পদের জুস। বউ আছে শুনে অনেকগুলো চকলেট বের করে দিলেন, বললেন এগুলো আমেরিকার চকলেট, তোমার আর তোমার ওয়াইফের জন্য। তারপর বেশ কবার গিয়েছি, হয়তো খুব বেশি হলে আর দু বার দেখা হবে ভদ্রলোকের সাথে। প্রেসিডেন্ট হতে চাইনা বলে বেচারা হয়তো আমার উপরে খুব একটা খুশি হতে পারেনাই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.