আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঠার চাঁদের শুক্লপক্ষে জলকন্যা

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
আঠার চাঁদের শুক্লপক্ষ,কৃষ্ণপক্ষ পার হয়ে গেল, ভরা কোটালে বহুবার জল স্ফিত হয়ে আবার সরে গেছে সেখানে, যেখানে জলেদের বাস। আঠার চাঁদের আগের সেই কাঁকড়ারা,শামুকেরা, ডানকানা মাছেরা,শ্যাওলায় মুখ লুকোনো সবুজাভ অক্টোপাসেরা বড় হয়ে উঠেছে। জলকন্যা বলে গেছিল-আসবে শুক্লপক্ষে। আঠার চাঁদের শুক্লপক্ষ,কৃষ্ণপক্ষ ঠাঁয় বসে আছি, ওই যে যারা শিশু ছিল,তারা এখন বড় হয়ে কাছে আসে,চিনতে পারে,লেজ দুলিয়ে বলতে চায়- বাছা,কেন মিছেমিছি বসে থাকা?জলকন্যা আসে না, জলকন্যারা আসে না,জলে যার বাস সেকি আসে? কোথা থেকে আসে?জলের তো শুরু আর শেষ নেই! মন বলে,আসবে,জলকন্যা কথা দিয়েছিল, শুক্লপক্ষে আসবে, আসবেই। উনিশ চাঁদের শুক্লপক্ষে সেদিন আলোতে ভরে গেছিল প্রান্তর,চাঁদ নেমে এসেছিল হাতের নাগালে, ছুঁতে পারা দূরে সার দিয়ে চেয়েছিল ছোট মাছেরা।

যেখানে আকাশ আর সাগরের নীল এক হয়ে মেশে, সেই দিগন্ত রেখা দিয়ে জলে হেঁটে আসছে জলকন্যা। অভিভূত আমি পলক ফেলিনি,পাছে হারাই তাকে! পলকহীন চোখ বেঈমানী করে!ঘোর লাগা ঘোরে তাকে আর দেখি না!ঝাঁপ দিতে চাই অমোঘ সে টানে, ভ্রুকুটিতে শাসায় চাঁদ,জলরাশী আর মাছেরা। যখন বুকের ভেতর গুমরে ওঠা হাহাকার উঠে এসে জমে ঠোঁটে,যখন চেপে রাখা ঠোঁট দুভাগ হয়ে তৈরি হয় অপার্থীব গোঙ্গানিতে, ঠিক তখন, জল মেখে সারা গায়ে উঠে আসে সে। জলকন্যা। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকি পলকহীন।

আমি অপার্থীব আতংক আর অনিমেষ আকর্ষণে হাত বাড়াই,ছুঁয়ে দেখি,ভেজা চুলের জল গড়ায় টপ টপ,শুক্লপক্ষের আলোয় জলের সে ফোটা রং ছড়ায়,লাল,নীল,বেগুনী আর অচেনা সব রং। মুক্তোদাঁতের চাঁদঝিলিকে ভরে যায় মুখ,চোখ আর ঠোঁট। যে স্বপ্ন কেউ দেখে না,যে ছবি কেউ আঁকে না, তেমনই ছবি আঁকি,আর সর্বান্তকরণে দেখি, দেখি আমার আজন্ম স্বপ্নকে,আমার স্বপ্নের ছবি কে, আমার আঠার চাঁদের অপেক্ষায় পাওয়া জলকন্যা, অর্ধনারী মৎসশরীরে বাস্তবতায় অবাস্তব মৎসকন্যা। কোথায় রাখব কি ভাবে রাখব তারে?সে জানে, যেন আমারই মত সে ভাবে,খিল খিল হেসে বলে- কোথায় রাখবে বল? আমি ভাবি,অসহায় মানুষের মত ভাবি,প্রেমহীন মানুষের মত ভাবি,অবশেষে স্বার্থপর মানুষের মত কাছে টানি,পেতে চাই,আমার পাওয়া,আমার সবটুকু পেতে চাই। আমার যত সম্পদ,তার বিনিময়ে পেতে চাই, সারা পৃথিবীর বিনিময়ে পেতে চাই......................... রাত ভোর হয়ে এলে,চাঁদ আরো হেলে গেলে, মাছেরা সরে গেলে আমার অসম্ভব চাওয়াগুলো জলে ধুয়ে সে ঝাঁপ দেয় জলে,অজান্তে বাড়ানো হাত শূণ্য ফিরে আসে।

কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়- কোন এক শুক্লপক্ষে এসো তুমি,বসো ঠিক ওইখানটায়......... ঘোর লাগা ঘোরে আরো একবার মনে পড়ে, আরো একজন যাবার আগে বলে গেছিল- প্রেশারের বড়িটা,চায়ের চিনিটা,চোখের চশমাটা, দেখে রেখ,মনে রেখ,ভাল থেক,স্বপ্ন দেখ... কল কল জল ভেঙ্গে যেতে যেতে বলে যায়.........
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।