আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বইয়ের নেশা

ভোরের তারা হয়ে একাকি পথ খুজি

ক্লাস থ্রি থেকে বই গলধঃকরন শুরু। ছোটবেলায় কষ্ট করে অ আ ক খ শেখার পর এর যথার্থ ব্যবহারিক প্রয়োগ মনে হোল গল্পের বই পড়া। পড়ার সুখ পেয়ে বর্নমালা শিখার কষ্টকে স্বার্থক মনে হোল। প্রথম বই ছিল সত্যজিতের প্রফেসর শঙ্কু। ইউনিকর্ণের কাহিনী পড়ে ভাবলাম এটাই স্বর্গ।

কত কত দিন যে সেই কাহিনী মনের ভিতর ডালপালা মেলেছে তার হিসাব নাই। সেই সাথে বেড়েছে তিব্বত যাবার আকাক্ষা। ধারনা ছিল তিব্বত গেলেই স্বর্গ দেখতে পারব। ঠাকুরমার ঝুলি, সিনডারেলা, আরব্য রজনী এসবতো বাচ্চাকালেই শেষ করেছিলাম। আরব্য রজনী পড়তে দেখলে সবাই বলত এই এটা পড়িস না এটা বড়দের বই।

আমি বলতাম রাজা রানী মানেইতো এটা আমাদের মানে শিশুদের বই, আসলে ওটা বলে সবাইরে বাইল দিতাম। আরো দ্বিগুন উৎসাহে পড়তাম, ভাসা ভাসা কিছু প্রেমের কথা থাকতো, তা পড়ে রোমাঞ্চিত হতাম। সিরিয়াস নেশায় ধরল ক্লাস সিক্সে হুমায়ূন আহমেদের অন্য ভূবন পড়ে। মনে আছে এই বই পড়ে ছাদে গিয়েছিলাম দেখলাম বাতাসে ছোট ছোট আলোর কণা। আমিতো মহাখুশী ভাবলাম আরে আমিওতো অন্য ভূবনের বাসিন্দা ! নাকি আমি চোখে বেশী দেখছি? আসলে সেসব ছিল কল্পনাপ্রবন কিশোর মনের কল্পনা।

সেই থেকে ধরলাম হুমায়ূন মিয়ারে। যাই হোক সাথে "তিন গোয়েন্দাও" চলছিল। এরপর অমৃতের সন্ধান পেলাম জাফর ইকবাল পড়ে, আজও আমি তার গুণমুগ্ধ পাঠক। আরেকটু বড় হলে শুরু করলাম শীর্ষেন্দু, সুনীল, সমরেস। সমরেস মজুমদারের সাথে চিন্তা চেতনায় অনেক মিল খুজে পেতাম।

শীর্ষেন্দু ছিল কল্পলোকের যাদুকর। শরৎ চন্দ্রের শ্রীকান্ত আসলে আমিই ছিলাম সেটা কেউ জানে না। আমার বইয়ের নেশা আম্মাকে ভাবিয়ে তুলল। তিনি শুরু করলেন নজরদারি। পাঠ্য বইয়ের ভিতর গল্পের বই রেখে পড়াটা বেশী নিরাপদ মনে হল না।

এই কাজ করতে গিয়ে ইমিডিয়েট ভাইটা একবার ধরা খেয়েছে। কাপড়ের নীচে পেটে বই গুজে সারাক্ষন ঘুরি। যেখানেই চান্স পাই বই পড়ি। বাথরুমে, রিকশায়,জানালার সানসেটে,ছাদে পানির ট্যাঙ্কির পিছনে, স্কুলে । এমন কোন জায়গা নাই যেখানে বসে আলোকিত মানুষ হওয়ার চেষ্টা না করেছি।

আম্মা অবশ্য বুঝত এতক্ষন বাথরুমে বসে কোন কার্য সমাধা করছি। যদিও বের হবার আগে শব্দ করে বাথরুম ফ্লাস করতাম, কিছুক্ষন বেসিনের পানি ফেলতাম। বাথরুমে কোন কিছু না পেয়ে একবারতো দেহ তল্লাশি শুরু হল। কোথাও কিছু না পেয়ে যখন পেটে ধরল আমিতো তিড়িং বিড়িং করে লাফ দিয়ে দিলাম দৌড়, বারান্দা দিয়ে ফেলে দিলাম বই নীচে সানসেটে। ভাবতাম বই পড়ে আমার কত নলেজ হচ্ছে এটা সবাই কেন বুঝে না।

কিন্তু আম্মার এক কথা আগে পড়ার বই তারপর বাকি সব । আর পড়ার বই পড়তেই আমার যত কষ্ট। তবে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় নীলক্ষেতে যেয়ে যখন গলা চড়িয়ে বলতাম ভাই মাইক্রোপ্রসেসর আছে ? কিংবা স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন, অনেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে আড় চোখে দেখত। নিজেকে বড় গুনি মনে হোত তখন। যেন ২/১ বছরের মধ্যেই পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পেতে যাচ্ছি, সবাই চিনে রাখুন ভাল করে।

পরেতো চাইলেও আমার দেখা পাওয়া সহজ হবেনা। আসল কথা হোল স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের অংক করতে গেলে হাত দাত সব ভাইঙ্গা আসে। আজ সেই অভ্যাস কোথায় গেছে। এখন আর আগের মত বই পড়ি না। একটা বই শেষ করতে এখন বেশ কষ্টই হয়।

অথচ আগে আমার প্রিয় কাজ ছিল ভাত খেতে খেতে বই পড়া। তবে এখনও ইচ্ছে আছে ঘরের কোনে ছোট্ট একটা লাইব্রেরী করার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।