আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুপিদির কথা মনে পড়ে...তার চার ছেলে মেয়ে।



ক্লাস থ্রির ঘটনা। ক্লাসের শিক্ষক আমার এক সহপাঠিকে পড়া ধরলো কিন্তু সহপাঠি বন্ধুটি কিছু বলছে না। মাথা নীচু করে শুধু মিটিমিটি হাসছে। ঠিক তখনই আরেক সহপাঠি উঠে দাড়িয়ে স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো,‍"সার ওই না প্রেমে পরছে কতা কয়না খালি আসে। " আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম।

কেন ভয় পেয়েছিলাম? কারন আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের কাছে প্রেম বিষয়টি পরিস্কার ছিলনা। কিরকম অনুভুতি হলে বা কি বিশেষ আচরনকে প্রেম বলে, আমরা জানতাম না। তাছাড়া এই বিষয়টির পুরো দখলে ছিল বড়রা। স্যার অবশ্য তাকে সেদিন মারেনি, শুধু হেসেছিল।

স্যার কেনইবা হাসলো তাও বুঝতে পারিনি। আমরা সবাই প্রেমে পরা ওই সহপাঠিকে এড়িয়ে চলতাম। কেন এড়িয়ে চলতাম তাও তখন বুঝিনি। তবে পাশের বাড়ির সুপিদির সাথে ও বউচি খেলতো। একসাথে স্কুলে আসতো।

সুপি দিদি ছিল খুবই সুন্দরী। আমাদের বাড়ি আর সুপিদির বাড়ির মাঝখানে একটি সরকারী নালা। সে নালাতে প্রায়ই পানি থাকতো না তবে কাদাও কখনো শুকাতো না। সুপিদি ওপারে দাড়িয়ে আমাকে ডাকতেন, বিবালরে দেক, গাছে আমডা কেমন পাকছে? তুই পাকাডা খা আর আমারে কাচাঁডা পাইরা দে মাখাইয়া খামুনে একহাতে? আমি বলতাম না সুপিদি মায় মারবো দুফুরকালে গাছে উঠলে। সুপিদি বলতো আরে যাহ! খালারে আমি কমুনে তুই আয় আমার কাছে।

বিকেল হলে পাশের গ্রামের বড় ভাইয়েরা দলবেধেঁ সুপিদি আর আমাদের নালার পাশদিয়ে গল্প আর গান করতে করতে হেঁটে বেড়াতো। কোথায় যে তারা যেতো আর আসতো? তা জানার প্রয়োজনের কথা আমি ভাবতাম না। তবে তাদের কথা আর গানের স্বর আমাদের বাড়ির কাছে এলে বেড়ে যেতো। একদিন বাড়ির পাশের সুপাড়ি বাগানে ওসব লুঙ্গি আর ফুল প্যান্ট পড়া বড়ভাইকে প্রেম বিষয়ক কথা বলতে শুনেছিলাম তারা পরিকল্পনা করছিল কে আগে সুপিদির পাজামা টান দিবে। আমি তখনও বুঝতে শিখিনি প্রেমের সাথে পাজামার সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? তবে আমার তাদেরকে গুন্ডা মনে হয়েছিল।

এরপর থেকে কোথাও ডাকাতির খবর শুনলেই আমার ওইসব বড় ভাইদের চেহারা মনে আসতো। আমি আর সুপিদি প্রতিদিনই কোন না কোন ফল একসাথে মাখিয়ে খেতাম। আম তেতুল না হয়, টক ডুয়ে ফল মা বলতো সুপিদির চুল নাকি খুবই সুন্দর এমন দীঘল কালো চুল সারা গায়ে একজনেরও নেই। আমার কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভালো লাগতো সুপিদির সুন্দর মুখ। মায়াবী একখানা মুখ নিয়ে সুপিদি প্রায়ই আমার দিকে তাকিয়ে হাসতো।

আসলে সুপিদির মুখটাই একটা হাসি। সুপিদি যে ঘরে রাতে ঘুমায় তার পুবে ছোট্ট পুকুর আমি সারা দুপুর ঝাপিয়ে বেড়াতাম। একদিন ডুব ডুব খেলতে যেয়ে সুপিদির পাজামার ফাসঁ এটে গেলো। পরে ঐ ফাসঁ ছাড়াতে সুপিদি আমার কাছে এসেছিল। আমি দাত দিয়ে কুটকুট করে কেটে দিয়েছিলাম।

সুপিদি কি আমার সাথে প্রেম করতো? আমি আজো জানিনা। সুপিদিদের বাড়িতে একটা কামরাঙা গাছ ছিল, হায়রে কামরাঙা ধরতো! একবার কামরাঙা পেড়ে দিলাম। তারপর মাখিয়ে খেয়ে দেয়ে সুপিদির ওড়নায় মুখ মুছলে সুপিদি হাসি হাসি মুখ করে আমাকে বললো ওই বিবাল নোযাই আমরা চোকে পলক না হালাইয়া চাইয়া থাকি দেহি কে কতক্ষুন চাইয়া থাকতে পারে? আমি তাকিয়ে ছিলাম, অবশ্য আমারই আগে পলক পড়েছিল। আহা সুপিদির চোখ কত কালো আর গভীর ছিল! সুপিদির সাথে কি আমি প্রেম করতাম? জানিনা জানিনা জানিনা!!! এমনকি আমি এখনো পরিস্কার না আমার ওই সহপাঠি আসলে কেন কথা বলতো না শুধু মিটিমিটি হাসতো। খুলনার এক কাপড় ব্যবসায়ীর সাথে সুপিদির একদিন বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের দিন সুপিদিকে খুব খুব খুবই সুন্দর লাগছিল। কাটা তরমুজের মতো। আজ আমাদের বাড়িতে একটা তরমুজ এনেছে আমার মা। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.