আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পড়ালেখা করতে কেন ইচ্ছে করে না?? কেন পড়ালেখা করবো??

গত কয়েকদিন ধরে আমি বাসায়। বাসায় সকাল বিকাল আমি যা দেখি তা হলো আমার ছোট ভাই এবং চাচাতো ভাই কে পড়ার জন্য আমার আব্বু-আম্মু, কাকা-কাকি বকাবকি করে যাচ্ছে। মার খায়নাযে তাও না। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এই বকাবকি? ব্যাপারটা এমন কেন? কেন ক্লাস ৪-৫ এর ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়তে চায়না? এই ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবতেছিলাম সকাল থেকে। তখনই মাথায় আসলো উপরের প্রথম প্রশ্নটি।

আর এটি নিয়ে ভাবতে গিয়ে আসলো ২য় প্রশ্নটি। ছোট ভাই হৃদয় আর আকাশকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, তাদের পড়তে ইচ্ছে করে কিনা? তাদের জিজ্ঞেস করলাম তোমরা পড়ালেখা কেন করো এবং কেন পড়ালেখা করতে হবে? চাচাতো ভাই পুরাই চুপ হয়ে গেল। সবার কাছে পড়া নিয়ে বকা খায়। ভাবলো আমিও বকতেছি। আমার ছোট ভাই বিজ্ঞের মত বললো আম্মুর স্বপ্ন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবো।

আম্মু পড়ালেখা করতে বলে তাই পড়তেছি। কিন্তু তারাই কেউই আসলে জানেনা পড়ালেখাটা কেন গুরুত্বপূর্ণ! কেন পড়তে হবে জীবনে! আমি অবাক হয়ে গেলাম এটি বুঝতে পেরে যে আমাদের সমাজে একজন শিক্ষার্থী জানেই না যে সে কেন পড়ছে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের মনে গেঁথে দেয়া হয় যে, পড়ালেখা করতে হবে। আমরাও পারি না পারি পড়ালেখা করতে থাকি। আরও একটা মজার ব্যাপার হলযে আমরা জানিইনা যে পড়ালেখাটা কি আসলে।

তাই আমরা তোতাপাখির মত পড়ি। আমরা পাঠ্যবই পড়ি। পাঠ্যবই ছাড়া জানার কিছু থাকতে পারে এটা আমরা যেমন ভাবিনা একই ভাবে আমাদের গুরুজনরাও ভাবেনা বিশ্বাস করে না। পড়ালেখা আসলে কি? { What is Study? } ডিকশনারি.কম এর মতে: (The devotion of time and attention to acquiring knowledge on an academic subject, esp. by means of books.) এটিও একটা অদ্ভুত সংজ্ঞা বলা যেতে পারে। আমরা একাডেমিক বিষয় ছাড়া কিছু পড়লে সেটি আর পড়ালেখা বলে গণ্য হবে না এই সংজ্ঞানুসারে।

আমাদের দেশেতো সংজ্ঞাটা আরও ভয়ঙ্কর মনে হয় আমার কাছে। আমাদের দেশে পড়ালেখার হাল দেখলে মনে হয় যে, পড়ালেখা মানে হল চোখ বন্ধ করে পাঠ্যবই পড়া। জ্ঞান আহরণ হোক না হোক, পরীক্ষায় ভালো পাশ করাটাই পড়ালেখা। কেউ একটু খারাপ রেজাল্ট করার মানে হল পড়ালেখা করে না। আর পাঠ্যবই ছাড়া অন্যবই পড়াতো মহা অন্যায় বলা যেতে পারে।

যাই হোক এটি নিয়ে পরে লিখছি। পড়ালেখা করতে কেন ইচ্ছে করে না?? কেন পড়ালেখা করবো?? –প্রশ্ন করেছিলাম আমাদের গ্যালাক্টিকা পেইজে। কিছু মন্তব্য শেয়ার করি আপনাদের কাছে। সরাসরি কপি করে তাদের লিখাটাই তুলে দিচ্ছি। Piash Rahman: ashole, cls 1 thekei amader upor force kora hoy....amader bola hoy porte hobe....mukhosto korte hobe.....amra ki chai, ki valo lage ta keu notice kore na....ei karonei pora lekhar proti amader birokti eshe jay.....and i hate study..... Angel Opshori: poralekha na korle ammu dourani dibe. tai poralekha kori. apnr ammu o ki amon? Ifaz Hossain Chamak: পড়ালেখা জিনিসটা বাধ্যতামূলক, তাই আমারও পড়ালেখা করতে ইচ্ছে করে না ।

একটা জিনিস ভেবে দেখেনঃ এতো পড়ালেখা করে কি হবে । কোনমতে বেঁচে থেকে মারা গেলেই তো ঝামেলা শেষ। বুঝলাম এবং মানলাম যে পড়ালেখাটা ভালো চাকরি কিংবা স্বচ্ছ জীবনযাপনের জন্য দরকার । কিংবা ধনসম্পদ বৃদ্ধির জন্য । কিন্তু যার ধনসম্পদ বেশি তার পরকালে হিসেবও বেশি ।

আমি এইরকম জীবনের পক্ষপাতী নই । আমি খুব সাধারণ একটা ছাত্র । বুয়েট মেডিকেলের স্টুডেন্টদের দেখবেন ওরা একটু অহংকারী আর অন্যদের ভালো চোখে দেখে না । কিন্তু আমি সবার সাথেই মিশি । আমি মনে করি ভালো মানুষ হতে হলে আগে ব্যবহারটা ভালো রাখা জরুরি ।

তবে একটা ব্যাপার কি জানেন ? যেই জিনিসটা আমাকে বাধ্য করে দেয়া হয় তাতে আমার মনোযোগ কম থাকে। যেমনঃ আমার পড়ালেখা । আবার যে জিনিসটা সবাই পারে না এবং নিজে আবিস্কার করতে হয় তাতে আমি আনন্দ একটু বেশিই পাই। যেমনঃ আমার সাহিত্যচর্চা । Hasin Mahjabeen: কেউ বলে পড়াশুনা করতে হয় জ্ঞান বাড়ানোর অন্য, কারোর কাছে পড়াশুনা মানেই শুধু ডিগ্রি অর্জন করা, কেউ ভাল চাকরী-বাকরীর জন্য পড়াশুনা করে, আবার কারোর কাছে পড়াশুনা না থাকলে সমাজে সম্মান থাকবে না সেই ভয়েই পড়াশুনা করে।

আসল কথা হল এই দুনিয়ায় পড়াশুনা করতে কেউই ভালবাসে না! তাদের মন্তব্যগুলো থেকে যা বোঝার তা সবাই বুঝবেন আশা করি। সত্যি বলতে আমাদের দেশে পড়ালেখাটা প্রধানত ভালো চাকুরীর জন্য। অস্বীকার করবো না আমি চাকুরীর জন্য পড়ালেখার প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু একটা প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুলের বাচ্চার কাছে এই চাকুরীর ব্যাপারটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। একটি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাকে আমরা বোঝাই যে, না পড়লে জীবনে কিচ্ছু হবেনা, তুমি রাস্তায় পড়ে থাকবে, তোমার জীবন পুরোটাই বৃথা।

তাকে পিটানো হয়, জোর করে স্কুলে পাঠানো হয়, কয়েকটা মাস্টার দিয়ে দেয়া হয় পড়ার জন্য। রুটিন করে রাত দিন পড়ার একটা ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। গাড়ির চাকার মত ঘুরতে থাকে সে। তার কাছে পড়ালেখার কোন সংজ্ঞা থাকেনা। জানেনা সে সে কি চায়।

কেউ যদি বুঝতেও পারে কিছু, তার সেই ভাবনা অতি দ্রুত পিষ্ট হয়ে যায় বইয়ের চাপে, পড়ার চাপে। আমাদের চারপাশে পড়ালেখা তথা জানার ব্যাপারটা খুবই জটিল। আমরা পাঠ্যবই ছাড়া কিছু জানতে চাই না। আমাদের মাঝে এখন কোন প্রশ্ন আসে না। আমি আমার আশেপাশের অনেক জনকে নানান প্রশ্ন করলাম।

জিজ্ঞেস করলাম আশে পাশে এত অদ্ভুত জিনিসগুলো যে দেখো মনে প্রশ্ন জাগে না? জানতে ইচ্ছে করে না এইসব নিয়ে? সারাদিন টিভি দেখো। প্রশ্ন আসেনা মনে টিভি জিনিসটা কি? মোবাইলে কথা বল, এটি নিয়ে প্রশ্ন জাগেনা। খাতায় কলম দিয়ে লিখো, প্রশ্ন জাগেনা এটি দিয়ে আসলে কালি পড়ে কিভাবে? খেলনা গাড়ি খেল, সেই গাড়ি কিভাবে চলে তা ভাবো না? ক্যালকুলেটর দিয়ে এত কাজ করো, প্রশ্ন জাগেনা এটা আসলে ঠিক মত যোগ বিয়োগ কিভাবে করে? না, তাদের মনে কোন প্রশ্ন নেই। তারা এসব জানেনা। ভাবেনা।

ভাবার সময়টুকু নেই। এসব নিয়ে ভাবতে হবে এটা তারা কোন বইতে পড়ে নি। তাদের মাথায় ঢোকানো হয়েছে শুধু পাঠ্যবই পড়তে হবে। কেন পড়বা? চাকুরীর জন্য, আম্মু-আব্বুর বকা থেকে বাঁচার জন্য। ক্লাসে ফার্স্ট হবার জন্য।

এই লিখাটি কেন লিখছি আমি? কি চাই আসলে আমি? আমি লিখাটি লিখছি আমার কষ্ট থেকে। যেখানে যাই, বড়রা ছোটদের রাতদিন পড়ার জন্য বকতে দেখি। অনেকে আমাকে বলেছে তাঁর ছেলে-মেয়ে পড়েনা। একটু পড়তে বলতে। বলে বেশি করে যাতে পড়ে তা বোঝাতে।

আমাদের ছেলে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ে এটিও অনেকে বলেছে। আমি তখন তাদের বলতে গিয়ে বলতে পারিনা যে, আমিতো পড়ালেখা করিনা। আমিতো নানান বিষয়ে পরীক্ষা দিই না। তাদের বলতে পারিনা যে আমি রাতদিন গল্পের বই এবং পাঠ্যবই ছাড়া অন্য বই পড়ি। তারা বিশ্বাস করবেনা।

আমি চাই আপনারা যারা এই লিখাটি পড়বেন তারা অন্তত ছোটদের মাথা দেখে পড়ালেখার প্রচলিত সংজ্ঞাটি পরিবর্তন করবেন। তাদের বোঝাবেন পড়ালেখা চাকুরী, কিংবা সামাজিক স্ট্যাটাসের জন্য নয়। পড়ালেখা করতে হবে শুধুই নিজের আনন্দের জন্য। যা ভালো লাগে তাই পড়তে হবে। যে কাজ ভালো লাগে সেই কাজটি করতে হবে।

তাদের বোঝাতে হবে স্কুল, কলেজে পড়াটা প্রয়োজনীয় তবে এটি অভিশাপ না। স্কুল কলেজে পড়বা তোমাকে যাচাই করার জন্য। তুমি যে পড়ালেখা করো, নানান কিছু জানো তা তুমি পরীক্ষা করার জন্য শেয়ার করার জন্য স্কুল, কলেজে যেতে হবে। তুমি কিছু যদি শিখতে চাও তোমার শিক্ষক লাগকে, স্কুল কলেজে তুমি সেটা পাবে। স্কুলে তারা জোর করে যাতে না যায়।

যাবে আনন্দ নিয়ে। আর এই আনন্দ তারা যাতে পায় সেটা আমাদের দেখতে হবে। শিক্ষকদের দেখতে হবে। তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। তাদের ক্লাসে নিত্যনতুন জ্ঞান দিতে হবে, কোন বোঝা না।

সেই ছেলে ইংরেজি প্যারাগ্রাফ লিখতে পারেনা, তাকে মার দিয়ে ইংরেজি প্যারাগ্রাফ মুখস্থ করানোর চেয়ে তাকে এটার মাঝে একটি মজা দিতে হবে। “আমার মা”-প্যারাগ্রাফ আসলে তারা আসলে মন থেকে নিজের মাকে নিয়ে লিখে না। তারা মুখস্থ করে আসা কিছু কথা লিখে মাত্র। তাকে নিজের মা সম্পর্কে নিজ থেকে লিখতে দিন। মন থেকে লিখুক।

খারাপ লিখার কথা না। আমাদের পড়তে ইচ্ছে করেনা কেননা এটি একটি বোঝার মত। পড়ার আগ্রহের জন্য অন্যতম প্রয়োজন আলোচনার মাধ্যমে পড়ার। কিন্তু আমাদের আলোচনা করে পড়তে দেয়া হয়না। চাপিয়ে দেয়া হয়।

কোন প্রশ্ন করতে দেয়া হয় না। কোন প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়া হয়: এটা পরে পড়াবো। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করবে না। উপরের শ্রেণীতে জানতে পারবে। এইসব উত্তর শুধুই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ-হানি করে আর কিছুনা।

ভার্সিটিতেও একই অবস্থা। প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাওয়া যায় না। একটা বাচ্চা যদি প্রশ্ন করে গাড়ি কিভাবে চলে, মোবাইল কিভাবে কাজ করে তাকে আপনার পুরো প্রযুক্তি বোঝানোর প্রয়োজন নেই। হালকা ৪-৫ লাইন জানলেই সে খুশি হয়। কিন্তু না বলে দিলেন উঁচু ক্লাসে জানবেন, আর এই উত্তর দিয়েই মহান হয়ে যাই আমরা।

ছোটদের পড়ালেখা করার কারণ বোঝান। তাদের সুযোগ দিন। একটা ছেলে কেন পড়েনা তা বুঝে তাকে পরামর্শ দিন। আর যার যে বিষয় পড়ার ইচ্ছে সেই বিষয় তাকে পড়তে দিন। সে ভালো করবেই।

:-) অনেক আগের লিখা এটি। হঠাৎ চোখে পড়ায় শেয়ার করলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.