আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিকোটিন বিলাসী

লক্ষ্যহীন ব্যাক্তির অন্তহীন পথে ক্লান্তহীন হেঁটে চলা নিচের ঠোঁটটাতে ফিল্টার রেখে উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে খুব জোরে টান দেয় রবিন আর ভাবতে থাকে ধোঁয়ার সাথে যদি কষ্টরা উড়ে যেতো ! স্টার্নামের শেষ অংশটাতে গিয়ে বিঁধে । মাথার জ্যামটা খোলে নতুন এক জ্যাম লাগলো । এ জ্যামটা বাধার জন্যই অপেক্ষা করছিলো রবিন । না সিগারেটটা খুব ধরেছে । মাঝে মাঝে খুব কষ্ট পেতে ইচ্ছে হয় ।

ক্ষুদ্র এ জীবনে যা চেয়েছে তাই পেড়েছে । একটা জীবন চেয়েছিল সে , খুব ভবঘুরে ধরণের ; যেমনটা চেয়েছিল ঠিক তেমনটাই পেয়েছে । 'আগ-পিছ' কেউ নেই । যাও একজন ছিল সেও একেবারে চলে গিয়েছে । মেয়েটার নাম অদ্রিতা ।

বন্ধুদের কাছে 'ফাজিল' , 'কুত্তা' উপাধি পাওয়া মেয়েটা রবিনের সামনে আসলেই যেন পৃথিবীর সব লজ্জাবতী তার মাঝে ভর করে । দেহের সব কপাট ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে । আঁটসাঁট হয়ে বসে থাকতো । এমনও অনেক ঘড়ির কাঁটা বদলে গেছে রবিন-অদ্রিতা বাকহীন । তাদের কখনও কিছু বলার ইচ্ছা থাকতো না ।

শুধু দেখার ইচ্ছা ; দুজন দুজনকে জানার ইচ্ছা । বরাবরের মতই রবিন অদক্ষ আবিষ্কারকের পরিচয় দিয়ে আসতে থাকে । "মেয়েটার মধ্যে কি যেন আছে !! ঠিক ঠাহর করা যায় না !! ওর ঠোঁট বলে ও চঞ্চল , ওর চোখ বলে ও ভালবাসাতে পেতে চায় আর ওর চুল বলে হাওয়া ভেসে যেতে" প্রথমবার দেখা করার পর ডায়রিতে লিখে রেখেছিলো রবিন । সুস্মিতা । রবিনদের এলাকায় নতুন ভাড়াটিয়া ।

রাস্তার পাশের ঘরটা ওর ; রাত জেগে পড়ে ; জানালার পাশেই ওর টেবিল । ল্যাম্প পোষ্টের আলোতে স্পষ্ট দেখা যায় রবিনকে । প্রতিদিন বড় ঘড়িটায় বারোটা আওয়াজ করে আর রবিন এখানে বসে । আরও কত মানুষকেই তো সিগারেট খেতে দেখে । কিন্তু রবিনের মতো করে কাউকে খেতে দেখে নি ।

হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠা সিগারেটের আগুন অনেক পুড়িয়ে দেয় সিগারেটকে তবে মনকে কতটা পুড়ায় কেউ জানে না । সুষ্মিতার খুব জানতে ইচ্ছে হয় "সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কি কষ্টরাও ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় ?" সিগারেট শেষ হতেই উঠে যায় রবিন । ইচ্ছে না করলে বাসায় আর ফেরা হবে না । শহরের বক্ররেখা আজ চষে বেড়াবে । এ স্থিতিস্থাপক অন্ধকার তার খুব আপন ।

আর ছিনতাইকারীর কোন ভয় নেই । ধরলেও বড়জোর বাকি থাকা ষোলটি সিগারেট ছিনতাই হতে পারে । হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে অদ্রিতাদের বাসার সামনে । বেশ পুরনো মডেলের বাড়ি । অদ্রিতার দাদা বানিয়েছিল এ বাড়ি ।

লোকমুখে শোনা যায় এই এলাকায় এটিই প্রথম পাকা বাড়ি । বিশাল বারান্দায় মাঝ বরাবর আলো জ্বলছে । সাদা আলোতে স্বচ্ছভাবেই দেখা যাচ্ছে অদ্রিতার ক্রিকেট ব্যাট , জুতোর সেলফে নতুন জোড় জুতো ; না , সবই ঠিকঠাক আছে । বিষে ভরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নুয়ে সিগারেট ধরায় । না , এখন আর দেখার ভয় নেই , অদ্রিতা এখন অন্ধ ; পরিচিত পায়ের আওয়াজ পেয়ে সুর ধ্বনিতে দৌড়ে আসার ভয় নেই , অদ্রিতা এখন বধির ; সিগারেটের গন্ধ পাওয়ারও ভয় নেই , অদ্রিতার ঘ্রাণ শক্তি এখন শূন্য ।

নিচের ঠোঁটটাতে ফিল্টার রেখে উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে খুব জোরে টান দেয় রবিন আর ভাবতে থাকে ধোঁয়ার সাথে যদি কষ্টরা উড়ে যেতো ! না , নিকোটিন কখনও আপন হতে পারে না , ক্ষত করে শূন্যস্থান পূরণ । লাইট নিভানোর সময় বাইরে চোখ পড়ে সুস্মিতার । পরিচিত একটা ছায়া এই মাত্র পার করলো জানালা , এইতো সে নাম নাজানা নিকোটিন বিলাসী সে ছেলেটা । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।