আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিঃসঙ্গ নির্জনতায় নিশ্চুপ ভালোবাসা



সেদিন কথাটা বলেছিলি তুই, খুব অবাক হয়েই বলেছিলি কথাটা, ‘জানিস, আমাদের বারান্দার পিছনে যে কদম গাছটা আছে সেটাতে এবারই প্রথম ২ টা কদম ফুল ফুটেছে। ইস, কি যে সুন্দর ! আমি ফুল দুটার একটা ছবিও তুলে রেখেছি মোবাইলে। ’ কথাটা শুনেই তোর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি। কি এক অপূর্ব মুগ্ধতায় ভেসে গিয়েছিলি তুই সেদিন, তোর চোখের সেই মুগ্ধতাটুকু ছুঁয়ে গিয়েছিল আমাকেও। আমি তাকিয়ে ছিলাম তোর চোখের দিকে।

জানিস কেন ? শুধু তোর মুগ্ধতাটুকু পাবার জন্য। তুই এতো সহজেই এতো বেশি মুগ্ধ হতে পারিস সেটা জেনেছি সেদিনই প্রথম। আচ্ছা, তুই কি জানিস, আমি আজও আকুল হয়ে মুগ্ধতা খুঁজে ফিরি ? এই তো সেদিন তোর জন্মদিনে দুটো জিনিস উপহার দিয়েছিলাম তোকে। সেটা দেখে তোর সে কি রাগ ! তুই বলেছিলি আমি যেন কোনো উপহার নিয়ে না আসি। কিন্তু, কি করবো বল ? আমি কিভাবে যেন জেনে গিয়েছিলাম যে তুই খরগোশ খুব পছন্দ করিস।

খরগোশ পোষার ইচ্ছাও নাকি তোর বহুদিনের। তুই খরগোশ খুব পছন্দ করিস এ কারণে নয়, বরং তোকে একটু জ্বালানোর জন্যই উপহার দিয়েছিলাম একজোড়া খরগোশ। তোকে দেয়া খরগোশগুলোর একটিও এখন বেঁচে নেই। সেদিন তোর মন খুব খারাপ ছিল বলে তুই বসেছিলি চুপচাপ। এই খরগোশ কী খায়, পানি খায় কি না, খরগোশকে গোসল করিয়ে দিতে হবে কি না, এতো সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য সারাক্ষণ ফোন করতি তুই।

তোকে আর কী জ্বালাবো, তোর প্রশ্নের যন্ত্রণায় নিজেই জ্বলছিলাম তখন ! এই তোর আর আমাকে ফোন করতে ইচ্ছে করে না ? আমি কী খাই, পানি খাই কি না, আমাকে গোসল করিয়ে দিতে হবে কি না, এই প্রশ্নগুলোর জন্যও কি একবার ফোন করতে পারিস না তুই আমাকে ? অবান্তর প্রশ্ন তো এগুলোও। করলি না হয় একবার ফোন, করলি না হয় একটা অবান্তর প্রশ্ন, জ্বালালি না হয় মাত্র একবার ! জানিস, আমি আজও তোর জ্বালাতন খুঁজে ফিরি, আকুল হয়ে খুঁজে ফিরি ? হুট করে বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন। তুই বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলি চুপচাপ, বৃষ্টি পড়া দেখছিলি এক মনে। আমি নেমে গেলাম বাড়ির আঙিনায়, মেলে দিলাম দুই হাত, তারপর ভিজলাম বৃষ্টিতে একা একা । আমি তোকে দেখছি, আর তুই দেখছিস বৃষ্টি, অপূর্ব বৃষ্টি ! তোর হাত দুটো ধরতে ইচ্ছে করছিল সেদিন, নামিয়ে আনতে ইচ্ছে করছিল অঝর ধারার সেই বৃষ্টিতে।

বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্বতা আমার অনেক দিনের, জানিস তুই ? জানিস, বৃষ্টি আমি প্রচন্ড ভালোবাসি ? বৃষ্টি নামলেই তাই নেমে যাই রাস্তায় কিংবা উঠে পড়ি আমাদের বাসার ছাদটাতে। বৃষ্টি পড়বে আর আমি বৃষ্টিতে ভিজবো না, তা কি হয় ? হোক না সেটা সন্ধ্যা কিংবা শেষ রাতের বৃষ্টি, আমি যে ভিজবোই ! তোকে সেদিন বলেছিলাম কথাটা, ‘একদিন বৃষ্টি নামবে। লাল, নীল, সবুজ অথবা বেগুনী রংয়ের বৃষ্টি। অঝর ধারায় নামবে সে বৃষ্টি। তুই সেদিন বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবি না।

চলে যাবি তোদের ছাদটাতে, ভিজবি অপূর্ব রঙিন বৃষ্টিতে। সে বৃষ্টি আমাদেরকে ছুঁয়ে যাবে, তোকে ছুঁয়ে !’ জানিস, তোকে আমি ভালোবাসি ? কথাটা তোকে কতোবার বলার চেষ্টা করেছি, পারিনি। বোঝাতে চেয়েছি, পারিনি। প্রতিদিন শুধু তোর নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার জন্য অধীর হয়ে বসে থাকি আমি চুপচাপ, জানিস তুই ? বৃষ্টি নামলেই কান্না পায় এখন আমার, আমি বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদি। কেন জানিস ? বৃষ্টির জল আর কান্না জল আলাদা করা যায় না বলে।

অন্ধকারে একা বসে থেকে কাঁদি, কেন জানিস তুই ? অন্ধকারে অশ্র“জল দেখা যায় না বলে। তোকে শেষ একটা কথা বলি, আমার শেষ নিঃশ্বাসের শব্দে কেঁপে ওঠা সবুজ ঘাসটাও কি বলবে জানিস ? ভালোবাসি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।