আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাশ্বতকে নিয়ে একটা পুরনো লেখা, এবং...



(এই লখোটি আমাদরে একজন শিক্ষার্থীর। লেখাটির শক্তি আমাকে বারবার মুগ্ধ করে...) মৃত্যুঞ্জয়ী লড়াইয়ে জয় হোক শাশ্বত'র মনিরা শরমনি প্রীতু [ভারতরে ভেলোর ক্রশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলজে চেকে-আপ শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদকিতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাশ্বত সত্যকে গত ৮ই জুলাই তার বাবা দেশে ফিরিয়ে আনেন। এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস আক্রান্ত শাশ্বতর চিকিৎসার জন্য অন্তত ৩৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। দর্শনা সীমান্তে বিভাগীয় ৩ জন শিক্ষার্থী গিয়েছিল ফেরার পথটুকুতে সঙ্গ-সহযোগিতা দিতে। প্রিতু তার অভজ্ঞিতা বর্ণনা করছেন এই লেখায়।

] হঠাৎ করেই একখণ্ড মেঘ এসে র্সূযটাকে আড়াল করে ফেললো। এই একটু আগেও বেশ রোদ ছিল। আমরা কজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘন মেঘে আকাশটা ছেয়ে গেল। আর দুটো দেশ একই সাথে প্লাবিত হতে থাকলো প্রবল র্বষণে। বৃষ্টি আর বিরাম নেই।

শুনেছি প্রতিবারই নাকি শাশ্বতর যাত্রাপথ এভাবেই বৃষ্টিস্নাত হয়ে যায়। হতে পারে ছেলেটির প্রবল যন্ত্রণায় কুঁকড়ে থাকা শরীর প্রকৃতিকে নাড়া দিয়ে যায় অথবা তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই দেখে অভিভুত পৃথিবী আনন্দে অশ্রু বর্ষণ করে। যাই হোক না কেন, শাশ্বত আজ ভারতে চেক-আপ শেষে দেশে ফিরবে। প্রকৃতির দুর্যোগ বা আশির্বাদ যাই বলি না কেন সবকিছুকে উপেক্ষা করে শুধু ভালোবাসায় বাঁচবে বলে শাশ্বত আজ আমাদের কাছে ফিরবে। আমরা তাই সীমান্তের এদিকে দাঁড়েয়ে আছি ৫ ঘণ্টা ধরে।

আশে পাশে কুলিদের কাছে শুনছি, স্ট্রেচারে করে একটি ছেলেকে ক্রমেই ভারত সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আনা হচ্ছে তার নিজের দেশ বাংলাদেশের দিকে। বৃষ্টিতে আমরা ভিজে যাচ্ছি। রাষ্ট্রের সীমান্তপ্রহরী আমাদের নির্দিষ্ট সীমার বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে, সেই কাঁটাতার, সৈনিক, বন্দুক আমাদের সীমানার মাঝে আটকে রাখার চষ্টো চালিয়ে যায়, অথচ আমাদের হৃদয় আর দৃষ্টি কিন্তু ততক্ষণে সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে আমাদের শাশ্বত'র কাছে। প্রকৃতির সাথে আমার চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। শাশ্বতর শরীর রেপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো - বৃষ্টরি ছাঁট থেকে ছেলের শরীর বাঁচাতে হয়তোবা এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় বাবা অরুণ সত্যের জানা ছিল না।

সামর্থ্যের মধ্যে র্সবোচ্চ যত্নে বাবা তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। কুলির পাশে পাশে দৌড়ে দৌড়ে আসছেন বাবা, গাল র্ভতি কাঁচাপাকা খোঁচা দাড়ি। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়া লোকটা একহাতে ছেলের বসার আসন আর অন্যহাতে বার বার ছেলের গায়ে জড়ানো পলিথিন ঠিক করে দিচ্ছেন, আর হাঁপাচ্ছেন- তারও যে র্হাটের অসুখটা দিনদিন বেড়েই চলছে। যেকোনো সময় র্হাট এটাক হতে পারে! মাঝবয়েসী দরিদ্র, রুগ্ন, অসুস্থ অথচ প্রচণ্ড সৎ লোকটির মুখের মধ্যে তখন অসহায়ত্ব খেলা করে চলেছে। হঠাৎ করেই তিনি আমাদের দেখতে পেলেন, আর প্রবল ব্যাক্তত্বি-সম্পন্ন লোকটি শিশুর মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন, একহাতে চোখ মুছছেন আর দৌড়ে আমাদের দিকে আসছেন, এবার আমরাও তার কাছে দৌড়ে গেলাম।

বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা বাবা আমার হাত চেপে ধরে বললেন, 'মা আপনারা এসছেনে!' ঠিক সেই মুর্হূতে কেন জানি পৃথিবীর সকল গ্লানি এসে আমায় ছেয়ে ফেলল। মনে হলো এই পুরো বিষয়টার জন্য আমি, আমরাই দায়ী। ডাক্তার শাশ্বতকে যাতায়াতরে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু যানবাহন ব্যবহার করতে বলছেনে- বিমান, এম্বুলন্সে। অথচ অর্থাভাবে আমরা তার জন্য কোনো এম্বুলেন্সের যোগান দিতে পারিনি। শাশ্বতকে তাই বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে উপরে চাটাই দিয়ে ঘেরা ভ্যান ভাড়া করতে হয় আমাদের।

ছোট্ট জায়গা, শাশ্বতর স্থান সঙ্কুলান হয় না, হাঁটু ভাজ করে কুঁকড়ে পড়ে থাকে। আর পাশে তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ক্র্যাচ দু'টো। দরিদ্র ভ্যানওয়ালা বোঝে শাশ্বত'র কষ্ট। তাই পরম যত্নে ওকে টেনে নিয়ে চলে স্টেশনের দিকে। স্টেশনে এসেও ভ্যান ড্রাইভার ভাড়া নিয়ে চলে যায় না।

বরং শাশ্বতকে ট্রেনে তুলে দিয়ে তবেই তার স্বস্তি। শাশ্বতদের বাসায় যে মাসীমা কাজ করেন, তিনি বছরখানকে ধরে জমানো সবটুকু টাকা শাশ্বতর বাবার হাতে তুলে দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। শাশ্বতদের বাড়িতে মা আর বোনকে দেখে মুগ্ধ হলাম আমরা। মা শিখা সত্যর অভিব্যক্তিতে আবেগের প্রকাশ কম। তবে স্পষ্ট বোঝা যায়, অনেক কিছু মেনে নিয়ে তাকে স্থিরতার আবরণে নিজেকে আটকে রাখতে হয়।

তার জানা আছে তিনি ভেঙে পড়লেই স্বামীকেও হারাতে হতে পারে। স্থির শান্ত মা তাই ছেলের অপেক্ষায় বড় রাস্তার পাশে হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাদের সাথে দেখা হতেই আন্তরিক স্বরে কথা বললনে, এরপর ধীরে সন্তানের পিঠে হাত রাখলেন,আবেগের প্রকাশ ঠিক এতটুকুই। কিন্তু মায়ের চোখের দিকে তাকাতেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল, চোখের মাঝে কেমন জানি আর্তি, অসহায়ত্ব। দরিদ্রতার সাথে লড়াই আর অসুস্থ ছেলের জন্য ক্রমশ কষ্ট পেতে পেতে ভেতরে ভেতরে তিনি ততটাই অস্থির বাহিরে যতটা স্থির।

রাতে খাওয়া শেষে ধীরে ধীরে শাশ্বতর বাবা আমাদের জানালেন শাশ্বতর পুরা ইতিহাস। জানলাম পাঁচ বছর ভুল চিকিৎসা অতঃপর একজন সৎলোকের সারাজীবনের আয় ১৫-২০ লক্ষ টাকা নিজ সন্তানকে বাঁচাতে ব্যয় করে নিঃস্ব হবার সেই করুন কাহিনী। রিটার্য়াড করা ট্রেড ইউনয়িন নেতা আমাদের জানান- যেকোনো দিনের নোটিশে এই কোর্য়াটার ছাড়তে হতে পারে তাদের। নিজের কোন বাড়ি নেই, সম্পত্তি নেই। এই কোর্য়াটার ছাড়লে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন অরুণ সত্য জানেন না।

বাবা মায়ের আশা যদি এবার শাশ্বত বেঁচে যায়, তবেই তাদরে কষ্ট র্স্বাথক হবে। শাশ্বত সেদিন বলেছিল প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ও দুবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল, কিন্তু পারেনি। বেঁচে থাকার আনন্দ সে উপভোগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস নামের কুৎসিৎ অসুখটা ওর প্রতি মুহুর্তকে নরক আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। অথচ শাশ্বত সত্য নামের সাদামাটা ছেলেটা শুধুই বাঁচতে চায়। অনেক তো হলো ভারী পাথরের মত জীবনকে নিয় টেনে বেড়ানো।

কিন্তু আর কতোটা পথ পেরোবে ছেলেটা এই বিভৎস যন্ত্রণা কাঁধে করে । শাশ্বতর জনক-জননী আর কতোদিন নীরবে সহ্য করবেন তাদরই চোখের সামনে সন্তানের ধুকতে ধুকতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ি যাওয়া। বাবা-মা যে আজ কর্পদকহীন। তাই ক্ষরণ তাদের চলতে থাকে ভেতরে ভেতর। চিকিৎসা না হলে সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তাদের আর কিছুই করার থাকে না।

আর কিছুই করতে না পারার যন্ত্রণা যে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা অরুণ ও শিখা সত্য ভালোভাবেই উপলব্ধি করেন। তবুও শুধু ঐ পরিবারের ভালোবাসাতেই শাশ্বত সুর্দীঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। আর আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ছে সে। শাশ্বত-চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ৩৫ লক্ষ টাকা তুলতে সবাই আমরা পথে নেমেছি। সমাজর্কম বিভাগের আরিফ হুইল চেয়ার ঠেলে এসেছিল শাশ্বতকে ভালোবাসা জানাতে।

গণযোগাযোগের শাহজালাল ক্র্যাচ নিয়েই আমাদের সাথে কাজ করে চলেছে। টেন্টে-এ বসছে, টাকা তুলছে শাশ্বতর জন্য। ঐ যে ভ্যানওয়ালা, শাশ্বতর বাসার মাসীমা, বিভাগের শিক্ষার্থী-র্কমচারী; আমরা যারা ওকে ভালোবসেছি- তারা কি পারব না ওকে বাঁচাতে! অবশ্যই পারব। শুধু প্রয়োজন আপনাদের আর্থিক সাহায্য আর আর্শীবাদ। আপনাদের ভালোবাসায় আবার বেঁচে উঠুক আমাদের শাশ্বত।

আমরা চাই, এরপর চিকিৎসা শেষে শাশ্বত দেশে ফিরুক এক মিষ্টি রোদেলা সকালে। স্ট্রেচারে নয়, বাবা-মা'র হাত ধরে সগবর্গ পা ফেলুক নিজ দেশ বাংলাদশে। শাশ্বতর জন্য সহায়তা করতে চাইলে যোগাযোগ করুন, আ-আল মামুন, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদকিতা বভিাগ, রাজশাহী বশ্বিবদ্যিালয়। সলে-ফোন: ০১৭১২০৬১৮০৪। সরাসরওি সহায়তা করতে পারনে: শাশ্বত চকিৎিসা সহায়তা, সঞ্চয়ী হসিাব নম্বর: ৩৪২৬০৪৯৮ অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী বশ্বিবদ্যিালয় শাখা, রাজশাহী এবং সঞ্চয়ী হসিাব নম্বর: ১৩৫-১০১-৩৩৭০৫।

135-101-33705| Swift Code: DBBL-BD-DH-100, Dutch-Bangla Bank Ltd., রাজশাহী শাখা। পুনশ্চ: শাশ্বতকে নিয়ে আমাদের ভালোভাসায় সারা দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছে...দেশের বাইরে থেকেও আমরা সাড়া পাচ্ছি। আমাদের সহায়তা-তহবিল ১৪ লক্ষ টাকা অতিক্রম করছে এখন- প্রতিদিনই ফান্ডে টাকা জমা পড়ছে। আমরা পরিল্পনা করছি আগামী সম্পাহ নাগাদ শাশ্বতকে ভেলোর পাঠিয়ে দেব, চিকিৎসা শুরু হবে। বাকি টাকাও যথাসময়ে উঠে যাবে।

সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।