আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাশ্বতকে বাঁচাতে হবে, কে জানে কাল আপনিও তো হতে পারেন শাশ্বত সত্য!

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

শাশ্বত ক্লাসে ঢোকার সময় করিডোর লাগোয়া শিরিশগাছের দিকে ফিরে তাকায়। ঝিরিঝিরি শব্দের উৎস খুঁজে পাতা ও বাতাসের যুগপৎ সম্মিলন দেখে মুচকি হেসে ক্রাচটাকে দুই হাতে জাপটে ধরে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে আজকের ক্লাসটা নতুন একজন শিক্ষকের। রিউমেটয়েড আর্থারাইটিস এর মারাত্মক একটা ধরণ মেরুদন্ড সহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়ের জোড়াগুলো ধ্বংস করতে থাকায় ভারতীয় শল্যচিকিৎসকরা ক্রাচ ব্যবহার করতে শক্তভাবে নিষেধ করেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

শাশ্বতকে ক্লাসে আসতেই হবে। গিটে গিটে কটমট করে হাড়ের জ্বলুনী উঠলেও। উত্তেজনা চোখেমুখে, স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কাগজ কোন দেশের মানুষ আবিষ্কার করেছিল? স্যারের প্রশ্নে শাশ্বত মুচকি হাসে। ক্লাস শুদ্ধ নীরব।

হাত তুলে আস্তে করে বলে, চীন। স্যারের পরের প্রশ্ন। আধুনিক মুদ্রণ শিল্পের জনক কাকে বলা হয়? জোহানেস গুটেনবার্গ। এপ্রশ্নও জানা শাশ্বতের। প্রশ্নোত্তর এখন শাশ্বত ও শিক্ষকের মধ্যে।

অনেক প্রশ্ন হলো। শাশ্বতের উত্তরও তৈরী ছিলো। শিক্ষক মনে হলো মজা পেয়ে গেছেন। প্রথম বর্ষের কোন ছেলেমেয়ের কাছ থেকে দীর্ঘদিন যে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, এই ক্রাচনির্ভর ছেলেটি কত অনায়েসে সেগুলোর উত্তর দিলো। শিক্ষক আরোও জানলেন রবীণ্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সব উপন্যাস শাশ্বতর পঠিত।

কিন্তু রিউমেটয়েড আর্থারাইটিস এর সিরোনেগেটিভ হওয়ায় শাশ্বতর হাতপা ক্রমশ নিচের চিত্রের মত হতে থাকবে। একসময় মাত্র ২৮ কেজিতে নেমে গেছিল শাশ্বতর শরীরের ওজন। সেই ২০০১ সালে চরম অসুস্থ্যতার মধ্যেও এসএসসিতে ৩.৫ স্কোর করা শাশ্বত এর পরে ২০০৭ পর্যন্ত আর মেরুদন্ড খাড়া করে দাড়াতে পারেনি। শাশ্বতর বাবা ইন্ডিয়ায় চৌদ্দপনের বার ট্রিটমেন্টের জন্য নিয়ে তের/চোদ্দলাখ টাকা খরচ করে কোনমতে ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ঠুকরে ঠুকরে শাশ্বত ভার্সিটিতে যেতে থাকে।

কিন্তু হাড়ের জয়েন্টগুলোর অবস্থা এখন ক্রমশ নিচের চিত্রের মত হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বলেছে বাম পায়ের হিপ জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে এবং শরীরের প্রত্যেকটি জয়েন্ট নষ্ট হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। যদি-না তাকে ৪টি বিশেষ ইনজেকশন অতিসত্ত্বর দেয়া হয় তাহলে তার দেহের অন্যান্য হাড়ের জয়েন্টও নষ্ট হয়ে যাবে। চারটে ইনজেকশনের দাম ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু শাশ্বতর বাবা তার সব সঞ্চয়, সম্পত্তি এর মধ্যে নিঃস্ব করে ফেলেছে ছেলের পিছনে।

শাশ্বত জীবনের সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে জাগরণের সত্য দেখিয়েছে। ভয়ংকর প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে দাড়িয়েও সে শিক্ষকদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে। এমন মেধাবী সংগ্রামী শাশ্বতর জীবনকে বাঁচাতে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত নিজের জীবনের সত্য অনুধাবনের জন্যই! কে জানে কাল হয়তো আমাদের ভাগ্যবরণ করে নিতে হতে পারে শাশ্বত সত্যের জীবন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।