আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোকসভায় আস্থাভোটে বিজয়ী মনমোহন : সরকার বাঁচলেও বাঁচেনি মান



১ম কিস্তি: তুমুল বিতর্ক, হট্টগোল ও কোটি কোটি রুপি লেনদেনের অভিযোগের মধ্য দিয়ে ভারত- মার্কিন পরমাণু সহায়তা চুক্তিকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন এক নাটকীয়তায় গত ২২ জুলাই ভারতের লোকসভার ইতিহাসে অনুষ্ঠিত হল ১১তম আস্থাভোট। ভোটে ক্ষমতাসীনদের বিজয় হলেও ভারতীয় রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল বিতর্কের। আস্থাভোটে বিজয়ী হয়ে কংগ্রেস সরকার আপাতত টিকে গেলেও সৃষ্ট বিতর্কে তাদের ভিত কেঁপে উঠেছে একথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। ২৭৫ ভোট পেয়ে ১৯ ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় ২৫৬ জন।

১০জন ভোট দানে বিরত ছিলেন। উল্লেখ্য ভারতের লোকসভায় মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫। কেন এই আস্থাভোট? ভারতীয় লোকসভার এই আস্থাভোটের মূলে রয়েছে ঐতিহাসিক ভারত-মার্কিন পরমাণু সহায়তা চুক্তি। এ চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সনদে স্বাক্ষর না করেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানী খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা পাবে ভারত। বিনিময়ে ভারতের সব পরমাণু চুল্লি আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ)-এর পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের বাম শরিক ও বিজেপির যত অভিযোগ এখানেই। আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার পরিদর্শকদের জন্য সব স্থাপনা উন্মুক্ত করার বিপক্ষে তারা। সেক্ষেত্রে বাম দলগুলোর যুক্তি, এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের পরমাণু ক্ষেত্র ও পররাষ্ট্র নীতির ওপর সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরালো হবে। আর বিজেপির বক্তব্য ভারত কিছুতেই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা সংকুচিত করে নিজের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে না। যাই হোক, এ চুক্তিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের প্রধান শরীক কংগ্রেসের সাথে বামপন্থী দলগুলোর বিরোধের এক পর্যায়ে সরকারের উপর থেকে বামপন্থী দলগুলো সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর লোকসভায় এ আস্থা ভোট অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

আগাম নির্বাচন এড়াতে অন্য দলগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং- কে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। বিজেপি ও বামপন্থীদের গোপন অভিপ্রায় : প্রকাশ্যে দেশের স্বার্থের কথা বললেও মনমোহন সরকারের বিরোধিতার পেছনে বিরোধীদল বিজেপি এবং সরকারের এত দিনের মিত্র বামপন্থী দলগুলোর এক্ষেত্রে ভিন্ন কোন অভিপ্রায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, যে পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে বিজেপি ইউপিএ সরকারের বিরোধিতা করছে, সে চুক্তির প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। তারপরও বিজেপি সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। বিজেপি নেতাদের ধারণা ছিল, আস্থাভোটে হারলে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনিবার্য।

আর এই নির্বাচনের সুফল তারা ঘরে তুলতে পারবে। কারণ, ভারতে মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে সাড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাশছোঁয়া দামে ভীষণ ক্ষুব্ধ সাধারণ জনতা। জনগণের এই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। অন্যদিকে বামপন্থীরা তিনটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন।

এই তিনটি রাজ্যেই তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় বামফ্রন্টের নেতারা ভেবেছিলেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের সাথে থাকলে আসন্ন নির্বাচনের সময় সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ তাদেরও বিপক্ষে যাবে। অনেকটা এ বিবেচনা থেকেই তারা লোকসভা নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও ২০০৪ সালের নির্বাচনে ঝুলন্ত লোকসভায় ইউপিএ জোটকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে বাম নেতাদের ভূমিকা ছিল বেশ জোরালো। তাই আস্থাভোটের দিন বিতর্কে অংশ নিয়ে মনমোহন সিং প্রবীণ দুই সিপিআই (এম) নেতা জ্যোতি বসু ও হরকিষেণ সিং সুরজিতকে ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করেননি।

(২য় কিস্তি আগামী কাল)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.