আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ব আদিবাসী দিবস ২০০৮: বাঙ্গালী হিসেবে আমার অপরাধবোধ

munirshamim@gmail.com

১. বছর পাঁচেক আগের কথা। পটুয়াখালী শহরের বৌদ্ধ মন্দিরের ভেতরে একটি ফোকাস গ্রুপের আয়োজন করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী সবাই রাখাইন কমিউনিটির সদস্য। সংখ্যায় ১৫-২০ হবে। আলোচনার উদ্দেশ্য পটুয়াখালীর বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায় রাখাইনদের সমস্যা-সম্ভানাগুলো তাদের মুখ থেকে শোনা।

তাদের মতো করে বুঝার চেষ্টা করা। আলোচনার ধারাবাহিকতায় রাখাইনদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির প্রসঙ্গ উঠলো। আলোচনার সঞ্চলক হিসেবে আমি জানতে চেয়েছিলাম, উপস্থিত রাখাইনদের মধ্যে কারা কারা রাখাইন ভাষা জানেন এবং কতখানি জানেন? অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ৩৫-৫০ মধ্যে ছিলেন, তারা সবাই রাখাইন ভাষা পড়তে, লিখতে ও বলতে পারেন। যাদের বয়স ৩০ এর নিচে তারা বলতে ও পড়তে পারেন, কিন্তু লিখতে পারেন না। আর যাদের বয়স ২০ এর নিচে ছিল, অর্থাৎ যারা নুতন প্রজন্ম তাদের একটি অংশ শুধ বলতে পারেন, কিন্তু পড়তে পারেন না এবং লিখতেও পারেন না।

আরেকটি অংশ বলতেও পারেন না। এতে স্পষ্ট হয়েছিল যে, আস্তে আস্তে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে রাখাইনরা তাদের নিজস্ব ভাষাটি হারাতে বসেছে........................... ২. ওপরের যে চিত্রটি বর্ণনা করা হয়েছে তা শুধু রাখাইনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, অন্য আদীবাসীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনেক আদিবাসী তাদের নিজস্ব ভাষা হারাতে বসেছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে যে জনপদে ভাষার জন্য লড়াই হয়েছে, ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, যে ভাষার লড়াইটাকে স্বীকৃতি দিয়ে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সে জনপদে যখন অন্য সংখ্যালগিষ্ট ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা গোষ্ঠী তাদের নিজেদের ভাষা হারাতে বসে তখন ভাষা আন্দোলনের মূল চেতানটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

জাতিগত ও শ্রেণীগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে, রক্তাক্ত পথ মাড়ি দিয়ে যে রাষ্ট্রের জন্ম সে রাষ্ট্রের সীমানায় আবার জাতিগত বঞ্চনার প্রক্রিয়াটি তৈরি হলো শাসক ও শোষক শ্রেণীর নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে। এ স্বার্থটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য শাসক শ্রেণী আবারও ধর্ম ও জাতিগত দ্বন্ধটাকেই উসকে দিল। ফলে সমতলের মানুষও শ্রেণীগত দ্বন্ধটাকে বুঝতে চাইলো না। পরিবর্তে ধর্ম ও জাতিগত পার্থক্যটাই প্রধান হিসেবে বিচেচনা করলো। আর এ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বহুমাত্রিক বঞ্চনা বহুগুনে বেড়ে গেল।

যার একটি বহি প্রকাশ ঘটেছে তাদের নিজস্ব ভাষা হরিয়ে যাওযার মাধ্যমে। অথচ এ ভাষা শুধু তাদের নয়, পৃথিবীর সম্পদ। পৃথিবীর বৈচিত্রময় সৌন্দয্য রক্ষা করার স্বার্থেই আজ আদিবাসীদের ভাষা ধরে রাখা সবার দায়িত্ব। ৩. বিশ্বা আদিবাসী দিবেসে আজ আদিবাসী বন্ধুদের নানা প্রতিক্রিয়া-প্রত্যাশা দেখলাম। সেখানে প্রত্যেকেই তাদের অধিকারের স্বীকৃতির ওপর জোর দিয়েছেন।

একই সাথে বাঙ্গালী জাতির জাত্যাভিমানের বিষয়ে অভিযোগ-অনুযোগ করেছেন। যে জাত্যাভিমান চেতনা থেকে আদিবাসীদের ওপর বঞ্চনার বহুমাত্রিক প্রক্রিয়াগুলো চলছে। আজ সকল আদিবাসীদের সাথে সূর মিলিয়ে একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমিও তাদের দাবীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করছি। বিগত দিনের বঞ্চনার জন্য একজন বাঙ্গালী হিসেবে এ অপরাধবোধ আমার নিজেরও। আদিবাসীদের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দূর হোক আমার, আমাদের, রাষ্ট্রের অপরাধবোধ....প্রশ্নটা হচ্ছে আমাদের কয়জনের সে অপরাধবোধ আছে!!!! সকল আদিবাসী বন্ধুদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা.....


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.