আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস (পর্ব - ৩)

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

১ম পর্বের লিংক ২য় পর্বের লিংক ১৯৪৮ সালের আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের অন্যান্য কলেজের ছাত্ররা সরকারী কাজে ব্যবহার এবং মুদ্রা,স্টাম্প এবং নৌবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ একটি হরতালের ডাক দেয়। এই আন্দোলন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার দাবীকে জোরাল করে তোলে। শামসুল হক, শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আব্দুল ওয়াহেদ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা এই আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতার হন। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা মিছিল চলাকালে পুলিশের হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নিতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী হন।

আবদুল মতিন, আবদুল মালেক উকিল প্রমুখ ছাত্রনেতারাও এই মিছিলে অংশ নেন। ১১ই মার্চ দুপুরে পুলিশের বর্বরতা এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের বাসভবনের দিকে অগ্রসরমান একদল ছাত্রকে ঢাকা হাইকোর্টের সন্মূখে থামিয়ে দেয়া হয়। তখন র‌্যালিটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে সচিবালয় ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। পুলিশ এই র‌্যালির ওপর হামলা চালিয়ে এ.কে.ফজলুল হকসহ অন্যান্য নেতা এবং ছাত্রদেরকে আহত করে।

১২ই মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত টানা হরতাল পালিত হয়। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ছাত্রনেতাদের সাথে একটি চুক্তি করে, চুক্তির কিছু শর্তে সম্মতি জ্ঞাপন করে, কিন্তু মূল যে দাবী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা, সেই দাবী উপেক্ষিত থেকে যায়। ব্যাপক জনরোষের মুখে ১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকায় আসেন। ২১শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানের একটি সমাবেশে তিনি বলেন যে, ভাষা ইস্যুটি পাকিস্তানী মুসলমানদেরকে বিভক্ত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন্নাহ্ আরো ঘোষণা করেন যে, উর্দু, এবং একমাত্র উর্দুই মুসলিম জাতির চেতনাকে ধারণ করে এবং উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আসীন থাকবে, তার এই মতের বিরুদ্ধাচরণকারীদের তিনি পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে অভিহিত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ২৪শে মার্চ তিনি একই ধরণের বক্তব্য পেশ করেন। দুটি সমাবেশেই জিন্নাহ্ দর্শকদের একটি বড় অংশ দ্বারা বক্তৃতায় বাধাগ্রস্থ হন। পরে তিনি রাষ্ট্রভাষা কমিটির একটি সভা আহবান করেন এবং ছাত্রনেতাদের সাথে খাজা নাজিমুদ্দীনের স্বাক্ষরকৃত চুক্তিটি বাতিল ঘোষণা করেন। ২৮শে মার্চ ঢাকা ত্যাগের পূর্বে তার উর্দুনীতি নিয়ে রেডিওতে তিনি একটি ভাষণ দেন। তার কিছু সময় পরেই ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করার জন্য পূর্ব বাংলা সরকার কর্তৃক মওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠিত হয়।

কমিটি ১৯৫০ সালের ৬ই ডিসেম্বর তাদের রিপোর্ট শেষ করে, কিন্তু ১৯৫৮ সালের আগে এটি প্রকাশিত হয়নি। সরকার এই বলে সমাধান দিল যে বাংলা ভাষা আরবী স্ক্রিপ্ট এ লেখা হোক, যা ভাষাতাত্ত্বিক দ্বন্দের সম্ভাব্য সমাধান। চলবে.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.