আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস (পর্ব - ২)

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

১ম পর্বের লিংক আন্দোলনের প্রাথমিক স্তর ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তানের ৪৪ মিলিয়ন বাংলা ভাষাভাষি মুসলমানরা নবগঠিত পাকিস্তানের ৬৯ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। যদিও পাকিস্তানের সরকার, সিভিল সার্ভিস এবং সেনাবাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের দাপট ছিল। ১৯৪৭ সালে করাচীর জাতীয় শিক্ষা সন্মেলনে উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, গণমাধ্যম এবং স্কুলগুলোতে যার একচ্ছত্র ব্যবহার হবে। এই ঘোষণার সাথে সাথেই বিরোধীরা এবং আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদ করে উঠে।

ঢাকার ছাত্ররা বাঙ্গালী ইসলামিক সাংস্কৃতিক সংস্থা তমদ্দুন মজলিস এর সেক্রেটারী আবুল কাশেম এর নেতৃত্বে জমায়েত হয়। এই গণজমায়েত বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করার এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করার দাবী জানায়। যদিও পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে অনুমোদিত ভাষার তালিকা থেকে এবং একই সাথে মুদ্রা এবং স্টাম্প এর ভাষা থেকেও বাদ দেয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এতে করে জনঅসন্তোষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং বাঙ্গালী ছাত্রদের একটি বড় অংশ ১৯৪৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের দাবীতে একত্রিত হয়।

এই উদ্দ্যেশ্যকে বেগবান করার জন্য বাঙ্গালী ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল এবং র‌্যালির আয়োজন করে। শীর্ষস্থানীয় বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবিরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার বিরোধিতা করেন। ভাষা সৈনিক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ তুলে ধরেন যে, উর্দু পাকিস্তানের কোন এলাকারই স্থানীয় ভাষা নয়, তিনি আরো বলেন, “ যদি আমাদেরকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বেছে নিতে হয়, আমরা উর্দুকে বিবেচনা করতে পারি। ” লেখক আবুল মনসুর আহমদ বলেন, যদি উর্দু রাষ্ট্রভাষা হয়, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ অশিক্ষিত হয়ে পড়বে এবং সরকারী চাকরীতে অযোগ্য হয়ে পড়বে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার পক্ষে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

তমদ্দুন মজলিস এর অধ্যাপক নুরুল হক ভুঁইয়া এই পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। পরে সংসদ সদস্য শামসুল হক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য একটি নতুন কমিটি গঠন করেন। জাতীয় পরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের সংবিধান অধিবেশনে একটি আইন প্রস্তাব করেন যেটি সদস্যদেরকে বাংলায় কথা বলতে এবং সরকারী কাজে ব্যবহার করার অনুমোদন দেয়। দত্ত’র প্রস্তাবটি পূর্ব বাংলার বিভিন্ন আইন প্রণেতা, যেমনঃ প্রেম হরি বর্মণ, ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত এবং শ্রী চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সমগ্র অঞ্চলের জনগণ সমর্থন করে। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং মুসলিম লীগ এই প্রস্তাবকে পাকিস্তান বিভক্তির চেষ্টা বলে বিরোধিতা করে এবং এর ফলে প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়।

চলবে......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.