আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাপুরুষ আর কাপুরুষের দেশ

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

(উৎসর্গ : প্রিয় ব্লগার মাহবুব মোর্শেদ। তার সাম্প্রতিক পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় এই পোস্ট) আমার এক সিনিয়র বন্ধু আছেন। ছাত্রজীবনের বন্ধু। বায়িং হাউজে চাকুরি করেন। ছাত্রজীবনে তাকে কখনও পাঠ্যবইও পড়তে দেখিনি।

কোচিং সেন্টারের ফটোকপি নোট আর দৈনিক পত্রিকা ছাড়া কোন কিছু পড়েননি। এই ভদ্রলোক মাঝে মাঝে সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা করেন। তার আলোচনার মধ্যে মূল আফসোস একটাই - আমাদের জাতীয় কবি নজরুল কেন নোবেল পাইল না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ষড়যন্ত্র কইরা নজরুলের নোবেল নিজে নিয়া নিছে। নইলে নোবেল তো রইব্যা না নজরুলই পাইত।

তার এই আফসোস শুনতে শুনতে একদিন ক্ষেপে গেলাম। তাকে বোঝালাম, রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬১ সালে। তিনি নোবেল পান ১৯১৩ সালে যখন তার বয়স ৫২ বছর। অন্যদিকে নজরুল জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালে। ১৯১৩ সালে যখন রবীন্দ্রনাথ রোবেল পান তখন নজরুলের বয়স ১৪ বছর।

তখন নজরুল ময়মনসিংহে দরিরামপুর হাইস্কুলে ক্লাশ সেভেন পড়াশোনা করছিলেন। কবিই হননি। তাই নজরুলের নোবেল কেড়ে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার কোন সুযোগই নাই। আমার এই যুক্তি তার ভালো লাগল না। তিনি আমাকে বললেন তুমি ভেতরের খবর জান না।

এবার তাকে আসল আক্রমণটা করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি নজরুলের কোন কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ পড়েছেন? তিনি শুধু বল বীর বলতে পারলেন। আর রবীন্দ্রনাথের কোন লেখা পড়েছেন কি না জিজ্ঞেস করতেই তিনি ক্ষেপে উঠলেন। তার বক্তব্য, ওর লেখা আমি জীবনে পড়ব না। ও একটা ধাপ্পাবাজ।

সারাজীবন কোন কাম করতে হয় নাই তো, তাই বইস্যা বইস্যা কবিতা লেখছে। তার সাথে আর তর্কে গেলাম না। কেননা এই লোক নজরুলের লেখাও পড়েনি, রবীন্দ্রনাথের লেখা তো পড়ার প্রশ্নই আসে না। অথচ এক ধরনের গোঁড়া ধারণা নিয়ে বসে আছে। নজরুলকে সে ভালোবাসে, মহাপুরুষ মনে করে, কিন্তু তার কোন লেখাই সে পড়েনি।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকের আচরণ এরকম। কোন ব্যক্তিকে অনর্থক মহাপুরুষ বানাচ্ছে। কোন ব্যক্তিকে অনর্থক কাপুরুষ বানাচ্ছে। যার যা প্রাপ্য তা দিচ্ছে না। জাতি হিসেবে আমরা এই রকম চরমপন্থী হয়েছি শুধুমাত্র যথাযথ জ্ঞানচর্চার অভাবে।

এই অবস্থা থেকে তখনই আমরা বেরিয়ে আসতে পারব যখন আমরা আমাদের মহাপুরুষ ও কাপুরুষদের সম্পর্কে আরও জানব। তখনই প্রত্যেককে তার প্রাপ্য সম্মান আমরা দিতে পারব। মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দেয়াটা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। নইলে আমরা যে প্রাপ্য সম্মান পাব না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.