আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৬ টি জেলার মানুষকে ‘দৌলতদিয়া পতিতালয়’ থেকে রক্ষা করবে কে!?

আমি কি রকম ভাবে বেঁচে আছি, তুইএসে দেখে যা নিখিলেষ.... একটু কুয়াশা থাকলেই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া/আরিচার ফেরী বন্ধ! বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ১৬টি জেলা ঢাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র হাইওয়ে ঢাকা-পাটুরিয়া/আরিচা। এই অঞ্চলসহ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন যেহেতু পদ্মা সেতু নেই সেহেতু ফেরী বা লঞ্চ ছাড়া পদ্মা নদী পারাপারের কোন ব্যাবস্থানেই। পুরো শিতকালটা সন্ধ্যার পর প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশা আচ্ছন্ন থাকে এবং এই কুয়াশা নদীর মধ্যে আরও গভীর বা ঘন। কোন কোন দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুয়াশা আচ্ছন্ন থাকে। কুয়াশার কারণে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে, তাই প্রায়ই পদ্মা নদীর দুই পাড়ে হাজার হাজার বাস, ট্রাক এমনকি এ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ১০ ঘন্টা থেকে ১৫ ঘন্টার জন্য দাড়িয়ে থাকে।

নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা মানুষেরা অসহায় হয়ে চরম শিতে অসহনিয় যন্ত্রণার মধ্যে সময় কাটায় সেই সময়। টয়লেট বা বাথরুম তো বহু দূরের কথা খাবার পানিও জোটেনা অনেকের। নদীর ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সের রুগি জ্যামের কারণে মাঝে মাঝেই মারা যায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই। গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে ফেরার পথে সারারাত ফেরীতে উঠে বসে রইলাম। ফেরীর ক্যাপ্টেনের রুমে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- ফেরী কখন ছাড়বেন? তিনি বল্লেন- তাতো বলতে পারছিনা, কুয়াশা না কাটলে ফেরী ছাড়াতে পারবো না।

আমি বল্লাম- খুব বেশি কুয়াশাতো দেখছিনা, মোটামুটিতো দেখাই যাচ্ছে। ক্যাপ্টেন আমার কথা শুনে এমন একটা ভাব করলেন যেন আমি একটি নাবাল ছেলে, মায়ের কাছে ‘আকাশের চাঁদ এনে দাও’ এমন একটা আব্দার করেফেলেছি। তিনি বল্লেন- দেখেন নদীর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বাঁশ গেড়ে নদীর গভিরতার সংকেত দেয়া আছে, ঐ সংকেত যদি ফেরী থেকে দেখতে পাই তাহলেই ফেরী ছাড়া সম্ভব। তার জবাবে আমি বল্লাম- এটা ২০১৩ সাল, ঢাকায় বসে একটি প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস অথবা নেটকানেক্টেড যেকোন যানবাহন কোন রোডে, ঠিক কোন স্থানে, কত স্পিডে চলছে তা জানা যায়, আর এই যুগে আপনাকে ফেরীর দোতালায় বসে জানালা দিয়ে খালি চোঁখে বাঁশের লাঠির সংকেত দেখতে হচ্ছে কেন? ক্যাপ্টেন বল্লেন এটি তো বিআইডাব্লিউটিসি আর সরকারের ব্যাপার আমার ব্যাপার না। সরকার যেভাবে চাইবে সেই ভাবেই চলবে।

আমার ভাগ্নে এবার সাইন্স থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে, এই ইন্টারেপড়া ছেলেটাকেও যদি বলি কুয়াশার মধ্যে ফেরী চলাচলের জন্য একটা সার্কিট তৈরি করে দাও আমার বিশ্বাস এই বাচ্চা ছেলেটাও সনোমিটার দিয়ে অনায়াসেই একটা সার্কিট তৈরি করে দিতে পারবে, যার সাহায্যে নদীর গভিরতা বা অন্যকোন ফেরী বা লঞ্চ কাছাকাছি আসছে কিনা বোঝা যাবে। তাহলে কেন হাজার হাজার মানুষের জীবনকে অসহনিয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? তাহলে কেন এখন পর্যন্ত অতি নিন্ম মানের প্রযুক্তিও ফেরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে না? ৬ কোটি টাকা ব্যায় করে ফেরি মেরামতের জন্য ডেনিস কম্পানিকে ঠিকা দেয়ার নামে টাকা/পয়সা লুটপাট করা যায় আর ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ব্যায় করে কুয়াশার মধ্যে ফেরী চালানোর ব্যবস্থা করা যায় না!? আপনারা যারা এর ভুক্তভোগি এবং এই লেখাটা যারা পড়ছেন আসুন তার কারনটা জেনে নেই। দৌলতদিয়া-আরিচা/পাটুরিয়া ঘাট সমস্যাটা আসালে কি? দৌলতদিয়া ঘাটে রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পতিতালয়। দৌলতদিয়া ঘাটটি রাজবাড়ী জেলার অর্ন্তগত গোয়ালন্দ উপজেলার একটি ইউনিয়ন যা রাজবাড়ী-১ আসনের অর্ন্তভূক্ত। রাজবাড়ী-১ আসনের এযাবৎ যত জন এম.পি নির্বাচিত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই সর্বোবৃৎ আয়ের স্থান এই পতিতালয় এবং লঞ্চ ও ফেরী ঘাট।

দৌলতদিয়ায় ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’ নামে পতিতাদের একটি রেজিষ্টার্ড সংগঠন রয়েছে, এই সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ি বর্তমানে এই পতিতালয়ে পতিতার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এখানে প্রায় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ বাড়ীওয়ালী রয়েছে এই সব বাড়ীওয়ালীর আন্ডারে সর্বোনিন্ম ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে পতিতা রয়েছে। এই সব বাড়ীওয়ালীর প্রতিদিনের সর্বনিন্মো আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, অবস্থাশালী বাড়ীওয়ালীদের আয় দিনে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। মদ, গাঁজা, হেরোইন থেকে শুরু করে সকল প্রকার মাদক ব্যবসা এখানে ওপেন-সিক্রেট। এখানকার এম.পি যেই হোক না কেন, তিনিই এই পতিতালয়ের প্রধান কর্তাব্যক্তি নিয়োগদেন।

এই পতিতালয়ের প্রধান ক্লায়েন্ট হচ্ছে মটর শ্রমিকরা, ট্রাক/বাস ড্রাইভাররা ৪ পাঁচ ঘন্টার জ্যামে পড়লে হেলপারকে গাড়ীর ষ্ট্রেয়ারিং-এ বসিয়ে দিয়ে পতিতালয়ে চলে আসেন। অন্যান্য ধরণের ক্লায়েন্টও এখানে কম নয়। রাজবাড়ী থেকে যে সকল জেলা দূরে সেই সকল জেলার অনেকেই এখন পর্যন্ত জানে পদ্মা সেতু হবে ঢাকা-আরিচা হাইওয়ের জন্য পদ্মা নদীর উপর। যাদের ভুল ধারনা আছে তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি- না পদ্মা সেতু এই হাইওয়ের জন্য না, পদ্মা সেতু হবে ফরিদপুরের মাওয়া দিয়ে। কারন কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পদ্মা সেতু এখানে হওয়া থেকে বন্ধ করা হয়েছে।

কারন এখানে পতিতালয় এবং ঘাট থেকে প্রতিদিন শুধুমাত্র এম.পি মহোদয়ই ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা উপর্জন করেন। এখানে ঘাট না থাকলে পতিতালয় কেন্দ্রীক যাদের আয় তাদের কি হবে? শুধু সেতু বন্ধ করলে তো হবে না, ঘাটে জ্যামও তৈরি করতে হবে, কারন মটর শ্রমিকরাই মূলত দৌতলদিয়া পতিতালয়ের প্রধান কাষ্টমার। শিতকালে ফেরী বন্ধ করে এবং গরমকালে ঘাটের নেতাদের (পতিতালয়ের দালাল) নিজেদের বাস-ট্রাক দিয়ে কৃত্তিম জ্যাম তৈরি করে পতিতালয়ের ক্লায়েন্ট জোগাড় করা হয়। এই রাজবাড়ী জেলার বর্তমান ১নং আসনের এম.পি মহোদয় বিগত এম.পি মহোদয়দের থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেন। তিনি বর্তমানে দৌলদিয়া পতিতালয়ের একটি মোষ্ট-ওয়ান্টেড লোককে ডান হাত বানিয়ে সকল প্রকার টোল আদায়সহ সকল প্রকার সু-কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব অপর্ণ করেছেন।

এই মোষ্ট-ওয়ান্টেড লোকটিকে মেম্বর থেকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। এই মোষ্ট-ওয়ান্টেড লোকটি বর্তমানে এতোই ক্ষমতাশালী হয়েছেন যে থানার ওসি থেকে শুরু করে জেলার এস.পি পর্যন্ত বদলী করার ক্ষমতা তিনি রাখেন। তিনি প্রতিদিনের পেমেন্ট ছাড়াও এম.পি মহোদয়কে ১ কোটি টাকা দামের গাড়ী উপহার দিয়েছেন। এম.পি মহোদয় সেই গাড়ীতে চড়ে এ্যাম্বুলেন্সে মারা যাওয়া রুগি দেখতে যান, আহা, উহু করেন আর রুগির আত্মিয় স্বজনদের শান্তনা দেন। আজও যে লোকটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ঘাটের এই কৃত্তিম জ্যামে পড়ে মারা গেলেন, তিনি বা তার আত্মীয় স্বজনরা কি জানেন এর জন্য দয়ি এই পতিতালয়ের দালালেরা? বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের ১৬ টি জেলার মানুষ যারা ঢাকায় আশা যাওয়া করেন তারা কি হিসাব করেছেন পতিতালয়ের দালালেরা আপনার জীবনের কত ঘন্টা কেড়ে নিয়েছে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।