আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেত্রী দ্বয় কি জনসাধারনের আস্থার যথাযথ মূল্যায়ন করছেন?

ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের। একটি রাজনৈতিক দল তার নির্বাচনী ইশতেহারে যে সব অঙ্গীকার করে থাকে; তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় মূলত সেই বিষয়গুলিই উঠে আসে। সাধারণ মানুষও এই সব অঙ্গীকারকে বিশ্বাস করেই তাদের সমর্থন দিয়ে থাকে।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই তারা চায় বিজিত দলটি যত দ্রুত সম্ভব তাদের অঙ্গীকারসমূহের সফল বাস্তবায়ন করুক। তারা যদি কোন ওয়াদা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তখন সাধারণ মানুষ কষ্ট পেলেও হতাশ হননা। বরং আশায় বুক বাধেন পরবর্তীতে তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ সে ব্যর্থতার পড়েও সাধারণত তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন না। কিন্তু বিষয়টি যদি এমন হয় যে, সরকার ইচ্ছে করলেই তার ওয়াদা পূরণ করতে পারে অথচ স্বীয় স্বার্থ রক্ষার্থে ইচ্ছে করেই করছেন না।

তখন তাকে প্রতারণা বৈ আর কীইবা বলা যায়? বলছিলাম মহাজোট সরকারের নির্বাচন পূর্ব ইশতেহারে করা অঙ্গীকারের কথা। ঐ ইশতেহারে তারা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিল। আর সুশাসনের অভাবে অতিষ্ঠ মানুষ মহাজোটকে সমর্থন দিয়ে দীর্ঘ চারটি বছর অপেক্ষায় থেকেছে কাঙ্ক্ষিত সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার। তারা কতটা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন আর তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতটাই বা আন্তরিক ছিলেন তা দিবালোকের মতই স্পষ্ট। কেননা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পাঁচটি অগ্রাধিকার বিষয়ের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বিষয়ক পঞ্চম অনুচ্ছেদের ৫.৩ ধারায় তারা বলেছিলেন- “৫.৩ নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির চলমান সংস্কার অব্যাহত থাকবে।

জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিশয় ছাড়া সাংসদ সদস্যদের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দেয়া হবে”। আমাদের দেশের প্রধানতম সমস্যার একটি হচ্ছে এই সুশাসনের অভাব। রাজনৈতিক দল সমূহ এটা খুব ভাল করেই জানেন।

আর জানেন বলে এটিকেই তারা সর্বদা সামনে নিয়ে আসেন। সংসদকে কার্যকর ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে যে, এদেশের রাজনীতির আকাশের মেঘ অনেকটাই কেটে যেত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলে একদিকে যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হত অন্যদিকে দুর্নীতির রাশ টেনে ধরাও সহজ হত। আমাদের দুর্ভাগ্য, নেতৃবৃন্দ ক্ষমতায় যাওয়ার পূর্বে যেভাবে চিন্তা করেন ক্ষমতায় গিয়ে তার উল্টো চিন্তা করেন। একে কি বলা যায়, তা আমি জানি না।

তবে সাধারণ মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতারিত বলেই মনে হয়। কথা হচ্ছে কেন আমরা বারবার প্রতারিত হব। কেন তারা তাদের অঙ্গিকার পালনে সচেষ্ট হবেন না। সব না হোক অন্তত যেটা করা দুঃসাধ্য নয়, শুধুই আন্তরিকতা আর সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তারা কেন সে অঙ্গীকারটুকুও রক্ষা করবেন না? দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কি খুবই দুঃসাধ্য ? নাকি সমস্যা না থাকলে রাজনীতিটা করব কি নিয়ে, বিষয়টি এমন? তা রাজনীতিবিদরাই ভাল জানেন।

তবে আমরা সাধারণ ভোটাররা আর এভাবে প্রতারিত হতে চাইনা। আমরা চাই তারা যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসবেন তা বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন। দীর্ঘ চারটি বছর পার হয়ে গেলেও আজ অবধি কেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলনা? আজ এ প্রশ্নের উত্তর তো আমরা চাইতেই পারি। হয়ত আগামী ইশতেহারেও একই অঙ্গিকার জুড়ে দেয়া হবে। অপেক্ষা করে করে শেষে এসে আবারো কেউ কেউ প্রশ্ন তুলবে।

উত্তর মিলবে না। এটা কতটা নৈতিক? প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রকাশ করবেন না। আবার কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করবেন না। এমন কি স্বীকার করেও নিবেন না। এটা কেমন কথা? ২০০৮ এর নির্বাচনে এ দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ বা মহাজোটকে ভোট দিয়েছে দুটি কারণে।

এক, চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। দুই, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে। যে স্বপ্ন মহাজোটই দেখিয়েছিল। তারা কি তাদের অঙ্গিকার রক্ষা করল? আমাদের দেশে সরকারে যারা থাকে, তারা যত বেশি অন্যায় করবে বিরোধীদের তত বেশি লাভ।

কারণ সরকারের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্টি মানেইতো বিরোধীদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করা। এখানে নিজেদের কোন অবদানের প্রয়োজন নেই। বলার মত তারা এমন কিছু করেও যাননা। বিএনপি জানে আওয়ামী লীগের ভুলের এবং নানাবিধ অন্যায়ের ফসল তাদের ঘরেই আসবে। আওয়ামী লীগও তাই।

আর এ কারণেই বিরোধী দলের আন্দোলনের এজেন্ডাতে কখনোই সাধারণ মানুষের প্রয়োজন বিবেচনায় আনা হয়না। বিবেচনায় আনা হয় নিজেদের সাথে সরকারের আচরণকে। দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাস, আইন শৃঙ্খলার অবনতি, বেকারত্ব বা নির্বাচনী ইশতেহারে করা অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন না করা এগুলো কখনোই আমাদের বিরোধীদলের আন্দোলনের ইস্যু হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না বরং প্রকারান্তরে তারা একে উসকে দিতেই বেশি আগ্রহী। এ সমস্যাগুলো দেশে যত বেশি হবে বিরোধীদের তত বেশি লাভ। তাও আবার দ্বিমাত্রিক।

একদিকে সরকারের জনপ্রিয়তা কমবে। অন্যদিকে তারা ক্ষমতায় গেলে তুলনামূলক বিচার করে বলতে পারবে গত সরকারের সময়ের তুলনায় তারা দেশের অবস্থা ভাল রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আর তাই শুনে আমরা বেকুবের দলও চরম আনন্দে আপ্লুত হয়ে নমস্য জানাতে ব্যস্ত হয়ে পরি। আমাদের রাজনীতিবিদ গন নিজেদের ধোয়া তুলশী পাতা বলে দাবী করেন। আমরা তা বিশ্বাসও করতে চাই।

তাহলে নির্বাচনী ইশতেহারে করা সম্পদের হিসাব প্রকাশের অঙ্গিকার পূরণে বাধা কোথায়? মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে আমরা এমন কোন আশ্বাস বানী শুনতে চাই না যা বার বারই পর্যবসিত হয় ভ্রান্তিবিলাসে। পত্রিকায় প্রকাশ মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অন্য সহকর্মীদের তোপের মুখে পরতে হয়। একটি নির্বাচনী অঙ্গিকার পূরণ করার চেষ্টা করলে সহকর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হবে কেন? থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে? যদি মানসিকতা এই-ই হয় তাহলে এমন অঙ্গিকার-ই বা করা কেন? আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে শীর্ষ নেতৃত্বই সব ক্ষমতার উৎস, সকল সিদ্ধান্তের মূল বলে জানি। অথচ- দলে শতভাগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের আসন নড়ার কোন সম্ভাবনা না থাকা স্বত্বেও তারা দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন না। তারা নিজেরা দুর্নীতিবাজ না হওয়া স্বত্বেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন না।

দেশের জন্য মমত্বের অভাব না থাকা স্বত্বেও দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান গ্রহণ করেন না। আমাদের বিশ্বাস দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীর সম্পদের হিসাব প্রকাশেও তাদের কোন বাধাই নেই। থাকার কথাও নয়। বাধা থাকলে আছে তাদের অধীনস্থদের, তাদের নিকটাত্নিয়দের। তারপরেও তারা অকপট হতে পারছেন না।

অথচ সাধারণ মানুষ তাদেরকে আস্থায় নিয়েই দল দুটিকে সমর্থন করেন। তবে কি তারা শুধু তাদের আত্মীয় পরিজন আর সভাসদদেরই শুভাকাঙ্ক্ষী; সাধারণ মানুষের নন! নাকি আমাদের জানার ভুল? আসলে তারা সব সিদ্ধান্তের মুলে নন! তাদের আড়ালেও আছেন অন্য কেউ। তাদের পরিচালিত করেন অন্য কোন চালিকাশক্তি? যদি তাই হয় সে দায়ভারও তো তাদের উপরেই বর্তায়। কারণ এ দেশের মানুষ এখনও দুই নেত্রীর উপরেই আস্থাশীল। তাদের সভাসদদের উপরে নয়।

আজো তারা ভোট দেয় নৌকায় বা ধানের শিষে, কোন ব্যক্তিকে নয়। যে মার্কা দুটি এই দুই নেত্রী এবং তাদের পূর্বসূরিদেরই প্রতিনিধিত্ব করে, সমসাময়িক বা উত্তরসূরিদের নয়। আমাদের নেত্রী দ্বয় কি সেই আস্থার যথাযথ মূল্যায়ন করছেন? আরও পড়তে লগইন করুন “আপন ভুবন.কম” ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.